ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ওকাম্পো ও বিজয়া

    আশিস পাঠক (April 7, 2025)
     

    শতবর্ষে পড়ল সেই দুই শব্দের ছোট্ট নিবেদন— বিজয়ার করকমলে!

    একটি তন্বী বইয়ের উত্সর্গপত্র ছিল এই দু’টি শব্দ। বইয়ের নাম, ‘পূরবী’। লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম প্রকাশ, ১৯২৫।

    ‘পূরবী’ পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে, এ-বই তা হলে বিজয়ার? একটা কপি, না-হয় প্রথম কপিটাই তাঁর হোক, কবি সই করে তাঁকে দেবেন। কিন্তু সবক’টা কপিতেই তো প্রথমেই ছাপা আছে ওই দুটো শব্দ, ‘বিজয়ার করকমলে’।

    তা হলে আজ, শতবর্ষ পরে কৌতূহলভরে যে ওই ‘পূরবী’-টি পড়ছে, তার কী হবে? একদিন শতবর্ষ আগে জেগে ছিলেন যে কবি, তাঁর আর এই আজকের ‘কে তুমি’-র মাঝে এসে দাঁড়ালেন বিজয়া! তার চেয়ে ভাল বরং ‘মহুয়া’ বইটা। তার উত্সর্গে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে থাকেন না কেউ, ‘জানিনা তোমার নাম, তোমারেই সঁপিলাম আমার ধ্যানের ধনখানি’।

    আরও পড়ুন : কে ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয় সম্পাদক? লিখছেন আশিস পাঠক…

    না, এসব আমার ব্যক্তিগত রবীন্দ্রনাথ। সমষ্টি জানে, ‘বিজয়া’ নাম যাঁকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো। দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা রাজ্যে থাকতেন। বিত্তবান, অভিজাত বংশের মেয়ে। চমকে দেওয়ার মতো শিক্ষিতা। স্প্যানিশ, ফরাসি, ইংরেজি— তিনটে ভাষাই তাঁর করতলগত। বই লিখেছেন অনেক, একসময় আর্জেন্টাইন পি.ই.এন-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু এসব তো বাইরের কথা। ভেতরে ভেতরে তিনি এক অপরিচিতা, রবীন্দ্রনাথের অপরিচিতা। শতবর্ষ পরের নয়, তাঁরই সমসময়ে বেঁচে থাকা এক ‘কে তুমি’— কৌতূহলভরে যিনি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে চলেন। জীবন যখন তাঁর শুকিয়ে গিয়েছিল, তখন ফরাসি অনুবাদে ‘গীতাঞ্জলি’ এনে দিয়েছিল করুণাধারা। শোক হয়ে উঠেছিল আনন্দ। আর্জেন্টিনার এক বিখ্যাত খবরের কাগজে হয়তো তাই রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে যে প্রবন্ধ লিখেছিলেন বাংলা অনুবাদে, তার নাম দাঁড়ায় ‘রবীন্দ্রকাব্যপাঠের আনন্দ’।

    রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো

    অথচ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর দেখাটা হতই না। পেরু যাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  ১৯২৪-এর ১৮ অক্টোবর শেরবুর্গ থেকে যাত্রা শুরু। জাহাজে তিন সপ্তাহ থাকতে হল। শরীর খুব খারাপ হয়ে পড়ল। ৭ নভেম্বর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস এয়ারিসে পৌঁছে অসুস্থ শরীরে পেরুযাত্রা স্থগিত করতে বাধ্য হলেন। ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন তাঁর সান ইসিদ্রোর বাড়িতে। তাঁর যত্নে সুস্থ হয়ে উঠতে উঠতে ‘পূরবী’-র বহু কবিতা লেখা হল।

    লা প্লাতা নদীর তীরে মিরালরিয়ো (নদীশোভনা) নামে অট্টালিকায় যে দিনগুলি-রাতগুলি কেটেছে এক কবি আর এক নারীর, সে তো এক কবিকাহিনির দিনরাত্রি, কেবল তথ্যে তাকে ছোঁয়া যায় না যে!

    কিন্তু ‘পূরবী’-র কবিতা তো তার আগেও লিখেছেন। ওকাম্পোর সঙ্গে যখন দেখাই হয়নি। আর্জেন্টিনায় পৌঁছনোর মাসখানেক আগে জাহাজেই লিখেছেন ‘আহ্বান’ কবিতা, লিখছেন, ‘আমারে যে ডাক দেবে এ জীবনে তারে বারংবার ফিরেছি ডাকিয়া/ সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার/ থাকিয়া থাকিয়া’। ওকাম্পোর সঙ্গ ‘পূরবী’-র অনেক কবিতাকেই অঙ্গবিহীন আলিঙ্গন করে আছে।  ‘পূরবী’ প্রকাশের পরে ১৯২৫-এর ২৯ অক্টোবর ‘পূরবী’-র একটা কপি যখন ওকাম্পোকে পাঠাচ্ছেন, তখন চিঠিতে লিখছেন, ‘বইখানা নিজে তোমার হাতে তুলে দিতে পারলে খুশি হতাম।’ তার পরে বলছেন, তুমি এর একটি কথাও বুঝতে পারবে না। আবার যারা বুঝবে, তারা জানবে না, কে এই বিজয়া, যিনি এসব কবিতার সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ।

    শতবর্ষ আগের ‘পূরবী’ তাই যতটা রবীন্দ্রনাথের, ততটাই বিজয়ারও। ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর কি? ওকাম্পোর সন্ধানে গত শতবর্ষ জুড়েই তো ফিরেছেন রবীন্দ্র-জিজ্ঞাসুরা, তবু ওকাম্পো আর বিজয়া কি পুরোপুরি এক? না কি সে নারী বিচিত্র বেশে…। লা প্লাতা নদীর তীরে মিরালরিয়ো (নদীশোভনা) নামে অট্টালিকায় যে দিনগুলি-রাতগুলি কেটেছে এক কবি আর এক নারীর, সে তো এক কবিকাহিনির দিনরাত্রি, কেবল তথ্যে তাকে ছোঁয়া যায় না যে!

    সেই দিন-রজনীর সংকেত কি লীন হয়ে আছে ‘পূরবী’-র পাণ্ডুলিপিতে? এই পাণ্ডুলিপিতেই কাটাকুটির সূত্রে প্রথম ছবি আঁকছেন রবীন্দ্রনাথ। কথা থেকে ছুটি নিতে চাইছেন এই সময়েই। হৃদয়পুরের জটিলতার খেলা এক আশ্চর্য ভাষা পাচ্ছে ওই কাটাকুটিতে, রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার ওই সূচনায়। তার সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো। রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি যাতে অনেকে দেখেন, বিদেশে তার জন্য ছুটোছুটি করছেন। প্রতিমা দেবীকে রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে লিখছেন,

    বয়সকালে ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো

    ‘বস্তুত আজকাল আমার লেখার স্রোত একেবারে বন্ধ। ছুটি যখন পাই ছবি আঁকি— যারা সমজদার তারা বলে এই হাল আমলের ছবিগুলো সেরা দরের। একটু একটু বুঝতে পারচি এরা কাকে বলে ভালো, কেন বলে ভালো। তুমি যে একদা বলেছিলে আমার ছবিগুলো ভালো জাতের, সে কথাটার পরখ হয়ে গেল, এরাও তাই বলচে— শুনে আশ্চর্য্য ঠেকচে। কিন্তু ভিক্তোরিয়া যদি না থাকত তাহলে ছবি ভালোই হোক্ মন্দই হোক কারো চোখ পড়ত না। একদিন রথী ভেবেছিল ঘর পেলেই ছবির প্রদর্শনী আপনিই ঘটে—অত্যন্ত ভুল। এর এত কাঠখড় আছে যে সে আমাদের পক্ষে অসাধ্য—আন্দ্রের পক্ষেও। খরচ কম হয়নি—তিন চারশো পাউণ্ড হবে। ভিক্তোরিয়া অবাধে টাকা ছড়াচ্চে। এখানকার সমস্ত বড়ো বড়ো গুণীজ্ঞানীদের ও জানে—ডাক দিলেই তারা আসে।’

    শতবর্ষ আগের ‘পূরবী’-তে বিজয়া তাই শুধু কবিতার বইয়ের উত্সর্গেই নেই, ৬৫ বছরের তরুণ রবীন্দ্রনাথের সৃজন-জীবনের সেই নববসন্তের প্রভাতের আনন্দের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন। আজ শতবর্ষ পরে, অ্যাকাডেমিক গদ্যময় রবীন্দ্রচর্চার খিদেকে যদি একটু যদি ছুটি দেওয়া যায়, তবে হয়তো ছুঁতে পারি সকল বন্ধনহীন, উন্মত্ত অধীর সেই নবীন ফাল্গুনদিনগুলিকে।

    সে দিন যতটা রবীন্দ্রনাথের, ততটাই তাঁর বিজয়া, ওকাম্পোরও।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook