
দর্শকের সামনে গিয়ে যদি অঙ্ক না মেলে? যদি না মেলে বাহবা, হাততালি, প্রশংসা? প্রত্যাশাকে সরিয়ে রেখে অভিনেতা যখন শুধু কাজে ডুবে যান, প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় যখন তৈরি হয় না শিল্প, সেই মায়াবী প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আবশ্যক-অনাবশ্যকের কথা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষা ঋতুকে যে ভাবে তাঁর গান ও কবিতায় প্রকাশ করেছেন, যে ভাবে মূর্ত করে তুলেছেন, আর কোনও কবি বর্ষার বিভিন্ন রূপ ও তার অনুসঙ্গকে সেভাবে আমাদের মনে প্রবেশ করাতে বা ছুঁতে পেরেছেন কি না জানা নেই। আপাত নিত্য ব্যবহৃত শব্দ বসিয়ে তিনি গান বা কবিতার পূর্ণ রূপ দেন, তখন আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় সেই গানের বা কবিতার দ্যোতনায়। হয়তো বা সে ইজন্যই তিনি কালজয়ী।

রাজীব গান্ধী হত্যার চক্রান্তে দোষী সাব্যস্ত একজনকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল। কেউ বলছে, এত বড় টেররিস্টকে ছেড়ে দিলে জঘন্য উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত হবে। কেউ বলছে, লোকটা ৩১ বছর জেল খেটেছে, তার ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়স অবধি জেলেই কাটল, এখনও কি যথেষ্ট শাস্তি হয়নি? আমরা ভাবনা ও আলোচনায় ক্ষমাকে কেন প্রায় কখনও অগ্রাধিকার দিই না, প্রতিশোধপরায়ণতাকেই দিই?

‘বাইরে তখন বৃষ্টিসড়ক চুঁয়ে
জল চলে গেছে গতজন্মের পার…
মনখারাপেরা উড়ে যাক এক ফুঁয়ে-
সন্ধে হলে তো বন্ধুকে দরকার।’ বর্ষা এমন একটা কাল, যা ঘাড়ে ধরে কবিতা লিখিয়ে নেয়। মনে এমন বৃষ্টির জল জমে, তাতে কবিতার নৌকা না ভাসালে মহাপাপ হয়। মেঘদূতের চর্চা।

ব়্যাপানজেলের একঢাল চুল, কিন্তু অসুখ হয়ে তার টাক পড়ে যায়। আর সেই অসুখ নিয়ে ইয়ার্কি মারতেই, ডাইনিবুড়ি বিশাল থাপ্পড় খায় উইল স্মিথের কাছে। আর গানটায়, এক জাঁদরেল মিলিটারি ক্য়াপ্টেন ভিনগ্রহে গিয়ে ধাঁইধাঁই গুলি চালিয়ে এলিয়েন মারছে, তার ঘাড় অ্য়াকিউট অ্যাঙ্গলে কাত, ডিনার পাক্কা সাড়ে-সাত।

মঞ্চ এক আশ্চর্য জিনিস। তার ওপর হঠাৎ কোনও অপ্রস্তুত দুর্বিপাক অভিনেতার কাছে আশির্বাদ হয়ে উঠতে পারে, কখনও তা দাঁড়ায় অভিশাপে। যতই আগে থেকে পা মেপে, ফিতে ধরে, উইংস গুণে অভিনয়ের ছক কষা থাক না কেন, সে সেই মুহূর্তে নিজ মহিমাগুণে অভিনেতাকে ভেল্কি নাচন নাচিয়ে দিতে পারে। তা কখনও দর্শকের কাছে হয়ে ওঠে প্রাপ্তি আর অভিনেতার কাছে দুঃস্বপ্ন, আবার কখনও বা ওখান থেকেই তৈরি হয় ওই মুহূর্তের অমরত্ব। স্টেজের জাদু।

ক্যারেন আর রিচার্ড কার্পেন্টার। দামাল সত্তরের রক প্রেক্ষাপটে সহজাত ভঙ্গীতে প্রেমের গান গেয়ে খ্যাতির শীর্ষস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন এই দাদা আর বোনের ‘ভোকাল ডুও’, আমেরিকান পপ-রক সঙ্গীতের সম্ভারে যে অসাধারণ গানের ডালি উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন, তার জুড়ি মেলা ভার। ‘টপ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ থেকে ‘সলিটেয়ার’, ফিরে দেখা, সহজ, সরল গান গাওয়াকে।

‘কবির সঙ্গে দেখা’র নিয়ম থাকে, যে-সমস্ত কবির সঙ্গে দেখা হয়নি শ্রীজাতর, তাঁদের কবিতা পড়া। কিন্তু এবার সেই নিয়ম ভেঙে হাজির হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। তিনি আজ নেই, কিন্তু তাঁর কবিতা আমাদের আজও আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এবারের কবিতা-পাঠ ‘সীমান্তবিহীন দেশে-দেশে’ নামক তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ থেকে।

আবিষ্কার হয়েছে চালকহীন গাড়ি। শুনে অনেক ভাবছেন, ‘যাক, ড্রাইভারের ঝামেলা মিটল’, অনেকে ভাবছেন, ‘পেছনের সিটে ইন্টু-মিন্টু করার আর বাধা রইল না।’ কিন্তু এই আবিষ্কারের কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট হলে গণধোলাই দেওয়া হবে কাকে? কার ওপর যখন তখন প্রভুত্ব ফলাবে অহং-বাজ মধ্যবিত্ত? চালকের অস্তিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব।

অন্য কথায়, অন্য মানুষের কথায় মিশে থাকা নিজের মনের অনুভূতি। এ কবিতা যেমন অন্যের, তেমন তাঁরও। এ কবিতা আদত উদুর্তে জাভেদ আখতারের, অনিবাদে শ্রীজাত। কিন্তু কবি যে কখন অনুবাদকের অনুভূতির মধ্যে চাড়িয়ে গিয়ে তৈরি করেন আশ্চর্য এক মিশেল, তা বোঝা দায়। তাই এ কবিতা যেমন জাভেদ আখতারের, তেমন শ্রীজাতর। আসলে অনুবাদ কবিতা না ভেবে বরং, মিশ্র-অনুভূতির কবিতা বলাই ভাল।

নাটকের মধ্যে যখন এক জন অভিনেতা থাকেন, তখন তাঁর মনে সচেতনতার একটা ভিন্ন স্তর তৈরি হয়। সেই স্তরের অনুভূতি কিন্তু অভিনেতার মনের ভেতরে এক অন্য রকম নাটক তৈরি করে। যে নাটকের মোহে অভিনেতা মূল নাটক এবং নিজের মনের মধ্যে চলতে থাকা নাটকের মধ্যে বার বার যাতায়ত করেন। সেই নাটকীয়তা নিয়ন্ত্রণ করাটা কিন্তু খুব সহজ ব্যাপার নয়। অতিনাটকীয় বলে যে দুয়ো দেওয়ার চল রয়েছে, তা কিন্তু বুঝে দেওয়াই ভাল কারণ নাটকীয়তার একটা নিজস্ব চলন আছে, নাটকে এবং অভিনেতার মনের মধ্যে। আর সেই দুইয়ের মধ্যে সংযোগ খুব কম।
This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.
©2025 Copyright: Vision3 Global Pvt. Ltd.