লাতিন আমেরিকার উত্তর প্রান্তে ক্যারিবিয়ান সাগরের কিনারে সুপ্রাচীন জনপদ ভেনেজুয়েলা। আন্দিজের পাদদেশে প্রকৃতির হাতে লেখা স্বপ্নের চারণভূমি। স্প্যানিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যাদের দীর্ঘ লড়াই ইতিহাসবন্দিত। ১৪,০০০ কিলোমিটার দূরের আসমুদ্রহিমাচলের কাছে তাই এই ভূখণ্ড— সিমন বলিভারের দেশ। কিন্তু সম্প্রতি নোবেলের দৌলতে শিরোনামে অন্য এক ব্যক্তিত্ব, নাম মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
পরিচয়ে আসার আগে দেশটার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খানিক কথা বলা প্রয়োজন। সম্প্রতি ২০২১-এ, করোনা-পরবর্তী একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের ৯০.৮২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। এছাড়া দেশের ৬৭.৯৭ শতাংশ মানুষ ‘অতি’-দরিদ্র তালিকার অন্তর্ভুক্ত। গোটা দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান রিজিয়নের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ ভেনেজুয়েলা। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ধুঁকছে। প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলে এখনও অবধি পরিশ্রুত পানীয় জল ও ইলেকট্রিসিটির মতো ন্যূনতম পরিষেবাটুকু পৌঁছয়নি। বহু মানুষ শরণার্থী হয়ে অন্য দেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে। এহেন সমস্যা-জর্জরিত দেশের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ১০ অক্টোবর নোবেল কমিটি, শান্তি পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যিনি বিশ্বব্যাপী সংবাদ-শিরোনামে। কিন্তু ‘যাঁর’ পরিবর্তে মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতলেন, আদৌ কি সেই ব্যক্তি এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হলেন?
কথা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। বিগত কয়েকমাস ধরেই হোয়াইট হাউজ ছাড়াও একাধিক রিপাবলিকান নেতা কর্তৃক চাপ তৈরি হচ্ছিল নোবেল কমিটির ওপর। সেই চাপের পরিমাণ আরও বাড়ে, যখন একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা এতে যুক্ত হয়। কিন্তু ট্রাম্পের পিআর টিমের হাজারও প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে নোবেল জিতে নেন মাচাদো। কিন্তু ইহা কি সত্যিই পরাজয়? তাই নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারিয়া কোরিনা ভেনেজুয়েলার ডানপন্থী সংগ্রামের সঙ্গে সুচারুভাবে ট্রাম্পকে জুড়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর লড়াইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাশে থাকাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে, মারিয়া প্রমাণ করিলেন, ট্রাম্প হারে নাই। একপ্রকার নোবেল প্রাইজ ট্রাম্পকেই উৎসর্গ করলেন মাচাদো। মার্কিন প্রেসিডেন্টও দেরি করেননি উত্তর দিতে। তাঁর মুখে সুনাম শোনা যাচ্ছে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রীর। পাশাপাশি এই জয় যে আদতে তাঁরই নৈতিক সাফল্য, তাও ইনিয়েবিনিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড মহাশয়।
আরও পড়ুন : গতিময়, তবু বিষাদে ভরপুর লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখা!
লিখছেন পিনাকী দে…
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে নোবেল কমিটির বিবেচনা নিয়ে। কাঁটাতারবিহীন গ্লোবাল দুনিয়ায় নেট-নাগরিকরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৩৩৮টি দেশের মনোনয়নকে পিছনে ফেলে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী হয়েছেন মারিয়া কোরিনা। নোবেল কমিটির বক্তব্য, ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে তাঁর মুখ হয়ে ওঠা ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে মাথায় রেখে এই পুরস্কার। ‘টাইমস’ ম্যাগাজিনের শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকাতেও মাচাদোর নাম রয়েছে। এমনকী, কেউ কেউ তাঁকে ভেনেজুয়েলার ‘লৌহমানবী’ তকমাতে ভূষিত করেছেন।
৫৮ বৎসরের মারিয়া প্রযুক্তিবিদ্যার পাশাপাশি অর্থনীতিতে স্নাতক। কর্মজীবনের শুরুতে বেশ কিছুদিন বাবার ব্যবসায় মনোনিবেশ করলেও, পরবর্তীতে ক্রমশ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১০ নাগাদ মারিয়া প্রথমবার ভোটে দাঁড়ান ও ভেনেজুয়েলার জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে রেকর্ড ভোট পেয়ে জয়ী হন। পার্লামেন্টে প্রবেশাধিকার পেয়েই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর একাধিক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রবিরোধী যে-কোনও আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে থাকেন মারিয়া। মার্চ ২০১৪ নাগাদ, মাদুরো সরকার তাঁকে জাতীয় অ্যাসেম্বলি থেকে বহিষ্কার করে। কিন্তু হার মানেননি মারিয়া। আগামী ১০ বছরের রোড ম্যাপ পরিকল্পনা করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এগতে থাকেন তিনি। উল্কাসম উত্থানের সঙ্গী হয় দেশব্যাপী বিপুল জনপ্রিয়তা। খ্যাতি এতটাই বেড়ে যায় যে, ২০২৪-র ভোটে মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে ওঠেন মাচাদো। সমর্থন দেন বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেজকেও। যদিও ভোটে বিরোধী শিবির পরাজিত হয়। ব্যালট-চেবানো সমর্থক বা মৃত ভোটারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও; ভোট চুরি ও লুঠের অভিযোগ ক্রমশ সামনে আসতে থাকে। এরপরই আসরে নামেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সরকার ফেলার প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রা প্রবেশ করতে থাকে দেশে। ট্রাম্প সেনা নামানোর পক্ষেও ইদানীং সওয়াল করছেন প্রতিনিয়ত। স্বাভাবিকভাবেই এখানে মারিয়া কোরিনার দায়বদ্ধতার ওপর প্রশ্ন ওঠে। দেশের সুরক্ষার তোয়াক্কা না করেই তিনি হাত মিলিয়েছেন বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে। এমনকী, ট্রাম্পকে খুশি করতে প্যালেস্টাইনের ওপর দীর্ঘ বোমাবর্ষণকে সমর্থনও করছেন। নেতানিয়াহুর ‘সংগ্রাম’-এর সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন। ২০২০ নাগাদ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মারিয়ার রাজনৈতিক দলের একটি ঐতিহাসিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। গির্ট ওয়াইল্ডার্স, মেরিন লি পেনের মতো অতি-ডানপন্থী ইউরোপিয় নেতারা তাঁর বন্ধুবৎসল। মারিয়ার ২০১৯-এর বিতর্কিত বিবৃতিতে উঠে আসে বিদেশি মিলিটারি হস্তক্ষেপের আহ্বান ও সরকার বদলের প্রসঙ্গও। স্বাভাবিকভাবেই ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ দগ্ধ হয় বিতর্কের অনলে। ক্রমশ স্পষ্ট হয়, শান্তি নয়, মূল লক্ষ্য গদি পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। অসাধু জনের নজর এড়ায় না সুবিশাল তৈলখনির ভাণ্ডার। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, নোবেল কমিটির কাছে কি সত্যিই কোনও বিকল্প ছিল না?

সেটার জন্য খানিক ইতিহাস ও বিগত কয়েক দশকের পুরস্কারের তালিকায় নজর দেওয়া দরকার। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে আলফ্রেড নোবেলের উইলে স্পষ্টতই উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বা বাহ্যিক বিষয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ব্যক্তি, যিনি সেনা নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন, তিনিই এই পুরস্কারের দাবিদার। বিশ্বযুদ্ধকালীন পৃথিবীতে এই পুরস্কার মূলত তাঁরাই পেতেন, যাঁরা শান্তি আন্দোলনের বার্তাবাহক ও মুখ হিসেবে পরিচিত। মানবতার প্রতীক হিসেবে ফ্রিদতিওফ ন্যানসেনও শান্তি পুরস্কার পান, রিফিউজিদের নিয়ে কাজ করার জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ ও অস্ত্রবিরোধিতার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরব ব্যক্তি তথা পরিবেশকর্মীরাও এই তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু এর আগেও এই পুরস্কার দেওয়া নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। মহাত্মা গান্ধী পাঁচবার মনোনীত হলেও কখনওই এই পুরস্কার পাননি। লিও টলস্টয় কখনওই সাহিত্যে পুরস্কার পাননি কারণ তিনি রাশিয়ান এবং কমিউনিস্ট বিরোধিতার ঘুণ নোবেল কমিটিকেও গ্রাস করেছিল। কিন্তু অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট, কূটনীতিক হেনরি কিসিঙ্গার কিংবা সাম্প্রতিক কালে ইথিওপিয়ার অ্যাবি আহমেদ বিতর্কিত হয়েও পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় জায়গা করে নেন। গোটা কমিটিটা বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকে নরওয়ে সরকার। কমিটিতে থাকা ব্যক্তিরাও কেউ কেউ প্রাক্তন রাজনীতিবিদ। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী বহু সমালোচনা হয়েছে। এই কমিটিতে ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবে নারাজ ‘সূর্যাস্তের দেশ’।
সাম্প্রতিক অতীতে বারাক ওবামার নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তি নিয়ে ট্রাম্প মৌখিক বিষোদগার করলেও আদতে খানিক অনুপ্রাণিতও বলা যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর, এক বছরও অতিক্রান্ত না হওয়ার আগেই, তিনি নোবেল পেয়ে যান। ট্রাম্পও সদ্যই ২০২৫-এ দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকার মসনদে। তৎকালীন আমেরিকান সেনা লিবিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন-সহ একাধিক জায়গায় রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কান্ডারী ছিল। ট্রাম্প নিজেকে নোবেলের যোগ্য করে তোলার জন্য দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই সাতটি যুদ্ধ থামানোর দাবি করেছেন। যাবতীয় কিম্ভুত-কিমাকার দাবির সত্যতার দায়ভার যদি ট্রাম্প জনগণের ওপর ছেড়েও দেন, তার পরেও পড়ে থাকে মেয়াদকাল। জানুয়ারির শেষদিন অবধি মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ট্রাম্পের যাবতীয় কর্মযুদ্ধ তার পরবর্তীতে শুরু হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আশাহত না হয়ে ক্রমাগত পিআর টিমকে কাজে লাগানোর মূল কারণ, ট্রাম্প জানতেন, ওবামাও এই পরিস্থিতিতেই নোবেল জিতেছিলেন। ওবামার ক্ষমতায় আসার ১১ দিনের মাথায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলেও বছর শেষে তিনি নোবেল জিতে নেন। অগত্যা ট্রাম্প সরকার ক্যাম্পেইন চালায়। এমনকী, নোবেল সুরক্ষিত করতে নরওয়ের ওপর শুল্ক চাপানোর হুমকিও আসে পরোক্ষভাবে।
স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়গুলি ভাল চোখে দেখেনি নোবেল কমিটি। অতিরিক্ত প্রচার ও দর্পে হত হয়েছেন ট্রাম্প। নোবেল কমিটির চেয়ারপার্সন কটাক্ষ করেই জানান, শান্তি পুরস্কারের জন্য সততা ও সাহসিকতার নিদর্শন স্থাপন প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন ইদানীং নোবেল কমিটিরও সততা ও সাহসিকতার অবনতি ঘটছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী নরসংহার কম হয়নি। বসনিয়া, কম্বোডিয়া হোক কি ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বহু চেষ্টা হয়েছিল লুকনোর। হিটলারও চেষ্টা করেছিলেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের যাবতীয় খবর বিশ্বের নজর থেকে গোপন রাখতে। কিন্তু গাজায় যে নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা জনসমক্ষে চলছে, তার ধারক ও বাহক নেতানিয়াহু অবিচল ভঙ্গিমায় তার বিজ্ঞাপন করেছেন। নির্লজ্জ ক্ষমতার সিংহাসনে থেকে শরিক হয়েছেন শিশুহত্যার। হামাসের সন্ধান না পাওয়া গেলেও বহু সাংবাদিকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, যাঁরা দীর্ঘদিন এই হত্যাকাণ্ডের লাইভ সম্প্রচার তুলে ধরছিল বিশ্ববাসীর সামনে। আমেরিকার সমর্থনে ইজরায়েল তাঁদের ধ্বংস করেছে। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে শৈশব, কিন্তু বিশ্বের তাবড় নেতৃত্বের বুক কাঁপেনি। বিপুল ক্ষমতাশালী আরব দেশগুলি, যারা বিশ্বব্যাপী ইসলামের জয়ধ্বজা ওড়ানোর বার্তা দেয়, তারাও এই জেনোসাইডের বিপরীতে ‘সিমাঘ’ কিংবা ইগলের বাঁধনে চোখ ঢেকেছে। তবু এত কিছুর পরেও চুপ থাকেনি সাধারণ মানুষ। দেশে-বিদেশে সরব হয়েছে প্রতিবাদে। ফুটবল মাঠে নেমেছে একের পর এক টিফো। প্রতিটা মিছিলে সঙ্গী হয়েছে প্যালেস্টিনীয় পতাকা। প্রতিনিয়ত বাধা পেয়েও তারা লড়ছে। কত নৌবহর পাড়ি দিয়েছে ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে।
আজ যদি মারিয়া কোরিনা নির্বাচন জিতে ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তাঁর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ হবে। তিনিও ক্ষমতার একটি অংশ হবেন মাত্র। খুব বেশি হলে তৈলখনির বিপুল ভাণ্ডার উন্মুক্ত হবে আমেরিকার জন্য। কিন্তু যারা ক্রমাগত ইজরায়েলের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াই করছে, ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ কী? প্রতিনিয়ত স্কুলে, কলেজে, ফুটবল মাঠে, রাস্তায়, রাজনৈতিক ময়দানে বাধার মুখে পড়ছে, নিগৃহীত হচ্ছে। এমনকী, রাষ্ট্র তাঁদের হামাসের সমর্থকও ঠাউরে দিচ্ছে। তবু সব তুচ্ছ করে তারা লড়ছে। তেমনই এক মানবাধিকারকর্মী ফ্রাঞ্চেস্কা অ্যালবানেসে, যিনি প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুলছেন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তি নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন, শুধু একটু শান্তি প্রতিস্থাপনে। তবু তিনি শান্তি পুরস্কারের তালিকায় ব্রাত্যই থেকে যান। ব্রাত্য থেকে যান ২৫০-রও বেশি সাংবাদিক, যারা নির্মম হিংস্র সত্যিকে মানুষের সামনে প্রতিনিয়ত তুলে ধরতে গিয়ে খুন হয়েছেন। হ্যাঁ, খুন, কোনও নিছক দুর্ঘটনা নয়! নেতানিয়াহুর সশস্ত্রবাহিনী প্রতিনিয়ত খুঁজে খুঁজে সংবাদ-কর্মীদের হত্যা করেছে, যাতে নৃশংস সত্যির সন্ধান বিশ্ববাসীর কাছে গোপন থাকে। ইতিহাস বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এত সাংবাদিক হত্যা হয়নি, যা এই ক’দিনে গাজায় হয়েছে। অগত্যা মাচাদোই সই, তিনি ইজরায়েল ও ট্রাম্প উভয়ের প্রতিই সহানুভূতিশীল। নোবেল কমিটিও তাই রক্তমাখা হাতে তাঁর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছে। যদিও নিন্দুকেরা মনে করছে চমক এখনও বাকি! ২০২৬-এ কে বলতে পারে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়বে না! নীল গ্রহের শতসহস্র বাসিন্দা হয়তো সবিস্ময়ে অম্লানবদনে সাক্ষী থাকবে, পঞ্চাশহাজার শিশুর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ট্রাম্প শান্তি পুরস্কার নিচ্ছেন।