বিচ্ছেদের বার্ধক্য

Representative Image

গ্রে-ডিভোর্স বলতে বোঝায় এমন এক ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ, যেখানে দম্পতিরা বার্ধক্য বয়সে পৌঁছে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রে-ডিভোর্স বলার কারণ এ’টি সাধারণত জীবনের ধূসর বয়সে অর্থাৎ পঞ্চাশোর্ধ্ব বা অবসরের কাছাকাছি সময়ে ঘটে বলে এই বিবাহবিচ্ছেদের এমন নামকরণ। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন, সন্তান লালন-পালন ও পারিবারিক দায়িত্ব সামলে আসার পরে এই বিবাহবিচ্ছেদ সমাজের চোখে একরাশ প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে। কী, কেন— ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করতে থাকে পাড়া প্রতিবেশীরা। এককালে সমাজের উঁচুস্তরের মানুষদের মধ্যে এই বিবাহবিচ্ছেদের প্রথা থাকলেও, এখন মধ্যবিত্ত সমাজে গ্রে-ডিভোর্স জলভাত হয়ে গিয়েছে।

স্বাধীনভাবে বাঁচার তাগিদে পালটে যাচ্ছে সমাজের কাঠামো। ভাল থাকাই মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘদিনের মানসিক দূরত্ব, জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধের অমিল, অথবা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এসবই এর পিছনে কারণ। আধুনিক সমাজে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও সামাজিক কুসংস্কারের ভীতি কমে আসায় এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, যা ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোকেও নতুনভাবে প্রভাবিত করছে।

আরও পড়ুন: বর্তমান যুব-সমাজ কি যৌনতার প্রতি ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছে? লিখছেন আদিত্য ঘোষ…

‘গ্রে ডিভোর্স’ বা ৫০ বছরের পরের বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা প্রথম বড় আকারে ধরা পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯০ সালে যেখানে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে দম্পতিদের ডিভোর্স হার ছিল প্রতি ১,০০০ বিবাহিত মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ জন, সেখানে ২০১০ সালে সেই হার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ জনে, অর্থাৎ দ্বিগুণ। সুসান এল. ব্রাউন ও আইফেন লিনের ২০১২ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১০-এর মধ্যে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সিদের মোট ডিভোর্সের সংখ্যা ১০৯% বেড়েছে, আর ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩০০%। মার্কিন জনগণনা দপ্তরের তথ্য বলছে আজ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারটি ডিভোর্সের মধ্যে একটি ঘটছে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সে। এই ধারা পরবর্তীতে কানাডা, জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যেও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যেখানে প্রবীণদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন বড় ভূমিকা রাখছে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর পাশাপাশি সমাজে এই ধারণা ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে আলোচনায় আসে এবং ভারতে গত এক দশকে তা ধীরে-ধীরে দৃশ্যমান হয়েছে। দেশে বিবাহবিচ্ছেদের সামগ্রিক হার এখনও তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ১%। তবে মেট্রো শহর ও মফস্‌স্বলে প্রবীণ দম্পতিদের বিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে লক্ষ্ণৌতে দাখিল হওয়া প্রায় ১,৫০০টি ডিভোর্স মামলার মধ্যে প্রায় ৪০% ছিল ৫০ বছরের বেশি বয়সি দম্পতির। হায়দ্রাবাদে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিবারের আদালতে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৫%, যেখানে একটি বড় অংশ এসেছে মধ্যবয়সি ও প্রবীণ দম্পতির কাছ থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক স্বাবলম্বন, সন্তানের স্বাধীন হয়ে যাওয়া, দীর্ঘায়ু জীবন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং সামাজিক কলঙ্ক কমে যাওয়ার মতো কারণ এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিরণ রাও ও আমির খান (১৫ বছরের দাম্পত্য), মালাইকা অরোরা ও আরবাজ খান (১৯ বছরের দাম্পত্য), কিংবা কামাল হাসান ও সারিকা ঠাকুরের মতো বহু বিচ্ছেদ ‘গ্রে-ডিভোর্স’-এর আলোচনাকে ভারতীয় সমাজে আরও স্পষ্ট করেছে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতার বিভিন্ন জেলা ও সিভিল কোর্টে দায়ের হওয়া বৈবাহিক মামলার মধ্যে প্রবীণ দম্পতির বিচ্ছেদের হার ছিল মোট মামলার প্রায় ০.৫% থেকে ১%। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট বিবাহিত জনসংখ্যার মধ্যে ‘ডিভোর্সড’ বা ‘বিচ্ছিন্ন’ শ্রেণিভুক্ত মানুষের হার ছিল প্রায় ১.৬৭%। যদিও এই পরিসংখ্যান বয়সভিত্তিক নয়, তবু আদালত এবং সামাজিক গবেষণার পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন, সন্তানের স্বাধীন হয়ে যাওয়া, এবং সামাজিক কলঙ্কের ভয় কমে যাওয়ার মতো কারণ প্রবীণ দম্পতিদের বিচ্ছেদের পথে ঠেলে দিচ্ছে। কলকাতা ও আশেপাশের শহুরে অঞ্চলে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি দৃশ্যমান, যেখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার চাহিদা এবং জীবনের দ্বিতীয় পর্ব নতুনভাবে শুরু করার ইচ্ছা দম্পতিদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করছে।

গ্রে-ডিভোর্স বা প্রবীণ বয়সে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা কেবল সামাজিক পরিবর্তনের ফল নয়, এর পিছনে গভীর মনোবৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। জীবনচক্র তত্ত্ব অনুযায়ী, দাম্পত্য সম্পর্ক বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে নানা ধাপে বদলায়। সন্তান জন্ম, লালনপালন, কর্মজীবনের চাপ ইত্যাদির পর যখন সন্তানরা স্বনির্ভর হয়ে আলাদা থাকে, তখন ‘এমটি নেস্ট সিন্ড্রোম’ তৈরি হয়, যা দম্পতিকে নিজেদের সম্পর্ক নতুনভাবে বিচার করতে বাধ্য করে। সামাজিক আবেগীয় বাছাই তত্ত্ব বলছে, বয়স বাড়ার সাথে মানুষ সময়কে সীমিত হিসেবে দেখতে শুরু করে এবং কেবল অর্থপূর্ণ ও আনন্দদায়ক সম্পর্কেই বিনিয়োগ করতে চায়। তাই দীর্ঘদিন ধরে অসন্তুষ্টি বা অবহেলার মধ্যে থাকা মানুষ জীবনের শেষ অধ্যায় নতুন করে সাজাতে বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে পারে। স্ব-নির্ধারণ তত্ত্বের দৃষ্টিতে, মানুষের মানসিক সুস্থতার জন্য স্বাধীনতা, দক্ষতার অনুভূতি এবং আবেগী সংযোগ অপরিহার্য। প্রবীণ বয়সে আর্থিক স্বাবলম্বন ও আত্মবিশ্বাস থাকলেও যদি সম্পর্ক সেই আবেগী সংযোগ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে বিচ্ছেদকে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে দেখা হয়। দাম্পত্য সন্তুষ্টির U-আকৃতি মডেল অনুযায়ী, অনেক সম্পর্ক বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে পুনরায় ঘনিষ্ঠ হয়, কিন্তু যে-সব সম্পর্কে বছরের-পর-বছর সমালোচনা, অবজ্ঞা, আত্মরক্ষা ও নীরবতার মতো নেতিবাচক আচরণ চলতে থাকে, সেগুলো আর ফিরতে পারে না। অবসর গ্রহণের পর সারাদিন একসঙ্গে থাকার ফলে ব্যক্তিগত পরিসরের অভাব, দায়িত্ব ভাগাভাগিতে অসামঞ্জস্য বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে মতবিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। যত্ন করার অতিরিক্ত চাপ, বিশেষ করে অসুস্থতা বা বয়সজনিত সীমাবদ্ধতার সময়, সম্পর্ককে আরও ভেঙে দিতে পারে। পাশাপাশি বয়সজনিত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন যেমন মেনোপজ বা হরমোনের ওঠানামা দাম্পত্য ঘনিষ্ঠতায় প্রভাব ফেলে, যা নিয়ে আলোচনা না হলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমও এই প্রবণতা বাড়াচ্ছে, কারণ এগুলো মানুষকে পুরনো সম্পর্ক পুনর্গঠনের বা নতুন সম্পর্ক গড়ার সুযোগ দেয়।

একসময়ে গ্রে-ডিভোর্স বা প্রবীণ বয়সে বিবাহবিচ্ছেদ মূলত সেলিব্রিটি ও উচ্চবিত্ত সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। হলিউড ও বলিউডের প্রবীণ তারকাদের বিচ্ছেদ প্রায়শই শিরোনাম হত যেমন অমিতাভ-জয়া বচ্চনের গুজব থেকে শুরু করে হলিউডে হ্যারিসন ফোর্ড বা পল ম্যাকার্টনির বিচ্ছেদ— যা সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টিকে একধরনের ‘তারকাদের জীবনধারা’ বলে মনে করাত। এর বড় কারণ ছিল সেলিব্রিটি ও উচ্চবিত্তদের আর্থিক স্বাবলম্বন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সামাজিক চাপকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু গত দুই দশকে ছবিটা বদলেছে। শহুরে ও মফস্বলে শিক্ষিত সমাজে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, আর্থিক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সুখকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতা বাড়ার ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেও গ্রে-ডিভোর্সের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সন্তানেরা বড় হয়ে আলাদা থাকার পর দম্পতিরা নিজেদের সম্পর্কে নতুন করে ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন এবং সম্পর্ক অপ্রসন্ন হলে বিচ্ছেদকে তারা জীবনযাত্রার স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে নিচ্ছেন।

গ্রে-ডিভোর্সের পর জীবন প্রাক্তন দম্পতিদের জন্য এক নতুন বাস্তবতার সূচনা করে, যেখানে মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিক কাঠামো সবই পুনর্গঠন করতে হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিচ্ছেদের পর প্রথম ধাক্কা আসে একাকিত্ব ও মানসিক শূন্যতার রূপে। পুরুষদের ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায়শই কমে যায় অথচ নারীরা সাধারণত সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেন— অনেক সময়ে তা দ্বিগুণ ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। আর্থিক দিক থেকেও বড় প্রভাব পড়ে। নারীদের জীবনযাত্রার মান গড়ে প্রায় ৪৫% কমে যায়, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা প্রায় ২১%। সম্পদ বা সঞ্চয় উভয়েরই প্রায় অর্ধেক কমে আসে, কারণ বৈবাহিক সম্পদের ভাগাভাগি হয়। মানসিক পুনরুদ্ধার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া মনোবিজ্ঞানীরা একে ধীরে-সুস্থে সুস্থ হওয়া মডেল বলে বর্ণনা করেন, যা সম্পূর্ণ হতে প্রায় চার থেকে ছয় বছর সময় নিতে পারে। সামাজিকভাবে বিচ্ছেদের পর আবাসন, যত্ন ও স্বাস্থ্য সহায়তা নিয়ে নতুন সমাধান খুঁজতে হয়, বিশেষ করে যাঁরা একা বসবাস শুরু করেন। তবে অনেকেই এই পর্যায়কে নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ হিসেবে নেন কেউ একা-একা সারা বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন, নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করেন; কেউ আবার দীর্ঘদিনের শখ বা পছন্দের কাজে সময় দেন। অনেকে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন; পরিসংখ্যান বলছে, বিচ্ছেদের দেড় দশকের মধ্যে নারীদের প্রায় ২২% এবং পুরুষদের প্রায় ৩৭% নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করেন। সব মিলিয়ে, গ্রে-ডিভোর্স জীবনকে শেষ করে না; বরং নতুন করে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার পথ খুলে দেয়, যেখানে স্বাধীনতা, আত্মঅন্বেষণ ও নতুন সম্পর্ক— সবই সম্ভাবনার অংশ হয়ে ওঠে।

কিন্তু গত দুই দশকে ছবিটা বদলেছে। শহুরে ও মফস্বলে শিক্ষিত সমাজে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, আর্থিক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সুখকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতা বাড়ার ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেও গ্রে-ডিভোর্সের ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

২০১৫ সালের বাংলা চলচ্চিত্র বেলাশেষে আমাদের সামনে দীর্ঘ বিবাহিত জীবনের জটিলতা ও সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিকগুলো তুলে ধরে। সিনেমার কেন্দ্রে আছেন প্রৌঢ় দম্পতি বিশ্বনাথ ও আরতি, যারা ৪৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর হঠাৎ ঘোষণা করেন তিনি আরতি সঙ্গে আলাদা হতে চান। এই সিদ্ধান্তে পরিবার হকচকিয়ে পড়ে। প্রথমে মনে হয়, দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি ও অবহেলা তাদের সম্পর্ককে এক নতুন মোড়ে নিয়ে এসেছে, যেন এটা গ্রে-ডিভোর্সের বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। গ্রে-ডিভোর্স বা প্রৌঢ় বয়সে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নির্মিত কিছু সিনেমা মানুষের সম্পর্কের জটিলতা, পুনর্মূল্যায়ন এবং আত্মপরিচয়ের সন্ধানকে কেন্দ্র করে তৈরি। হোপ গ্যাপ (২০২০) দেখায়, দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর স্বামী হঠাৎ করে স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যা স্ত্রীর জীবনকে এলোমেলো করে দেয় এবং তাদের একমাত্র সন্তানও এই পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়ে। ‘দ্য স্টোরি অফ আস’ (১৯৯৯) সিনেমায় দেখা যায়, ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর দম্পতি তাদের সম্পর্কের অবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করতে শুরু করে; যদিও তারা বিচ্ছেদের পথে এগোয়, শেষ পর্যন্ত পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনা উন্মুক্ত থাকে। ‘দ্য ফার্স্ট ওয়াইফস ক্লাব’ (১৯৯৬) তে তিনজন প্রৌঢ় নারী তাদের স্বামীদের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একত্রিত হয়ে প্রতিশোধের পরিকল্পনা করেন এবং নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আর ‘দ্য গুড হাউস’ (২০২১) দেখায়, একটি প্রৌঢ় নারী দীর্ঘ বিবাহিত জীবনের পর একা জীবন শুরু করে, যেখানে সম্পর্কের অবস্থা এবং ব্যক্তিগত জীবনের পুনর্মূল্যায়নকে কেন্দ্রীয় ভাবনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এই সিনেমাগুলি গ্রে-ডিভোর্সের বাস্তবতা, প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের সম্পর্কের জটিলতা এবং পুনঃনির্মাণের সম্ভাবনার সূক্ষ্ম চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে।

গ্রে-ডিভোর্সের পর পর্যটন একটি উদীয়মান প্রবণতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সি দম্পতিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায়, এই নতুন জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে পর্যটনকে একটি মানসিক পুনর্গঠন ও আত্মবিশ্বাস অর্জনের উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডা অঞ্চলের হোটেলগুলো ‘ডিভোর্স পার্টি প্যাকেজ’ অফার করছে, যা বিচ্ছেদের পর নতুন জীবনের সূচনা উদযাপন করতে সহায়তা করে। এই প্যাকেজগুলোতে স্পা, থেরাপি সেশন, এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। এছাড়াও, থাইল্যান্ড, বালি, সান্তোরিনি, এবং নিউ অরলিন্সের মতো গন্তব্যগুলো একক ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয়, যেখানে তারা শান্তি, সংস্কৃতি, এবং নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এছাড়া, কিছু হোটেল এবং পর্যটন সংস্থা গ্রে-ডিভোর্সের পর নতুন জীবন শুরু করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ অফার করছে। যেমন, দক্ষিণ ফ্লোরিডার হোটেলগুলি ‘‘I Do, I Did, I’m Done’’ নামে বিশেষ প্যাকেজ অফার করছে, যা নতুন জীবনের সূচনা উপলক্ষে উদযাপন করতে সহায়তা করে।এই ধরনের পর্যটন শুধুমাত্র অবকাশ নয়, বরং একটি মানসিক পুনর্গঠন এবং নতুন জীবনের সূচনা। এই ধরনের ভ্রমণ ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়ক এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি সুযোগ। বর্তমানে বেঁচে থাকার রসদ বেড়েছে। জীবনটা নিজের মতো বেছে নেওয়ার উপকরণ তৈরি হয়েছে। লোকে কী বলবে, সেই ভাবনা কমেছে। যে-কোনও বয়সে জীবনটাকে আবার নতুন করে শুরু করা যায়, এই উদ্যোগের জন্ম হয়েছে। বার্ধক্য বয়সে বিবাহবিচ্ছেদ কোনও ট্রেন্ড নয়, উপরন্তু ভাল থাকার নতুন ঠিকানা।   

   (তথ্যসূত্র- সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মানি দাস)