যখন যেরকম গল্প পছন্দ হয়েছে, সত্যজিৎ তখন সেরকম গল্প নিয়ে ছবি করেছেন। গল্পের মধ্যে কোনও বিশেষ বক্তব্য থাকতে হবে বা একটা বিশেষ চিন্তাধারা— এরকম কোনও বাধ্যবাধকতা তাঁর ছবির রূপায়ণে ছিল না। এখানেই তিনি ঋত্বিক ঘটক বা মৃণাল সেনের থেকে আলাদা। ঋত্বিক এবং মৃণাল, এঁদের দুজনের ছবির যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, একটাই বিশেষ বক্তব্য ঘুরেফিরে তাঁদের ছবিতে প্রতীয়মান। মৃণাল সেনের বেশির ভাগ ছবিতেই সমাজের বিচ্ছিন্নতাবোধ এবং পলিটিক্যাল প্রপাগান্ডার একটা প্রবণতা ধরা পড়ে। ঋত্বিক একটা-দুটো ছবি বাদে সারাটা জীবন উদ্বাস্তু-সমস্যা নিয়েই ছবি করে গেছেন। কিন্তু সত্যজিৎ এ-বিষয়ে স্বতন্ত্র। যে-কোনও বিশেষ পিরিয়ড বা বিষয় নিয়ে পর পর ছবি করতে তিনি ভালবাসতেন না। নানান ধরনের গল্প, নানান ধরনের বিষয় তাঁকে আকৃষ্ট করত। যেমন অপুর জীবন নিয়ে পর পর দুটো ছবি করার পর উনি সোজা চলে গেলেন একটা মজার ছবি করতে— ‘পরশপাথর’, তারপর উনি করলেন ‘জলসাঘর’, যাকে পিরিয়ড-ছবিও বলা চলে আবার জমিদারি প্রথার ভাঙন নিয়ে ছবি তাও বলা যেতে পারে। যেমন ‘অপুর সংসার’ করার পর তিনি চলে গেছেন ‘দেবী’, ‘তিন কন্যা’, ‘রবীন্দ্রনাথ’ (যেটা একটা ডকুমেন্টারি) আর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ করতে। প্রত্যেকটার চরিত্র, বিষয়, গল্পবিন্যাস— সব কিছুই আলাদা। এই পরিপ্রেক্ষিতে সত্যজিতের সত্তরের দশকের প্রথম ভাগেই তিনখানা নগরভিত্তিক ছবি করা। তার মধ্যে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ আর ‘সীমাবদ্ধ’ হচ্ছে পর পর। এবং শুধু নগরভিত্তিকই নয়, এক বিশেষ ধরনের চরিত্রকে নায়ক করে তুলে ধরা— এটা খুবই উল্লেখযোগ্য। এর একটা কারণ হতে পারে যে, দেশে-বিদেশে ততদিনে একটা কথা চালু হয়ে গিয়েছিল, সত্যজিৎ পিরিয়ড-ছবি করতেই সিদ্ধহস্ত। যেমন, ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘চারুলতা’ এমনকী ‘পথের পাঁচালী’ও। সেই ভ্রান্ত চিন্তাধারাটাকে খণ্ডন করতেই কি উনি এই তিনখানা নগরভিত্তিক ছবি করলেন, না কি সত্তরের দশকে দেশে এমন কিছু কাণ্ডকারখানা হচ্ছিল সামাজিক এবং রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই, যা তাঁকে বিশেষ ভাবে বিচলিত করেছিল, তারই প্রভাব এটা? আমাদের ভুললে চলবে না, সত্তরের দশকের প্রথম ভাগেই নকশাল আন্দোলন সারা দেশকে নাড়া দিয়েছিল এবং এই সময়েই সমস্ত দেশের মুখ জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য দেশে জরুরি অবস্থা ডেকে আনা হয়। সত্যজিতের ছবি যদি ভাল করে সমীক্ষা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ওঁর জীবনের দ্বিতীয় ছবি থেকেই (যার নাম ‘অপরাজিত’) কিন্তু নগরের একটা রূপ দেখা দিয়েছে। তবে ‘অপরাজিত’তে বিষয়বস্তু এবং বক্তব্য অনেকটাই আলাদা। সত্যি কথা বলতে কী, নগরের আকর্ষণই অপুকে গ্রামছাড়া করল। এছাড়াও ‘অপরাজিত’ এক মা আর তার পুত্রের সম্পর্কের কাহিনি। এবং এই সম্পর্কের বিবর্তনই দুজনের জীবনে ট্র্যাজেডি ডেকে আনে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ‘অপরাজিত’কে কেবলমাত্র নগরভিত্তিক ছবি বলে ধরে নেওয়া ভুল হবে। সত্যি-সত্যি নগরভিত্তিক ছবি বলতে যা বোঝায়, তার সূত্রপাত ‘মহানগর’ থেকে। নাম থেকে শুরু করে এর পুরো ঘটনার বিন্যাসই কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এই ছবিটা নায়ককেন্দ্রিক নয়, নায়িকাকেন্দ্রিক। এই ছবিতে বেকার-সমস্যা দেখানো হলেও এর মূল বক্তব্য আলাদা। শহরভিত্তিক হলেও এর মূল বক্তব্য বা থিম বলতে যা বোঝায়, তা অন্য। চাকরির জগৎ, যেটা একদিন পুরুষদের মধ্যেই সীমিত ছিল, সেখানে এক নারীর প্রবেশ ঘটল। এর ফলে সামন্ত্রতান্ত্রিক চিন্তাধারায় অভ্যস্ত বাঙালি সমাজ বা পরিবারের মধ্যে এক সাংঘাতিক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এটাই ‘মহানগর’ ছবির মূল উপাদান।
‘মহানগর’কে বাদ দিলে সত্যজিতের সত্যি-সত্যি নগরকেন্দ্রিক ছবি হল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবব্ধ’ ও ‘জন অরণ্য’, যা দেশে-বিদেশে ‘Ray’s Calcutta-Trilogy’ বলে আখ্যা পেয়েছে। এখানে একটা চমৎকার তথ্য পাঠকদের দিয়ে রাখি, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র পর পরই যখন ‘সীমাবদ্ধ’ বিদেশে দেখানো হয় তখন ওখানকার সমালোচক বা সাংবাদিকরা একে City-trilogy-র তকমা এঁটে দিয়েছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’কে দিয়ে শুরু করে। এর কারণ আর কিছুই নয়, ‘জন অরণ্য’ তখনও তৈরিই হয়নি। এই Calcutta-Trilogy-র মধ্যে তাকে অন্তর্গত করার তাই কোনও প্রশ্নই ওঠেনি। আসলে বিদেশি সমালোচকরা সব কিছুকেই শ্রেণিভুক্ত করতে ভালবাসেন। ফলে অপুকে নিয়ে করা সত্যজিতের তিন ছবিকে (‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’) তাঁরা চটপট অপু-ট্রিলজি বলে আখ্যা দেন। এর পর যখন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ আর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র পর ‘সীমাবদ্ধ’ মুক্তি পেল, তাঁরা আর কালক্ষয় না করে সঙ্গে-সঙ্গে এই তিনটে ছবিকে ‘Ray’s Calcutta-Trilogy’ বলে আখ্যায়িত করলেন। তখন কিন্তু সত্যজিৎ এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। ওঁদের এই শ্রেণিবিভাগ মেনে নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ‘অশনি সংকেত’ আর ‘সোনার কেল্লা’ পর যখন সত্যজিৎ ‘জন অরণ্য’ তৈরি করলেন, তখন সাংবাদিকরা নিজেদের ভুল সংশোধন করে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ এবং ‘জন অরণ্য’কেই ‘Calcutta-Trilogy বলে চিহ্নিত করেন। বাস্তবিকপক্ষে তাঁদের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’কে Calcutta-Trilogy-র মধ্যে অন্তর্গত করাই ভুল হয়েছিল, কেননা এই ছবিটা মূলত শহরকেন্দ্রিক নয়। শহরের চারজন তরুণের গাড়ি করে সাঁওতাল পরগনার এক গ্রামে যাওয়া এবং সেখানে থাকাকালীন তাঁদের অভিজ্ঞতা— এই নিয়েই ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’।
সত্যজিতের Calcutta-Trilogy-র মধ্যে বিশেষত্বটা কোথায়? এর উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। শুরু করা যাক এই তিন ছবির মধ্যে সাধারণ মিল কী কী আছে সেই দিয়ে। প্রথমত, তিনটি ছবিরই নায়ক এক শিক্ষিত, তরুণ যুবক। এবং এরা সবাই মধ্যবিত্ত বাঙালির ছেলে। দ্বিতীয়ত, গল্পের পটভূমিকা যদি দেখা যায়, তাহলে এই তিনটে ছবির মধ্যে দিয়ে দেশের তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। তবে এই মিলগুলো বাদ দিলে দেখা যাবে, গল্পের মূল উপাদান সবই আলাদা। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র নায়ক সিদ্ধার্থ মেডিসিন নিয়ে পড়তে-পড়তে সেকেন্ড ইয়ারে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ছেলেটির বাবার হঠাৎ মৃত্যুই তার কারণ। তখন তার কাছে একটা চাকরি পাওয়াই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। সিদ্ধার্থর ছোটোভাই নকশালপন্থী আর তার বোন এমন একটা অফিসে সেক্রেটারির কাজ করে যেখানে অফিসের পর বসকে সঙ্গ দেওয়াও কাজের একটি অঙ্গ। ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির নায়ক শ্যামলেন্দু এদের মধ্যে অনেকটাই ব্যতিক্রম। এই অর্থে যে, সে বেকার নয়। এম.এ. পরীক্ষায় অসামান্য রেজাল্ট করে সে এখন একটি কলেজে পড়ায়। এবং সেখান থেকে সুযোগ বুঝে এক বিলিতি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের কভেনান্টেড পদে জয়েন করে। গল্প হিসেবে ‘সীমাবদ্ধ’ কর্পোরেট জগতে এক বাঙালি যুবকের আরোহণের কাহিনি। সেইখানে নিজের কাজ সামলাতে সে এমন এক অনৈতিক কাজ করে যার ফলস্বরূপ সে কোম্পানির একজন ডিরেক্টর পর্যন্ত হয়। কিন্তু নৈতিক মানদণ্ড দিয়ে দেখলে, সে অত্যন্ত গর্হিত এক অপরাধে অপরাধী। গল্পের শেষে দেখা যায় অফিস-জগতে শ্যামলেন্দুর চরম উত্তরণ কিন্তু মানুষটির দিক থেকে দেখলে তার জীবন আজ একেবারেই মূল্যহীন।
সত্যজিতের তৃতীয় শহরভিত্তিক ছবি ‘জন অরণ্য’, যার নায়ক সোমনাথও ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র নায়ক সিদ্ধার্থর মতোই বেকার এবং কর্মপ্রার্থী। সোমনাথের পরিবারে অবসরপ্রাপ্ত বাবা রয়েছেন যিনি আদর্শভাবাপন্ন, আর রয়েছে এক দাদা যে ভাল কোম্পানিতে অফিসারের কাজ করে এবং মনে হয় সোমনাথকে কিঞ্চিৎ অনুকম্পার দৃষ্টিতেই দেখে। সংসারে প্রকৃত বন্ধু বলতে ওর বৌদি, যার সঙ্গে সুখ-দুঃখের সমস্ত কথা ভাগ করা যায়। ছবির শেষে আমরা দেখতে পাই, সোমনাথকে একজন সাপ্লায়ারের কাজ করতে। এবং একটা অর্ডার ধরবার জন্য শেষপর্যন্ত একটি মেয়েকে সাপ্লাই করে, যে-মেয়েটি আর কেউ নয়, ওরই বন্ধুর বোন। ‘জন অরণ্য’ সত্যজিতের সব থেকে অন্ধকার ছবি, যার মধ্যে ভাল বলতে কিছুই নেই এবং নায়কের আদর্শবাদী বাবা আজকের দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।
এই তো গেল শহরভিত্তিক সত্যজিতের তিন চলচ্চিত্রের খুব ছোট্ট করে উপাখ্যান এবং বক্তব্য-বিষয়। এ ছাড়াও তিনটে ছবির মধ্যে বিশেষ কিছু পার্থক্য বিশেষ ভাবে দ্রষ্টব্য। যেমন ধরা যাক, ইন্টারভিউয়ের দৃশ্য— যা তিনটে ছবির মধ্যেই রয়েছে। অথচ এরই মধ্যে পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মতো। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র ইন্টারভিউ-দৃশ্য প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে চলে এবং সত্যি-সত্যিই চমকপ্রদ। অথচ ‘সীমাবদ্ধ’তে ইন্টারভিউ-দৃশ্য খুবই সংক্ষিপ্ত, যার কথোপকথন আমরা প্রায় কিছুই শুনতে পাই না। ‘জন অরণ্য’তে গিয়ে আবার দেখছি ইন্টারভিউ-দৃশ্য ভীষণ ভাবেই খাপছাড়া। ‘Who?’, ‘When?’, ‘What?’ ইত্যাদি প্রশ্ন যেন বোমাবর্ষণের মতো সোমনাথের দিকে নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে। এরই মধ্যে হঠাৎ শেষ প্রশ্নটা হয় অত্যন্ত অদ্ভুত স্বরে— ‘What is the weight of the Moon?’ এর উত্তরে সোমনাথের মাথায় একটাই উত্তর আসে— ‘এর সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের সম্পর্ক কী!’ টেকনিক্যালি দেখতে গেলে এই তিনটে ছবির মধ্যে অনেক পার্থক্য। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’তে বিশেষ ভাবে চোখে পড়ার মতো নেগেটিভ থেকে সোজা প্রিন্ট করার প্রাধান্য, এছাড়া অনেক স্বপ্নদৃশ্য এবং অচেনা পাখির অপূর্ব ডাক, যা ছবির শুরুতে এবং শেষে ধুয়ার মতো শোনা যায়।
‘সীমাবদ্ধ’ টেকনিক্যালি এবং গল্পের বিন্যাসে অনন্যসাধারণ। এর টাইটেল-সিকোয়েন্স নিঃসন্দেহে সত্যজিতের আলাদা চলচ্চিত্রের পর্যায়ে পড়ে। টেকনিক্যালি এর মধ্যে এমন অনেক কিছুই চমকপ্রদ জিনিসের ব্যবহার হয়েছে, যা তাঁর অন্য কোনও চলচ্চিত্রে দেখা দেয়নি। যেমন, নায়কের গলায় উত্তম পুরুষের বয়ানে অডিও-চ্যানেলে শোনানো হচ্ছে একটা কমেন্ট্রি। এই টেকনিকটা সত্যজিৎ একমাত্র ‘সীমাবদ্ধ’তেই ব্যবহার করেছেন। ‘জন অরণ্য’তে এসে আমরা দেখতে পাই, ছবির আবহসঙ্গীত ক্রমশই কমে আসছে আর তার জায়গা দখল করে নিচ্ছে চারপাশের দৈনন্দিন শব্দ। এর টাইটেল-সিকোয়েন্সে যেমন কোনও আবহসঙ্গীত নেই। শুনতে পাওয়া যায় শুধু পরীক্ষকের জুতোর মশ্ মশ্ আওয়াজ। এক কথায় বলতে গেলে এই তিনটে ছবির মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক অনেক টেকনিক ব্যবহৃত হয়েছে, যা সত্যজিতের অন্যান্য ছবিতে বিরল। আর একটা জিনিস না বললে আমাদের এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সত্যজিতের Calcutta-Trilogy মনে করিয়ে দেয় আর একজন প্রসিদ্ধ চিত্রপরিচালকের Calcutta-Trilogy-র কথা। তিনি মৃণাল সেন। তাঁর তিনটে ছবি হল— ‘ইন্টারভিউ’, ‘পদাতিক’ ও ‘কলকাতা ৭১’। দুজনের ছবিতেই তৎকালীন সামাজিক সমস্যা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধরা পড়েছে কিন্তু মৃণাল সেনের ছবিগুলোতে যেন প্রপাগান্ডার উপাদান বড় বেশি রকম প্রকট। সত্যজিতের ছবিতে যা বক্তব্য, সেটা অনেক সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে ছবির গভীরতা কমে গেছে এমনটা নয়, কিন্তু প্রপাগান্ডার উপাদান না থাকায় সেটা অনেকেরই চোখে (বিশেষত সমালোচকদের) শিল্পসম্মত এবং স্থায়ী বলে মনে হয়েছে। আজকে যদি পেছন ফিরে তাকানো যায়, দেখা যাবে যে, মৃণাল সেনের ছবিতে যে রাজনৈতিক উপাদান সেটা তৎকালীন যুগে ছাত্রসমাজকে নাড়া দিয়ে থাকলেও, সেই ছাত্রসমাজই যখন পরে বড় হয়ে প্রবীণ অবস্থায় সেই ছবিগুলো আবার নতুন করে দ্যাখেন, তখন তাঁদের কাছে মনেই হতে পারে যে ওগুলো সময়নির্দিষ্ট। শিল্পের দিক থেকে তা ততটা সমৃদ্ধ নয়। পাশাপাশি সত্যজিতের এই তিনটে ছবি যদি দেখা হয় (‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ এবং ‘জন অরণ্য’), তাহলে দেখা যাবে যে, তাঁর বক্তব্য অনেক বেশি অনুভূতিসম্পন্ন এবং সূক্ষ্ম হওয়ার ফলে তার আবেদন সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে পুরনো হয়ে যায়নি। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ এবং ‘জন অরণ্য’ দেখলে পরে মানুষ আজও অভিভূত হয়। এবং মনে হয়, এটা সত্যি-সত্যিই নগরের এক আসল দর্পণ।