ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ছায়াবাজি: পর্ব ৩৭

    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (April 24, 2025)
     

    ভিখিরির ভুলচুক

    রূপ আর গুণের দ্বন্দ্ব চিরকাল, বহুদ্দিন হল ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ রচিতও, কিন্তু তা নিয়ে একটা আধুনিক দুরন্ত ছবি? ‘আ ডিফারেন্ট ম্যান’ ছবির (চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: আরন শিমবার্গ, ২০২৪) নায়ক এডওয়ার্ড-এর মুখ একটা অসুখে বীভৎস হয়ে গেছে, তাকে দেখলে লোকে আঁতকে ওঠে। সে কারও সঙ্গেই মেশে না, তার ত্রিভুবনে কেউ নেই, ট্রেনে যাতায়াতের সময়ে মুখ নামিয়ে থাকে, অভিনয়ের চেষ্টা করে কিন্তু তাও ভাল পারে না, তাছাড়া কে-ই বা অমন ভয়াবহ বিকৃত রূপের মানুষকে নাটক বা ছবিতে নেবে। তার দারিদ্র, তার এঁদো ঘরে সিলিং-এ ফুটো এবং তা থেকে অনবরত চুঁইয়ে পড়া জল যেন তার চারপাশের পৃথিবীর অবিরত প্রত্যাখ্যানেরই প্রসারিত রূপ। একদিন এডওয়ার্ডকে এক ডাক্তার বলে, নতুন চিকিৎসা-পদ্ধতি বেরিয়েছে, পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকজনের ওপর তা প্রয়োগ করে দেখা হবে, এডওয়ার্ড রাজি থাকলে এতে অংশ নিক, মুখ পুরোপুরি সেরে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেই চিকিৎসা চলতে থাকে, এর মধ্যে এডওয়ার্ডের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতে আসে এক তরুণী, ইনগ্রিড, সে নাটক লিখে খ্যাত হতে চায়। এডওয়ার্ডের সঙ্গে সে দিব্যি ঝরঝরে ব্যবহার করে, ঘেন্নায় সরে যায় না, এবং এডওয়ার্ড তাকে ভালবেসে ফ্যালে। অবশ্য একবার এডওয়ার্ড ইনগ্রিডের হাত ধরায় মেয়েটি তড়িঘড়ি উঠে চলে যায়, এডওয়ার্ড বোঝে তার প্রতি প্রশ্রয় ওই সদয় কথাবার্তা অবধিই যাবে, তার বেশি নয়। এদিকে এডওয়ার্ডের মুখের বহু অংশ খুলে খসে পড়ে যাচ্ছে, এক রাতে মাতাল হয়ে বহু কান্নাকাটি ও নিজের মুখের চামড়া টানাটানির ফলে, আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে এক দিব্যি সুদর্শন মুখ। সে অন্যদের বলে, এডওয়ার্ড আত্মহত্যা করেছে এবং সে অন্য একজন লোক, তার নাম গাই।

    আরও পড়ুন: বাঁ-দিকে ঘুরলেই অতীতের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাবে, আর ডাইনিং টেবিলের দিকে বসে ঝিমোচ্ছে ভবিষ্যৎ! ছায়াবাজি-র আগের পর্বে লিখছেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য…

    এই গাইকে আমরা দেখি বাড়ি বিক্রির কাজে দিব্যি সফল, তার সুন্দর মুখের দৌলতে সে যে-কোনও বাড়ি বেচে দিচ্ছে এবং অফিসে খুব নাম, এখন সে অন্য ফ্ল্যাটে থাকে, সেখানে সমৃদ্ধির ছাপ। আচমকা একদিন সে রাস্তায় ইনগ্রিডকে দ্যাখে, তাকে অনুসরণ করে এবং ইনগ্রিডের লেখা নাটকে (ইনগ্রিডই পরিচালনাও করবে) অডিশন দিতে যায়। নাটকটা লেখা বিকৃত-বদন এডওয়ার্ডকে নিয়েই, তার জীবন ও মৃত্যুর (এবং একটি মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের) আখ্যান। গাই প্রথম দিন অডিশনে জঘন্য অভিনয় করলেও, পরেরদিন নিজের মুখের মুখোশ (যা সে পেয়েছিল চিকিৎসার সময়ে) নিয়ে আসে ও সেটা পরে নিয়ে চমৎকার অভিনয় করতে থাকে। ইনগ্রিডের সঙ্গে সম্পর্কও হয়। ফলে এডওয়ার্ডের এখন সব আছে: রূপ, সম্পদ, প্রেম, যৌনতা। এবং নাট্যখ্যাতির সম্ভাবনা। এর মধ্যে নাটকের মহড়ায় চলে আসে একজন লোক, তার নাম অসওয়াল্ড, তার মুখ (এডওয়ার্ডেরই অসুখে) বিকৃত ও বীভৎস।

    সে এসেই হইহই করে কথা-টথা বলে দিব্যি সবার সঙ্গে আলাপ করে নেয়। এবং ক্রমশ এদিক-ওদিক তার সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে এডওয়ার্ড স্তম্ভিত হয়ে লক্ষ করে, অসওয়াল্ড রীতিমতো জনপ্রিয়, সে বহু কিছুতে যোগ দেয়, তার পড়াশোনাও বিস্তর, চিন্তাভাবনাও অন্যরকম এবং সে কথাও বলে দারুণ। এডওয়ার্ড এখন হয়েছে রূপবান গাই, কিন্তু তার মুখে এখনও কথা জোগায় না, এখনও সে লোকের সঙ্গে মিশতে সাংঘাতিক অস্বস্তি বোধ করে, এখনও তার কোলকুঁজো চলন ও হুঁ-হাঁ করে কাজ সেরে দেওয়া এবং কারও সামনে এলে আতুর কুঁকড়ে যাওয়া খুব বদলায়নি। আর তার উলটোদিকে, ওই ভয়াবহ কুরূপ নিয়ে অসওয়াল্ড পার্কে যোগাসনও করছে, যুযুৎসুতেও যোগ দিচ্ছে, তাঁত বোনাও শিখছে, নতুন-নতুন বইও পড়ছে, বার-এ স্টেজে উঠে গানও গাইছে। এবং, এডওয়ার্ড দ্যাখে, লোকে মন দিয়ে অসওয়াল্ডের গান শুনছে, কেউ তার কুশ্রীতার জন্য তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে না বা ঘৃণায় শিউরে উঠে যাচ্ছে না। সুন্দরী মেয়ে তাকে বলছে, কী ব্যাপার হে তোমার তো পাত্তা নেই, এবং অসওয়াল্ড কোনও আড্ডায় অনায়াসে জুটে গিয়ে বলছে, চল চল মদ খেয়ে আসি। হাবভাবে মনে হয়, তার জীবনে প্রেম ছিল ও আছে। এডওয়ার্ড ভেবেছিল, তার সব নিঃসঙ্গতার, সব বঞ্চনার মূলে তার বীভৎস মুখ, কিন্তু তার চোখের সামনে সমান বীভৎস মুখ নিয়ে একটা লোক রমরম করে জীবন বাঁচছে, হাজারটা জিনিস শিখছে, তার কথায় বুদ্ধিতে বিদ্যায় সবাই মুগ্ধ হচ্ছে, সে এগিয়ে এসে লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছে। নিজের চূড়ান্ত শ্রীহীনতা নিয়ে তার কোনও হেলদোলই নেই, খেলায় নেমে পড়তে কুণ্ঠা নেই। সে সাবলীল, খুশিয়াল, সর্বোপরি— ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। ক্রমে অসওয়াল্ডকে ইনগ্রিড পছন্দ করতে শুরু করে, তার পরামর্শে নাটকে অনেক বদল আনে (সত্যিই তো, আমি কেন এডওয়ার্ডকে শুধু ভিকটিম ভাবছিলাম)।

    এমনিতেই সংলাপ মুখস্থ করতে গাই-এর অসুবিধে হয়, এখন সে আরও মুশকিলে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই, এক সময়ে অসওয়াল্ডকেই এডওয়ার্ডের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য বাছা হয় (মুখোশও লাগবে না, এবং তার অসামান্য স্মৃতিশক্তির জন্য পার্ট মুখস্থ করতেও এতটুকু অসুবিধে নেই), গাইকে একটামাত্র দৃশ্য দেওয়া হয়। ইনগ্রিড অসওয়াল্ডের সঙ্গে প্রেমও শুরু করে, গাইকে সে জীবন ও নাটক থেকে ছেঁটে ফ্যালে। গাইয়ের চাকরিও যায়। ফলে সে সর্বস্ব হারায়, এমন এক লোকের কাছে পরাজিত হয়ে, যে হুবহু তারই পূর্ব-অবস্থা-গ্রস্ত, কিন্তু গুণ দিয়ে সেই সীমাবদ্ধতাকে পেরিয়ে এসেছে ও আসছে। গাই যেন অসওয়াল্ডের মধ্যে দেখতে পায় তার পূর্বজন্ম যা হতে পারত— সেই আশ্চর্য ফ্যান্টাসিকে।

    গাই কি কোনওদিনই এডওয়ার্ড ছাড়া অন্য কিছু হয়েছিল, সে কি কোনওদিনই এডওয়ার্ড ছাড়া কিছু হতে পারবে? সে আত্মবন্দি ও সঙ্গহৃত, সে চির-গুণহীন ও নতুন-ভীত। তার আত্মহত্যা-করা প্রতিবেশীর ত্যক্ত সঙ্গিনী যেমন এখনও শোকের কালো ঘোমটায় আটকে, তেমন সে তার ব্যক্তিগত পাষাণ ঘাড়ে করে নাগাড়ে ওঠে আর নামে, কিছুতে তা ত্যাগ করতে পারে না। তাই সে শেষ শটে অসহায় ও ক্যাবলা হাসি হাসতে থাকে, আত্মকরুণার, পরাভবের হাসি।

    তারপর আরও অনেক কিছু হয়। কাগজে-কাগজে অসওয়াল্ডের অভিনয়ের প্রশংসা প্রকাশিত হয়, গাই অসওয়াল্ডকে অনুসরণ করে দ্যাখে তার আগের বিয়ে ও বাচ্চা আছে, এখন সে নিয়মিত ইনগ্রিডের সঙ্গ উপভোগ করছে, এডওয়ার্ডের পুরনো ফ্ল্যাটেই তার নতুন আস্তানা, এক সময়ে গাই ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে নাটকের মঞ্চে উঠে অসওয়াল্ডকে শারীরিক আক্রমণও করে, কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কুচ্ছিত এডওয়ার্ড রূপ-ওপচানো গাই হয়েও হেরে যায়, কারণ (ছবির মতে) একটা লোক কেমন দেখতে তা আসল নয়, লোকটা জীবনকে কেমন ভাবে দেখছে তা আসল। শুনতে একটু ড্যাবা-সরল মনে হচ্ছে, কারণ রূপ নিশ্চিতভাবেই দুর্ধর্ষ সুবিধে দেয়, কিন্তু এখানে প্রকৃত দ্বন্দ্বটা: জীবনাড়ষ্টতা বনাম জীবন-ঘনিষ্ঠতার। সংঘাতটা দুর্ভাগ্যকে দোষ দিয়ে বসে থাকা লোক আর জীবনের রস সহস্র অ্যান্টেনায় শুষে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়া লোকের। তফাতটা— রেস্তরাঁয় ঢুকে মসলা দোসা খেয়ে চলে আসা মানুষ আর ওয়েটারের বোনের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার গল্প জেনে নেওয়া মানুষের। দ্বার বন্ধ করে দিয়ে বিষাদেরে রুখি, সুখ বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি, তার চেয়ে ঝুঁকি নিয়ে শতদ্বারে উঁকি যদি দাও, পেতে পারো মহা-ভর্তুকি।

    অসওয়াল্ডের গুণগুলো উঠে এসে তার কুৎসিত মুখটাকে একটু বাদে অদৃশ্য করে দেয়, তার মূল কারণ সে নিজে ওটাকে প্রাধান্য দেয় না। ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’-এও তা-ই হয়েছিল, তবে তার দায়িত্ব ছ্লি অন্যের কাঁধে। যে-মুহূর্তে বিউটি তার সঙ্গীর রূপের বদলে গুণগুলো দিয়ে তাকে মাপতে শিখেছিল, তখুনি তার চোখে সেই বিকটদর্শন জন্তু এক রাজকুমার হয়ে গেছিল। এখানে বিস্টকে প্রথমে নিজে ভুলতে হয়েছে সে বিস্ট, বা প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছে, এই জন্মশাস্তি-কাণ্ডটিকে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে নতুন গড়তে হবে। তাকে শিখতে হয়েছে জীবনানন্দ। এডওয়ার্ড সর্বক্ষণ ভেবেছিল, তার কুশ্রীতাই তার ঘাতক প্রতিবন্ধকতা, ফলে তার মুখটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল মহা-অজুহাত, নিজেকে সে এতটুকু জীবন-কুশলী (বা জীবন-বিলাসী) করেনি, শুধু নালিশ শানিয়ে গেছে, কান্না ঢিপিয়ে তুলেছে। তাই সিনেমার শেষাংশে সে এবং আমরা বুঝতে পারি, সে অসফল ও নিঃসঙ্গ, কারণ সে অক্ষম। অভিনয় করতেও সে জানে না, প্রেম করতেও নয়। কোনও বই সে পড়েনি, ফলে চ্যাম্পিয়ন সুদর্শন হলেও সে একটা সারগর্ভ কথা বলতে পারবে না, অন্য মানুষের প্রতি তার কোনও উৎসাহ নেই, তাই আড্ডায় সে একটাও বন্ধু তৈরি করতে পারবে না। সে সরে থাকতে, মরে থাকতে শিখেছে, তার মুখটা তাকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দেয়নি। তাই ছবির একটা দৃশ্যে, যখন গাই আর ইনগ্রিড সঙ্গম করছিল, ইনগ্রিড বলে মুখোশটা পরে এসো, কিন্তু মাঝপথে খুলে ফেলতে বলে, হেসে ওঠে, কারণ ওই মুখটা এঁটে বসানো মনে হচ্ছিল। অথচ অমনই বিকৃত মুখের অসওয়াল্ডের সন্তান পেটে ধরতে তার কোনও অসম্মতি ঘটে না।

    গাই একজন ফিজিওথেরাপিস্টকে খুন করে, কারণ সে অসওয়াল্ডকে দেখে হেসে বলেছিল, এত কদর্য রূপের লোক কীভাবে সুন্দরী মেয়েকে মুগ্ধ করতে পারে। তার মানে, নিজ পূর্বজন্মের প্রতি গাই একাত্ম, এডওয়ার্ড তার মধ্যে মরেনি। ছবির শেষে, সে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, যখন ইনগ্রিড ও অসওয়াল্ড তাকে জানাচ্ছে, নাটক ছেড়েছুড়ে, প্রকাণ্ড যশ ও সাফল্য ছুড়ে, তারা চলে যাবে কানাডার এক নুডিস্ট কাল্ট-এর অংশী হয়ে, গাই আবারও স্তম্ভিত, এবং ওয়েট্রেস এসে বারবার জিজ্ঞেস করলেও মেনু থেকে খাবার বাছতে দ্বিধাগ্রস্ত ও থতমত, তখন অসওয়াল্ড একবার গাইকে এডওয়ার্ড বলে ডাকে। তা কি ভুল করে, না কি জেনেশুনে? গাই কি কোনওদিনই এডওয়ার্ড ছাড়া অন্য কিছু হয়েছিল, সে কি কোনওদিনই এডওয়ার্ড ছাড়া কিছু হতে পারবে? সে আত্মবন্দি ও সঙ্গহৃত, সে চির-গুণহীন ও নতুন-ভীত। তার আত্মহত্যা-করা প্রতিবেশীর ত্যক্ত সঙ্গিনী যেমন এখনও শোকের কালো ঘোমটায় আটকে, তেমন সে তার ব্যক্তিগত পাষাণ ঘাড়ে করে নাগাড়ে ওঠে আর নামে, কিছুতে তা ত্যাগ করতে পারে না। তাই সে শেষ শটে অসহায় ও ক্যাবলা হাসি হাসতে থাকে, আত্মকরুণার, পরাভবের হাসি। ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’কে উলটে দিয়ে নয়, সেই গল্পটার উপসংহার এক রেখেই লেখক-পরিচালক আমাদের চমকে দেন, কারণ রূপ যে গুণের কাছে (বিনাগুণ রূপ যে রূপরিক্ত গুণের কাছে) গো-হেরে যেতে পারে, সে-কথাটা এই দেখনসর্বস্ব যুগে আমাদের এক বৃহৎ ঝটকা মনে হয়।

     
      পূর্ববর্তী লেখা
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook