তাহাদের রায়/Ray@100

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী

পোস্টমাস্টার: চলচ্চিত্রের শর্ত

সংলাপের বদলে দৃশ্য ও শব্দের মাধ্যমে গপ্পোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা স্বীকৃত হয়। সত্যজিৎ মূলত খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে হলিউড থেকে এই শিক্ষাটা নেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল গল্প বলা। রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার থেকে সত্যজিৎ রায়ের পোস্টমাস্টার।

রজতাভ দত্ত

আশ্চর্য পরিমিতিবোধের পরিচালক

‘প্রথম থেকে অভিনয়ে অতিরিক্ত নাটকীয়তাকে সত্যজিৎ বর্জন করেছেন। যার জন্য, গ্রামের মেয়ে সর্বজয়া যখন আঁতুড়ঘরে ছটফট করে, তখনও তার মুখ থেকে প্রসবযন্ত্রণার দরুন আর্তনাদ বেরোয় না। আবার পরে, সন্তানশোকে সে যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে, তখন তারসানাই দিয়ে তার সেই চিৎকার ঢেকে দেওয়া হয়।’ পরিচালকের বাস্তবতা।

বিক্রম আয়েঙ্গার (Vikram Iyengar)

নর্তকী ও জিনিয়াস

‘যখন শাশ্বতীর বাবাও অরাজি হলেন, বললেন পরিবারের পক্ষে এটা ভাল হবে না, তখন সত্যজিৎ বললেন, ‘আমরা কি বাজে কাজ করি? আমরা কি বাজে লোক?’ দিল্লি ও কলকাতায় শাশ্বতীর পরিবারের লোকেরা শেষকালে মত দিলেন, এবং শাশ্বতীর জীবন বদলে গেল।’ সত্যজিৎ-স্মৃতি।

বিক্রম আয়েঙ্গার (Vikram Iyengar)

Danseuse and Genius

‘…When trying to identify the right dancer for the solo with Maharaj-ji, Ray remained unsatisfied with the many dancers he saw. He recalled a young student of Maharaj-ji who had performed at a film festival event at Vigyan Bhavan some years before. That was Saswati Sen, who at that point had no thought of becoming a professional dancer.’ One recital, a lifetime of memories.

কমলেশ্বর মুখার্জি

সমস্তটা দেখতে পেতেন

‘হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ, অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে দেখতে পাওয়া, এটা শিল্পের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে সত্যজিৎ রায়ের কৃতিত্ব এখানেই, অনেক টুকরো ডিটেলিং দিয়ে তিনি নানান হোলিস্টিক ছবি, শব্দ, এমনকী সঙ্গীতও তৈরি করেছেন। পুরোটাকে তিনি একসঙ্গে দেখতে পেতেন।’ সত্যজিতের মূল্যায়ন।

অংশুমান ভৌমিক

হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের খসড়া

‘…দার্জিলিঙের ওপর সত্যজিতের পক্ষপাত যাবার নয়। কলকাতা বাদ দিলে এই একটিমাত্র জায়গাতেই দুটো উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছকেছিলেন সত্যজিৎ। আসলে এই শৈলশহরের প্রতি তাঁর নাড়ির টান। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিৎ।’ সত্যজিতের দার্জিলিং।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

সত্যজিৎ রায়ের ড্রয়িং ক্লাস

‘ছবির যে যে অংশে উনি পাতলা অন্ধকার দেখাতে চান, ঠিক সেই সেই অংশে নিজের ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা চেপে চেপে বুলিয়ে দিলেন। আর তক্ষুনি, স্বচ্ছ কাগজের গায়ে আগে থেকেই যে টেক্সচারটা প্রিন্ট করা ছিল, সেটা ট্রান্সফার হয়ে গেল সত্যজিতের নিজের আঁকা ইলোরার ওই পাহাড়ের গায়ে। পাহাড়টা পাতলা অন্ধকারে ঢেকে গেল।’ আঁকার অভিনবত্ব।

চৈতন্য তামহানে

দীর্ঘ তাঁর ছায়া

‘একজন ছবি-করিয়ে হিসেবে, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, তিনি এই প্রশ্নাতীত ভক্তির প্রতিই বা কীভাবে তাকাতেন, আর ফিল্মস্কুলের দলবলের অনবরত সূক্ষ্মবিচারকেই বা কীভাবে দেখতেন। আমার ধারণা, দুটির কোনওটিই তাঁকে স্পর্শ করত না, তিনি নির্বিকার ভাবে শুধু নিজের কাজ করে যেতেন।’ সত্যজিতের মূল্যায়ন।

অর্ঘ্যকমল মিত্র

সত্যজিতের সিনেমায় ‘সম্পাদনা’

‘…সত্যজিৎ রায় আধুনিকমনস্ক চলচ্চিত্র-নির্মাতা হলেও, ওঁর ছবিতে সম্পাদনার তাত্ত্বিক প্রয়োগ বা প্যাঁচ-পয়জার কখনওই চোখে পড়ে না। সরল cause and effect সম্পাদনার প্রয়োগই মূলত লক্ষণীয়। উনি বিশ্বাস করতেন দর্শক-অনুকূল চলচ্চিত্রে।’ সম্পাদকের চোখে সত্যজিৎ।

শিল্পী সত্যজিৎ

‘…সত্যজিতের শতবর্ষে এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, ভারতবর্ষের গ্রাফিক ডিজাইনের জগতে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে সম্পূর্ণ একা হাতে সত্যজিৎ যে অভাবনীয় একটা উত্তরণ ঘটিয়ে গেছেন, তার কোনও তুলনা আজও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।’ শিল্পীর চোখে পরিচালকের শিল্পসত্তা।

ইউনিট মানে ইউনিটি

‘উৎপলদা মাথা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় মানিকদা, ‘কাট, কাট, কাট’ বলে চিৎকার করে উঠলেন। আমার দিকে ঘুরে বললেন, ‘কিছু দেখলে?’ আমার তো কিছুই চোখে পড়েনি! তখন মানিকদা মেক-আপ আর্টিস্ট অনন্ত দাশকে ডেকে বললেন, ‘তুমি উৎপলদার পাগড়ি থেকে মেটালটা সরিয়ে নাও।’’ শুটিং-এর অজানা গল্প।

অনীক দত্ত

আমার সত্যজিৎ

‘…এরপর থেকে কিছুদিন অন্তর অন্তর বাড়িতে ‘সন্দেশ’ পত্রিকার এক-একটা সংখ্যা আসতে শুরু করে। তাতে উপরে একটা কাগজে আমার নাম লেখা থাকত। এই ঘটনাটা মনে আছে তার কারণ, ওই প্রথম আমার নিজের নামে ডাকযোগে কিছু একটা আসে।’ সত্যজিৎ স্মরণিতে প্রবেশ।