ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১৪

চারশো বছরের বাজার পাল্টেছে কালের নিয়মে, তবে মূল চরিত্র বদলায়নি। এখনও এটি সর্বজনের সহায়, চকবাজার কাউকে ফেরায় না। প্রসাধনী, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, চিকিৎসাপণ্য, কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, বেকারিপণ্য, অলংকারসামগ্রী, খেলনাপাতির পাইকারি বাজার আর এসবের খণ্ডাংশ হিসেবে বহু খুচরো দোকানের সমাহার। কিন্তু এত কিছুর পরও চকবাজারের নাম শুনলেই ঢাকাবাসীর মনে আসে দুটো কথা— কাবাব, ইফতার আর রঙিন পুঁতির দেশ। ঢাকার চকবাজারের ইফতার।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১৩

‘আমার দেখা মেলার ১৮ বছরও কম নয়। প্রথম যখন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসি, তখন মেলা হত শুধু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মাত্র একটা প্রবেশ পথ, বেরোবার একটা পথ। মেলায় ঢোকা— সেটা যদি শুক্র শনিবার বা অন্য ছুটির দিন হত— তাহলে সে এক মহাপ্রস্থানের পথ। প্রায় দেড়’দুই কিমি লাইন, সেই শাহবাগ মোড় থেকে শামুকের মতো ঠেলে-ঠেলে মেলায় ঢোকার অভিজ্ঞতা, তখনকার লোকেরা জানেন। ‘

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১২

‘একজন অন্তর্মুখী মানুষ যে উপায় নিতে পারেন কাজী আনোয়ার হোসেন তাই করলেন। কুয়াশা নামে একটা রহস্যভেদী চরিত্র তৈরি করে দুই খণ্ড রহস্যকাহিনী লিখলেন। শুরু হলো প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরা। এক প্রকাশক দুই বইয়ের বিনিময়ে দুইশ টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু দুইশ টাকায় তো রাইফেল কেনার পয়সা উঠবে না। অতএব তিনি পাণ্ডুলিপি ফেরত নিয়ে এলেন। লেখালেখিতে আপাতত কিছুটা বিরতি। শিকারী হওয়া আর হলো না। তবে, মাছ শিকারের নেশা ছাড়তে পারেননি সমস্ত জীবন। মাছ শিকার করতে তো আর বিলেতি রাইফেল লাগে না।’ কাজী আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর রহস্যকাহিনি।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১১

‘পিঠা উৎসবে গিয়ে দেখা গেল, পিঠার নকশায় রকমারি বাহার। তার চাইতে বাহার পরিবেশনে। খেতে যাঁরা এসেছেন তাঁরাও পৌষ-মাঘের অনুকূল পোশাক পরেই হাজির হয়েছেন। এই নাগরিক উৎসবের পিঠায় একটা বড় পার্থক্য যেটা সহজেই চোখে পড়ে, সেটা পিঠার আকার।’ ঢাকার পিঠে উৎসব।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১০

‘আজিজে যেটা সংকুচিত হয়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে আড্ডা। আগে হাত-পা ছড়িয়ে কেতাবি দুরস্তের ধার না ধেরেও এখানে-সেখানে বসে সুবিধামতো আড্ডা দেওয়া গেছে। এখন সেসব জায়গা সংকুচিত, ফলে আড্ডাও ম্রিয়মান। আড্ডা এখন বসছে বুক ক্যাফেতে।’ বইয়ের দোকানের আড্ডা।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৯

‘রাস্তার দু’ধারে, ফুটপাথে, বাজারের সন্নিকটে, যেখানেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, সেখানে গেলেই দেখা যাবে উপগ্রহের মতো অজস্র চিতই পিঠা লোকের হাতে-হাতে ঘুরছে। বছর দশ-পনেরো আগেও চিতই পিঠা এমন নাগরিক হয়ে ওঠেনি। তখনও শহরে চিতই পিঠা বিক্রি হত, তবে তা কিছু-কিছু জায়গায়।’ ঢাকার পিঠে।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৮

‘দোকানে তিনি বিরহের গান বাজাতেন (মূলত মান্না দে)। কিছুকাল পরে তিনি দেখলেন, তাঁর দোকানে অনেকেই খাবারের অর্ডার করে, কিন্তু খাবার না খেয়েই বিল দিয়ে চলে যায়। দোকানি বুঝতে পারলেন, ক্রেতারা যে-কোনও কারণেই হোক, গান শুনে পুরনো স্মৃতিতে কাতর হয়ে পড়েন, খাওয়া আর হয়ে ওঠে না।’ দুঃখের রেস্তরাঁ।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৭

‘সামনে আবার কী এক সরীসৃপের মৃৎশিল্প। চা খাবার আগে চিনা নিয়মমাফিক তাকে চা সাধতে হবে। কমলা আকারে ছোট, চায়ের পাত্র তার চেয়েও ছোট। এ পাত্রে কমলা ডোবাব কীভাবে মাথায় এল না। গৃহকর্তা জানালেন, ঘাবড়াও মাত! ও কমলা এমনিতেই গলে যাবে। ‘কমলা চা’ খাওয়া হল।’ অবাক চা-পান।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৬

‘ঈদের পরদিন কিছু ঝকমকে বইয়ের দোকান ছাড়া পুরনো বইয়ের বাজার সব বন্ধ। ফলে, আমি রিকশা বদল করি। বন্ধ বাংলাবাজারে যেতে হলে ভিন্ন রিকশা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠে পড়ি। পুরনো ঢাকার অলিগলিগুলো চিরকাল মোহনীয়।’ ঢাকায় ঘোরাঘুরি।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৫

‘শহরের সমস্ত মহাসড়ক মৃত অজগরের মতো নিঃসাড়। মাঝে মাঝে অনিচ্ছুক বৃষ্টি হয়, তাতে কর্পোরেশনের ব্যর্থ ড্রেন থেকে উপচে পড়া জল থইথই করে। সকলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে, কেউ পার হয় না। ক্লান্ত চোখে সকলে মৃত্যুর খোঁজ নেয়।’ নিস্তব্ধ ঢাকা শহর।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৪

‘ভোরবেলা অগত্যা উঠে বের হয়ে গেলাম। সকালবেলার মোহাম্মদপুর ফাঁকা আর বাতাসময়। টাউন হলের দিকে যাবার পথে-পথে সবুজ পুলিশ আর সবুজ সবজির পসরা। এই ভোরবেলা পুলিশ এসে সবজিবাজার তুলে দিচ্ছে।’ ভোরবেলার ঢাকা ভ্রমণ।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৩

‘আজও চকবাজার, রমনা, আজিমপুর পার হয়ে যাচ্ছে ঈদ মিছিল। মীরপুর, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুরে সারি সারি বাঁশ আর বেতের, কাঠের খেলনা, জরি, রং, আতর, ফিরনি, ঝলমলে জামা, হরেক খেলায় টইটুম্বুর ঈদের মেলা। উর্দুভাষী মহল্লায় গজল আর কাওয়ালির আসর।’ ঢাকার ঈদ।