ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘সুধা নিরবধি’


    অভিষেক ঘোষাল (January 4, 2025)
     

    ‘আসি এই রঙ্গস্থলে,    কতলোকে কত বলে, 

               সবার কথায় মম নাহি প্রয়োজন,— 

    কাব‍্যে যাঁর অধিকার,    দাস, তার তিরস্কার 

               অকপটে কহে, করে মস্তকে ধারণ। … 

    তুলিয়া গভীর তান,      মধুর মধুর গান, 

               গদ‍্য-পদ‍্য মাঝে এই মনোহর সেতু; 

    শেষাক্ষরে মিল নাই,      গদ‍্য যদি বল তাই, 

               পদ‍্য বলা যায়, যতি-বিভাগের হেতু। 

    হলে কাব‍্য অভিনয়,       জীবন সঞ্চার হয়, 

                কোন্ অনুরোধে যতি করিব বর্জ্জন? 

    পাষাণে বাঁধিয়া প্রাণ       সে যতিরে বলিদান 

                 নাহি দিব, হই হব নিন্দার ভাজন।’ 

    ন‍্যাশনাল থিয়েটারে অভিনয়ের জন‍্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‍’মেঘনাদবধ কাব‍্য’-র নাট‍্যরূপ দেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। ১৮৭৭ সালের পয়লা ডিসেম্বর অভিনয়ের প্রথম দিনই, প্রস্তাবনা-কবিতায় উপরের কথাগুলি বলে দেন তিনি। মঞ্চে পরিবেশনের উপযোগী করতে অমিত্রাক্ষরকে সম্পূর্ণ বলি দিতে রাজি ছিলেন না গিরিশ। কারণ, অমিত্রাক্ষর— সম্ভবত বাংলা সাহিত‍্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ঘাতগুলির একটি।

    গিরিশ ঘোষের উপস্থাপনার কয়েক বছর আগে, ১৮৭২ সালে, সুদূর বরাক উপত‍্যকার এক কবি মধুসূদনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘‘মিত্রাক্ষর নিগড়েতে বদ্ধ ছিল সদা,/ কোমলাঙ্গি মাতৃভাষা চিরদিন তব,/ মুক্তিলে তাঁহারে তুমি আপনার বলে,/ উদ্ধারিলা বাসুদেব আপন জননী/ দৈবকীরে যথা কংশ-কারাগার হতে।…’’ সেই কবির নাম রামকুমার নন্দী মজুমদার, আর তাঁর কাব‍্যের নাম ‘বীরাঙ্গনা পত্রোত্তর কাব‍্য’, যা কিনা মাইকেলের ‘বীরাঙ্গনা কাব‍্য’ (১৮৬২)-র একটি উত্তরভাষ।

    আরও পড়ুন : হিন্দু-ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বীরাও খ্রিস্টধর্মের উদারতাকে বরণ করেছিলেন…

    অমিত্রাক্ষরে মধুসূদন ‘মেঘনাদবধ’-এর আগেই ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব‍্য’ (১৮৬১) লিখলেও, একই বছর, আজকের দিনে প্রকাশিত ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’-ই সম্ভবত আজও মধুসূদনের প্রধান কাব‍্যগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। শুধু তো পয়ার-ত্রিপদী চেনা ছাঁদের শিকল ভেঙে দেওয়া নয়, এই কাব‍্য আরও নানা কারণে স্মরণীয়। মহাকাব‍্যের সিদ্ধরস মধুসূদনের হাতে পরিবর্তিত হল, মর্যাদা-পুরুষোত্তম রাম, প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, উৎপল দত্ত-র ভাষায়, হয়ে উঠলেন এক ‘আগ্রাসী, পরস্বাপহরক’ অনুপ্রবেশকারী, আর রাবণের ‘বীরপুত্রধাত্রী’ লঙ্কা ‘আক্রান্ত জন্মভূমি’। যে-সজ্জায় লঙ্কাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল, তার দিকে চোখ রাখলেও দেখব, দাশরথির অবস্থান ‘পশ্চিমদুয়ারে’। এই পশ্চিম দুয়ার মহাকাব‍্যের মূল ভার্সনের অনুসারী হলেও ঔপনিবেশিক ভারতে এর দ‍্যোতনা খানিক আলাদা হয়েই যায়।

    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    গিরিশচন্দ্র, সম্ভবত প্রথম, বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’-কে জাতীয়তাবাদী ছাঁদে পড়লেন। নাট‍্যরূপে তাই শুরুতেই ঘটে যায় এক লক্ষণীয় স্থানবদল— তাঁর নাটক শুরুই হয় প্রমোদকাননে ‘বামাদল মাঝে’ মেঘনাদের কালযাপন দিয়ে। মেঘনাদ-ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে সেখানে আসেন লক্ষ্মী, আর ‘শিশুভাই’ বীরবাহুর মৃত‍্যুসংবাদে রাবণের অসহায়তার খবরে হতচকিত ইন্দ্রজিৎ তখন ‘ফুলমালা, বলয় ও কুণ্ডলাদি’ দূরে নিক্ষেপ করিয়া’ আত্মধিক্কারে বলে ওঠেন, ‘হা ধিক মোরে ! বৈরিদল বেড়ে/ স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?’

    কাব‍্যে বীরবাহুর মৃত‍্যু, ভগ্নদূত মকরাক্ষের মাধ‍্যমে সেই খবর পেয়ে রাবণের বিলাপ, এমনকী, রাবণের যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতিও ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদের এই ঘটনার আগে ঘটে। কিন্তু নাটকে সেসবই চলে গেল প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় থেকে শেষ তথা চতুর্থ গর্ভাঙ্কের মাঝামাঝি অবধি। প্রথম অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্ক পুরোটাই ইন্দ্রজিতের আত্মোপলব্ধি ও যুদ্ধপ্রস্তুতিতে ভরা।

    গিরিশচন্দ্র ঘোষ

    কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ‘বদল’? এ তো কাব‍্যের ওই ওই অংশগুলি অক্ষুণ্ণই রেখে কেবল তাদের পারস্পরিক স্থানবদল মাত্র। এই ঘটনা আগে, আর ওই ঘটনা পরে রেখে নাট‍্যিক কৌশল অবলম্বন শুধু। কিন্তু শুধু কি তাই? অবসর ও বিলাসে মগ্ন দেশপ্রেমিক এক বীরের কাছে মাতৃভূমির প্রতি কর্তব‍্যের আহ্বানটি নাটকের শুরুতে রাখলেন গিরিশচন্দ্র, বাকি তার প্রেক্ষিত রচনার নাটকীয় মুহূর্তটি চলে গেল পরে— এই স্থানবদল ঔপনিবেশিক ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমকালীন ভাষ‍্য তৈরি আসলে। জাতীয়তাবাদী যে ইঙ্গিত মাইকেলের কাব‍্যে ছিল, তাকে মঞ্চে সম্ভবত প্রথম স্পষ্ট করতে চাইলেন তিনি। 

    লক্ষ্মণ তাঁর উপস্থাপনে ক্ষত্রিয়কুলের নৈতিকতার ধার ধারেন না; তিনি অতীব দক্ষ এবং নিষ্ঠুর এক সৈনিক। কিন্তু সেই লক্ষ্মণের জন‍্যও তো মধুসূদন বরাদ্দ করেছিলেন অপূর্ব এক উপমা— ‘ঊর্ম্মিলাবিলাসী’। যে ঊর্মিলাকে তাঁর ‘কাব‍্যের উপেক্ষিতা’-য় সংস্কৃত সাহিত‍্যের সবচেয়ে বিষণ্ণ ‘উপেক্ষিতা’-র অভিধা দেবেন রবীন্দ্রনাথ, মহাকাব‍্যের ত্রিলোকব‍্যাপী পরিকল্পনার বিরাট পরিসরেও তাঁকে ভোলেননি মধুসূদন।

    গিরিশচন্দ্রের এই প্রয়াসের শতাধিক কাল পরে প্রথমে ‘নান্দীকার’, পরে ‘ন’য়ে নাটুয়া’-র তরফে ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’ মঞ্চে উপস্থাপিত হয়। বঙ্গরঙ্গমঞ্চের এক চিরন্তন বিস্ময় এটি। গৌতম হালদারের একক অভিনয়ে এই প্রযোজনায় কথকের ভূমিকাটি আলাদা করে বলার মতো। গিরিশচন্দ্র সংলাপের ছাঁদে তাঁর নাটকে দৃশ‍্যগুলি পুনর্বিন‍্যস্ত করেছিলেন। সংলাপ বলতে মধুসূদনের কাব‍্যাংশই ছিল, কিন্তু তাতে কথকের পার্ট যেগুলি, গিরিশের নাটকে তার অস্তিত্ব ছিল না কোথাও। লক্ষণীয়, গিরিশ ঘোষের প্রযোজনার নাম ‘মেঘনাদবধ’। ‘কাব‍্য’ শব্দটি সেখানে বাদ গিয়েছিল। গৌতম কিন্তু কথককে পুরোদস্তুর রাখলেন, আর তাঁর ভূমিকা শুধুমাত্র চরিত্রগুলির মানসিক স্থিতিটুকু বোঝাতেই ব‍্যবহৃত হল না। তিনি কথক বা সূত্রধরের অংশগুলিতে পক্ষ নেন। স্বরের ইঙ্গিতে, শরীরী ভাষায় শ্লেষের ভঙ্গিতে কিংবা উচ্চারণের তীব্রতায়, এমনকী, গৌতম হালদারের বহুচর্চিত ম‍্যানারিজমের পরতে পরতে চরিত্রগুলির প্রতি নটের মানসিকতা প্রকাশ পেতে থাকে।

    ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’-র দৃশ্যে গৌতম হালদার

    লক্ষ্মণ তাঁর উপস্থাপনে ক্ষত্রিয়কুলের নৈতিকতার ধার ধারেন না; তিনি অতীব দক্ষ এবং নিষ্ঠুর এক সৈনিক। কিন্তু সেই লক্ষ্মণের জন‍্যও তো মধুসূদন বরাদ্দ করেছিলেন অপূর্ব এক উপমা— ‘ঊর্ম্মিলাবিলাসী’। যে ঊর্মিলাকে তাঁর ‘কাব‍্যের উপেক্ষিতা’-য় সংস্কৃত সাহিত‍্যের সবচেয়ে বিষণ্ণ ‘উপেক্ষিতা’-র অভিধা দেবেন রবীন্দ্রনাথ, মহাকাব‍্যের ত্রিলোকব‍্যাপী পরিকল্পনার বিরাট পরিসরেও তাঁকে ভোলেননি মধুসূদন। লক্ষ্মণের ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’-র কৌশলী মনোভাবে তাঁর প্রতি পাঠকের যে বিরূপতার সম্ভাবনা, তা যেন এই অভিধার দৌলতেই খানিক সহনীয় লাগে। পঞ্চম সর্গে ‘লঙ্কার উত্তরদ্বারে বনরাজিমাঝে শোভে সরঃ/ কুলে তার চণ্ডীর দেউল স্বর্ণময়’— সেই দুর্গম জঙ্গলে দেবী চণ্ডীর পুজো করতে যান তিনি। পথে মোলাকাত স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে। এবং সাত-পাঁচ না ভেবে লক্ষ্মণ তাঁকে যুদ্ধে আহ্বান করেন— ‘ছাড়ো পথ, পুজিব চণ্ডীরে, পশিয়া কাননে।/ নহে দেহ রণ দাসে।’ এই অতুলনীয় সাহসে শিবও খানিক ভড়কে যান। তাঁকে বিনা যুদ্ধেই পথ ছাড়েন। যে লক্ষ্মণের মধ‍্যে ভাল প্রায় কিছুই নেই এই কাব‍্যে, তাঁরই হাতে যে মেঘনাদ বধ হবেন, তারও তো প্রেক্ষিত তৈরি করতে হয়। লক্ষ্মণের সাহসিকতায় মাইকেল সেটাই করলেন। 

    যেভাবে ‘বিনা রণে পরিহার’ প্রার্থনা করেন স্বয়ং রাম, ইন্দ্রজিৎ-পত্নী প্রমীলার কাছে। কাব‍্যের তৃতীয় সর্গে ‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে’-র মতো আইকনিক উক্তি দিয়ে ‘লঙ্কার উত্তরদ্বারে উতরিলা সতী প্রমীলা’। তাঁর দূতী হিসেবে নৃমুণ্ডমালিনী নামের ‘উগ্রচণ্ডা ধনী’ গেলেন রামের কাছে। চাইলেন সম্মুখ সমর। কিন্তু রাম সযত্নে এড়িয়ে গেলেন সেই প্রস্তাব। তাঁর বৈরিতা রাবণের সঙ্গে, ‘কুলবালা, কুলবধূ’-দের প্রতি তাঁর আক্রোশ নেই। তাই হনুমানকে রাম নির্দেশ দেন ‘শিষ্ট আচরণে’ বামাদলকে তুষ্ট করতে এবং সসম্মান তাঁদের লঙ্কায় প্রবেশের জন‍্য পথ ছেড়ে দিতে। প্রমীলার প্রতি অকুণ্ঠ আশীর্বাদ বর্ষিত হয় তাঁর দিক থেকে। গৌতম হালদারের অভিনয়ে এই অংশে রামের কণ্ঠে ঘনিয়ে ওঠে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা— ‘ধন‍্য ইন্দ্রজিৎ ! ধন‍্য প্রমীলা সুন্দরী !/ ভিখারী রাঘব, দূতি, বিদিত-জগতে/… সুখে থাক, আশীর্ব্বাদ করি।’

    সস্নেহ এই আশীর্বাণী চিরকাল পাঠক ও দর্শককে খানিক অস্বস্তিতে ফেলে। যে রামকে খানিকক্ষণ আগেই দেখা গেছে ইন্দ্রের সারথি চিত্ররথের সামনে রীতিমতো হাত কচলাতে, সেই রামই যখন নিজেকে ‘ভিখারী রাঘব’ সম্বোধনের পর এসব বলেন, তখন কি তাঁর মনে কোথাও জেগে থাকে কোন্ অশোকবনের একাকী পরিসরে বিরহিনী জানকীর স্মৃতি? রক্ষঃকুলের আসন্ন বিপর্যয়ের প্রতি সহমর্মিতা আর সেই ধ্বংসলীলার অসহায় এক তত্ত্বাবধায়ক হয়ে ওঠার যন্ত্রণার আভাসই কি এই বক্তব‍্যের প্রেক্ষিত? পাঠক দ্বিধান্বিত হন।

    কিন্তু নৃমুণ্ডমালিনী চলে যেতেই রাম ফের স্বমূর্তিতে। বিভীষণকে কৌতুকভরে জানান, ‘দূতীর আকৃতি দেখি ডরিনু হৃদয়ে/ রক্ষোবর! যুদ্ধসাধ ত‍্যজিনু তখনি।/ মূঢ় যে ঘাঁটায়, সখে, হেন বাঘিনীরে।’

    তাহলে কি তিনি সত‍্যিই ভয় পেয়েছিলেন ‘দূতীর আকৃতি’-তে? সেই ভয় ঢাকতেই এই কৌশলী পদক্ষেপ, এবং তৎপরবর্তী কৌতুক? না কি সত‍্যিই ক্ষণিকের তরে দ্রব হয়েছিল তাঁর হৃদয়, আর সেই আশীর্বাদে ছিল না কোনও ছদ্মতার লেশ? আমরা দ্বিধান্বিত হই।

    মধুসূদনের কাব‍্য এবং তার আধুনিকতর ইন্টারপ্রিটেশন হিসেবে মঞ্চোপস্থাপন— কোনওটিরই একমাত্রিক মূল‍্যায়ন সম্ভব নয় তাই। বিভীষণের প্রতি ইন্দ্রজিতের অতি-পরিচিত বাক‍্যবাণের প্রতিক্রিয়ায় খুল্লতাত যখন ‘মহামন্ত্রবলে যথা নম্রশিরঃ ফণী’-সদৃশ, গৌতমের অভিনয়ে বিভীষণ চোখ মেলাতে পারেন না বাসববিজয়ী ভ্রাতুষ্পুত্রের সঙ্গে। অন‍্যায় যুদ্ধে ইন্দ্রজিতের মৃত‍্যুর পর সেই বিভীষণই দিগবিদিকজ্ঞানশূন‍্য হয়ে বলে ওঠেন, ‘নগর-দুয়ারে অরি, উঠ অরিন্দম!/ এ বিপুল কুলমান রাখ এ সমরে !’ গৌতমের আভিনয়িক মুনশিয়ানায় এই অংশের অভিঘাত ঠিক কেমন হতে পারে, তা আলোচনার ক্ষমতা আমাদের নেই, আজও মহানগরের মঞ্চে অভিনীত হয় ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’, পারলে নিজের চোখে দেখে আসুন। 

    গিরিশের প্রযোজনার সময় ১৮৭৭, নাট‍্যনিয়ন্ত্রণ আইনের ফাঁস তখন ঘোরতর বলবৎ। গৌতম প্রথম তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব‍্য’ উপস্থাপন করেন বাবরি মসজিদ-পরবর্তী সময়ে। আর মাইকেলের কাব‍্য প্রকাশিত হয়েছিল পরাধীন ভারতে, সিপাহী বিদ্রোহের কয়েক বছর পরেই। উগ্র জাতীয়তা, ধর্মান্ধতা ও অগণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যখনই তার অভিমুখ খুঁজে পেতে চেয়েছে, এই কাব‍্য কোনও না কোনও ফর্মে হাতিয়ার হয়েছে তার। এই প্রবাহ আদতে এক অবিস্মরণীয় মস্তানির, যেখানে একই ছন্দে পরপর দু’টি সর্গে ধারণ করা যায় বীরাঙ্গনা প্রমীলার যুদ্ধসাজ ও জানকীর লালিত‍্য। এই প্রবাহ আসলে এক ঐতিহ‍্যের, যেখানে রঙ্গমঞ্চে গিরিশচন্দ্র একইসঙ্গে রাম ও রাবণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

    এতদিন পর ‘সুবিচার’ পাওয়া নটী বিনোদিনী উনিশ শতকের কলিকেতাকে স্তম্ভিত করে দেন গিরিশের ‘মেঘনাদবধ’-এ একসঙ্গে সাত-সাতটি চরিত্রে অভিনয় করে। প্রথম প্রকাশের দিনটি স্মরণে রেখে এই আলোচনা তাই এক শিকড়-সঞ্চারী বোধেরই অন্বেষক, ‘গৌড়জন যাহে আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি।’

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook