ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম : পর্ব ২২


    রূপম ইসলাম (June 3, 2023)
     

    পর্ব ২১

    ২৮।

    আশ্চর্য ব্রহ্ম ঠাকুরের বাড়িতে সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ড থেকে আসা ব্রহ্ম-প্রোজেকশনের কথা মন দিয়ে শুনেছিল। খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছিল তার বলে দেওয়া সব পরিকল্পনা। তারপর আশ্চর্যকে তার আসন্ন অভিযানের জন্য আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে আগন্তুক অদৃশ্য হয়ে গেছিল। হঠাৎ করে নিজেকে ভীষণ একা লেগেছিল আশ্চর্যের। তার মনের মধ্যে তখন যুদ্ধ চলছে। সে ভাবছে— তার প্রবীণ বন্ধু তাহলে মারা যাবেন? হতেই পারে না! তাকে যে কোনও উপায়ে এই দুর্ঘটনাটা আটকাতেই হবে। প্রায় অচলাবস্থা থেকে মনের জোরে এক ঝটকায় তৎপর হয়ে উঠে আশ্চর্য বাইরে বেরিয়ে এল। বাড়ির পাহারার দায়িত্বে থাকা দু’জন পুলিশকে সে বলল, ভেতরে এসে মাটিতে পড়ে থাকা হাত পা বাঁধা ‘ব্যালেন্স’ গোষ্ঠীর লোকটাকে থানায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে। তারপর ফোনের কনট্যাক্ট লিস্টে একটা নাম বের করে সেদিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল সে। এই মুহূর্তে এই লোককে ফোন করাই দরকার। এ রকম সিচ্যুয়েশনে ইনিই হয়তো সাহায্য করতে পারবেন।

    হাতে বেশি সময় নেই। রাত বেড়ে গেলেও যা থাকে কপালে বলে ফোনটা করেই ফেলল আশ্চর্য।

    — হ্যালো

    — হ্যালো, আমি আশ্চর্য বলছি। …হ্যাঁ, অভিনেতা আশ্চর্য। …স্যরি অসময়ে ডিস্টার্ব করছি। আমার এক্ষুনি আপনার সাহায্য প্রয়োজন একটা ব্যাপারে। একটু কথা বলতে পারি?

    আশ্চর্য সেদিন রাতে ফোনটা করেছিল ‘ন্যাড়া জেঠু’ নামে পরিচিত সাংবাদিক সেই মুকুন্দ অবস্থীকেই। এমন পরিস্থিতিতে আর কাকেই বা করবে? লোকটা ভাল হোক, মন্দ হোক, প্রভাবশালী তো বটেই। লোকটার সরকারের উপর মহলে জানাশুনো, পুলিশের বড় কর্তাদের সঙ্গে দহরম-মহরম রয়েছে। এমন একটা উদ্ধার অভিযানে হুট করে যেরকম লোকের সাহায্য নেওয়া দরকার, ন্যাড়া জেঠু হলেন ঠিক সেরকম। মুকুন্দ অবস্থীকে ফোন করে সে বলেছিল— ডিটেইলস বলতে পারব না। তবে আপনার সাহায্য না পেলে এক প্রিয় মানুষকে বাঁচাতে পারব না। ফ্লাইটের টাইমিং দেখবার সময় নেই। যেকোনও ভাবে একটা হেলিকপ্টার জোগাড় করে আমায় এক্ষুনি উড়ে যেতে হবে আন্দামান। আর একটা আগ্নেয়াস্ত্রেরও প্রয়োজন আছে। পোর্ট ব্লেয়ার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন?

    আধঘন্টার মধ্যে আশ্চর্যের বাড়িতে চলে এলেন উত্তেজিত মুকুন্দ। অভিযানের আনন্দে তাঁর চোখ দুটো চকচক করছে। দেখা গেল তিনি মাথায় বেঁধে এসেছেন কালো রঙের ফেট্টি। পুরো কালো নয়, কালোর উপরে রয়েছে সাদাসাদা বুটি। বললেন— আমার স্বপ্নের সেরা সেলিব্রেটি, ড্রিম ভিলেইন শেঠঠি ‘মহব্বত মেরি জান’ ছবিতে এ’রকমই একটা বুটিদার ফেট্টি পরেছিল। এই ‘শেঠঠি দা ফেট্টি’র জন্য মারামারিটা আজ জমিয়ে দেব। চলো চলো, এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ব। সব কথা বলে নিয়েছি, সার্কুলার রোডের বালিগঞ্জ ময়দান মিলিটারি ক্যাম্প থেকে হেলিকপ্টার উড়বে। তুমি রেডি তো?

    আশ্চর্য ভাবতেই পারেনি, জেঠু উড়ে এসে তার ঘাড়ে জুড়ে বসতে চাইবেন, এই অভিযানে জোরজবরদস্তি তিনি সঙ্গী হবেন! সে এটা কাটাতে চেয়ে চট করে বলল— আপনিও যাবেন? না না, তার তো কোনও দরকার নেই…

    অবস্থীসাহেবের গাড়ি বাইরে অপেক্ষা করছিল। তিনি কোনও কথা না বলে প্রায় একরকম টেনেহিঁচড়েই আশ্চর্যকে গাড়িতে ওঠালেন। ড্রাইভারকে চালাতে নির্দেশ দিয়েই পকেট থেকে বের করলেন একটা রিভলভার।

    — শোনো, আমাকে দরকার না লাগলেও এই কালজয়ী ‘ব্যারেটা স্ট্যামপিড’ বন্দুকটার প্রয়োজন তো পড়বে এই অভিযানে, তোমার রিকোয়ারমেন্টই তো তাই ছিল! কিন্তু এটা চালাবে কে? এর লাইসেন্স হোলডার তো আমিই! কাজেই মাই ডিয়ার আশ্চর্য, আমি তো এই অ্যাডভেঞ্চারে অটোম্যাটিক চয়েস হয়ে পড়ছি…

    — কিন্তু আপনি ওটা চালাবেন কী করে? আপনার হাত তো দেখছি থরথর করে কাঁপছে!— আশ্চর্যর গলায় উদ্বেগের সঙ্গে খানিক কৌতুকও মিশল। সে এটা আগেই লক্ষ করেছে। এই ভদ্রলোকের কি কাঁপুনি-রোগটোগ আছে নাকি রে বাবা!

    মুকুন্দ অবস্থী অবশ্য প্রশ্নটার উত্তরে ওভার-বাউন্ডারি হাঁকালেন। গমগমে গলায় বললেন— শোনো হে ছোকরা। কাম্পুচিয়ার সশস্ত্র বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান আমি কাভার করতে গেছিলাম। তখন আমায় রীতিমতো গেরিলা ট্রেইনিং নিতে হয়েছিল। কাম্পুচিয়া— বুঝতে পারছ তো? পুরো সিচ্যুয়েশনটাই উত্তেজনায় কাঁপছে, যাকে বাংলায় বলে কাঁপাকাঁপি ব্যাপার। সব্বাই কাঁপছে রেভলিউশন-ফিভারে। তবুও যুদ্ধের সময় বিপ্লবীরা লক্ষ্যে একদম স্থির। এদেশ থেকে একমাত্র আমিই চর্মচক্ষে দেখে এসেছি সেসব। কাজেই আমার সঙ্গে ফালতু কথা একদম নয়। এখন আমার হাত কাঁপছে একটা নার্ভের ওষুধের ওভারডোজ় করে রাতে রোজ নেশা করি বলে। ওটা ছোট ব্যাপার। এই বন্দুকটা হাতে নিয়ে এইম করলে দেখবে— পুরো পরিস্থিতিটার কনট্রোল নিয়ে নেব। অন্য কেউ সামনে দাঁড়াতেই পারবে না।

    আশ্চর্য তাঁর কথা বিশ্বাসযোগ্য বলে আদৌ মনে করছে না বুঝতে পেরে মুকুন্দ অবস্থী আবার বললেন— শোনো হে যুবক। আমার উপর বিশ্বাস রাখো। হিংস্রতায় আমার কোনও জুড়ি নেই। বন্দুক আমার হাতেই সুন্দর, যেমন শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

    এরপরে আশ্চর্য আর কীই বা বলতে পারত?

    আবছায়া অন্ধকারে প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আগত অতিথি সুন্দর ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে গেছে সে কতটা জানে, আর কী কারণে বাকিটা জানে না। সে বলেছিল— শোনো আশ্চর্য, আমি সর্বজ্ঞ নই। আমি ঠিক ততটুকুই জানি যা আমার নির্মাতা ড. কিশিমেতো জুনিয়র জানেন, যা তাঁর টিম আমায় ফিড করিয়েছে। আমাদের ইউনিভার্সের টাইমলাইনে কী ঘটেছে তোমায় বলি। সেবার আন্দামান অভিযানে নিরুদ্দিষ্ট এরিককে যতদিনে খুঁজে পাওয়া যায়, ততদিনে বিলি গিলচার উধাও হয়ে গেছে। এরিককে পাওয়া গেছিল বিটিটু সদস্যদের অন্তর্বর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করবার পর, যেটা বিলি এমনভাবে লক করে দিয়েছিল, যে সেটা চালু করতে ড. কিশিমোতোকে তোকিয়ো ফেরত যেতে হয়েছিল। ফলে এরিককে মুক্ত করতে দেরি হয়েছিল অনেক। বিলির কী হয়েছিল আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে কেউ জানে না। সে হয় আত্মগোপন করেছিল, অথবা কোনও দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছিল। আমাদের মনে হয়, বিলি গিলচারই একমাত্র জানত যে ব্রহ্ম কোথায়। তাই বিলিকে পাওয়া যায়নি বলেই ব্রহ্মকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিলি হয়তো ব্রহ্মের পকেট থেকে যোগাযোগের ট্রানসমিটারটা বের করে নিয়ে নষ্ট করে ফেলেছিল। ফলে পরে কিশিমোতো তোকিয়োতে ফিরে কানেকশন চালু করলেও, ব্রহ্মের রিসিভার চালু হয়নি। এবার তোমায় আমি এরিকের সন্ধান বলে দেব, যেহেতু এরিককে কোথায় রাখা হয়েছিল তা আমরা তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেছিল বলেই জানি। তোমাদের কাজ হবে এরিকের কাছে আগে পৌঁছে বিলির জন্য অপেক্ষা করা। আমি এটা ঘটেছিল বলেই জানি, কারণ আমায় ফিড করানো হয়েছে ভবিষ্যৎ থেকে, বিলি একবার এরিকের কাছে আসবেই। মনে রেখ, বিলির থেকেই তোমাদের শেষ পর্যন্ত জানতে হবে ব্রহ্ম ঠাকুরের সন্ধান। তাঁর সন্ধান পেয়ে যদি তাঁকে সময়মতো উদ্ধার করতে পার, তবেই তোমাদের সময়পংক্তিতে বেঁচে থাকবেন ড: ব্রহ্ম ঠাকুর।

    ব্রহ্ম ঠাকুরের মাথার একপাশে যন্ত্রণা হচ্ছিল। মনে পড়ল, উড়ন্ত এক ইঁটের টুকরো এসে লেগেছিল কপালের পাশে। তবুও স্বাভাবিকভাবে হেসে তিনি ফুরফুরে মেজাজে বললেন— কেন বিলি? আমার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত তোমার পছন্দ হয়নি? তুমি কি রবীন্দ্র বা ব্রহ্ম, কোনও টেগোরকেই পছন্দ করো না? আচ্ছা, শর্মিলা টেগোরের কোনও সিনেমা দেখেছ তুমি? ট্রাই করে দেখবে? বাংলা চাইলে ‘অপুর সংসার’, হিন্দি চাইলে ‘কাশ্মীর কি কলি’…

    এরিক দত্ত যেখানে বন্দি ছিলেন, সেই গুপ্ত কারাগারের দেওয়ালে লুকনো মূল দরজাটার বর্ণনা হুবহু দিয়ে গেছিল ভবিষ্যৎ থেকে তথ্য নিয়ে আসা অন্য ব্রহ্মাণ্ডের অতিথি। সে বলেছিল ঠিক কেমন চেহারার চৌখুপ্পির ভেতরে গুলি করতে হবে, গুলি করলে পাটাতনটা কীভাবে ভেতরদিকে নেমে দিয়ে একটা সেতু তৈরি করে দেবে। শেষে সে পোর্ট ব্লেয়ারের একজন কনট্যাক্ট পার্সনের নাম ঠিকানা বলে। বলে দেয়, এই ঠিকানায় পৌঁছে গেলে যেকোনও রকম অভিযানে আশ্চর্যের আর কোনও অসুবিধে হবে না। লোকটা নাকি ভীষণ কাজের এবং বন্ধুবৎসল। ব্রহ্মের এবং ড. কিশিমোতোর বাবার পুরনো বন্ধু এই ব্যক্তি। নাম— ওঙ্গে চৌধুরী।

    সে রাতে আশ্চর্যরা বালিগঞ্জ ময়দান মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছতেই হেলিকপ্টার উড়েছিল। মুকুন্দ অবস্থীর কনট্যাক্টের জোর আছে, সহজেই বোঝা যায়। পোর্ট ব্লেয়ারের সামরিক বেস-এ হেলিকপ্টারটা ল্যান্ড করবার পর একটা জিপগাড়ি ড্রাইভারসমেত নিয়ে নেওয়া হল ওখান থেকেই। তারপর সেখান থেকে সকাল সকাল আ্যাবারডিন মার্কেটে পৌঁছে সটান ওঙ্গে চৌধুরির ঠিকানায় হাজির হল এই দু’জন।

    সুন্দর চেহারার এই যুবক, যার নাম আশ্চর্য এবং বুটিদার কালো ফেট্টি ন্যাড়া মাথায় বেঁধে নেওয়া বয়স্ক সাংবাদিক মুকুন্দ অবস্থী, ওঙ্গে চৌধুরীর দরজায় করাঘাত করলে চটপট উঠে এসে দরজা খুলে দেন ড. কিশিমোতো জুনিয়র। তিনি ভেবেছিলেন নিশ্চয়ই ব্রহ্ম ঠাকুর নির্দেশ পাঠিয়েছেন, সেই নির্দেশ নিয়েই এসেছে কেউ। সে কথাটাই তিনি আশ্চর্যকে জানালেন। বললেন যে, স্বয়ং ব্রহ্ম ঠাকুর তাঁকে ওঙ্গে চৌধুরীর কাছেই অপেক্ষা করতে বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত। আশ্চর্য বলল— আমি কার কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে এখানে আসছি, তা বলা নিষেধ। তবে আমি আসছি ব্রহ্ম ঠাকুরেরই স্বার্থে, তাঁর কলকাতার বাড়ি থেকেই। বিশ্বাস করুন, আমরা যদি এরিক দত্তকে না উদ্ধার করতে পারি সময়মতো, ড: ব্রহ্ম ঠাকুরকে আর খুঁজে পাওয়াই যাবে না। আর এরিক দত্ত বন্দি হয়ে আছেন সেলুলার জেলের এক ভূগর্ভস্থ গোপন অংশে। কীভাবে সেখানে যেতে হবে, সেখানে গিয়ে কী করতে হবে, সেসব আমাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আর দেরি করা একদম ঠিক হবে না। চলুন আমরা এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি।

    ২৯।

    ব্রহ্ম ঠাকুরের যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন তিনি মাঝআকাশে। একটা হেলিকপ্টারে বসে আছেন, দু’হাত বাঁধা। পা খোলা থাকলেও তা নাড়ানোর উপায় নেই, হেলিকপ্টারটায় ততটা জায়গাই নেই আসলে। ব্রহ্ম ঠাকুরের জ্ঞান ফিরলে তাঁর অবস্থাটা বুঝে নিতে খানিকটা সময় লাগল, তার আগেই তিনি উঠে দাঁড়াতে যেতেই পাশে বসা বিলি গিলচার বললেন— আহা কর কী কর কী! জ্ঞান ফিরে আসতেই হুল্লোড় শুরু করলে? মাথায় গুঁতো খাবে যে। হেলিকপ্টারে বেল্ট বেঁধে ভদ্রভাবে বসারই নিয়ম। তার উপরে তোমার হাতদুটোও তো বাঁধা আছে। তাই বলছি দাপাদাপি শুরু কোরো না আবার। না না, কিছু মনে কোরো না টেগোর, সে রকম অনুমতি তোমায় দেওয়া যাবে না।

    একটা চার সিটার হেলিকপ্টারে চড়ে ব্রহ্মরা উড়ে যাচ্ছেন সমুদ্রের উপর দিয়ে। পেছনের আসনে বিলি এবং ব্রহ্ম। সামনের আসনে বিলির সামনে বসেছেন চালক, ব্রহ্মের সামনে একজন তাগড়াই ব্যক্তি। নীচে দেখা যাচ্ছে ছোট বড় দ্বীপ। দ্বীপগুলোর বেশিরভাগেই ছেয়ে আছে ঘন সবুজ জঙ্গল আর পাহাড়। সবে ভোর হচ্ছে। দৃশ্যটা স্বর্গীয় পর্যায়ের সুন্দর।

    ব্রহ্ম ঠাকুরের মাথার একপাশে যন্ত্রণা হচ্ছিল। মনে পড়ল, উড়ন্ত এক ইঁটের টুকরো এসে লেগেছিল কপালের পাশে। তবুও স্বাভাবিকভাবে হেসে তিনি ফুরফুরে মেজাজে বললেন— কেন বিলি? আমার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত তোমার পছন্দ হয়নি? তুমি কি রবীন্দ্র বা ব্রহ্ম, কোনও টেগোরকেই পছন্দ করো না? আচ্ছা, শর্মিলা টেগোরের কোনও সিনেমা দেখেছ তুমি? ট্রাই করে দেখবে? বাংলা চাইলে ‘অপুর সংসার’, হিন্দি চাইলে ‘কাশ্মীর কি কলি’…

    ‘কাশ্মীর’ শব্দটা উচ্চারণ করেই ব্রহ্মের ভুরুটা কুঁচকে গেল। তাঁর যেন মনে পড়ে গেল অতীতে ঘটে যাওয়া কী সমস্ত ঘটনার কথা। তিনি মুখ নামিয়ে নিজের পরনের আলখাল্লার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

    বিলি গিলচার বললেন— আমি কী সিনেমা দেখব না দেখব, সে তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। তোমার ভবিষ্যৎ যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটুকু সময়ে চলো একটু বরং অতীতটাই ঝালিয়ে নিই। দু’রকম অতীতের কথা বলা যাক। দু’টিই তোমার কাজ এবং ভাবনা সংক্রান্ত। আমার কোনও দায় নেই এই সব অতীতের কুকর্মে। আচ্ছা সাম্প্রতিক অতীতটা নিয়েই আগে কথা বলি। কী ভেবে এতগুলো বিষনিরোধক ওষুধ আর অ্যাম্পিউল তুমি পকেটে রেখেছিলে টেগোর? কাল রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে চাপাচাপিতে ওগুলো আমার হাতে ফুটে বেকার রক্তারক্তি কাণ্ড হল! যত্তসব!

    ব্রহ্ম ঠাকুর জবাব না দিয়ে মিটিমিটি হেসে বিলির দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

    বিলি বললেন— ও আচ্ছা। তুমি বলবে না। তবে আমিই বলি। তুমি তো জানোই, এখানকার কিছুকিছু দ্বীপের অসভ্য অধিবাসীরা তাদের দ্বীপে অবাঞ্ছিত অতিথিদের সঙ্গে ঠিক কেমন ব্যবহার করে। স্ট্রিকনিন জাতীয় বিষে ডুবিয়ে নেওয়া বাঁশের তৈরি তীর গেঁথে দেয় অতিথির শরীরে। জারোয়া আছে, এই মুহূর্তে তাদের চেয়েও অসামাজিক এবং হিংস্র সেন্টিনেলিজ়রা আছে। তুমি আমাকে অতি বদলোক বলে মনে করো, তাই না টেগোর? সে কারণেই তুমি ভেবেছিলে, তুমি আমার হাতে বন্দি হলে আমি তোমায় সেরকম কোনও একটা দ্বীপে নির্বাসনের শাস্তি দেব। কী টেগোর? বলো, তুমি ঠিক এরকম ভেবেই এই অ্যাম্পিউলগুলো সঙ্গে নাওনি?

    ব্রহ্ম মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন— এই কপ্টারে চড়িয়ে হাত বেঁধে তুমি তো সেরকমই একটা দ্বীপে আমায় নিয়ে চলেছ বিলি। তুমি তো নিজেই প্রমাণ করছ যে তুমি বদলোক শুধু নও, অতিবদলোক, ধুরন্ধর এবং শয়তান…

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook