ধারাবাহিক

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৩০

‘…আমি কলকাতার ধুলো-শব্দ-ধোঁয়া থেকে সেখানে যেতাম। আমার কাছে সে-বাড়ি তখন স্বর্গ মনে হত। বাগানের বিরাট-বিরাট গাছের তলায় আমার ঘরখানার বারান্দা। সেই বারান্দার ওপর ইজি-চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমি কল্পনার পাখায় চড়ে স্বর্গ-মর্ত করতাম। গীতা যাকে বলত কবরখানা, আমার কাছে তাই-ই মনে হত স্বর্গ।’ বদলের সংসার।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৯

‘…এ-সব ব্যাপারে গুরু ছিল শিশুর মতো। কেউ তাকে ভালোবাসলে সে গোলে যেত। কিন্তু তার এই শিশু স্বভাবটার কথা কজনই বা জানত। দুঃখ তো তার ছিল সেই জন্যেই। যারা তার কাছাকাছি আসবার সুযোগ পেত, তারা হয় খোশামোদ করতে আসত, কিংবা স্বার্থসিদ্ধি করতে আসত।’ মানুষ গুরু দত্ত।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৮

‘…প্রত্যেক মহৎ শিল্পীর জীবনেই কোনও-না-কোনও সময়ে এই সমস্যা একদিন মুখব্যাদান করে দাঁড়ায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেবার পালা। সেই সময়ে যে শিল্পী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাকেই লোকে বলে প্রকৃত শিল্পী। সেদিন গুরুকে দেখে আমার সেই সব কথাই মনে পড়ছিল।’ শিল্প ও ব্যবসা।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৭

‘…দুদিন কেটে গেল। টেলিফোনে চারদিক থেকে বুকিং-এর রিপোর্ট আসছে। শেষের দিকে নাকি দর্শকরা উসখুস করছে। যেন ভালো লাগছে না তাদের। শেষটা যেন তাদের মনঃপুত হয়নি। তবে কি ছবি চলবে না? টিকিট বিক্রি কেমন এগোচ্ছে? হাউস ফুল চলছে। কিন্তু টান নেই তেমন।’ দর্শকের রায়।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৬

‘…গুরুর অবশ্য এ অভিজ্ঞতা প্রথম নয়, আগে আরো পাঁচ-ছখানা ছবি করেছে। প্রতিবার এমনি করে প্রিমিয়ারের দিন দুরু-দুরু বুক নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তারপর আসল রায় যা দেবার দিয়েছে জনসাধারণ। যে যত বড় মহাপুরুষই হোক, জনসাধারণের বিচারালয়ে তাকে দাঁড়াতেই হয় আসামী হয়ে। কেউ পায় ফুলের মালা, কেউ নিন্দের। জনসাধারণের প্রীতির ওপর যাদের প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে, তাদের এমনি করেই দুরু-দুরু বুক নিয়ে মুখে হাসি ফোটাতে হয।’ ছবির প্রিমিয়ার।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

নীল কেটলি: পর্ব ৭

‘…আবার ময়মনসিংহ। আবার দাদু-ঠাকুমা, আবার সেই নদী! সব ঠিক, তবে এবার কী যেন নেই! হ্যাঁ, সঙ্গে আমার শান্ত, স্নিগ্ধ, ছায়ার মতো, তেষ্টার জলের মতো, শ্বাসবায়ুর মতো মা নেই। তাই তেমন করে মন আর আগের মতো নেচে উঠল না কিছুতেই।’ ছোটবেলার ময়মনসিংহ।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৫

‘…যে কবছর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম গুরুর সঙ্গে সে কবছরের সালতামামি করে দেখলে অনুরাগ ছাড়া আর কিছুই মনে পড়ে না। নইলে কোথায় বোম্বাই আর কোথায় কলকাতা! মাঝখানে দুস্তর নদী-পর্বত-মেঘমালার ব্যবধানটাও যেন কয়েক বছরের মতো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। একে কি বৈষয়িক সম্পর্ক বলে? তাই যখন যেখানে থাকত তখন ট্রাঙ্ককল করে আমার খোঁজ নিত কেন?’ মানুষ গুরু দত্ত।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৪

‘…আর একজন যে শান্তি দিতে পারত গুরুকে, সে হল ওয়াহিদা রেহমান। যে মেয়েটিকে সে হায়দ্রাবাদের নির্জন নিরিবিলি থেকে একেবারে খ্যাতির শিখরে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল। তারও একটু কৃতজ্ঞতা ছিল গুরুর ওপর। গুরু না হলে কে তাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে এমন করে বিখ্যাত করে তুলত। কিন্তু… গুরুর জীবন থেকে সে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিল।’ শান্তি-অশান্তির সংসার।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২৩

‘…ঘটনাটা এমন আকস্মিক ঘটল যে আমরা দুজনেই কেমন যেন বিমূঢ় হয়ে গেলাম। আমরা ও-বাড়িতে অতিথি, তাই ও-বাড়ির অন্দরমহলের সব ব্যাপারে কৌতুহলী হবার অধিকার আমাদের নেই। আমরা আনন্দের ভাগীদার হব, দুঃখেরও সমব্যথী হব, কিন্তু তার বেশি আর কি করতে পারি আমরা!’ অশান্তির সংসার।

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

আক্রান্ত: পর্ব ৮

‘…অভিমন্যু বুঝতে পারছে, জীবনে এই প্রথম কাউকে ছেড়ে যেতে তার কষ্ট হচ্ছে। প্রথম বিদেশে পড়তে যাবার সময় দাদু-দিদানের জন্য, কলকাতায় ফেলে যাওয়া বন্ধুদের জন্য যেমন কষ্ট হয়েছিল— এটা ঠিক তেমন নয়। এই কষ্টটা বুকের অনেক বেশি ভিতর থেকে মুচড়ে মুচড়ে আসছে।’ সম্পর্কের সমাপ্তির গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ২২

‘… অথচ দুজনের কত মধুর সম্পর্ক। একজনকে ছেড়ে আর একজন যে থাকতে পারে না, তার নজিরও পেয়েছি বহুবার। এমন আকর্ষণ সাধারণত স্বামী-স্ত্রীতে থাকে না। গীতা না থাকলে গুরু একলা অসহায় বোধ করে, তবু দুজনেই এটা মন খুলে বলতে পারে না। একজনের আড়ালে অন্যজন আমাকে পেয়ে তার দুঃখের কথাগুলো শোনাতো…’ সম্পর্কের টানাপড়েন।

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

আক্রান্ত: পর্ব ৭

‘বাইরে দরজা খোলার শব্দ হল কি? টেলিফোনটা হঠাৎ কি থেমে গেল? বাইরের ঘর থেকে কার উত্তেজিত গলা ভেসে আসছে। মিঠির গলা না? প্রায় ছুটে এসে মিঠি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে এল। তিলক ও সুচেতনার অবিন্যস্ত চেহারার দিকে তাকাল একবার বজ্রাহতের মতো।’ আচমকা অস্বস্তির মুখোমুখি।