ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • উচ্চমাধ্যমিকিমাউজ

    সৌমিত দেব (May 8, 2025)
     

    আমার প্রিয় ভাই-বোনরা, 

    এই চিঠি তোদের এমন এক দাদা (প্রাণে ধরে নিজেকে কাকু বলতে পারছি না) লিখছে, যার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখলে চোখ পুড়ে যেতে পারে। তাই আমি, চারপাশের এই পৃথিবীটা নিয়ে তোদের কয়েকটা বিষয় সম্পর্কে অবগত করতে চাই। সাজেশন বলতে পারিস। কারণ যারা পারে তারা পারে, আর যারা পারে না, তারা সাজেশন দেয়, আমার মতো। সঙ্গে এও বলে রাখি, এই কাকুদার কোনও কথাই সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনও দরকার নেই, কারণ আমি জয়েন্টের র‍্যাংক জানার জন্য যখন কম্পিউটারে নিজের রোল নম্বর দিয়েছিলাম, তখন র‍্যাংক-এর জায়গায় লেখা ভেসে উঠেছিল, ‘এত কনফিডেন্স তোর’… যাক গে, এসব দুঃখের কথা বাদ দিয়ে শুরু করি!

    তোরা লক্ষ করে দেখবি, আমাদের চারপাশে এমন কিছু শ্রেণিবন্ধু মানুষ ঘুরে বেড়ান, যারা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস এবং সহকর্মীদের ব্যাদড়া ‘পলিটিক্সের’ জন্য আজ একটা নামজাদা কেউকেটা হয়ে উঠতে পারেননি। তাই দুধের স্বাদ সোয়া মিল্কে মেটাতে এখন তারা মাঝেসাঝে মন্তব্য করে থাকেন। আর করবেন নাই-ই বা কেন? তোরাই বল, যে মানুষটার কৃশানু দে, সুভাষ ভৌমিক… আচ্ছা অত দূর না-ই বা গেলাম! অন্তত, ব্রাজিলের রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলার কথা ছিল, কিন্তু পারল না, কারণ প্রথমে পাড়ার ম্যাচে, ‘হ্যামস্ট্রিং-এ চোট’ লাগল। তারপর ঠাকুমা মাথায় হাত রেখে দিব্যি করাল, ‘দাদুভাই, দাউ আর্ট বাবু, এসব গুন্ডাদের খেলা তুমি নাইন নাইন নাইন।’ সেই লোকটা মেসির কোন পাস কীভাবে বাড়ানো উচিত, তাই নিয়ে মন্তব্য করবে না? ঈর্ষাপরায়ণ সহ-খেলোয়াড়রা শুধু বাঙালি বলে যে মানুষটাকে বাংলার কোনও এক জেলার অনুর্ধ্ব ১৮ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার ফলে আজ লোকে শচীনের নাম করে, সেই মানুষটা বিরাট কোহলির স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কথা বলবে না? পাড়ায় ব্যাংবাজি করে যে মানুষটা এক ঢিলে দু-পুকুর মারত, বন্ধুরা (যাদের সঙ্গে এখন ওঁর আর কোনও যোগাযোগ নেই) রসিকতা করে বলত, ‘তুই যে কী চ্যাম্পিয়ন টাইপের হেব্বি কাটিং বিরাট দারুণ গিভিং রে ভাই, তুই চাইলে তো দিঘায় ব্যাংবাজি করে শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়ে দিবি’… সেই লোকটা নীরজ চোপড়ার বল্লম ছোড়া নিয়ে চারটে মন্তব্য যদি না-ই ছুড়ে দেয়, তাহলে এই পৃথিবী ঘুরছে কেন? চকলেট সন্দেশ কেন তৈরি হচ্ছে? চারপাশে সবাই হঠাৎ করে কোরিয়ান হয়ে শ্যালদাকে সিওলদা বলে ডাকতে চাইছেই বা কেন? 

    আরও পড়ুন : ডায়েট উপেক্ষা করার জন্যই ফি-বছর ফিরে আসে এই দিন! লিখছেন রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়…

    আসলে শাক দিয়ে মাছ আর লাক দিয়ে গুণ ঢাকা যায় না কারণ মানুষের ভেতরটা হল, ডিমের মতো। ট্যালেন্ট থাকলে ফুটে বেরবেই! সে কুসুম, মামলেট, অমলেট (হ্যাঁ এই দুটো আলাদা), ভুর্জি, স্ক্র্যামবেলড (হ্যাঁ এই দুটোও আলাদা)— যে ফর্মেই বেরক না কেন, বেরবেই! এই যে তোদের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরল, এইবার তোরাও এঁদের চিনতে পারবি, আর বুঝতে পারবি, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, মানে বাংলায় ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি বলতে, কবি আসলে ঠিক কী বলতে চেয়েছেন। 

    টেনিদা ফেল করেও কলার তুলতে ছাড়েনি কখনও

    কিছু ট্যালেন্ট দেখবি তোদের বন্ধু হতে চাইবেন। সোচ্চার কন্ঠে প্রচার করবেন, এই দুই পরীক্ষার রেজাল্টে জীবনে কোনও প্রভাব ফেলে না! কিছু যায় আসে না! এঁরা সকলে পড়তে বসা বিষয়টারই বিরোধী! নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই ধরণের পরীক্ষার আগেরদিন উনি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন, সিনেমা হলে জায়গা না পেলে ময়দানে বসে ছোলাভাজা খেয়েছেন, ছোলাভাজাওয়ালাও সেদিন বিট্রে করে থাকলে বাড়ি ফিরে এসে চালে-ডালে মিশিয়ে আলাদা করতে করতে ‘তিথির অতিথি’ দেখেছেন, কিন্তু না… পড়তে উনি বসেননি! এরা এই কথাগুলো, ‘স্ত্রী’ যেভাবে শিকার ধরত, তেমন করে লোভ দেখিয়ে বলে। তাই একেবারে শুরুতেই, যেখানে যেখানে পারিস ‘ও সাজেশন কখনও মাত আনা’ লিখে রাখ, কারণ নিজের মতামতের স্বপক্ষে এঁরা বেশ কিছু যুক্তিও খাড়া করেন। ’অটো ভাড়া দেবার সময় কি হাতটা কারশফ ল’য়ের মতো করে দেব?’ অথবা ‘এই যে ২৪ বছর হয়ে গেল আমি ত্রিভুজের তৃতীয় বাহুটা নির্ণয় করিনি এর জন্যই কি গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে?’ 

    এঁরা বুঝতেই পারেন না, পড়াশোনা করে, র‍্যাংক করার মানে কী? কী হবে ভাল কলেজে চান্স পেয়ে, ভাল কেরিয়ার তৈরি করে? হয়তো তোদের বোঝাতেও চাইতে পারেন, বখে যাওয়ায় যে আনন্দ, অবসাদের যে ‘কাব্য’, ‘এখন এসব না করলে বুড়ো বয়সে গল্পটা কী করবি?’ তা আর কোনওকিছুতে নেই। বিবিধ প্রকাশণীর বিজ্ঞানের মডেল হওয়া ছাড়া যে মানবজীবনে এই পরীক্ষাগুলোর তেমন কোনও মানে নেই— এ বিষয়ে এরা যেমন নিশ্চিত, তোদেরও তেমন করতে চাইবে! তাছাড়া কে না জানে, ‘এখন তো মুড়িমুড়কির মতো নম্বর দেয়, আমাদের সময় যে স্টেটে ফার্স্ট হল, টেনেটুনে ৩২% পেয়েছিল’— না হলে আজ ওঁর মার্কশিটেও জ্বলজ্বল করত নব্বুই, শুধু দশক না, নম্বরও। অবশ্যি, একথাটাও মিথ্যে নয় যে, এখনকার কোনওকিছুই এঁদের তেমন পছন্দ হয় না! সব ‘ওদের সময়’ ভাল ছিল!

    কিছু ট্যালেন্ট দেখবি তোদের বন্ধু হতে চাইবেন। সোচ্চার কন্ঠে প্রচার করবেন, এই দুই পরীক্ষার রেজাল্টে জীবনে কোনও প্রভাব ফেলে না! কিছু যায় আসে না! এঁরা সকলে পড়তে বসা বিষয়টারই বিরোধী! নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই ধরণের পরীক্ষার আগেরদিন উনি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন, সিনেমা হলে জায়গা না পেলে ময়দানে বসে ছোলাভাজা খেয়েছেন, ছোলাভাজাওয়ালাও সেদিন বিট্রে করে থাকলে বাড়ি ফিরে এসে চালে-ডালে মিশিয়ে আলাদা করতে করতে ‘তিথির অতিথি’ দেখেছেন, কিন্তু না… পড়তে উনি বসেননি!

    কিন্তু সাবধান! এরাই একমাত্র নয়! আরেকটা দলও আছে! ‘আমি তো আমার ছেলেকে ক্লাস টু থেকে আইআইটির প্রিপারেশন করাচ্ছি,আপনি করাচ্ছেন না’— এই দলটা! ডেঞ্জারাস দল! 

    এদের কাছে জীবনটা ব্যালেন্সশিট। একটা খারাপ ফল মানে সব শেষ। এবার অ্যাপোক্যালিপ্স হবে, রোবটরা অধিগ্রহণ করে নেবে পৃথিবী আর তখন স্টকমার্কেটে কী অবস্থা হবে ভেবেই এরা স্কাইনেটের পক্ষে নাম লিখিয়ে দেবে! তোরা চারপাশে অবস্থা, রাজনীতি নিয়ে সচেতন হলে তোদের বিশ্বাস করিয়ে দিতে চাইবে যে, তোরা বখে যাচ্ছিস! এমনই এক ট্যালেন্ট আমার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে মা-কে বলেছিল, ‘এক কাজ করুন, ওকে আমার অফিসের কারাখানায় ঢুকিয়ে দিন, এখন থেকেই লেগে থাকলে অন্তত ফ্লোর ম্যানেজার হয়ে রিটায়ার করবে।’

    তবে মিথ্যে বলব না, এইজন্যই আমি এই ধরনের ট্যালেন্টদের এত ভালবাসি। আজ যদি ওর কথা শুনে সত্যিই আমায় কোনও অফিসের কারাখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হত, তাহলে কি এই অনিশ্চিত ফ্রি-লান্স যাপনের চাপ নিতে হত আমায়? সুন্দর মাসে মাসে নিশ্চিত আয়! তবে ভালবাসার কারণ শুধু একটা না রে, আরেকটাও আছে! এই ধরনের মানুষ ছিল বলেই না তিনখানা কলেজে বাংলা অনার্স পাওয়ার পরেও জোর করে ‘সায়েন্স’ পড়তে ঢোকানো হল আমায়। সত্যিই তো, নির্ঘাত অনার্স কেটে যেত, তার লজ্জাটা আলাদা, কিন্তু সায়েন্স না পড়লে আশেপাশে মুখ দেখানো যেত? ‘আমাদের ছেলে তো কলেজ ড্রপআউট’ এটা বলা বেশি সম্মানের, না কি— ‘ও তো বাংলায় মাস্টার্স করেছে’— এটা বলা?

    বর্তমানকালে অবশ্য আরেকটা সুবিধে আছে। ছোট থেকেই ক্রিকেট, ফুটবল, গিটার, ড্রামস, সাঁতার, অভিনয়, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, আসন, সাপ ধরা, টেনিস, বাস্কেটবল, ঝুম চাষ, খরগোশ প্রতিপালন ইত্যাদি-প্রভৃতি— এই এত কিছু শেখানো হয়, তার মধ্যে থেকে বাচ্চা নিজেই বেছে নিতে পারে। যে একটা স্টেডি চাকরি পাওয়ার পর উপরিউক্ত জিনিসগুলোর মধ্যে ও কোনটা করতে চায়! আর সত্যি কথা বলতে, চাকরি না করলে খাবি কী, তাই না! তাছাড়া আরও একবার সত্যি বলতে, আমি তো ভেবে শিউরে উঠি, সকলেই যদি প্যাশন ফলো করতে শুরু করে, তাহলে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার পর বিলটা কে দেবে রে ভাই! আসলে, সত্যি বলে সত্যিই কিছু নেই।  

    তাই যারা এই বছর এই দুই পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলি তোদের আমার মোটে ভাল্লাগে না! ফোকাসড ভালমানুষের দল সব! দূর হয়ে যা ভাল কেরিয়ার-লোভী কোথাকার!

    আর যারা পাশ করতে পারলি না, বা খারাপ রেজাল্ট করলি তোরা আমার পরিবারের মতো। ঘাবড়াস না! ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এরপর যে সাবজেক্টটা পাবি, সেটাই মন দিয়ে পড় আর যদি পড়াশোনা না করে অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে, সেইটে কর। এখন কি কেরিয়ারে অভাব? ইউটিউবার থেকে শুরু করে পরোটার হোলসেল হয়ে গেমিং রিভিউয়ার, ফুড কনোয়েশিয়র— কী নেই সেই লিস্টে! আর টাকাও আছে! মনোযোগ দিয়ে যদি লেগে থাকতে পারিস, টাকা আছে। চাকরির পরীক্ষা আছে। তাছাড়া তোদের কাছে কেরিয়ার কাউন্সেলিং-এর মতো জিনিস আছে। ও জিনিস করানোর পয়সা না থাকলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন, ইন্টারনেট আছে! কিন্তু যেটাই করিস, মন থেকে করিস। লেগে থাকিস।

    তার পরেও বলছি, কেউ যদি এসে বলে তোদের এই খারাপ রেজাল্ট করা মোটে খারাপ না, উলটে ভাল একটা ব্যাপার, দারুণ একটা এক্সপেরিয়েন্স— তাহলে মনে রাখবি সে তোর ভাল চায় না। আর উল্টোটা যদি হয়, যদি কেউ এসে তোকে বোঝাতে চায় যে, খারাপ রেজাল্ট করার ফলে তোর জীবনটা শেষ হয়ে গেছে, তাহলে পত্রপাঠ তাকে সেখান থেকে তাড়াবি। বয়স বা সম্পর্ক যাই-ই হোক না কেন। পত্রপাঠ। কিছু শেষ হয়ে যায়নি। কিচ্ছু শেষ হয়ে যায়নি। এখন যেটা করবি, সেটা যদি নিজের সবটা দিয়ে করিস তাহলে এই রেজাল্টের কথা তোর মনেও থাকবে না।, কিন্তু এখনও যদি ফাঁকি মারিস, তাহলে এই রেজাল্টের কথা সারাজীবন মনে রাখতে হবে— এটাও সত্যি।

    তাই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠ, সামনে এখনও অনেকটা সময় পড়ে আছে। লড়তে হবে জিততে হবেই, কারণ তোরা জিতলে আমরা জিতে যাব…

    ইতি,

    তোদের এক কলেজ ড্রপআউট কাকু, যে জানে তোরা জিতবি…

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook