মনডে ব্লুজ : পর্ব ১৫

representative image

শুক্র থেকে সোম

আমার পেশায়, মানে অভিনয়ে, আলাদা করে সোম-মঙ্গলবার নেই। অভিনয়ে আসার আগে চাকরি করতাম, তখন আলাদা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরেই আর তা নেই, আমার আলাদা করে বারগুলো মনেও থাকে না। আমার কাছে সোমবার বা রবিবারের গুরুত্বও তাই কমে গিয়েছে। আমার ছেলে স্কুলে পড়ে, শনি-রবি ওর ছুটি থাকে। সেই চিহ্নটা তাই আমার জীবনেও থেকে যায়। কাজ চলাকালীন তাই বুঝতে পারি না, কোন বারের কী মাহাত্ম্য! ছুটি থাকলে বরং আলাদা করে সোমবারটা টের পাই।

আমি মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ করেছি অভিনয় করতে শুরু করার আগে। সেখানে রোববার ছুটি থাকত। ফলে, যে-কোনও চাকুরিজীবীর মতোই সোমবারের জ্বালাটা অনুভব করতাম। চাকুরিজীবীদের সঙ্গেই বাস করেছি সারাজীবন, তাদের মতো করেই বুঝতাম, সোমবারটা কেমন অসহ্য! তবে, সেলসে ফিল্ডে যেহেতু কাজ করতাম, সেক্ষেত্রে একটা ফাঁকি মারারও সুযোগ থাকত, অফিস যেতে হত না। সেই সুযোগে কোনও-কোনও সোমবার রোববারও হয়ে যেত।

কেউ এসে বলেন, তার লেখা কবিতাই সর্বশ্রেষ্ঠ। ছাপলেই বিক্রি! পড়ুন শুভঙ্কর দে-র কলমে মনডে ব্লুজ পর্ব ১৪

চাকরিজীবন ছেড়ে থিয়েটার করা, তারপর ছোটপর্দা বা বড়পর্দার অভিনয়ে আসা, এই পর্যায়ে একটা জিনিস বুঝেছিলাম— যখন হাতে কোনও কাজ থাকে না, অর্থাৎ, বাঙালি যাকে স্ট্রাগল বলে, সেই সময়ে ছুটি অসহ্য। আমার বাড়ি হোক, বা যখন মেসে থেকেছি, তখন লম্বা-লম্বা ছুটির দিনে কখনও ঘরে থাকতাম না। বেরিয়ে পড়তাম। ভাল লাগত না বদ্ধ থাকতে।

এখনও কি মাঝেমধ্যে লম্বা-লম্বা ছুটি কাটাই না? কিন্তু এখনকার ছুটিগুলো আবার, ভাল লাগে। ছুটিতেও অনেক কাজ থাকে। ছুটিটাকে এখন নিজের মতো করে কাটাতে পারি।

সিনেমায় আবার, বক্স অফিসের কারণে, শুক্রবারের একটা গুরুত্ব থাকে। অভিনেতাদের কাছে সেটা জরুরি হয়তো। কিন্তু আদতে অঙ্কটা কখনওই শুক্রবার খোলসা হয় না। সপ্তাহান্ত পেরিয়ে, পরের সপ্তাহের শুরুতে গিয়ে হয়তো সমীকরণগুলো স্পষ্ট হয়। রিলিজ ডেট শুক্রবারই হতে হবে, এই রীতিটাও এখন সব ক্ষেত্রে অনুসৃত হয় না।

লম্বা ছুটির পর কাজে ফেরার সময়ে এখনও, বিষাদ কাজ করে কোনও-কোনও সময়। অভিনয়ে তো সময়ের কোনও ঠিক থাকে না, হাতে থাকে না সময়টা। কখনও আবার আউটডোরে চলে যেতে হয়। তার একটা বিষাদ তো আছে বটেই। তবে সেই বিষাদ, বিষাদ যতটা, তার চেয়ে বেশি আলসেমি। ওই যে দীর্ঘ অবসর ঝেড়ে ফেলে কাজে ফেরা, এর মধ্যে আলস্যের গা ম্যাজম্যাজ খানিকটা থেকেই যায়।