মনডে ব্লুজ: পর্ব ১৭

Representative Image

ছুটির উদ্যম


বিজ্ঞাপন

আমাদের কাজ কন্টেন্ট-ক্রিয়েশন; আমরা বিভিন্ন বিষয়কে বেছে নিই সোশ্যাল-মিডিয়ার কন্টেন্ট হিসেবে। আমার কাছে কন্টেন্ট যেমন খাওয়া-দাওয়া ও ট্রাভেল-কেন্দ্রিক, তেমনই বিভিন্ন মানুষের কাছে আলাদা-আলাদা তাঁদের কন্টেন্টের বিষয়।

দুর্গাপুজোর আগে থেকে ভাইফোঁটার সময়পর্ব পর্যন্ত আমাদের কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের একটা ‘ম্যাডনেস’ চলে। তুমুল ব্যস্ততায় কাটে পুরোটা সময়। অন্য সময়েও এই ব্যস্ততা থাকে, যা অনেকটাই নির্ভর করে ব্র্যান্ড কোলাবোরেশন ও দর্শকের চাহিদা ওপর। ফলে ক্লান্তি আসে, অনেক সময়েই আমাদের নিজদেরকে একটু রিচার্জ করার প্রয়োজন হয়।

আমরা যারা বছরের প্রতিটা সময় কন্টেন্টের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি, তাদের অনেক সময়ে মনে হয়, হয়তো নিজেদের মতো করে গল্পটা ভাবতে কিংবা বলতে পারছি না। অন্যের জন্য কাজ করছি। এ-সময়েই আমাদের একটা ‘ক্রিয়েটরস ব্লক’ হয়। তখন মনে হয়, আমি আরও বেটার করতে পারি, কিন্তু মাথায় গল্প আসছে না। লেখার ক্ষেত্রে যেমন রাইটার্স ব্লক। মুম্বইতে অনেক বড়-বড় মানুষের ক্ষেত্রেই এটা হয়। তাঁদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এটা। তাঁরা এক-দেড় মাসের জন্য কোথাও চলে যান, সেখানে থেকে নতুন কিছু ভেবে, আবার নিজের কাজের জায়গায় ফিরে আসেন। আমার ক্ষেত্রে যেমন এবারে হল।

আরও পড়ুন: রোববারের ছুটির মেজাজে নাটক দেখে দর্শকরা সোমবার যখন কাজে ফেরে, আমার কাছে তখন অনন্ত ছুটি! দেবশঙ্কর হালদার-এর কলমে মনডে ব্লুজ পর্ব: ১৬

আমি বেশ কয়েকদিন যাবৎ শান্তিনিকেতনে বসে আছি, সোলো বাইক-রাইডে একাই এসেছি এবং একাই ফিরব। আমার কাউকে কোনও কিছু বলার নেই, কারুর প্রতি দায়বদ্ধতা কিংবা কাউকে কৈফিয়ৎ দেওয়ারও নেই। নিজের জন্য এই বিরতি নেওয়া একটাই আশায়, যখন আমি ফিরব, আমি কোনও বেটার গল্প নিয়ে ফিরব, যা আমার কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারব।

এই সময়ে আমাদের সঙ্গে যাদের কোলাবরেশন বা যারা আমাদের ক্লায়েন্ট, তাদেরকে বলাই থাকে এই সময়টা আমার ছুটি, কোনও কাজ করব না। তারাও স্বচ্ছন্দে এই ছুটিটা দিতে রাজি হয়, কারণ তারা জানে, দিনের শেষে আমরা একটা বেটার কন্টেন্ট এনে তাদের জন্য হাজির করব। এই যে ছুটির শেষে, ছুটিটা সৃষ্টিশীলভাবে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে কাজে ফিরে যাওয়া— এটাই আমার ‘মনডে ব্লুজ’ থেকে মুক্তির রাস্তা।

আমরা যারা বছরের প্রতিটা সময় কন্টেন্টের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি, তাদের অনেক সময়ে মনে হয়, হয়তো নিজেদের মতো করে গল্পটা ভাবতে কিংবা বলতে পারছি না। অন্যের জন্য কাজ করছি। এ-সময়েই আমাদের একটা ‘ক্রিয়েটরস ব্লক’ হয়। তখন মনে হয়, আমি আরও বেটার করতে পারি, কিন্তু মাথায় গল্প আসছে না।

‘মনডে ব্লুজ’ যে আমার ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহের প্রতি সোমবার হয় তা নয়, কিন্তু বছরে দু’বার বা তিনবার হয়েই যায়। মনডে ব্লুজের চিরাচরিত ধারণা হল— শনি-রবি ছুটি কাটিয়ে, সোমবার অফিসে যেতে আমার ল্যাদ লাগছে; আমাদের ক্ষেত্রে এই ল্যাদের ধারণা কাজ করে না কারণ, আমরা এমন একটা ফিল্ডে আছি, যেখানে আমরা কাজটা ভালবেসে করছি। ‘মনডে ব্লুজ’-এর ক্ষেত্রে যে-লোকটা শনি-রবি ছুটির পরে সোমবার কাজে যাচ্ছে, তাঁদের ভালবাসাটা ‘রিগেইন’ করতে সময় লাগছে। কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না।

ধরা যাক, আমি যখন শান্তিনিকেতন থেকে ফিরব, আমি কিন্তু ফিরেই ভিডিও শুট করতে বসে যাব না। আরও দু’দিন হয়তো বাড়িতে ছুটি নেব। আমি আমার ঘোরার যাপনটাকে পরিবারে সঙ্গে ভাগ করে নেব, তারপর সোমবারে কাজে ফিরব। আমাদের ‘মনডে ব্লুজ’ এখানেই আলাদা ও একঘেয়েমি থেকে মুক্তির পথ।

আমরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর-রা একটা সময়কে ডকুমেন্ট করি; দর্শক যে-রকম স্বচ্ছন্দে কোনও রিল বা ভিডিও দেখেন, সেটা বানানোর নেপথ্যে কিন্তু সেই স্বচ্ছন্দ গতিটা থাকে না, এটা দীর্ঘ পরিশ্রম ও সময়সাধ্য কাজ। ফলত এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আমাদেরও ভেবে ক্লান্তি হয়, পরের দিন আবার একটা নতুন ভিডিও শুট! সেই গল্পটা বলার জন্য আবারও দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া! এই ক্লান্তিটা আসে, কিন্তু এর থেকে বেরোনোর উত্তর আমাদের নিজেদের কাছেই আছে, কাজটা আমরা ভালবাসি বলেই করছি।

সময়ের ডকুমেন্টেশন করার ক্ষেত্রে আমাদের বড় প্রশ্ন ‘কেন?’ করছি, এই ‘কেন করছি’-র উত্তরগুলো যতদিন আমাদের কাছে আছে, ততদিন কোনও ক্লান্তি আসবে না। যাঁদের কাছে উত্তর থাকে না, তাঁরা হয়তো কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় স্তরের ক্রিয়েটরদের কথা যদি ধরা যায়, তাঁদের মধ্যে ‘এআইবি’, ‘টিভিএফ’-এর মতন অনেকেই কিন্তু কন্টেন্ট দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। একই কথা প্রযোজ্য ‘বং গাই’-এর ক্ষেত্রেও, যে এক সময়ে মাসে তিনটে ভিডিও দিত, সে কিন্তু এখন দু’মাসে একটা ভিডিও দেয়। হয়তো তার ওপরে মানুষের আশা বেশি, তাই খুব সময় নিয়ে কন্টেন্ট দেয়, কিংবা হয়তো ল্যাদ খেয়ে গেছে। এ তো প্রায়ই  হয়।

এই ‘কেন’-র ক্ষেত্রেই কিন্তু চাকরি আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মূল পার্থক্য, নতুন প্রজন্মের অনেকেই চাকরির বদলে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনকে বেছে নেয় পেশা হিসেবে; কিন্তু তাদের অনেককেই আর পরে এই জগতে দেখা যায় না। তাদেরকে ফিরে যেতে হবে, ‘কেন’ তারা এই কাজটা বেছে নিয়েছিল এই প্রশ্নে। কন্টেন্ট-ক্রিয়েশনের ভাবনার অনেকটাই কিন্তু দাঁড়িয়ে আমি নিজের জন্য কিছু করছি এই প্রশ্নে, সেখানে শুধুই অন্যের জন্য করে যাওয়ার ইচ্ছে কিন্তু ভুল পথে চালিত করবে;  যখনই এই ‘কেন’-র উত্তর তারা পেয়ে যাবে, তারা আবার ফিরে আসতে পারবে মূল স্রোতে।