শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ১

রক্তচয়নিকা 


চোখে তো দেখি না কিছু, রাস্তারা যেদিকে বলে, হাঁটি।
শরীরে পোশাক সাঁটা, মনে লেগে কবরের মাটি 

সুযোগ এসেছে আজ, শেষবার আকাশ দেখার 
দেহের কী দাম আর। সে তো শুধু মালিক, ছায়ার। 

ছায়া দেখে বেলা বয়ে যায়

জীবন, শান্তির দূত, চলমান কবরখানায়
সকলে তোমার কাছে ঋণী। 

যেদিন ওড়ালে পায়রা, চুপ হয়ে গেছি সেইদিনই। 

যেদিন ওড়ালে পায়রা, চুপ হয়ে গেছি সেইদিনই। 



পায়ে খুর। হাতে হাতে খাঁড়া।
বৃত্তি না। প্রবৃত্তি শুধু। যুগ যুগ ধরে চলছে তাড়া। 

পালাতে পালাতে শেষে বর্গি ঢুকে এল দেশে 
তারপর জুড়িয়ে গেল পাড়া… 

মানুষ ঘুমোতে চায়। প্রতি রাতে ঘুমপাড়ানি শোনে। 
শান্ত এই পৃথিবীর অন্তহীন বসন্তের বনে 

কী আর উপায় আছে, প্রেমের কবিতা লেখা ছাড়া? 



আমি আজও খুঁজে ফিরছি আমার কয়েকশো কাটা হাত

তুমিও তো হাতড়ে মরছ কই গেল ক’হাজার চোখ 

সকাল হবে না আর, এত নীচে নেমে গেছে রাত… 

অথচ একদিন এই মানুষই তো চেয়েছিল,
মানুষে মানুষে দেখা হোক 

তোমার চুলের গন্ধে ছেয়ে গেল কত মহাদেশ
আমার পায়ের ছাপ পড়ে থাকল কত গমক্ষেতে 
কত কী হওয়ার ছিল, অথচ এভাবে হল শেষ
দেখাও হল না যেতে যেতে। 

এই গ্রহে আগুনই প্রবীণ। 

দিগন্ত ছাড়িয়ে যাওয়া ছিন্নতার এই উৎসবে 
আমাদের যদি আর দেখা না-ই হয় কোনওদিন— 

তোমার চোখের সঙ্গে আমার হাতের দেখা হবে। 



বৃষ্টি নয়। মেঘ করলে বোমা পড়ে সিরিয়া, ইরাকে।
প্রতি পূর্ণিমায় বুদ্ধ বামিয়ানে ভেঙে যেতে থাকে। 

পাথরের গুঁড়ো আর পোশাকের টুকরো ওড়ে গরম হাওয়ায়—
কেউ কেউ এরই মধ্যে আকাশের দিকেও তাকায়। 

ভাবে যুদ্ধ শেষ হবে
কাচের জানলার সামনে ঠিক থমকে দাঁড়াবে কামান

ভেতরে অপেরা শিখছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে 
সেও মানুষেরই তৈরি গান। 

কিন্তু ততক্ষণে এই আকাশের রং তো লোহিত।
শেষ দৃশ্য নেমে আসছে। যবনিকা সকলেরই চেনা। 

নিজের বিরুদ্ধে আজ মানুষের একটাই জিত—

ধ্বংস হয়ে যাবে, তবু পিয়ানোকে ভেঙে ফেললে
সুর ছাড়া কিছুই বেরোবে না! 

ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র