ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সে বনাম আমি


    আশিস পাঠক (January 10, 2025)
     

    একটি জীবনের কথা তার অপরিচিত আর একটি জীবনের কাছে অর্থবহ হয় কী করে? আত্মজীবনীর যে-কোনও লেখকের কাছে এই প্রশ্নটা প্রথমেই মৌলিক হয়ে দাঁড়ায়। প্রশ্নটার উত্তর অনেক রকম। স্মৃতির পটে জীবনের ছবি প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই আঁকা হয়, কিন্তু সবাই আত্মস্মৃতি লিখতে কলম ধরেন না। তিনি যদি কোনও ক্ষেত্রের বিখ্যাত মানুষ হন, তবে তাঁর খ্যাতির কারণে তাঁর ব্যক্তিগত যাপিত জীবনের প্রতি আগ্রহ থাকে অনেক মানুষের। আর যদি তিনি তত বিখ্যাত না-ও হন, তবু তাঁর সময় তাঁর হৃদয়পুরে কেমন খেলেছিল জটিলতার খেলা, তারও কিছু-কিছু রং চায় পাঠক।

    ‘আমিই সে’ নামে ভূমেন্দ্র গুহের যে-আত্মজীবনীটি সম্প্রতি পড়ে উঠলাম, সেটিই এই ভাবনাগুলো নতুন করে জাগিয়ে দিল। ভূমেন্দ্র গুহকে বাংলা সাহিত্যের পাঠক সাধারণ ভাবে জীবনানন্দ-সন্ধানী হিসেবেই চেনে। প্রতিক্ষণ প্রকাশনা থেকে তাঁর সম্পাদনায় কয়েক দশক জুড়ে যে বিপুল জীবনানন্দ প্রকাশিত হয়েছেন, সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক সত্ত্বেও, তার তুল্য কাজ অন্তত বাংলা সাহিত্যে কমই আছে। কিন্তু এ-বইয়ের প্রধান আমি তিনি নন, চিকিৎসক ভূমেন্দ্রনাথ গুহ রায়। বিংশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে, স্বাধীনতার পরে, একটি ক্রমশ গড়ে ওঠা চিকিৎসাব্যবস্থার অঙ্গ ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী বাংলা আধুনিক সাহিত্যের প্রকাশনার রান্নাঘরেও জড়িয়ে ছিলেন। সেই জড়িয়ে থাকার গল্পই লিখে চলেছিলেন পেনসিলে, জীবনের শেষের দিকে। প্রায় এক দশক আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তার পরে আবিষ্কৃত হয়েছে তাঁর সেই আত্মকথন-পাণ্ডুলিপি। বানানের সমতা রক্ষা ছাড়া আর কোনও সম্পাদনা না করে তাকেই প্রকাশ করেছে নির্ঝর, ভূমেন্দ্র-কন্যা ইন্দ্রাণী গুহরায় এবং স্নেহাশিস পাত্রের সহায়তায়। প্রথম পুরুষে লেখা এই আত্মকথনের নাম অবশ্য লেখকের দেওয়া নয়।

    আরও পড়ুন : ‘আমি মুসলমান, তাই আমার বুদ্ধি কম’, বাস কন্ডাকটরকে বলেছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস…

    ভূমেন্দ্র গুহ

    এ-বইয়ের সে-কে ভূমেন্দ্র তাঁর আমি থেকে আলাদা করে দেখতে চেয়েছেন। চিকিৎসক তিনি, তার উপর শল্য চিকিৎসক। এই অবজেক্টিভিটি তাঁকেই মানায়। বঙ্গবাসী কলেজের আচার্য গিরিশ ছাত্রাবাসে এক সময়ে থাকত সে। রাত দশটার সময়ে হস্টেলের আলো নিভে গেলে বাথরুমের কাছের সিঁড়িতে বসে জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’ বা গলসওয়ার্দির ‘দ্য ফোরসাইট সাগা’ পড়েছে। সেটা দেখে হস্টেলের ডেপুটি সুপার জগদীশ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘কী রে, তুই কি বনফুল হবি?’ বনফুল হয়নি সে, জীবনে একটিমাত্র উপন্যাস লিখেছে, ‘জীবনানন্দর ছেলেপুলে’। কিন্তু জীবনকে সে যে দৃষ্টিতে দেখেছে, সে-দৃষ্টি কোথাও বনফুলেরই উত্তরাধিকার বলে মনে হয়। তার দেখা চিকিৎসক-চরিত্রগুলির কয়েকজন অনায়াসে বনফুলের গল্প-উপন্যাসের চরিত্র হয়ে যেতে পারতেন। যেমন, ডক্টর মুখার্জি, যিনি তাকে বলেছিলেন, ‘ডিস্ট্রিক্ট চলে যাও; কলকাতার হাসপাতালে অপারেশন করা তো কালীঘাটের বাঁধা পাঁঠা বলি দেওয়া, ডিস্ট্রিক্টে গেলে ছাড়া পাঁঠা ধরে আনতে হবে, সেটা সার্জিকাল পারসোনালিটি গড়ে তুলবার জন্য খুব জরুরি; কাঁচা টাকা আয় করতে যাবে না, কোনও রুগিকে কলকাতা যেতে বলবে না, নিজে করবে; প্র্যাকটিস করবে না, করলেই সহজ পথে হাঁটতে ইচ্ছে হবে, বদনামের ভয়ে, স্পেশালিস্ট সার্জন হিসেবে যাবে, স্পেশালিস্টের মতন চলবে-ফিরবে-করবে, বদনাম এসে পড়লে নেবে।’

    প্রায় এক দশক আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তার পরে আবিষ্কৃত হয়েছে তাঁর সেই আত্মকথন-পাণ্ডুলিপি। বানানের সমতা রক্ষা ছাড়া আর কোনও সম্পাদনা না করে তাকেই প্রকাশ করেছে নির্ঝর, ভূমেন্দ্র-কন্যা ইন্দ্রাণী গুহরায় এবং স্নেহাশিস পাত্রের সহায়তায়। প্রথম পুরুষে লেখা এই আত্মকথনের নাম অবশ্য লেখকের দেওয়া নয়।

    পুরোটাই নামের সমাপতন, তবু এটা না বলে পারছি না যে, যে সে-র কথা এ-বইয়ে লিখেছেন ভূমেন্দ্র গুহের আমি, সে জীবন কাটিয়েছে জীবন-আনন্দেই। জীবনধারণের কষ্ট ছিল সেখানে, আরামের চেয়ে অনেক বেশি করেই ছিল। তবে সব ছাপিয়ে গিয়েছিল জীবনযাপনের আনন্দ। সহজ এক আনন্দ। সেই আনন্দ থেকেই জন্ম নিয়েছে এ-বইয়ের গদ্য: ‘বেশ কাটল, ডাক্তারি পড়ার পাঁচ-পাঁচটা বছর, ‘ময়ূখ’ কবিতা পত্রিকাটা ও ‘অনুক্ত’ নামের পাঁচমেশালি কাগজটা করার, জীবনানন্দ-সঞ্জয় ভট্টাচার্যর পিছনে-পিছনে ঘোরার, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি ময়ূখ’ বার করতে গিয়ে বইপত্তর-স্কেলিটনটা বেচে দেবার এবং ফলত সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষাটায় ফেল করে ইররেগুলার হয়ে গিয়ে কপাল পোড়াবার, ফুটপাত থেকে পুরোনো বই কেনার, মাঝেমধ্যে দু-একটা নতুন বই কিনে বেশিরভাগ সময় ঘোরাঘুরি করতে-করতে সিগনেট বুকশপ, রূপার গুরুজন মেহেরা এবং বিবলিয়োথেক-এর গিরীনবাবুর সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলার, ‘ময়ূখ’-এর বন্ধুরা ছাড়াও অজয় দাশগুপ্ত এবং প্রবোধবন্ধু অধিকারীকে বন্ধু হিসেবে পাওয়ার এবং সর্বোপরি দাশপরিবারের, বিশেষত সুচরিতা দাশের ঐকান্তিকভাবে ন্যাওটা হয়ে পড়ার, ইত্যাদি, ইত্যাদি আরও অনেক কিছুর। কবিতায় কথাটা বলেও ফেলল সে: ‘উনত্রিশ নম্বরের শ্রীগোপাল মল্লিক’এর লেনে/শোন বলি আমার আবাস/বন্ধুরা বলেন হেসে দেবলোকে বাস।’ [‘ময়ূখ’ পত্রিকাটাকে, জীবনানন্দকে এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্য— ‘পূর্বাশা’কে নিয়ে লিখেছে সে ঢের, আর বলতে যাবে না এখন।]’ এত বড় প্রথম বাক্যটাকে কেবল কমার ব্যবহারে ছন্দিত করে যে পাঠকের মনে বইয়ে দিতে পারলেন ভূমেন্দ্র, তার কারণ বোধহয় তাঁর আজীবনের কবিতা-সঙ্গ।

    সঙ্গে, প্রসঙ্গে এবং হয়তো খানিকটা নিঃসঙ্গেও এই সে-র গল্প অনেক পাঠকেরই আমিকে ছুঁয়ে ফেলবে। সেটাই এ-বইয়ের সার্থকতা। এ-বইয়ের প্রকাশক এবং অনুচ্চারিত সম্পাদক আরও একটা ভ্যালু যোগ করেছেন এতে, নির্দেশিকা। স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনীর নির্দেশিকা তৈরি করাটা একটা সময়ের ইতিহাসের স্বার্থেই ভীষণ জরুরি সেটা মনে রেখেছেন তাঁরা, এটা বিশেষ ভাবে বলতেই হয়। পরবর্তী সংস্করণে এ-বইয়ের টীকা করার কথাও ভাবা যেতে পারে। কারণ রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নির্মাণে ভূমেন্দ্রর দেখা সময়ের টুকরোগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্মৃতির পটে আঁকা জীবনের ছবি শব্দের সংকেতে দেখানোর দায় লেখকের, ইতিহাসের দায়টা কিন্তু সম্পাদকেরই!

    আমিই সে। ভূমেন্দ্র গুহ। নির্ঝর। ২২৫ টাকা

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook