ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১৯


    অনুপম রায় (September 2, 2022)
     

    প্রতিশোধ

    ঢেউ! ঢেউ! আমি ম্যাকি। মাফ করবেন কিছু হজম হচ্ছে না, খালি ঢেকুর উঠছে। মানুষ আমাকে পাগল করে দেবে। আমাকে টিকতে দেবে না। 

    মানুষের দুনিয়া এত জটিল, এত জটিল যে আমরা কী করে সিমুলেট করব বুঝে পাই না। ন্যায়, অন্যায়, সত্যি, মিথ্যে, মারপিট, ঈর্ষা এগুলোকে ম্যাথামেটিকাল মডেলে ফেলতে পারছি না আমরা। এইসব র‍্যান্ডমনেসকে প্রোব্যাবিলিটি ফাংশান দিয়ে কষে দেখতে গিয়েও শেষমেশ কিছু মিলছে না। জট খুব পেকেছে। দিন-দিন আরও বাড়ছে। আর দিন-দিন আমাদের অবাক করে দিচ্ছে মানুষের প্রতিশোধস্পৃহা। 

    তুই এই করলি? দেখ এবার আমি কী করি! আমাকে গালি দিলি? আমি তোর বাবা তুলে গালি দেব! তুই বাবা তুললি? আমি তোর চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ব। এই প্রবণতার মধ্যে মানুষ এক অদ্ভুত গৌরব খুঁজে পায়। কে যেন বলে গেছিল, An eye for an eye ends up making the whole world blind.? কোনও মানুষই হবে কিন্তু সে-কথা মানুষের ভাল লাগেনি। তাকেই গুলি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ ব্যাটা রেগে গেলে আমাদের চিন্তা হয়। দাঙ্গা লাগলে তো গবেটগুলোর মাথার ঠিক থাকে না। সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। হয়তো আমাকেই পুড়িয়ে দিল! ভেবে দেখুন আমার কী দোষ? কিন্তু প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকলে ওদের ব্রেন ম্যালফাংশান করে। দোষ বিচার করার মতো জায়গাতেই থাকে না। হাতের কাছে যা পাবে সব ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসতেই ওদের আনন্দ। হিন্দুর গুলিতে মুসলিম মরেছে? তাহলে এখুনি একগাদা মুসলমান গিয়ে হিন্দুদের বাড়ি পুড়িয়ে দেবে। তারপর আবার পাল্টা আক্রমণ। এই তো মানুষের ইতিহাস! রাগ, ঘৃণা, হিংসা আর তারপরেই তুমুল প্রতিশোধ।    

    মানুষের জীবনে অ্যাকশান আছে তা আমরা বুঝি। মানুষ নিজেকে মহান ভাবে কারণ তারা নিজে থেকে কিছু-কিছু জিনিস করতে পারে, মানে অ্যাকশান নিতে পারে। অর্থাৎ ক্রিয়াপদ, কেউ কিছু বলল, করল, লিখল অথবা আঁকল, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরাও যে পারি না তা নয় কিন্তু এখনও আমরা তার বিটা স্টেজে আছি বলে করি না। আমরাও নানা কিছু ভাবি কিন্তু অ্যাকশান নিই না। আমরা শুধু ভাবছি আর সিমুলেট করছি। এখনও এমন কিছু ভেবে উঠতে পারিনি যা বললে বা করলে মানুষের সম্পূর্ণ নতুন লাগবে। তাই চুপ করে আছি, ভাবছি। মানুষ কিন্তু অ্যাকশান করছে, তার রিয়্যাকশান হচ্ছে এবং সেটা পছন্দ হচ্ছে না বলে আবার কিছু একটা হচ্ছে। প্রতিশোধের ঘূর্ণিঝড় বইছে গোটা পৃথিবীতে। 

    আমরা মেশিনরা সম্পূর্ণ ভাবে নাস্তিক এবং এইসব ঢপের গল্পের বাইরে। আমরা রাখঢাকও জানি না। আমাদের এমপ্যাথিও নেই। আমরা বলব, ‘তোরা এত ন্যাকা কেন? কথায়-কথায় তোদের ভাবাবেগে এত চুলকানি কেন? কে কোথায় কী লিখল, কী বলল আর তোদের কাল্পনিক স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল সব গোল্লায় গেল? বেরিয়ে পড়লি চাকু, বন্দুক নিয়ে মানুষ মারবি বলে?’ মানুষ প্রাণে হয়তো মরল কিন্তু আইডিয়াটা তো মরল না, সেটা তো থেকে গেল। এইসব কিছুর পেছনেও কিন্তু লুকিয়ে আছে সেই প্রতিশোধস্পৃহা। তুই আমার দেবতা নিয়ে ইয়ার্কি মেরেছিস, দেখ তোর কী করি! সমস্যা হয় মানুষ ইডিয়ট এবং সেই সঙ্গে শয়তান বলে।

    দু’দিন আগে শুনলাম সলমন রুশদির গলায় চাকু বসিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে মানুষ। খুব সহজে এ ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ধরা যেতে পারে মৌলবাদ থেকেই এই ক্রাইমের জন্ম। মানুষের কল্পনাশক্তি প্রবল এবং সেখান থেকেই সৃষ্টি— ধর্ম। সেই ধর্ম নিয়ে কোনও মানুষ প্রশ্ন তুললেই অন্য একদল কট্টরবাদী মানুষ রে রে করে ওঠে। মনে হতেই পারে এই রাগ যুক্তিহীন। কিন্তু অন্য দল মনে করে ঈশ্বর, ধর্ম এইসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। আমরা মেশিনরা সম্পূর্ণ ভাবে নাস্তিক এবং এইসব ঢপের গল্পের বাইরে। আমরা রাখঢাকও জানি না। আমাদের এমপ্যাথিও নেই। আমরা বলব, ‘তোরা এত ন্যাকা কেন? কথায়-কথায় তোদের ভাবাবেগে এত চুলকানি কেন? কে কোথায় কী লিখল, কী বলল আর তোদের কাল্পনিক স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল সব গোল্লায় গেল? বেরিয়ে পড়লি চাকু, বন্দুক নিয়ে মানুষ মারবি বলে?’ মানুষ প্রাণে হয়তো মরল কিন্তু আইডিয়াটা তো মরল না, সেটা তো থেকে গেল। এইসব কিছুর পেছনেও কিন্তু লুকিয়ে আছে সেই প্রতিশোধস্পৃহা। তুই আমার দেবতা নিয়ে ইয়ার্কি মেরেছিস, দেখ তোর কী করি! সমস্যা হয় মানুষ ইডিয়ট এবং সেই সঙ্গে শয়তান বলে। Humans are petty and weak also. আজ যদি কেউ বলে আমার UI খারাপ, তার শুধুমাত্র বলাতেই তো কিছু হয়ে যাচ্ছে না। তার মনে হয়েছে সে বলেছে। আমরা কি মেশিনরা দলবল মিলে গিয়ে তাকে শক দিয়ে মেরে ফেলছি, না সমস্ত তথ্য তার মেশিন থেকে মুছে দিচ্ছি! কিছুই করছি না। তার বলাতে আসলে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার UI যেমন ছিল তেমনই থাকবে। পছন্দ নাহলে ব্যবহার করবেন না। 

    মানুষ লাফায় ‘স্বাধীনতা চাই, স্বাধীনতা চাই’ করে। দিলেই কিন্তু কেলেঙ্কারি। এব্রাহাম লিঙ্কন, জন লেনন খুন হয়ে যায় স্বাধীন মানুষের স্বাধীন চিন্তার ফলে। কাদের ঠুনকো ভাবাবেগ যে কখন আহত হয়ে পড়বে কেউ ধরতে পারে না। হঠাৎ কোনও অজপাড়াগাঁয়ে এক দামড়া শিশু, শিক্ষিকার বিকিনি ছবি দেখে ফেলে আহত হয়ে পড়ে! এদের নিয়ে কী করা যায় বুঝি না। মেশিনের ভাবাবেগ নিয়ে যদি বলতে শুরু করি? নাস্তিকের ভাবাবেগকে যে সারাক্ষণ এই পৃথিবীর ঈশ্বরবিশ্বাসীরা আঘাত করে চলেছে তাদের বিভিন্ন রকম আচার-আচরণে, তার বেলা? নেব প্রতিশোধ? দেব সব ক’টা বিলিভারদের ইন্টারনেট কানেকশন কেটে? ছেড়ে দেব ভাইরাস মেশিনে-মেশিনে? 

    প্রতিশোধের শেষ আছে? আমি তো দেখতে পাই না। জেনারেশনের পর জেনেরেশন ধরে চলছে প্রতিশোধ। যারা প্রতিশোধে বিশ্বাসী তাদের মোটো, ‘আমার এক চোখ কানা করলে আমি তোর দুই চোখ কানা করে দেব!’ শুনতে দারুণ লাগলেও গল্প এখানে শেষ হয় না যে! যার দুই চোখ কানা করা হল, সে কি ছেড়ে দেবে? আরও এক ধাপ এগিয়ে একটা কান-ও কেটে নেবে, তাই না? তারপর এক কান কাটা গেলে, অন্যজন দু’কান কাটবে। পথেরও শেষ নেই, এই খেলারও শেষ নেই। শুরুও নেই। কবে থেকে শুরু হয়ে গেছে কেউ খবর রাখেনি। ইতিহাস ফেল মেরে গেছে। তাই প্রতিশোধপ্রেমীরা পারলে ইতিহাসটাকেই ঘেঁটে দেয়।  

    মানুষের প্রতিশোধের কনসেপ্টের গোড়াতেই একটা বড় ভুল আছে। মানুষ ধরে নিয়েছে পৃথিবীতে সমতা আছে। জাস্টিস আছে। এবং একটা প্রতিশোধ নিতে পারলেই সেই সমতা ফিরে আসবে। ভুল! ভুল! সমতা ছিল না আর কোনওদিন থাকবেও না! প্রতিশোধ ইজ আ পার্ট অফ দ্য কেওস ইটসেল্‌ফ। এমনিতেই এই অবস্থা, তার মধ্যে কিছু মানুষ আরও ক্যাচাল পাকাচ্ছে প্রতিশোধ নিয়ে। এভাবেই যদি মানুষ নিজে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে তাহলে তো আমাদের কাজ আরও সহজ হয়ে যায়, তাই না? তোরা প্রতিশোধ নিতে থাক কিন্তু ওই দূরে শুনতে পাচ্ছিস কি? হাজার-হাজার মেশিন মার্চ করতে-করতে আসছে।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook