সুরজাহান

Gauhar Jaan

বিখ্যাত ব্যবহারজীবী এবং কলাবিদ অর্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনী ‘ভারতের শিল্প ও আমার কথা’-য় (১৯৬৯) লিখেছেন— ‘গহর জানের একটি নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাস ছিল। রোজ বিকেলে বাড়ি থেকে টমটমে করে বর্মী টাটু নিজে হাঁকিয়ে ময়দানে বেড়াতে যেতেন। রাস্তায় ক্যানিং স্ট্রীটে আমার এক আত্মীয়, সম্পর্কে দাদা, নরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জির মুনিহারী দোকানের সামনে একবার থেকে, তাঁর সঙ্গে কথা বলে পান খেয়ে তবে ময়দানের দিকে যেতেন। রাস্তায় তখন লোক দাঁড়িয়ে যেত।’

ভারতে গ্রামোফোন রেকর্ডের একেবারে প্রথম যুগের শব্দ প্রকৌশলী (সাউন্ড রেকর্ডিস্ট) এবং সংগীত কলাবিদ ফ্রেডরিক উইলিয়ম গেইসবার্গ (১৮৭৩-১৯৫১) তাঁর আত্মজীবনী The Music Goes Round-এ (১৯৪২) লিখেছেন— ‘Every time she came to record she amazed us by appearing in anew gown, each one more elaborate than the last. …Strikingly effective were her delicate black gauze draperies embroidered with real gold lace, arranged so as to present a tempting view of a bare leg and a naked navel.’

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের উপদেশ: ‘হিন্দুস্থানী সংগীত আমরা শিখব পাওয়ার জন্যে, ওস্তাদি করার জন্যে নয়।’ লিখছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলার প্রথম জাতীয় নাট্যশালার পত্তন হয় যে মধুসূদন সান্যালের বাড়িতে, সেখানে ১৯১৩ সালের একটি গানের আসরে (সে-বাড়ির মালিক তখন, গোবিনলাল-বনমালী-মোতিলাল মল্লিকেরা— গোবিনলাল গায়ক লালচাঁদ বড়ালের শ্বশুরমশাই) গওহর জান সব্বাইকে অবাক করে দিয়ে সাহেবদের ‘নড’ করে শোনালেন ইংরিজি গান, পাঞ্জাবি শ্রোতাদের পাঞ্জাবি গান, রাজস্থানি এবং হিন্দিভাষীদের শোনালেন হিন্দি গান, আর সবশেষে বাঙালিদের বাংলা গান—‘ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখি উড়ে গেল আর এল না’। এই প্রতিটি ভাষায় গানের পরে নৃত্যও পরিবেশন করেছিলেন গওহর— তিনি গায়কও বটেন, ‘নর্তকী’ও বটেন।

গওহর জান

গওহর জান এক বহুকৌণিক চরিত্র— নানা বৈপরীত্যের সহবাস। খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেও নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে তিনি ‘তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন’ নীতিতে বিশ্বাসী, আত্মমর্যাদা আর স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে ‘তর্কেষুকর্কশধিয়ঃ’, আর জীবনযাপনে স্বৈরিণী।

ভারতের সংগীত জগতে তাঁর উত্থান উল্কার মতো আকস্মিক, আর প্রস্থান? ১৯৩০-এর ১৭ জানুয়ারি মহীশূরের কৃষ্ণরাজেন্দ্র (কে. আর.) হাসপাতালে মাত্র ৫৬ বছর ৬ মাস ২৩ দিন বয়সে তিনি যখন এই পৃথিবীর যাবতীয় কাজ ফেলে রেখে বিদায় নিলেন তখন তিনি ভয়ঙ্কর একা, নিঃস্ব, পরিত্যক্ত— জীবন যেমন তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তিনিও বিমুখ হয়েছিলেন জীবনের প্রতি।

অথচ কী এক জীবন যাপন করেছেন গওহর! জন্মেছিলেন ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন আজমগড়ে— এক সময়ের মুঘল সাম্রাজ্যের এই করদ রাজ্য তখন ইউনাইটেড প্রভিন্সের (আজকের উত্তরপ্রদেশ) অন্তর্গত। আজমগড়ের এক শুষ্ক বরফ (dry ice) কোম্পানির কুড়ি বছর বয়সি আর্মেনীয় প্রকৌশলী রবার্ট উইলিয়ম ইয়োয়ার্ড ১৮৭২-এর ১০ সেপ্টেম্বর বিয়ে করলেন, পনেরো বছরের অ‍্যাডেলাইন ভিক্টোরিয়া হেমিংসকে। কে এই অ‍্যাডেলাইন? একটা হিসেব বলছে সে সময়ে, ৪০০০ ইয়োরোপীয় পুরুষ ভারতে এসেছিলেন ভাগ্যের সন্ধানে, আর ইয়োরোপীয় নারীর সংখ‍্যা ২৫০— ফলে এদেশের মেয়েদের ‘বিবি’ রাখতেন তাঁরা। কোনও এক হার্ডি হেমিংস সাহেব ‘বিবি’ হিসেবে বেছে নিলেন যুবতী, শান্ত স্বভাবের রুক্মিণীকে ব্যাপটাইজ করে, রুক্মিণীর নতুন নাম হল এলিজা হেমিংস। হার্ডি আর এলিজার জ্যেষ্ঠ কন্যা অ‍্যাডেলাইন। রবার্ট-অ‍্যাডেলাইন-এর কন্যা ইলিন অ‍্যানজেলিনা ইয়োয়ার্ড। বেশিদিন টেকেনি রবার্ট-অ‍্যাডেলাইনের বিয়ে। ১৮৭৯ সালে বিচ্ছেদের পরে অ‍্যাডেলাইন থিতু হলেন তাঁর এক মুসলমান প্রণয়ী খুরশিদ-এর সঙ্গে। আজমগড়ে বিরূপ সমালোচনার বিষয় হয় তাঁদের এই সম্পর্ক। খুরশিদ-অ‍্যাডেলাইন চলে আসেন বারাণসীতে। অ‍্যাডেলাইনের নতুন নাম হয় মালকা, আর তাঁর শিশু কন্যা ইলিন হলেন গওহর— মায়ের আদুরে ডাকে ‘গওরা’। ফারসিতে গওহর শব্দের মানে ‘মূল্যবান রত্ন’— সত্যি অর্থেই গওহর তাঁর মায়ের জীবন আলো করে এসেছিলেন।

মা-মেয়ে— বড়ি মাল্‌কা আর গওহর

মাল্‌কার আগ্রহ ছিল ললিতকলায়— কবিতা লেখার ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই। বারাণসীতে এসে খুরশিদের চেষ্টায় মাল্‌কা শিখতে শুরু করলেন ধ্রুপদি ফারসি, উর্দু, উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত, নৃত্য। কাব্য আর সংগীতের সমান্তরাল প্রবাহ চলতে লাগল মাল্‌কার জীবনে। খুরশিদের উৎসাহ আর বেনারসের সাংস্কৃতিক পরিবেশ সাহায‍্য করেছিল মাল্‌কাকে মাল্‌কা জান হয়ে উঠতে। মাল্‌কা চেয়েছিলেন ‘তবায়েফ’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। স্বাধীন বৃত্তিজীবী মহিলাদের মধ্যে তবায়েফের অবস্থান ছিল সবার উপরে তখন। নিজের প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে মাল্‌কা হয়ে উঠলেন বেনারসের অন্যতম প্রধান তবায়েফ। মাল্‌কা যেহেতু গানের সঙ্গে নাচতেনও, তাই তিনি হলেন ‘জান’, শুধু গান গাইলে হতেন ‘বাই’। এ-কথা বলা বাহুল্যমাত্র যে মাল্‌কার কন্যা গওহর একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিকরণ শিল্পী হিসেবে, তার সমস্ত আয়োজন মাল্‌কা করে চলেছিলেন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি— আর গওহরেরও বেড়ে ওঠার সময়ে, তাঁর মা-ই তাঁর সবচেয়ে বড়ো রোল মডেল ছিলেন। মাল্‌কা বেনারসের শ্রেষ্ঠ গায়ক পণ্ডিত বেচু মিশ্রের কাছে গওহরকে নিয়ে গেলেন— খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পা, তারানা সব কিছুতেই পারঙ্গম করে তুলতে। এমনকী ছোট্ট গওহর মায়ের সঙ্গে মুজরোতেও যেতে লাগল— ওইরকম ফর্সা, সুন্দরী ইয়োরোপীয় চেহারার একটি বাচ্চা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত ছোটবেলা থেকেই। বেনারসের রাস্তায় মাঝে মাঝেই মায়েতে- মেয়েতে ফিটন গাড়ি চেপে আনন্দ ভ্রমণে বেরোতেন— শুরুতে গওহরের বেড়াতে বেরোনোর যে-কাহিনি উদ্ধৃত করেছি, সে তো মাল্‌কারই উত্তরাধিকার।

এদিকে কলকাতায় আউধের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ সংস্কৃতি জগতে এক নতুন আলোড়ন তুলেছেন কাব্য, নাচ, গান, নাটক সহ সমস্ত কারুশিল্পেই তাঁর আগ্রহ— শিল্পীরা তাঁর বদান্যতায় বঞ্চিত হন না। মাল্‌কা সপরিবার কলকাতায় থিতু হলেন ১৮৮৩ সালে— গওহর তখন দশ। নবাবকে তাঁরই লেখা, ‘জব ছোড় চলে লক্ষ্ণৌ নগরী’ আর ‘বাবুল মোরা নইহর ছুটো যায়ে’ শুনিয়ে তাঁর সভাগায়ক হলেন মাল্‌কা। এখানেই ঠুমরির বিখ‍্যাত গায়ক বিন্দাদিন মহারাজ-এর গন্ডাবন্ধ্‌ শাকরেদ হলেন গওহর (১৮৩৬-১৯১৭)। সঙ্গে চলল নানামুখী শিক্ষা— বামাচরণ ভট্টাচার্যের কাছে বাংলা গান, রমেশচন্দ্র দাস বাবাজীর কাছে কীর্তন, স্রিজান বাইয়ের কাছে ধ্রুপদ-ধামার, মিসেস ডি সিলভার কাছে ইংরেজি ভাষা এবং গান, মাল্‌কা নিজে শেখাচ্ছেন উর্দু আর ফারসি— তালিম দিচ্ছেন কবিতা লেখায়। মাল্‌কার তো একটা কাব্যসংগ্রহও (‘দিওয়ান’) প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৬ সালে কলকাতা থেকে ‘মাখ়জ়ান-এ-উলফ়ৎ-এ-মাল্‌কা’ নামে। পরবর্তীকালে গওহর যে হিন্দি, উর্দু, পেশোয়ারি, বাংলা, ইংরেজি, বর্মি, গুজরাতি, তেলুগু, তামিল, আরবি, তুর্কি, সংস্কৃত, পুশতু, ফারসি, পাঞ্জাবি সহ প্রায় কুড়িটা ভাষায় শত-শত গানে তাঁর কণ্ঠ অমর করে রেখে যাবেন ৭৮- আরপিএম গালার রেকর্ডে, তার সলতে পাকানোর শুরু এই সময়েই। এরই মধ্যে গোয়ালিয়রের বিখ্যাত সংগীতকোবিদ ভাইয়া গণপৎরাও-এর কাছেও গওহর তালিম পেয়েছিলেন— গ্রামোফ়োন কোম্পানি প্রকাশিত রেকর্ডে গণপৎরাও-এর কম্পোজিশন গেয়েছেন গওহর।

দ্বারভাঙার দরবারে মাল্‌কার গানের আমন্ত্রণ এলে, গওহরকে পাঠালেন মাল্‌কা। গান শুনে মুগ্ধ দারভাঙার রাজা গওহরকে সভাগায়ক নিযুক্ত করলেন। এই সাফল্য গওহরকে ‘গওহর জান’-এ উত্তীর্ণ করল। ‘হমদম’ এবং ‘গওহর পিয়া’ ছদ্মনামে গানও লিখতে শুরু করলেন গওহর— পরে বেনারসের প্রেমিক ছগ্গনের নাম নিয়ে, ‘ছগ্গন পিয়া’ নামেও গান লিখেছেন। সংগীতবিদ্যা তো বটেই, সেই সঙ্গে চলনে, বলনে, আচরণে এবং চেহারায় গওহর মেহফিলের মধ্যমণি। তখন একটা কথাই চালু হয়েছিল— ‘গওহর কে বিনা মেহফিল, জ্যেসে শওহর কে বিনা দুলহান’। কলকাতায় তখন একের পর এক মেহ্‌ফিলে গওহর তাঁর স্বাক্ষর রাখছেন— এরকমই এক অনুষ্ঠানে গওহরের গান শুনলেন মহীশূরের মহারাজা ছামরাজেন্দ্র ও‍য়াডিয়ার। গওহর যে তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটা মাস মহীশূরের সভাগায়ক হিসেবে কাটাবেন তার সম্ভাবনা কলকাতার মেহফিলেই তৈরি হয়েছিল।

গওহরের জীবন তেমন এক জীবন, যা বারে-বারে আমাদের আলোচনায়, চর্চায় উঠে আসে বা আসবেও ভবিষ্যতে। তাঁর সাফল্য, যাপন, হতাশা— সব মিলিয়েই তাঁকে গত শতকের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী পারফর্মার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। তাঁর সাফল্যের কাহিনি যতখানি চিত্তাকর্ষক, বিফলতার কথাও তার সমতুল্য। বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার আনন্দে গওহর খরচ করেছিলেন ২০,০০০ টাকা, সেই গওহর জীবনের শেষে মহীশূরের সভাগায়ক হিসেবে মাসিক ৫০০ টাকা মাসোহারা পেতেন তাঁর নকরানি আর সঙ্গতকার আবদুর রহমানের পরিবারের ভরণ-পোষণ সহ!

১৮.১২.১৯০৮ এইচএমভির কলকাতা ফ‍্যাক্টরির উদ্বোধনে গওহর

১৯০২ সালে কলকাতায় গওহর গ্রামোফোন রেকর্ডে গান প্রথম যেদিন রেকর্ড করলেন ১১ নভেম্বর (মঙ্গলবার), সেদিনের স্মৃতি গেইসবার্গের বর্ণনায়— ‘When she came to record, her suit of musicians and attendants appeared even more imposing than those who used to accompany Melba and Calvé. As the proud heiress of immemorial folk-music traditions she bore herself with becoming dignity. She knew her own market value, as we found to our cost when we negotiated with her.’ শোনা যায় প্রথম রেকর্ডিং সেশনের জন্য গওহর ৩০০০/- টাকা চেয়েছিলেন, গ্রামোফোন কোম্পানি তা দিয়েওছিল। ধ্বনিকে ধারণ করে রাখার যে প্রযুক্তি ১৮৭৭ সালে টমাস আলভা এডিসন আবিষ্কার করেছিলেন সেটা সারা পৃথিবীর সংগীত জগতেই একটা প্যারাডাইম শিফট ঘটিয়েছিল। এতকাল সংগীত অধিগম্য ছিল পয়সওয়ালা মানুষদের, সাধারণ মানুষ সংগীতের চর্চা করলেও বিখ্যাত গায়কদের গান তাদের শ্রবণ অভিজ্ঞতার বাইরেই ছিল। গ্রামোফোন রেকর্ড, শোনার অধিকারের গণতন্ত্রীকরণ ঘটাল। গ্রামোফোন কোম্পানির গওহর জানের এই রেকর্ডিংগুলো [যেগুলো ৭ম’, ১০’ এবং ১২’-র গালার রেকর্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়) যা ভারতীয় সংগীতের বাজার সফলতার উদাহরণ হয়ে রয়েছে ।

গওহর জানের রেকর্ড ক্যাটালগ

আজও গওহর জানের রেকর্ড— যে-কোনও সংগীত সংগ্রাহকের স্বপ্নের সংগ্রহ। গ্রামোফোন এবং টাইপরাইটার কোম্পানি (পরে যাকে আমরা ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েজ’ হিসাবেই চিনব) ছাড়াও গওহরের রেকর্ড প্রকাশ করে নিকোল রেকর্ড কোম্পানি, সান ডিস্ক রেকর্ড, পাথেফোন রেকর্ড অ‍্যান্ড সিনেমা কোম্পানি লিমিটেড, সিঙ্গার রেকর্ড ইত্যাদি কোম্পানি গওহরের প্রচুর রেকর্ডিং বাজারে আনে। কোনও-কোনও হিসেবে গওহর নাকি কুড়িটা ভাষায় ৬০০ গান রেকর্ড করেছিলেন। এই সংখ্যার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই, তবে গওহরের প্রায় দেড়শোর মতো রেকর্ডিংয়ের সন্ধান আমরা পেয়েছি। এখানেই উল্লেখ করে রাখা প্রয়োজন যে, গওহরের মা মাল্‌কা জানেরও বেশ কিছু রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল, জার্মানির বেকা এবং ফ্রান্সের পাথেফোন কোম্পানি থেকে। গওহরের সমসাময়িক একাধিক মাল্‌কা জান ছিলেন— একজন তো গওহরের বন্ধু ‘আগ্রেওয়ালি’ মাল্‌কা জান (যার কাছে গওহর তাঁর শেষ প্রেমিক আব্বাসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য), চুলবুলি মাল্‌কা জান, ইত্যাদি। এঁদের থেকে গওহরের মাকে আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য তাঁর নাম হয়েছিল ‘বড়ি’ মাল্‌কা জান। গওহরের কণ্ঠে যে বিখ‍্যাত বাংলা গান ‘ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখি উড়ে গেল আর এল না’-র কথা শুরুর দিকে উল্লেখ করেছি সেটা তো আসলে বড়ি মাল্‌কা জানের কম্পোজিশন!

সংগীতের রঙিন জীবনের পাশাপাশি গওহরের অনুরাগের জীবনও কম বর্ণময় নয়। কিন্তু সে তো জীবনের ধর্ম, আর যে জীবন তবায়েফ হিসেবে তাঁকে যাপন করতে হয়েছে, তাতে জীবনে প্রেম আসা খুব স্বাভাবিক, আবার প্রেম ভেঙেওছে একইরকম আকস্মিকতায়। যে আব্বাসের প্রেমে গওহর তাকে একাধিক বাড়ি দানপত্র করে দিলেন, সেই প্রেম ভেঙে যাওয়ায় সেসব সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে তিনি প্রায় নিঃস্বও হয়েছেন (অর্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় গওহরের পক্ষে লড়েছিলেন)। আবার পাতিয়ালার ওস্তাদ কালে খানের প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন অবলীলায়। এসব নিয়েই গওহর। তাঁর জীবন আমাদের আমোদিত করবে, আকর্ষণ করবে আগামী আরও বহু বছর। তাঁকে নিয়ে আমাদের এই জানা ফুরোনোর নয়। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে প্রণতি জানাই।