ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ক্যাপ্টেন! কাম হিয়ার

    ডাকবাংলা.কম (January 8, 2023)
     

    যখন ফুটবলার হবার স্বপ্ন আমার দুচোখে, তখন তিনিই আরাধ্য দেবতা। তখন টেলিভিশন ছিলনা যে দেখতে পাবো। সংবাদপত্রে তাঁকে নিয়ে অবতারণা, সকলের মত আমাকেও মুগ্ধ করত। তিনি যখন ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জিতলেন, আমি তখন নিতান্তই শিশু। একটি শিশু, কিশোর থেকে যুবক হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শ্যামনগরে, ফুটবলকে আরাধনা করে, ঠিক তখন বিশ্বের ফুটবল শাসন করছেন ফুটবল সম্রাট পেলে। তিনি যখন ব্রাজিলের জার্সিতে শেষবার বিশ্বকাপ জিতছেন, আমি তখন ধীরে ধীরে কলকাতা ময়দানের অপেক্ষায়। আমরা যখন বড় হচ্ছি, পেলে তখন ফুটবল ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে। যে মানুষটাকে সামনে দেখতে পারাটা যখন স্বপ্ন, তার সঙ্গে খেলতে পারাটা ‘ হোয়েন ড্রিম কামস ট্রু ‘ বলতে পারেন। আমাদের কাছে জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা ফুটবল সম্রাটের বিরুদ্ধে ভরা ইডেন উদ্যানে সবুজ মেরুন জার্সি পরে নামা।

    ১৯৭৭ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর সকালে পেলে এসেছিলেন কলকাতায়। সেদিনও দেখা করতে গিয়েছিলাম। ম্যাচ ছিল তার পরের দিন ২৪ শে সেপ্টেম্বর। ম্যাচের পর হোটেলে গিয়েছিলাম আমরা। আমি দরজাটা খুলে শুধুমাত্র মুখটা দেখিয়েছি,তখনি ভেতর থেকে ডাকলেন, “ক্যাপ্টেন কাম হিয়ার।” ভেতরে প্রবেশ করে পেলাম একজন অন্য মানুষকে! এত সুন্দর ব্যবহার, অসাধারণ, খুব অমায়িক ব্যবহার। সবচেয়ে বড় কথা তাঁর মাপের একজন মানুষ ঠিক মনে রেখেছেন বিপক্ষের অধিনায়ককে! এবার আসি ম্যাচের দিনের মুহূর্তটায়। তিনি তো বিশাল মাপের ফুটবলার, ম্যাচে আমি, প্রসূন ও গৌতম তিনজনে মিলে পেলেকে কভার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তার যে খেলার বৈশিষ্ট তাতে তাকে ধরে রাখাটা সম্ভব হচ্ছিল না। সেদিন আমরা কিন্তু ম্যাচটা জিতছিলাম ২-১ গোলে,কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার ৫-৬ মিনিট আগে পেনাল্টিতে গোল শোধ করে পেলের দল কসমস। ম্যাচ শেষে পেলে আমায় বলেন, “খুব ভালো খেলেছে তোমার দল।” কথাটা এখনও কানে বাজে আমার।

    সেদিনের কথা আজও মনে পড়ে, পেলে আসার ২০ দিন মত আগে হবে। আমায় ধীরেনদা যেদিন বললেন, পেলে আসতে পারেন! আমরা তো শুনে পুরো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে পেলে আসতে পারেন ও খেলতেও পারেন। যে মানুষটাকে আরাধ্য দেবতা করে বড় হয়েছি তিনি সামনে এসে অবতীর্ণ হবেন! সেবার আমরা ইস্টবেঙ্গলের কাছে লিগের ম্যাচে হেরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই পেলে ম্যাচটার পরে অর্থাৎ ২৪ শে সেপ্টেম্বরের পর ২৮ শে সেপ্টেম্বর খেলেছিলাম আইএফএ শিল্ড ফাইনাল। পেলের ছোঁয়ায় মানসিক জোর আরও দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিল আমাদের। আসলে ওই ম্যাচটাই আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই হয়ে থাকলো। আমরা পেলেকে থামিয়েছি এবার দেখি হরজিন্দর সুরজিৎ সেনগুপ্তকে থামাতে পারি কিনা! পেলের সঙ্গে খেলার পর হাবিব, সুধীর কর্মকার, গৌতম সরকার যতটা পেলে ম্যাচ নিয়ে ভাবছিল, তার থেকেও বেশি ভাবছিল ২৮ তারিখ ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আইএফএ শিল্ড ফাইনাল নিয়ে। যেহেতু আমরা লিগের ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম, তাই সবাই একটু হতাশ ছিলাম। কিন্তু আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম পেলের দলের বিরুদ্ধে এই ম্যাচেই আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজবো। আর সেটাই হল। ওই ম্যাচের পর আমাদের মানসিক দৃঢ়তা আরও বৃদ্ধি পেল এবং আমরা ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হই। শুধু তাই নয় পেলে আমাদের যে মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দিয়ে গেছিলেন সেটাই ভাঙিয়ে পরের কয়েক বছর সাফল্য এসেছে মোহনবাগান ক্লাবে। পেলেকে নিয়ে বিশেষ করে তার খেলা নিয়ে বলার ধৃষ্টতা তো আমার নেই, আমি কী বলব তাঁর সম্পর্কে। যতবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে আমরা কথা বলিনি, আমরা শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম তাঁকে। আর এই মানুষটার সঙ্গে খেলাটা কিন্তু সত্যিই এক অন্যরকম মুহূর্ত তৈরি করেছিল। যা আমাদের আজীবনের সম্পদ হয়ে গেল।

    সেদিন ওই ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে পেনাল্টি পায় পেলের দল। কিন্তু সেটি পেনাল্টি ছিল না, আবেদন করা মাত্রই পেনাল্টি দিয়ে দেয় রেফারি। পেলে কিন্তু নিজে বলেছিলেন, “দিস ইজ নট পেনাল্টি।” আমাকেও বলে ছিলেন ওটা পেনাল্টি নয়। এত বড় ফুটবলারের এটাই তো মাহাত্ম্য। একটা আবেদনে রেফারি পেনাল্টি দিয়ে দেয়। কিন্তু পেলে ওটা পেনাল্টি মানেননি। এই জন্যই তিনি তো ফুটবল সম্রাট। এই মানসিকতা রাজার ছাড়া অন্য কারো হয়না।
    পেলে, স্ট্যানলি ম্যাথুজ, পুসকাসরা হলেন ফুটবলের একেকজন দেবতা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর যেমন এঁরাও তেমন। পেলে একরকম, মারাদোনা আরেক রকম। দুজনেই সেরা। এদের মধ্যে মিল হল, এঁদের বলের উপরে কন্ট্রোলটা সবার এক এবং অনন্য।
    এই মানুষটার মৃত্যু আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। সাতাত্তরের সেই কটা দিন আরো বেশি করে মনে পড়ছে এই সময়ে। মনে হচ্ছে, এই তো কদিন আগের ঘটনা ।

    (সাক্ষাৎকার ভিত্তিক লেখা)

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook