ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ১০


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (July 3, 2021)
     

    কমেডিস্তান

    ক ’দিন আগে কিছু রাজনৈতিক মহাপাণ্ডা ঘুষ-মামলায় জেলে গেলেন। মিডিয়া অমনি হাপুস নয়নে চৌকস বয়নে লিস্টি প্রকাশ: কে চচ্চড়ি খাননি, কে সিন্ধুঘোটকের স্বপ্ন দেখেছেন, কে নিজের জন্য টুকুন ভাবেন না কিন্তু কলকাতাবাসীর চিন্তায় ফুঁপিয়ে ফোঁপরা, সর্বোপরি কার সঙ্গে দেখা করতে স্ত্রী এসেছেন কার সঙ্গে প্রেমিকা। পরের সকাল থেকেই এই হেভিওয়েট বন্দিদের শরীর বিগড়ে বি-প্লাস। ছোট-কয়েদিরা যদি বড়-কয়েদিদের দেখে শেখেন (উচিত-কাজ, কারণ সমাজের ন্যাজ তো মাথাকে নকলিয়ে সে-প্যাটার্নেই দুলবে), তবে অবিলম্বে প্রতি প্রিজনে ‘হা আমার পেট জো মম পাঁজরা’ মড়াকান্না, মস্তকভাণ্ড বা সুষুম্নাকাণ্ড পাকড়ে গড়াগড়ি, এবং হাসপাতালের বেডে বেডে টইটম্বুর চোর-ফেরেব্বাজ-গাঁটকাটার প্রদর্শনী (টিকিট করলেও হয়)। তখন রোগীদের বন্দোবস্ত কোথায় হবে, জেলখানায়?— এ বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিকদের ভাবনা প্রয়োজন। এর মধ্যে এক অভিযুক্ত ক্রমাগত নিজের ছেলেকে কেবিন থেকে বহিষ্কার করছেন ও পরস্ত্রীকে প্রণয়-মর্যাদা দিচ্ছেন বলে (‘অবৈধ’ থিমে) তাঁর টিআরপি উচ্চগামী। ইনি আগে যে-দলে ছিলেন, তার মুখপাত্র ওঁকে প্লাস বান্ধবীকে বিচ্ছিরি ডাকনাম দিয়ে নানা চ্যানেলে রসিয়ে রসিয়ে বিঁধে হ্যাহ্যা, যেন কলেজ ক্যান্টিনে টিনের টেবিল বাজিয়ে কুচ্ছো-গীতি। তিনি মগজে সাবান মেরে ভুলেছেন (যুগ-প্রতিভার অংশ: স্বেচ্ছা-স্মৃতিভ্রংশ), নিজে দীর্ঘদিন জেলে পচছিলেন এবং পুলিশ-ভ্যানে ওঠানামার কালে এই দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে বিবৃতি চেল্লানোর চেষ্টা চালাতেন আর পুলিশ তখন ভ্যানের ওপর কোরাসে লাঠির বাড়ি হাঁকড়ে তাঁর স্বর গাবিয়ে রাখত। বাংলাবাজারে চোরের মা’র বড় গলা, চোরের নিজেরও গলা কিছু কম না, আর চোরকে যে চোর-চোর বলে ক্রমাগত টিটকিরি দিচ্ছে তার গলা সর্বাধিক ডেসিবেল ছুঁয়ে হাল্লাক, নইলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটাও লোকের ধাঁইসে মনে পড়ে যেতে পারে। অন্য সব পার্টি ঘনঘটা দেখে ফুর্তিময় ছোবল শানাতে লাগল ছিছিছ্যাছ্যা, তাদের হৃদয় স্ব-চিবিয়ে খাক, বেচারারা ক্ষমতায় নেই বলে বহুদ্দিন চুরি করতে পারছে না ও বাধ্যতামূলক সততার গর্বে ফুলে কোলাব্যাং হয়ে আছে, এত ফ্যাশনদুরস্ত যে কোকাকোলাব্যাং বলে ভ্রম হয়। তবে টিভি-স্ক্রিনের নিয়ম, সিন ঘন ঘন চেঞ্জ, তাই অবিলম্বে এই কেস ধামাচাপা ও সম্মুখে আবির্ভূত ভিন-সংবাদ।

    বচ্ছর চার আগে এক দল থেকে অন্য দলে গেছিলেন যে ভিআইপি, তিনি চকিতে রিওয়াইন্ড মেরে আগের দলে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। যে দল ভোটে জিতবে, সেই দলের আদর্শ মাঝরাতে ভীষণ ভাল্লাগতে শুরু করবে, অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ। ‘জোনাকির নিতম্বালোকের সংক্রমণে মগজে বালব জ্বলিল, আরে, ওই দর্শনই তো তর্কাতীত ভাবে শ্রেষ্ঠ! তেতাল্লিশ বচ্ছর কেন বুঝতে পারিনি?’ এমত মোক্ষম নির্বাণ-সংলাপ ভারতীয় রাজনীতিকগণ (বা ক্ষমতালেহী বুদ্ধিজীবীগণ) এবলা-ওবলা কুলকুচি করেন। এবং সত্যিই তো, এক-পতাকায় আনুগত্য এক-বউয়ে অনুরাগ এক-ফিল্মমেকারকে ঘাড়ে তুলে ‘গুরু গুরু’ চিক্কুর— গামবাট গোঁড়ামি। মূল ঝামেলা মুখপাত্রদের, স্টুডিওতে ঢুকেছেন সাড়ে সাতটায়, নিজের লোককে প্রশস্তি মাখিয়ে ও বিরোধী লোকের কাপড় খুলে দিয়ে সাতটা চল্লিশে বেরিয়ে দেখেন, দল পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে। এবার খিস্তি গিলবেন কীভাবে, ওগরাবেনই বা কোন পথ দিয়ে? সাধারণ পাবলিক ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে কিংবা কেকেআর ও আরসিবি-তে এই জার্সি-বদলাবদলি ন্যূন-হ্যাঁচকায় মেনে নেয়, কিন্তু মানবকল্যাণের ক্ষেত্রে এই ট্র্যাপিজ-ক্রীড়ায় তার ঝক্কাস-ঝাঁকুনি লাগে, কারণ মতাদর্শের কিছু নির্দিষ্ট গিঁট্টুমোহন হ্যাজ। যদি বলো তুমি কমিউনিস্ট, রেগেমেগে হানতেই পারো, ‘ধুর, এ-দলটা সাচ্চা কমিউনিস্ট না, আমি বেরিয়ে গেলাম।’ কিন্তু যে-দলকে হাতা গুটিয়ে কাল অবধি ঘৃণ্য শ্রেণিশত্রু, প্রতিবিপ্লবের আখড়া দাগাতে, তাদের কোলে হামা মেরে রসালো পোস্ট সাঁটছ হুমো-বদনে? হয় তুমি যাও অন্য কমিউনিস্ট সংঘে, নয় পত্তন করো নিজ বিক্ষুব্ধ পার্টি, অথবা বারান্দায় ফোঁসফোঁস আক্রোশে পিঁপড়ে মারো নৃশংস টিপে। এসব সহজবোধকে লাত্থি মেরে ‘এই বেড়াতে বেড়াতে চলে এলুম, দেখলুম এঁরা কী সত্য সুন্দর ও কোলাকুলিময়’ হরদম চলেছে। সকলেই ফেলুদা, তিনি মগনলালকে বলেছিলেন, ‘আমারই তো মাইন্ড, চেঞ্জ করতে তো বাধা নেই।’ বাধা অবশ্যই নেই, কিন্তু ফেলুদা হৃদয় চেঞ্জিয়ে মগনলালের দলে ভিড়ে গেলে স্লাইট মুশকিল। ফলে মহাজনদের দেখেশুনে বাংলার মহান উপলব্ধি: জীবন অনিত্য যৌবন ভ্যাবলা কাব্য চাকনাচুর, তাই বাপু যেখানে লাভের গুড় সেঁটে যাও সুমধুর। সিনং কৃত্বা (সিন ক্রিয়েট করতঃ) ঘৃতং পিবেৎ। 

    ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে এত লোক এ-দল ও-দল ট্র্যাপিজ-লাফায়, ম্যাচিং করতে জান কয়লা: কার ধড়ে কার মুড়ো। মঞ্চে বসে দু’কানকাটা কোশাকুশিতে গঙ্গোদকের ছিটে ছিটকে দিব্যি প্রেস-মিট উতরে যায়। ঝামেলা মুখপাত্রদেরও, স্টুডিওতে ঢুকেছেন সাড়ে সাতটায়, নিজের লোককে প্রশস্তি মাখিয়ে ও বিরোধী লোকের কাপড় খুলে দিয়ে সাতটা চল্লিশে বেরিয়ে দেখেন, দল পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে।

    এরপর যৌনতার দিকে কান্নিক খেয়ে বাংলায় ঘুরন্ত ক’পিস হেঁয়ালি: লিভ-ইন কি বিয়ে, বিয়েই কি লিভ-ইন? বিয়ে কি আসলে কিঞ্চিৎ সহবাস ও আদতে লিভ-আউট? লিভ-বিয়ে কি আদতে বাকবিতণ্ডা ইন ও সহবাস আউট? সন্তান কার? বাবা কেন মাকড় (পোকা-জাতীয়)? কিন্তু এই কেচ্ছায় আবৃত থাকার দিন নয় অদ্য, অবিলম্বে এল ধুরন্ধরের ভয়াল আখ্যান, এক জম্পেশ জোচ্চোর ভ্যাকসিনে ভেজাল দিচ্ছিলেন। যে-দেশে বেবিফুডে বিষ সর্ষেয় চোরকাঁটা দুধে ডিটারজেন্ট ইলিশে ফিনাইল, সেথা ভ্যাকসিন রেহাই পাবে কেন? ওষুধের বয়াম দেখলেই কর্পোরেশনের জল মেশাতে আমাদের সমষ্টিগত নির্জ্ঞান নিশপিশ করে। এখন জালিয়াতের ক্যাম্পে গিয়ে লোকে পাউডার-পানি দেহে সেঁধিয়ে বাড়ি ফিরেছে, অতঃপর বেঙ্গল-স্টেজে পৃথক ধাঁধার সেট: কী পাউডার? প্রসাধনী না দন্তমঞ্জন? রক্ত ফর্সা হবে? সুরক্ষিত হওয়া তো জলে গেল, উল্টে কঠিন-ইংরেজি-নামের অসুখ ঘটবে নির্ঘাত, তার বানান মুখস্থ থাকবে তো? অনেকে প্যানিক অ্যাটাকেই ফুসফুসে ফোড়া গজিয়ে ফেলল। এই কাণ্ডের ক্যাপ্টেন বহুদিন সরকারি দফতরের লোগো ব্যানার হলোগ্রাম অ্যাকাউন্ট নেমপ্লেট বুকে-পেটে ড্রপ খাওয়াচ্ছিলেন কিছুতে মাটিতে পড়তে না দিয়ে (মিচকে মারাদোনা, প্রপঞ্চময় পেলে), এবার সহসা দড়াম মহানাদে হড়াস সিলিপ খেতেই সব্বাই ‘ও কী ও! চিনিনে জানিনে, বাপের জম্মে দেখিনি মা, মায়ের জম্মে শুঁকিনি বাপ’ কপচে পরিত্রাহি চম্পট। বিরোধীরা বলছেন, তোমার পতাকা যারে অহরহ নকল করতে দাও, তার পিছনে তোমার সচেতন মস্তানি-শকতি নাই? আর সরকারি দল ‘অমুক ঘোড়েল তমুক চোট্টার সঙ্গে যে তোদের বস হেসেখুশে ফোটো তুলেছিলেন!’ হেঁকে খালাস। সেই প্রাচীন তর্করেখা: আমি বদ কি না সে-জবাব দেব না, তুই নিজে শঠ হয়ে প্রশ্ন করছিস কোন মুখে? আমার দশ বছরে বাংলা গোল্লায় যাক, তোদের চৌতিরিশের (বা আটের, বা আঠেরোর) উৎপাদন বিশ্লেষণ কর। আরও ট্র্যাজেডি: সঞ্চালকেরা ব্রেকিং নিউজে নাগাড়ে আওড়াচ্ছেন ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’, কেউ চিরঞ্জিতের উল্লেখটুকু করছেন না, তিনি এই নামে ছবি বানিয়েছিলেন, তার সংক্ষিপ্ত ফর্ম ‘কেঁ খুঁ কে’ একদা পোস্টারে পোস্টারে ক্ষিপ্ত ভেংচির ন্যায় ঝলমলিয়েছে। দেখা যাক, তদন্ত চলুক, কে বেরোয় না কেঁ বেরোয়, অথবা কেঁ-কে (কেঁদো কেরামতি) বা কে-কেঁ (কেয়ামত কেঁদেছে), আসলি বাত হল, বাংলায় বাস করে আমরা আম-জনতা (গোলাপখাস, ল্যাংড়া) সৌভাগ্যে পিএইচডি। আধুনিক মানুষ বেঁটে মোমবাতির অধম, নিমেষে নিভে যেতে পারে উগ্রপন্থী হানা, যুদ্ধ, অতিমারী বা ভূমিকম্পে। সর্বক্ষণ তরাসে থরথরায়, এই চাকরি গেল, ইএমআই বাকি পড়ল, চাকরদের সঙ্গে লঙ্গরখানায় একাসনে বসে লাবড়া খেতে হল। তার ত্রাণার্থে ঈশ্বর এই একটি কমেডিস্তানে নির্মাণ করেছেন অন্তহীন সার্কাস, কেয়াবাত কার্নিভাল। হপ্তায় হপ্তায় ঝলকে উঠছে নূতন নির্বোধ, সাম্প্রতিক শয়তান, উচ্চণ্ড উদ্ভট। তাই নিবিষ্ট তাকিয়ে থাকুন পরবর্তী ধমাকার দিকে: তা কি হরর, না হাসির হররা? ফিরে আসছি, ছোট্ট ব্রেক না নিয়েই।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook