ছায়াবাজি : পর্ব ৩৯

Scene of 'Civil War'

অন্তরযুদ্ধ

কয়েকটা শিল্প দেখে মনে হয়, শিল্পী হয়তো সত্যিই কখনও কখনও দ্রষ্টা। ২০২৪-এর একটা ছবিতে দেখানো হয়েছে, আমেরিকায় এক বিরাট গৃহযুদ্ধ লেগে গিয়েছে। যা হয়তো আজ, ২০২৫-এর মাঝামাঝি, একটা বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। আমেরিকার কয়েকটা রাজ্যে বা কয়েকটা শহরে এখন বিদ্রোহ দেখা দিচ্ছে, তাদের দমন করার জন্যে কখনও কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে, তাই নিয়ে সেই রাজ্যের কর্তারা উষ্মা প্রকাশ করছেন, তখন তাঁদেরও গ্রেপ্তার হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কিন্তু মিছিল বেড়ে চলেছে, ট্রাম্পের প্যারেডের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ বিষোদ্গারের মাত্রাও হু-হু ঊর্ধ্বগামী।

‘সিভিল ওয়ার’ ছবিটা (চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: অ্যালেক্স গারল্যান্ড, ২০২৪) অবশ্য শুরুই হচ্ছে আরও অনেকটা ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখিয়ে। তখন গৃহযুদ্ধ অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে, লোকে কাতারে কাতারে পালাচ্ছে, মারা পড়ছে, অরাজকতার সুযোগ নিয়ে প্রচণ্ড লুটতরাজ চলছে, পেট্রলপাম্পে বন্দুকধারী লোকের কাছে ঘুষ দিয়ে তেল নিতে হচ্ছে, রাতে শোনা যাচ্ছে টানা গুলির শব্দ, দূরে অট্টালিকা থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে, সমগ্র শাসন ভেঙে পড়েছে। টিভিতে প্রেসিডেন্ট অবশ্য বক্তৃতায় বলছেন, অমুক অমুক জায়গায় বিদ্রোহ দিব্যি দমন করা গিয়েছে, কিন্তু ‘ওয়েস্টার্ন ফোর্স’ নামে একটা সংগঠন (যার নেতৃত্বে মূলত টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্রোহীরা) ওয়াশিংটন ডিসি-র দিকে এগিয়ে আসছে, তারা হয়তো রাজধানীর দখল নেবে আর দু’-তিনদিনের মধ্যেই। প্রেসিডেন্টের এটা তৃতীয় টার্ম চলছে (দুটো টার্মের পর আর কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারে না, তার মানে এই রাষ্ট্রপতি সম্ভবত সংবিধান-টংবিধান উল্টে দিয়েছেন)। আমরা ছবিটার কেন্দ্রে দেখছি চারজন সাংবাদিকের একটা দলকে। তারা চলেছে নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসি (ব্যাপক গোলমালের জন্য সোজা যেতে পারবে না, ঘুরেটুরে যেতে হবে) প্রেসিডেন্ট ধরা পড়ার আগে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার নিতে। তার মধ্যে তিনজন অত্যন্ত পোড়খাওয়া সাংবাদিক, তাদের মধ্যে একজন মহিলা, লি— ফোটো-জার্নালিস্ট হিসেবে প্রবল বিখ্যাত, খুব কমবয়স থেকে যুদ্ধের ছবি তোলে, একজন একেবারে নতুন, জেসি— বাবার ক্যামেরা নিয়ে এই পরিস্থিতিকে ছবিভুক্ত করতে নেমে পড়েছে। পেট্রল নেওয়ার সময় তারা দেখে দু’জন লোককে প্রচণ্ড মেরেধরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে (বোধহয় চুরি করতে এসেছিল), একেবারে খুন করে ফেলবে, না আরও একটু অত্যাচার করবে— সেই সিদ্ধান্ত পাম্পের লোকেরা এখনও নিতে পারেনি। দেখে এই নতুন ফোটোগ্রাফার জেসি শিউরে ওঠে, গাড়িতে বসেও সে কাঁপতে থাকে, তার মনে হয় এত বড় অন্যায়ের কোনও প্রতিকার সে করতে পারল না, একটা প্রতিবাদও জানাল না, এমনকী, একটা ছবিও তুলল না!

আমরা এর আগেই দেখেছি, বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার লি-র মনে বহু যুদ্ধের বহু হত্যার বহু দৃশ্য ক্রমাগত ঝলক দিয়ে যায়, যেখানে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করা হচ্ছে বা টায়ারে বেঁধে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধে বহু হননের নিষ্ঠুর ছবি তুলে পৃথিবীর সামনে সে পরিবেশন করেছে বটে, কিন্তু ওই ঘটনার সম্মুখীন হয়ে শুধু তাকে লেন্সবন্দি করতে ব্যস্ত থাকার মধ্যে কি কোনও অপরাধ নেই? এদের একজনকে বাঁচাতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হলে কি তা মানুষের কর্তব্য হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্য হত? জেসি যখন বিবেক দংশনে কাঁদছে, লি তাকে কিন্ডারগার্টেনের শিশু বলে ব্যঙ্গ করে এবং বলে ‘আমাদের কাজ প্রশ্ন করা নয়, ঘটনাগুলোকে নথিবদ্ধ করা— যাতে অন্যরা প্রশ্ন করতে পারে’, কিন্তু তার নিজের মধ্যে এই প্রশ্নগুলো কিছু কম জাগ্রত (ও দংশনরত) নয়। আমেরিকা কোনদিকে চলেছে, একজন স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি এসে এই দেশকে আসলে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে কি না, তার পাশাপাশি এই ছবি এ-প্রশ্নও তোলে— একজন প্রকৃত সচেতন শিল্পীর ভূমিকা কী হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন : নেকড়ে ও মানুষের টানাপোড়েনে যেভাবে ফুটে ওঠে প্রবৃত্তি!
চন্দ্রিল ভট্টাচার্যর কলমে ‘ছায়াবাজি’ পর্ব ৩৮…

‘সিভিল ওয়ার’-এর এক দৃশ্যে কির্স্টেন ডানস্ট ও ওয়াগনার মুরা

আমেরিকা বনাম আমেরিকার মানচিত্র কেমন হবে, তার বহু রূপ ছবিটা আমাদের দেখায়। কোথাও দেখা যায় রাস্তাময় অসংখ্য গাড়ি পরিত্যক্ত, কেন বোঝা যায় না, হয়তো তেল নেই বলে। কোথাও এই সাংবাদিকেরা একটা যুধ্যমান দলের সঙ্গে মিশে সরাসরি সংঘাতের ছবি তোলে এবং দেখে কীভাবে বিজয়ী দলের লোক পরাজিতদের টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে গুলি করছে। আবার একটা ছোট শহরের মধ্য দিয়ে গাড়ি যায়, যেখানে যুদ্ধের কোনও আঁচ পড়েছে বলেই মনে হয় না। দিব্যি দোকানে জামাকাপড় ঝুলছে, এবং দোকানদার মেয়েটি স্বাগত-সম্ভাষণ করছে। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে, তা সে জানে কি না, সে বলে জানে বলেই এবং টিভিতে বিশদ বিবরণ দেখে বলেই, ব্যাপারটা থেকে এই এলাকার মানুষেরা যথাসম্ভব দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য সেই শহরেও ছাদে ছাদে পাহারা দিচ্ছে বন্দুকবাজ। এমন জায়গায় যাওয়া হয়, যেখানে অনেক বে-ঘর মানুষ তাঁবু খাটিয়ে আছে, খেতে পাচ্ছে, বাচ্চারা খেলছে, যেন অসহায়দের পিকনিক। এমন জায়গায় যাওয়া হয়, যেখানে দু’জন লোক গুলি চালিয়ে লড়াই করছে একটা অট্টালিকার মধ্যে থাকা মানুষের সঙ্গে, ‘তোমরা কোন পক্ষের লোক’ গোছের প্রশ্নে তাদের হাসি পায়, তারা শুধু বলে, যে-লোক আমাদের গুলি করে, আমরা তাকে গুলি করি।

তার মানে, বহু মানুষের কাছে, সবটাই গুলিয়ে গিয়েছে, এ এক এমন দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কেউ আক্রমণ করে সে একটা আদর্শে বিশ্বাস করে বলে, কেউ আক্রমণ করে সে হিংস্র বলে, কেউ আক্রমণ করে সে আক্রান্ত বলে, কেউ আক্রমণ করে এটাই নতুন অভ্যাস বলে, এবং তাই কোন দলের সঙ্গে কোন দলের বিরোধ— এই মহা-লড়াই, খুচরো-লড়াই, নিত্য-লড়াইয়ের অবিরত স্রোতের উৎস-পিতা, তা নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা নেই।

ছবির দৃশ্যে কেইলি স্পেনি

একটা জায়গায় দেখা যায়, দু’জন সেনার উর্দিধারী লোক একটা গণ-কবরে প্রচুর সাধারণ মানুষের মৃতদেহ পুঁতছে, তারা এই সাংবাদিকদের পরিচিত কয়েকজনকে পাকড়াও করে, তাদের এই সাংবাদিকেরা ছাড়াতে যায়। ওদের সামনেই এরা দু’জন সাংবাদিককে খুন করে, কারণ তাদের মুখ দেখে মনে হয় তারা চীনা, এবং আমেরিকান ছাড়া সবাইকেই তো হত্যা করতে হবে। বোঝা যায়, এই আমেরিকায় সাম্প্রদায়িকতা, গুন্ডামি, বিদ্রোহ, ধর্ষকাম, রাষ্ট্রানুগত্য— সব মিলে একটা মণ্ড পাকিয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে কিছু লোক গণতন্ত্র, শিক্ষা, বন্ধুতা নিয়ে ইতিউতি জেগে, আর কয়েকটা লোক মনে করছে এই সময়টার দলিল রচনা করে যাওয়া জরুরি, তার জন্য যে-কোনও ঝুঁকি নিতে হবে।

কিন্তু অন্য প্রশ্নটা এড়ানোর নয়: শিল্পের সঙ্গে বাস্তবের যোগ কতটা। যে নতুন ফোটোগ্রাফারটি এই দলে ভিড়েছে, সে ক্রমশ হিংসা ও হত্যা দেখতে অভ্যস্ত হয়, প্রবল গুলি চলছে ও ডাইনে-বাঁয়ে লাশ পড়ছে, একটি লোক সামনে তড়পে মারা যাচ্ছে, তার মধ্যেই সেও অন্যদের মতোই ছবি তুলতে থাকে। এক সময়ে সে বিখ্যাত ফোটোগ্রাফারকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি মরে গেলেও কি তুমি তার ছবি তুলবে?’, এবং উত্তর পেয়েছিল ‘তোমার কি মনে হয়?’ (যার মানে: হ্যাঁ, তুলব তো বটেই)। কিন্তু সেই প্রখ্যাত ও পেশাদার ফোটোগ্রাফার এখন নিজেই সন্দেহে জর্জরিত হয়। তার মনে হয়, এতদিন ধরে এত যুদ্ধের এত নির্মমতার ছবি তুলেও কি এতটুকু বদলানো গেল পৃথিবীকে? একটুও কি কমল হিংসার রমরমা? যখন তাদের সঙ্গী সাংবাদিক অন্যদের বাঁচিয়ে নিজে মারা যায়, এই ফোটোগ্রাফার তার মৃতদেহের ছবি তোলে, কিন্তু নিভৃতে বসে তা ডিলিট করে দেয়। তার হয়তো মনে হয়, সব কিছুই নথিবদ্ধ করার এই তাড়ার মধ্যে একটা শুকনো নির্দয়তা আছে। এমনকী, সহ-মানুষের মৃত্যুর প্রতি অমর্যাদাও। অন্যদিকে যে নতুন মেয়েটি প্রথমে ছিল থতমত ও আড়ষ্ট, সে এখন যেন গুলির শব্দ, আগুনের হলকা এবং যখনতখন-হত্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে শিল্প রচনার নেশায় মজে যায়। তার নড়াচড়ায় আমরা পড়তে পারি থরথরে উত্তেজনা ও একটা আশ্চর্য ফ্রেম তৈরির লোভ, অমোঘ মুহূর্ত বন্দি করার উচ্চাশা। গণ-কবরে সে পড়ে গিয়েছিল এবং বহু মৃতদেহের ওপর দিয়ে আছাড়িপিছাড়ি সাঁতরে তাকে উঠতে হয়। হয়তো সেই বীভৎসা তাকে এই নতুন দীক্ষা দেয়, তার আদর্শ শিল্পীর পাশাপাশি এতক্ষণ ভ্রমণ এবং তার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হয়তো তাকে প্রখর উজ্জীবিত করে। আমরা যেন চোখের সামনে দেখতে পাই, খ্যাত অভিজ্ঞ ছবিশিল্পী যুদ্ধের কান-ফাটানো ধ্বনিতে আর সপ্রতিভ থাকতে পারে না, বরং ভয়ে সিঁটিয়ে দেওয়ালে গুঁজড়ে যেতে চায়, অন্যদিকে নবিশ ছবিওলা নতুন নির্ভীক রোমাঞ্চে গনগন করতে থাকে। এক নারীশিল্পীর বিসর্জন ও অন্য নারীশিল্পীর আবাহনের সাক্ষী থাকি আমরা এই গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।

অন্য প্রশ্নটা এড়ানোর নয়: শিল্পের সঙ্গে বাস্তবের যোগ কতটা। যে নতুন ফোটোগ্রাফারটি এই দলে ভিড়েছে, সে ক্রমশ হিংসা ও হত্যা দেখতে অভ্যস্ত হয়, প্রবল গুলি চলছে ও ডাইনে-বাঁয়ে লাশ পড়ছে, একটি লোক সামনে তড়পে মারা যাচ্ছে, তার মধ্যেই সেও অন্যদের মতোই ছবি তুলতে থাকে। এক সময়ে সে বিখ্যাত ফোটোগ্রাফারকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি মরে গেলেও কি তুমি তার ছবি তুলবে?’, এবং উত্তর পেয়েছিল ‘তোমার কি মনে হয়?’ (যার মানে: হ্যাঁ, তুলব তো বটেই)। কিন্তু সেই প্রখ্যাত ও পেশাদার ফোটোগ্রাফার এখন নিজেই সন্দেহে জর্জরিত হয়।

কিন্তু তার মানে কি এই: প্রবীণা আত্মসন্দেহে ভুগছে, তাই সে হীন? না কি সে-ই বুঝতে পেরেছে এই বার্তা: প্রতিটি মানুষের যুদ্ধমৃত্যু, হিংসামৃত্যু, নিবার্য-মৃত্যু আসলে এক অসহ বেদনাবহ ঘটনা, যা সুন্দর কম্পোজিশনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে না? প্রকৃত সংবেদনশীল মানুষ সেই অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে না, কুঁকড়েই যায়? আর নতুন মেয়েটি যখন মনে করেছে, গোটা বাস্তব আসলে শিল্পের কাঁচামাল, মৃত্যু-উপাদান ব্যবহার করে তার সৃষ্টি হয়ে উঠবে ধড়ফড়ে জ্যান্ত, যে মানুষগুলো কীটের মতো হুমড়ি খেয়ে আত্মা হারাচ্ছে তারা প্রাণ সঞ্চার করে যাচ্ছে তার চিরস্থায়ী ডিজিটাল ফ্রেমে, এবং তা-ই তাদের চরম মূল্য— তা আসলে অহং-দুষ্ট এবং দরদ-বিরোধী? না কি উল্টোটা? এতদিন নৃশংস সত্যের মুখে অকুতোভয়ে দাঁড়িয়ে আজ প্রবীণার ‘কমব্যাট ফ্যাটিগ’ বা সংঘাত-ক্লান্তি এসেছে এবং সে নিজের কাছে তা হিংসার স্বরূপ উদ্ঘাটন বলে সাফাই গাইছে? আর নবীনা পেয়েছে নির্মোহ নিরপেক্ষ নিখুঁত শিল্পী-অবস্থানের উচ্চ-চাবিকাঠি? তাই শেষ দৃশ্যে, যখন অনভিজ্ঞ নবীনা পড়ে যায় দু-পক্ষের গুলি-বিনিময়ের মাঝখানে, প্রবীণা তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বাঁচিয়ে দেয়, আর নিজে গুলি খায়, এবং নবীনা মাটিতে শুয়ে তার ত্রাতার মৃত্যুর মুহূর্তরাশি পর পর শাটার টিপে নথিবদ্ধ রেখে দেয়?

ছবির শেষে প্রেসিডেন্টকে বিদ্রোহীরা খুন করে, তার আগের মুহূর্তে এক সাংবাদিক তার থেকে একটা উদ্ধৃতিও সংগ্রহ করে, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল এক বিবদমান দেশের ভাগ্য অমীমাংসিত থাকে, তার পথে পথে আগুন জ্বলে এবং সহস্র মানুষ বিনা কারণে প্রাণ হারায়, শতেক লোক গুলি চালানোর আনন্দেই গুলি চলায়, শুধু গণতন্ত্রের প্রতি একসময় সাধারণ জনগণ উদাসীন থেকেছিল বলে। নিশ্চিত বিপদকে শত লক্ষণ সত্ত্বেও চিনতে অস্বীকার করেছিল বলে। তারা হয়তো দেশের সত্তাটাকে ও তার অধিনায়কত্বের প্রশ্নকে কিঞ্চিৎ লঘুভাবে নিয়েছিল।

আজ যখন সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন আমেরিকায় মূলতন্তুর বিরোধী রাষ্ট্রীয় ধমক ও চমক ঝলকে ওঠে, তখন এই ছবিকে মেগা-প্রাসঙ্গিক মনে হয়। ছবিটা মোটামুটি বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে, প্রচুর লোকে দেখেছে, তার মানে এর সতর্কীকরণ বহু-বিস্তৃত। এবং তখনই প্রবীণার সদৃশ প্রশ্ন আমাদের মনে খেলে যায়: তাহলে এই শিল্পের সার্থকতা কি শুধু ভবিষ্যদ্বাণীর বা সতর্কীকরণের কেরদানিতে, না কি কোথাও মানুষের ভাবনা বা মোক্ষম সিদ্ধান্তে এই ছবি তার ছায়া ফেলে যাবে?