এক-একটা সময় আসে, যখন মনের মধ্যে কল্পনা করে রাখা ছবিটা সত্যি হয়ে যায়, কিন্তু বিশ্বাস হয় না ঠিক। মেয়েদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালের সঙ্গে একই সময়ে পড়া গিল-সূর্যকুমারদের একটি দ্বিপাক্ষিক ম্যাচের (অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে) সম্প্রচারে সাড়ে তিন কোটি ভিউয়ার, আর মেয়েদের ফাইনালের ভিউয়ার প্রায় নাকি তিরিশ কোটি! শিলিগুড়িতে জায়ান্ট স্ক্রিন বসছে, ট্রেনে অফিসফেরতা যাত্রীদের মুখে ইতিউতি স্মৃতি-হরমন-জেমির নাম, ভাবা যায়? অথচ এমন তো নয় যে, ভারতের প্রমীলা ক্রিকেট বয়সে একেবারে নবীন!
আসলে ছেলেদের ক্রিকেট আর মেয়েদের ক্রিকেটের অগ্রগতি, একটা খরগোশ হলে অন্যটা কচ্ছপ। কপিল-আজহার-সৌরভ হয়ে ধোনি পর্যন্ত যখন পৌঁছচ্ছে ক্যালেন্ডার, তখন ছেলেদের ক্রিকেট যতটা জনপ্রিয়, মেয়েদের ক্রিকেট কিন্তু তার ধারেকাছেও নয়। সেই দুর্দিনেও, ২০০৫ উইমেন’স ওয়ার্ল্ড কাপে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিলেন মিতালি রাজ, এ-কথা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভাবলে অবাক লাগে। কিন্তু তিরাশির প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপের পর ক্রিকেট খেলাটাকে যেভাবে সরকারি ও বেসরকারি— উভয় তরফেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ভারতের অলিতে-গলিতে, ২০০৫-এর সেই ইতিহাসের পরেও কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেট সেভাবে আদৌ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। দু’বছর বাদেই উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশনের হাত থেকে মেয়েদের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বিসিসিআই-এর হাতে, কিন্তু নারায়নস্বামী শ্রীনিবাসন ও তাঁর দলবলের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি গড় ভারতীয় জনতার দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে খুব একটা আলাদা কিছু ছিল না। ফলে ডেভেলপমেন্ট প্রায় কিস্যুই হয়নি। ২০১৪, ‘১৫, ‘১৬এ যখন বিরাট-শাস্ত্রী জুটি আস্তে আস্তে ক্রিকেট-বিশ্বে ভারতীয় ক্রিকেটকে অসীম শক্তিধর বানানোর প্রজেক্ট শুরু করে দিয়েছেন, তখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি করে প্রমীলা ক্রিকেটে এক-একটা বিরাট স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আর মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের ম্যাচের সংখ্যা কমছে। সেই ২০০৫-এর সুদীর্ঘ বারো বছরের অকূল পাথার পেরিয়ে একটা ২০১৭। গ্রুপ স্টেজ পার করে সেমি, হরমনের অতিমানবীয় ১৭১, ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৯ রান দূরে থমকে যাওয়া।


আরও পড়ুন : ইডেনে ভারতের সেই জয় আজও মনে আছে!
লিখছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট…
জাহাজ কিন্তু ডাঙার স্পর্শ পেয়ে গেল। সেই বোধহয় টেক-অফ। সেই ২০১৭ থেকে শুরু করে আজকের ২০২৫। মাঝে ২০২২ ওয়ান-ডে বিশ্বকাপে বিশ্রী পারফরম্যান্স, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলিতে নকআউটে চোক করে যাওয়া বা কখনও-কখনও গ্রুপপর্বই অতিক্রম করতে না পারা ইত্যাদি। আসলে ২০১৭ টেক-অফ, কিন্তু পুরোপুরি গতি নিয়ে উড়ানটা শুরু হতে তো বেশ খানিকটা সময় লাগে। একটা দল হিসেবে দলগত ক্রিকেটীয় স্কিলের সামগ্রিক উন্নতি হঠাৎ করে আসে না, সেটা একটা প্রসেস, ফল ফলতে সময় লাগে। এর মাঝে বিসিসিআইয়ের মসনদ বদলেছে, মেয়েদের সাম্মানিক অর্থের পরিমাণ ছেলেদের সাম্মানিকের পরিমাণের সমান হয়েছে, মিতালি-ঝুলন যুগ শেষ হয়েছে, তবে সবচেয়ে বড় যে-জিনিসটা হয়েছে, সেটা বোধহয় ডাব্লিউপিএল। পুরুষদের আইপিএলের মতোই যা ভারতীয় তরুণ প্রমীলা ক্রিকেটারদের নিজেকে মেলে ধরার একটা বড় মঞ্চ, এবং দেশের-বিদেশের আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রিকেটারদের সংস্পর্শ, পরিস্থিতি অনুযায়ী চাপ নিয়ন্ত্রণ করে পারফর্ম করার ট্রেনিং। তবু এত কিছুর পরও ২০২৫ ওয়ান-ডে বিশ্বকাপ শুরুর আগে, আবেগ সরিয়ে খাতায়-কলমে অঙ্ক কষলে, ভারতের প্রমীলা বাহিনীকে আদৌ ফেভারিট তকমা দেওয়া চলছিল না। কীরকম?
ভারতের স্কোয়াডের দিকে তাকালে বোঝা যায়, দলটার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ব্যালান্সের অভাব রয়েছে। দলের শক্তি-দুর্বলতা, ভারসাম্য, খেলার ধরন ও সামগ্রিক স্কিলসেট অনুযায়ী টি-টোয়েন্টির তুলনায় ওয়ান ডে-ই হয়তো আদর্শ ফরম্যাট ছিল। ওয়ান ডে-তে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও খুব মন্দ নয়, বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিশ্ব ওডিআই র্যাঙ্কিং ছিল তিন। কিন্তু একটা পুরনো রোগ ছিলই, সেটা হল ক্রাঞ্চ মোমেন্টে চোক করা, বা জয়ের কাছাকাছি এসেও শেষ করতে না পারা, রান তাড়া করায় দুর্বলতা ইত্যাদি। সুতরাং, নকআউটে গেলে চিন্তার কারণ ছিলই, বিশেষত দোর্দণ্ডপ্রতাপ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটা না একটা সময় তো দেখা হবেই, তখন…।
এত অবধি ছিলই, কিন্তু বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঠিক করার সময় কয়েকটা ব্যাপার হল, যা প্রত্যাশিতই, খানিকটা ইতিবাচকও বটে, কিন্তু তাও পরিস্থিতি খানিকটা জটিল করে তুলল।
এই যেমন শেফালি ভার্মা ভারতীয় দলের এক্স ফ্যাক্টর, টি-টোয়েন্টিতে ভারতীয় দলের নিয়মিত ওপেনার, শুরুতে দ্রুত রান তুলতে পারেন, সদ্য জুনেও ইংল্যান্ড সিরিজে দিব্যি ব্যাটে ঝড় তুলে এসেছেন, কিন্তু ওয়ান ডে-তে ধারাবাহিকতার কিছুটা অভাব দেখা যাচ্ছিল বহুদিন ধরেই, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারছিলেন না, যা ওয়ান ডে-র মতো লং ফরম্যাটের একটা সাধারণ কাঙ্ক্ষিত বিষয়। ২০২৩ থেকেই নানারকম কম্বিনেশন ট্রাই করতে করতে অবশেষে গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটা সমাধান মিলল, ডেবিউ করলেন প্রতীকা রাওয়াল, এক বছরে ওপেনিং স্লটে ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফর্ম করে প্রচুর রান করে স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গী হিসেবে নিজের জায়গা প্রায় পাকাই করে ফেললেন এবং বিশ্বকাপের স্কোয়াডে শেফালির বদলে জায়গা পেয়ে গেলেন।


কিন্তু এতে একটা অদ্ভুত দ্বিধা তৈরি হচ্ছিল, এবং বিশেষত বিশ্বকাপ বলেই হয়তো দ্বিধাটা প্রকট হল আরও। প্রতীকা ধারাবাহিকতার অভাব মেটালেন বটে, কিন্তু তাঁর স্ট্রাইক রেট খুব কম, স্ট্রাইক রোটেটে সমস্যা রয়েছে, যা ডটবলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে। পাওয়ার প্লে-তে বড় রান তুলতে হলে কিন্তু এটা হলে চলবে না। আবার স্মৃতি দ্রুত আউট হয়ে গেলে তিনে যে হরলিন দেওল নামবেন, তিনিও প্রতীকার মতোই শুরুর দিকে বেশ ধীর গতিতে ব্যাট করেন, ফলে প্রতীকা-হরলিন যে-সময়টা ব্যাট করবেন, সেই সময়টায় রান রেট পড়ে যাবে, বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোয় (১০-৩০) যেখানে এমনিতেই খেলা খানিকটা নিস্তরঙ্গ থাকে ওঁরা ঠিক সেই সময়টাতেই ব্যাট করবেন। এতে তিরিশ ওভারের পরবর্তী ব্যাটারদের ওপর চাপ বাড়বে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। পাঁচে জেমাইমা রডরিগেজ, ছয়ে দীপ্তি, অলরাউন্ডার, কিন্তু বোলিংয়ে দলকে যতটা ভরসা দিতে পারেন, ব্যাটিংয়ে ততটাও নন। রেঞ্জ বোধহয় খানিকটা কম, মূলত স্যুইপ বা স্লগ স্যুইপভিত্তিক ব্যাটিং, বড় শট বের করায় দুর্বলতা রয়েছে, তবে ৩০-৫০ ওভারের অংশটায় সাপোর্টিং অ্যাঙ্কর হিসেবে একদম খাপে খাপ। আর আছেন রিচা, শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ, সম্ভবত এই মুহূর্তে প্রমীলা ক্রিকেট-বিশ্বের সেরা ফিনিশার (অথবা সেরা তিনজন ফিনিশারের মধ্যে অন্যতম)। এদের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে রিচা ছাড়া দ্রুত রান তোলা বা স্লগ ওভারে পাওয়ার হিটিংয়ে ভরসাযোগ্য নাম প্রায় নেই। জেমাইমা-র ব্যাপারটা আমরা একটু পরে দেখব, আপাতত এইটুকুই দেখছি ও জানছি যে, জেমাইমা অত্যন্ত ভাল ব্যাটার, কিন্তু পাঁচ নম্বরের জন্য বোধহয় উপযুক্ত নন, তাই রান পেতে সমস্যা হচ্ছে।
এবার বোলিং। দীপ্তি শর্মা তো আছেনই। তার সঙ্গে নিয়মিত যাঁরা খেলেন, তাঁদের মধ্যে স্পিনার স্নেহ রানা, আর চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা রেণুকা ঠাকুর; কিন্তু পেসার পূজা বস্ত্রকর চোটের জন্য ছিটকে গেলেন। আর রইলেন ডাব্লিউপিএল থেকে উঠে আসা পেসার ক্রান্তি গাউর, স্পিনার শ্রী চরণী আর ব্যাক-আপ অলরাউন্ডার সিম বোলার আমানজ্যোৎ কওর। এছাড়াও অরুন্ধতী রেড্ডিকে দলে রাখা হল।
বিশ্বকাপ শুরু হল। প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, ভারত নামল তিন স্পিনার চরণী-রানা-দীপ্তিকে নিয়ে, চোট সারিয়ে ফেরার পর রেণুকাকে আগের মতো লাগছিল না, সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও দু’ম্যাচে প্রচুর রান দিয়ে মাত্র তিন উইকেট পেয়েছিলেন, ফলে ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর ভরসা করতে না পেরে ক্রান্তি গাউরের সঙ্গে রাখল সিমার-অলরাউন্ডার আমানজ্যোৎকে, যাতে ব্যাটিংটাকেও আর একটু লম্বা দেখায়। অর্থাৎ পাঁচ বোলার, ষষ্ঠ বোলার বলতে প্রতীকা বা অন্য কেউ কয়েক ওভার করবেন দরকারমতো। যদিও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জেতার ঠিক পরেই পাকিস্তান ম্যাচে রেণুকাকে দলে ফেরানো হল; ম্যাচ জেতা হল বটে, কিন্তু রেণুকা খুব দারুণ কিছু করে উঠতে না পারায় এবং দলের ব্যাটিং নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ থেকে ফের রেণুকার বদলে আমানজ্যোৎ এলেন। এই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেই প্রথম বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রকট হয়ে ধরা দিল, শেষ চার ওভারে ৪৫ রান বাকি, হাতে মাত্র তিনটে উইকেট থাকা সত্ত্বেও ম্যাচটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন নাদিন ডি’ক্লার্ক। আসলে বিশ্বকাপের আগে ক্রান্তি গাউর মাত্র চারটে, শ্রী চরণী মাত্র আটটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে এসেছেন, ডাব্লিউপিএলেও এ-বছরই প্রথম খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে স্মৃতি-প্রতীকা দুর্দান্ত শুরু করলেন, মিডল অর্ডার মোটামুটি পারফর্ম করল ও ৩৩০ রানের পাহাড় চাপিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু এ হল অস্ট্রেলিয়া, সাম্প্রতিককালে প্রমীলা ক্রিকেটের অবিসংবাদী এক নম্বর দল; অধিনায়ক অ্যালিসা হিলির সেঞ্চুরিতে ভর করে এক ওভার বাকি থাকতেই জয়ের রান তুলে ফেলল অজিরা। দলে পরিষ্কার ষষ্ঠ বোলারের অভাব দেখা যাচ্ছে; বোলিংয়ের ফাঁক ভরাট করতে একজন অতিরিক্ত বোলার খেলানো যায়, কিন্তু সেক্ষেত্রে কাকে বসানো হবে? এক থেকে চারের মধ্যে একমাত্র হরলিন ছাড়া কাউকে বসানো চলে না, এমনকী, হরলিনকে বসালেও টপ অর্ডার দুর্বল লাগবে। দীপ্তি গেলে স্পিন বোলিং ইউনিট খোঁড়া হয়ে যাবে, আর রিচা ঘোষ শুধু ফিনিশারই নন, উইকেটকীপারও। তা হলে কে বাকি থাকেন? জেমাইমা!


ইংল্যান্ড ম্যাচে বোলিং ইউনিট ভারী করতে জেমাইমা বসলেন ও রেণুকা দলে এলেন, অর্থাৎ একজন ব্যাটার কম নিয়ে খেলা হল। রেণুকা অবশ্য উইকেট পেলেন না, দীপ্তি বরাবরের মতোই মাঝের ওভারগুলোয় ওভারলোড নিয়ে বল করে চারটে উইকেট তুললেন। ইংল্যান্ডের ২৮৮-র জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রতীকা বড় রান না পেলেও স্মৃতি মান্ধানা প্রথমে খানিকটা হরলিন ও তারপর অনেকটা সময় হরমনপ্রীতকে পাশে পেয়ে ৮৮ রানের একটা লম্বা ইনিংস খেলে যখন ফিরে গেলেন, তখন ভারতের জেতার জন্য দরকার মাত্র ৫১, হাতে ছ-ছ’টা উইকেট আর প্রায় সাড়ে আট ওভার। অবিশ্বাস্যভাবে ভারত ম্যাচ বের করে আনতে পারল না। রিচা ঘোষকে হেদার নাইট তুলে নিলেন, দীপ্তি কিছুতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বড় শট বের করতে পারলেন না ও প্রচুর ডট বল খেলে ম্যাচটা ইংল্যান্ডকে উপহার দিয়ে এলেন। পরিষ্কার বোঝা গেল যে, প্লেয়িং ইলেভেনে ভারসাম্য নেই, এবং ভারসাম্যের অভাব মেটানো রীতিমতো অসম্ভব, বোলিং ভারী করলে ব্যাটিং দুর্বল হবে আর ব্যাটিংয়ে নজর দিতে গেলে ষষ্ঠ বোলার পাওয়া যাবে না (শুধু তা-ই নয়, প্রথম চারজনের অন্তত দু’জনকে বেশ বড় ইনিংস খেলতে হবে, এবং খেলতেই হবে)। অর্থাৎ, কপালে দুঃখ আছে, এবং দিল্লি, থুড়ি, বিশ্বকাপ, অনেক দূর, বা হয়তো প্রায় অগম্য!
এইখানে থামতে হবে। ভারতের এই গোটা বিশ্বকাপ জার্নিটাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, একটা হল এই ইংল্যান্ড ম্যাচ অবধি, আর একটা হল এই ইংল্যান্ড ম্যাচের পর। বস্তুত এই ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকেই কয়েকটা পরিবর্তন আসে দলটায়, যার ফলে চাকা ঘোরা শুরু হয়।
ইংল্যান্ড ম্যাচের পর একটা ব্যাপার বোঝা গিয়েছিল যে, ব্যাটিংয়ে এতটুকুও স্যাক্রিফাইস করলে তা পূরণ করা খুব মুশকিলের কাজ। সুতরাং, ষষ্ঠ বোলারের চিন্তা হটাও, প্রতীকা বা হরমন নিজে দরকারমতো কয়েকটা ওভার করে দেবেন কিন্তু জেমাইমাকে বসালে চলবে না মোটেই। কোচ অমোল মুজুমদার (মরাঠি) বা অধিনায়ক হরমন, না কি সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানা— কার ইন্ধনে বলা মুশকিল, জেমাইমা ফিরে এলেন। একই সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট আর একটা দারুণ সিদ্ধান্ত নিল, যেটাকে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত বলা চলে। জেমাইমাকে তিনে পাঠানো।
জেমি, জেমাইমা রডরিগেজ। রিল-টিল বানিয়ে, গিটার বাজিয়ে, লম্ফঝম্প করে মোটামুটি সকলের নজরে থাকেন। অনেকে তাঁর রান না পাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু স্মৃতি বাদে বোধহয় তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে এই দলের সেরা ব্যাট জেমিই। জেমি ভীষণ ভাল স্যুইপার, রিভার্স স্যুইপ বা স্কুপও করতে পারেন, মোটের ওপর স্পিনটা ভীষণ ভাল খেলেন, সম্ভবত এই গোটা ভারতীয় দলে জেমিই সবথেকে ভাল স্পিন খেলেন। জেমি তিনে এলে মাঝের ১০-৩০ ওভারগুলোয় স্পিন সামলে রান রেটটাকে প্রাণবন্ত রাখতে পারবেন। কিন্তু পাঁচে নেমেই অ্যাক্সিলারেট করতে বললে সমস্যায় পড়বেন। ম্যানেজমেন্ট দেরিতে হলেও উপলব্ধি করল যে, স্মৃতি-প্রতীকার পর হরলিনের বদলে জেমিকে পাঠালে আখেরে লাভ হবে। যদিও জেমির আদর্শ জায়গা সম্ভবত চারে, কারণ তিনে নামার একটা বিপদ হচ্ছে, যদি ওপেনিং জুটি খুব দ্রুত ভেঙে যায়, তাহলে অনেকটা আগে নেমেই নতুন বলের মুখে পড়তে হবে, তাতে জেমির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু হরমনের মধ্যে যে পাওয়ার হিটিংয়ের ব্যাপারটা রয়েছে, সেটা ৩০ ওভারের পরেও দরকার হতে পারে। সুতরাং, হরমন চারেই থাক, তিনে জেমি। একইসঙ্গে জেমির ব্যাটের ওপর ভরসা রেখেই, আমানজ্যোৎকে তুলে রেণুকাকেই স্থায়ী জায়গা দেওয়া হল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে উঠল ২১২, তিনে জেমাইমা নামলেন ও বড় রান পেলেন (৭৬)। বৃষ্টি হয়ে ডিএলএসে ভারত জিতে গেল ৫৩ রানে।
জেমাইমাকে তিনে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটা সিদ্ধান্ত নিতে হল ম্যানেজমেন্টকে, যেটা নিতে হয়েছিল বাধ্য হয়ে, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই শেষমেষ মোড় ঘুরিয়ে দিল ভারতের বিশ্বকাপ-ভাগ্যের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করতে গিয়ে হাঁটু আর গোড়ালিতে সাংঘাতিক চোট পেয়ে সম্পূর্ণ টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেন প্রতীকা। আর প্রতীকার জন্য যে শেফালি ভার্মার জায়গাই হয়নি স্কোয়াডে, সেই শেফালিকেই ডাকা হল সেমিফাইনাল আর ফাইনালের জন্য।
কিন্তু প্রতিপক্ষ এমনই যে, সেমিফাইনালটাই প্রায় ফাইনালের মতো হয়ে দাঁড়াল ভারতের কাছে। অস্ট্রেলিয়া, গত বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া, গত ছ’বছরে মাত্র পাঁচটা ওয়ান-ডে হারা অস্ট্রেলিয়া, মেগ ল্যানিংয়ের হাতে গড়া যে অস্ট্রেলিয়া মেগের অবসরের পরেও প্রায় একইরকম ভয়ংকর! এমনিতেই ওয়ান-ডে বিশ্বকাপ আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মোলাকাতের স্মৃতি ভারতের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়, সে ২০০৩ জো’বার্গই হোক বা হালফিলের ২০২৩ আমেদাবাদ ফাইনাল! কিন্তু পুরুষদের দলটার সঙ্গে মেয়েদের এই দলটার তুলনা এই কারণেই চলবে না যে, এই অস্ট্রেলিয়া প্রমীলা দলটা যে-কোনও দারুণ শক্তিশালী দলকেও শুইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, ব্যাটিং গভীরতা যথেষ্ট, অলরাউন্ডারে ঠাসা, সেখানে ভারতের দলটা সেমিতে এসেও এখনও যেন ঠিক সম্পূর্ণ নয়! যদিও বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক হপ্তাখানেক আগেই এই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ওয়ান-ডে সিরিজ খেলে এসেছে ভারত, তার শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৪১২ তাড়া করতে নেমে প্রায় একটা অসাধ্য সাধন ঘটিয়েই ফেলেছিল ভারত, মাত্র ৪৩ রান দূরে থমকে যেতে হয় শেষমেশ, স্মৃতির ব্যাটে ভর করা যে স্মৃতি ভারতকে আত্মবিশ্বাসের যোগান দিতে ঘাটতি রাখবে না, কিন্তু সেটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, আর এটা নকআউট!
ফিবি লিচফিন্ডের দেদার স্যুইপ-রিভার্স স্যুইপ, এলিস পেরি আর শেষে অ্যাশলে গার্ডনারের ক্যামিও। ক্রান্তি গাউর অ্যাশকে ওই ক্রুশিয়াল সময়ে রান-আউট না করলে ও অ্যাশ আরও ১০-১৫ রান জুড়লে কী হত বলা যায় না, তবে ৩৩৮ তাড়া করে যদি জেতা যায়, তা হলে সেটা ইতিহাস হয়ে যাবে, গোটা প্রমীলা ক্রিকেটের ইতিহাসে, এমনকী, আইসিসি নকআউট ম্যাচের নিরিখে পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে সবচাইতে বেশি রান সফলভাবে তাড়া করার দৃষ্টান্ত হিসেবে!

শেফালি ভার্মার রূপকথাটা অবশ্য এখনই লেখা হবে না। দ্বিতীয় ওভারেই তাঁর উইকেট পতনের পর জেমি হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্রিজের দিকে এলেন, তার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে তাঁকে বলা হয়েছে ওয়ান ডাউনে আসতে। পাওয়ার প্লে-র প্রায় শেষে এসে কিম গার্থের একটা ডাউন দ্য লেগ ডেলিভারি, কিপার-ক্যাপ্টেন অ্যালিসা হিলির একটা প্রায় অভূতপূর্ব রিভিউয়ে স্মৃতি যখন কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে গেলেন, তখন বোধহয় গোটা পৃথিবীতে একজনও ভারতের হয়ে বাজি ধরেননি! এইখান থেকে শুরু হল জেমি আর হরমনপ্রীতের লড়াই। নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই, নার্ভ ধরে রাখার লড়াই, খাতায়-কলমে দু’দলের স্কিলসেটের যে ফারাক, তা মাত্র দু’জনে মিলে মুছে দেওয়ার অসম, মরিয়া লড়াই। ব্যাটিং ডেপথ তো নেই-ই প্রায়, হরমনের পর রিচা ছাড়া নিয়মিত বড় শট বের করার মতো আর একজনও নেই। সুতরাং জেমি আর হরমনকে যতক্ষণ পর্যন্ত পারা যায় ততক্ষণ ক্রিজে থাকতে হবে, অথচ আস্কিং রেট একবার নাগালের বাইরে গেলে আর সেটাকে ধরা যাবে না! এই যে আউট হব না, অথচ বড় শটের একটা মোটামুটি পরিমাণ বজায় থাকবে, এর জন্য খুব, খুব সতর্কভাবে বল চুজ করতে হবে। এই কাজটা ঠিক কতটা কঠিন, তা পুরোটা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। জেমি আর হরমন দু’জনেই সম্ভবত ঠিক করেন যে, অন্তত ৩৫-৪০ ওভার অবধি তাঁদের থাকতে হবে। জেমি স্পিনটা দেখবেন, হরমন পেস। তিরিশ ওভারে মোটামুটি ১৯০ অবধি আসতেই চাপটা ঠেলে চলে এল দু’দলের মাঝামাঝি জায়গায়, পঞ্চাশ পার করে হরমনপ্রীত আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠলেন। সম্ভবত ঠিক হল যে, জেমি শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। চাপটা আস্তে আস্তে অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঠেলে যেতে লাগল, এবং গোটা ম্যাচে অমানুষিক ফিল্ডিং করে আসা অস্ট্রেলিয়া জেমির ক্যাচ ফেলল (অ্যালিসা হিলি ও আলানা কিংয়ের ভুল বোঝাবুঝিতে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের দেরিতে!)। হরমন যখন আউট হলেন, তখন ৩৫ ওভার, এরপর দীপ্তি, তারপর রিচা এসেই দু’তিনটে বড় শটে ইকুয়েশনটাকে রান-আ-বল বানিয়ে দিলেন। আর এদিকে প্রায় ৭৫% আর্দ্র আবহাওয়ায় ক্লান্ত-ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়েও জেমি যে খেলাটা খেললেন, সেটা প্রায় ব্যাখ্যার অতীত। আমানজ্যোৎকে সঙ্গে নিয়ে ফিনিশিং লাইন টপকে ভারতকে যখন পৌঁছে দিলেন ফাইনালে, তখন তাঁর জার্সি ঘামে ভিজে দাগ পড়ে, চোদ্দ বছর আগের একইরকম আর-এক যে জার্সিধারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, তার নাম আন্দাজের জন্য পুরস্কার নেই।
আর ফাইনাল? সবচেয়ে বড় বাধাটা তো সেমিতেই টপকানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই যে, পুরো গল্পটাই তো নিজের সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার গল্প! ফাইনালেও খাতায়-কলমে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে পিছিয়েই মাঠে নামল ভারত। টসে হেরে ব্যাট করতে নামার পরই শুরু হল শেফালি ভার্মার রূপকথা। ভাল শুরু করেও যে স্মৃতি আর জেমি দু’জনেই লম্বা ইনিংস খেলতে পারলেন না তার কারণ স্ট্রাইক রোটেট করা সহজ হচ্ছিল না মোটেই, ডটবলের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে বাধ্য হয়ে বড় শট নিতে গিয়ে ধরা পড়তে হল। তা সত্ত্বেও যে তিরিশ ওভারে ১৭০ এর আশেপাশে স্কোর পৌঁছল, এখানেই শেফালির ইনিংসের কৃতিত্ব। যা ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল আর ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে করেছিলেন রোহিত শর্মা, পাওয়ার প্লে-টাকে ব্যবহার করা ও সেই মোমেন্টামটাকে যতটা সম্ভব বয়ে নিয়ে যাওয়া! এই স্ট্রাইক রোটেটের সমস্যাটা কিন্তু হরমন আর দীপ্তিকেও ভুগিয়ে গেল, রিচার ঝোড়ো ইনিংস সত্ত্বেও রানটা তিনশো পেরল না। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিশার নাদিন ডি’ক্লার্ক যেখানে আট নম্বরে ব্যাট করতে আসেন, সেখানে ব্যাটিং গভীরতা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার দরকার নেই, তবে একটা ব্যাপার এই যে, দলটার অধিকাংশেরই স্পিন খেলায় দুর্বলতা আছে। অধিনায়ক লরা উলভার্ট অবশ্য এ-তালিকায় পড়েন না। তিনি আর চার নম্বরে নামা সুন লুস যখন আস্তে আস্তে ভারতের ঘাড়ে চেপে বসার উপক্রম করছেন, ঠিক তখনই শেফালি ভার্মা রূপকথার সেকেন্ড ফেজ! রানের পাশাপাশি অমন দু’দুটো পার্টনারশিপ ভেঙে দেবেন কে জানত! বাকিটা দীপ্তি শর্মা, নার্ভ, জানকবুল ফিল্ডিং, শেষ মুহূর্তের প্যালপিটেশন আর ‘আল ইজ ওয়েল’!

ট্যাগলাইন? মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়, নারী-পুরুষ মিলিয়ে কপিল-ধোনির পর দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ, ‘হামারি ছোড়িয়াঁ ছোড়োঁ সে কম নেহি’ ইত্যাদি! কিন্তু তার বাইরে? একটা আদ্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক দেশ, সিস্টেম, যে দেশে বিশ্বকাপ খেলতে আসা বিদেশি মহিলা ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানির ঘটনার অজুহাত হিসেবে রাজনৈতিক নেতা বলেন যে, মেয়েদের উচিত ছিল সিকিওরিটিকে ইনফর্ম করা, যে সিস্টেম ছোট থেকে শেখায় রান্নাঘর-বিবাহ-সংসার-সন্তানোৎপাদনের চতুর্ভুজে আটকে থাকাই মেয়েদের ভবিতব্য, নারী নির্যাতন বা নিগ্রহ যে দেশে খাওয়া-ঘুমের মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার ও নেতাদের বয়ান অনুযায়ী ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, নারী নিগ্রহের ঘটনায় যে সিস্টেম সবার আগে প্রশ্ন করে, অত রাত্রে মেয়েটি বাড়ির বাইরে কী করছিল, যে সিস্টেমে যৌন নিগ্রহের শিকার হন স্বর্ণপদকজয়ী কুস্তিগির আর রাজপথে প্রতিবাদ করলে পুলিশ এসে তাঁকে টেনে নিয়ে যায় হিড়হিড় করে, রাজনৈতিক নেতারা নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে থাকেন আকছার, যে দেশ পুরুষ ক্রিকেটদলের প্রাক্তন অধিনায়ক জনপ্রিয় গণমাধ্যমে মন্তব্য রাখেন ‘মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনও দরকার নেই’, সেই দেশের প্রমীলা বাহিনীর ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের যে নিক্তি, তা তো কখনওই ১৯৮৩ বা ২০১১ র নিক্তির সঙ্গে তুলনায় আসতেই পারে না! এ সম্পূর্ণ আলাদা এক লড়াই! ক্রিকেটীয় নিক্তিতে দেখলে নিজেদের একরাশ সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে ওভার-পারফর্ম করে করে, দাঁতে দাঁত চেপে জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া, আর অ-ক্রিকেটীয় সামাজিক প্যারামিটারের সংকলন বোধহয় একটি ইনফাইনাইট সেট!
আর সঙ্গে বহু, বহু বছর ধরে দেখা একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সেই কোন আদিযুগে নিউজিল্যান্ডের কারিসব্রুকে প্রথম প্রমীলা ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করা শান্তা রঙ্গস্বামী, বা ২০০৫-এ প্রথমবার দেশকে ফাইনালে তুলে অসহায় হয়ে যাওয়া মিতালি রাজ যাঁর কেরিয়ারের সেরা সময়ে একটু একটু করে কমে গেল আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা, সব আকাঙ্ক্ষাদের জমাট বাঁধা বরফ নিয়ে দেশে ফিরে আসা ভেদা কৃষ্ণমূর্তি, পুনম রাওত বা রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়, অথবা মফসসল থেকে কিটব্যাগ টেনে টেনে ভোরবেলা রেললাইন ধরে হু-হু করে ধেয়ে আসা ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ ঝুলন গোস্বামী, যাঁর কেরিয়ারের সেরা পর্যায়টা কাটল একটা বিশ্রী, অনুন্নত পরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে, আর কাপ আর ঠোঁটের সূচ্যগ্র মেদিনীর মাঝে অপেক্ষা করে রইল অনন্ত তৃষ্ণা, যে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের পাহাড়ের উচ্চতা বেড়েছে অথচ বাস্তবায়ন হয়নি কখনও, এ সেই স্বপ্নের মূর্ত রূপ! বিশ্বকাপ! হে পূর্বসুরিগণ, আদি স্বপ্নপ্রদর্শকগণ, দিজ ইজ ফর ইউ!


