ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নবাব ও তাঁর উত্তরাধিকার


    অমিতাভ পুরকায়স্থ (November 3, 2023)
     

    উনিশ শতকের প্রায় শেষ পর্যায় এসে পড়েছে। ১৮৮৭ সাল। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এ-দেশের মিশ্র সংস্কৃতির উজ্জ্বল ধারক ও বাহক অওয়ধের নির্বাসিত রাজা ওয়াজিদ আলি শাহ (৩০ জুলাই ১৮২২ – ১ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭)। তাঁর জাদুছোঁয়ায় ভাগীরথীর তীরে যে ‘ছোটা লখনউ’ তৈরি হয়েছিল, ঠিক ভোজবাজির মতোই সেই শানশওকত মিলিয়ে গেল তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে। সুলতানখানা, আসাদ মঞ্জিল, মুরাসসা মঞ্জিল কিংবা ডিম্বাকৃতির সভাগৃহ কাসরুল বয়জা— টুকরো টুকরো করে বিক্রি হয়ে গেল ব্রিটিশ প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থাপনায়। শুধু ব্যক্তিগত জিনিসপত্রই নয়, তাঁর বিখ্যাত চিড়িয়াখানার জীবজন্তুগুলিও নিলামে চড়ানো হল। একমাত্র মসজিদ, ইমামবাড়া বা শাহি গোরস্থানের মতো কয়েকটি ধর্মীয় সম্পত্তি ছাড়া নবাবের আর কোনও রকমের স্থাবর ঐতিহ্য বেঁচে রইল না এই শহরের বুকে। ওয়াজিদ আলির রুচি, শিল্পবোধ আর জনজীবনের উপর তাঁর প্রভাবের কাহিনি রয়ে গেল পুরনো বিবর্ণ কিছু ছবি আর আবদুল হালিম শরর্‌-এর মতো কয়েকজনের লেখা স্মৃতিকথার পাতায়।

    তাঁর বিখ্যাত দরবারের কলাবন্তরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেন বিভিন্ন দিকে। কেউ দেশের বিভিন্ন ভূস্বামীদের দরবারে পৌঁছে গেলেন। আবার কেউ কেউ ঠাঁই খুঁজে নিলেন সুদূর নেপালের রাজদরবারে। এক অনন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে মেটিয়াবুরুজ বদলে গেল ডক, পাটকল, কুলিঘাট অধ্যুষিত এক আটপৌরে শহরতলিতে।

    নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ

    কিন্তু সত্যিই কি সব হারিয়ে গেল চিরতরে? না কি হারিয়ে ফেলেও নতুন রূপে আমাদের কাছে ফিরে এল ওয়াজিদ আলি শাহের উত্তরাধিকার? এই খোঁজে আমাদের একটু ফিরে যেতে হবে বিশ শতকের মাঝের দিকের মায়ানগরী বম্বে-তে। আজকের মুম্বই। কে.আসিফ তৈরি করছেন ‘মুঘল-এ-আজম’ নামে এক ছবি। একটি বিশেষ গানের দৃশ্যের জন্য সুর-সংযোজনের কাজ চলছে। ছবির নৃত্য-পরিচালক লাচ্ছু মহারাজ সুরকারকে বললেন যে সুরটি ঠুংরি অঙ্গে করার কথা ভেবে দেখতে। ঠিক যেমনটি শোনা যেত ওয়াজিদ আলির রচনায়।

    আসলে লাচ্ছু মহারাজ (বৈজনাথ প্রসাদ মিশ্র) অওয়ধের এই ভাগ্য বিড়ম্বিত শাসকের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন নিবিড় সম্পর্কে। তাঁর পরিবার, মানে কাশীর কত্থক নর্তকরা সুজাউদ্দৌলার সময় থেকেই অওয়ধের রাজসভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ঠাকুরপ্রসাদ ছিলেন ওয়াজিদ আলির নৃত্যগুরু। ঠাকুরপ্রসাদের দুই ছেলে— বিন্দাদীন ও কালকাপ্রসাদও ছিলেন নবাবি দরবারের সম্মানিত শিল্পী। লাচ্ছু মহারাজ ও তাঁর দুই ভাই, আচ্ছান মহারাজ ও শম্ভু মহারাজ হলেন কালকাপ্রসাদের সুযোগ্য পুত্র। ফিল্ম-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে কত্থক নৃত্যশৈলীর প্রচার ও প্রসারে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। লাচ্ছু মহারাজ বম্বেতে ফিল্মের নৃত্য-নির্দেশক হিসাবে কাজ করেছিলেন ‘মহল’, ‘ছোটি ছোটি বাতেঁ’, ‘মুঘল-এ-আজম’, ‘পাকিজা’-র মতো বিখ্যাত ছবিতে।  সেই সূত্রে লখনউ দরবারের নৃত্যশৈলী হিন্দি চলচ্চিত্রের শরীরে মিশে গিয়েছিল সকলের অগোচরেই। আচ্ছান মহারাজের সুযোগ্য পুত্র হলেন বিরজু মহারাজ।

    ফিরে আসি ‘মুঘল-এ-আজম’-এর সুর সংযোজনের কথায়। ছবির সুরকারেরও ছোটবেলা কেটেছে সেই লখনউতে। তাঁর পিতা ছিলেন দরবারের মুনশি। পুরনো সময়ের কিছু রেশ তখনও রয়ে গিয়েছিল শহরের সাংগীতিক পরিবেশে। সেই পরিবেশ থেকে সঙ্গীতের তালিম নিয়ে বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে এসেছিলেন ‘মুঘল-এ-আজম’-এর সুরকার, নৌশাদ আলি। আর লাচ্ছু মহারাজের সেই সুপারিশে যে-গানটির ঠুংরির চালে সুর দিয়েছিলেন নৌশাদ, সেটাই হল— ‘মোহে পনঘট পে নন্দলাল ছেঁড় গেয়ো রে’।  পরবর্তী কালে নিজের জীবনী ‘নৌশাদনামা’-র পাতায় তিনি নিজেই বলেছেন, ‘I had adapted it from the gharana of Kalka Binda Din, court dancer in the darbar of Wajid Ali Shah’। গানে ভিন্ন ভিন্ন সপ্তকে দশটি সেতার ব্যবহার করা হয়েছিল। তা ছাড়াও এই গানটি যে কৃষ্ণজয়ন্তীর চিরকালীন সঙ্গীত হিসাবে স্থায়ী আসন পেয়ে গেছে, তার পিছনে এক বাঙালির বড় অবদান ছিল। পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষ এই গানের সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছিলেন। সেটাও নৌশাদের জীবনী থেকেই জানা যায়।

    ওয়াজিদ আলির রুচি, শিল্পবোধ আর জনজীবনের উপর তাঁর প্রভাবের কাহিনি রয়ে গেল পুরনো বিবর্ণ কিছু ছবি আর আবদুল হালিম শরর্‌-এর মতো কয়েকজনের লেখা স্মৃতিকথার পাতায়। 

    নৌশাদ নিজের ফিল্মি-জীবনের শুরু থেকেই লখনউ-এর ঠুংরি ও দাদরা অঙ্গের সুর দিয়ে নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন বম্বেতে। তাঁর প্রথম কাজগুলির মধ্যেও ছিল একটি ঠুংরি— ‘বাতা দে কৌন গলি গ্যায়ো শ্যাম’। তবে সে-ছবি মুক্তি পায়নি।  হিন্দিতে স্বাধীন সুরকার হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন ১৯৪২ সালের ‘নয়া দৌড়’ ছবি থেকে। ষাটের দশকের শেষ পর্যন্ত নানা ছবিতে তাঁর কাজ ছড়িয়ে আছে।

    তখন থেকেই ঠুংরি, দাদরা, চৈতি, কাজরী-র মতো উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুর ধারাবাহিকভাবে হিন্দি ছবিকে পুষ্ট করে চলেছে। এই একুশ শতকেও আমরা দেখি যে উত্তম সিং— ‘গদর: এক প্রেম কথা’, ইসমাইল দরবার— ‘দেবদাস’, শান্তনু মৈত্র— ‘লাগা চুনরি মে দাগ’, সৌমিক সেন— ‘গুলাবি গ্যাং’ এবং আরও অনেকে এই ধারার সুর করছেন ফিল্মের গানে এবং সেগুলি জনপ্রিয়ও হচ্ছে। আরও মজার কথা এই যে, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে বেগম আখতার, রসুলান বাই-এর মতো পুরনো শিল্পীদের গাওয়া ঠুংরি ফিরে আসছে রেখা ভরদ্বাজ, রিচা শর্মা বা শ্রেয়া ঘোষাল-দের গলায়। এই ভাবে নতুন প্রজন্মের কাছেও রোম্যান্টিকতার ইডিয়ম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে যায় ওয়াজিদ আলির হাতে করে গড়ে তোলা শিল্প ঐতিহ্য। ওয়াজিদ আলি শাহের নিজস্ব রচনা ফিল্মে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৩৬ সালে ‘দেবদাস’ ছবিতে কুন্দনলাল সয়গলের গাওয়া ‘বাবুল মোরা নাইহার ছুটো হি যায়’ গানটির কথা প্রথমেই মনে পড়ে। নবাবের দরবারে যে ‘বন্দিশ কি ঠুংরি’ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, সেই অঙ্গেই রচিত ‘নীর ভরন কেইসে যায়ু’ বন্দিশটির সুন্দর ব্যবহার আমরা পেয়েছি ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘খুদা কে লিয়ে’-তে। এ ছাড়াও ‘শতরঞ্জ কী খিলাড়ি’ ছবিতে সত্যজিৎ রায় ব্যবহার করেছেন নবাবের রচিত ‘তড়প তড়প সাগরি র‍্যান গুজরি’ ঠুংরিটি।

    ওয়াজিদ আলির সঙ্গীত ও নৃত্যচর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ দরবারের গায়িকা ও নর্তকী মহিলারা, যাঁদের বলা হত ‘তাওয়াইফ’। সে-সময়ে নবাব তাঁদের মধ্যে থেকে অনেককে বেগম পর্যায়েও উন্নিত করেছিলন। উদাহরণ হিসাবে বেগম হজরত মহলের নাম করা যেতে পারে, যিনি ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের সময়ে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।  নির্বাসিত হওয়ার পরে মেটিয়াবুরুজের দরবারেও, চিকের পর্দার আড়াল থেকে ওয়াজিদ আলির এক বেগমের সংগীত পরিবেশনের কথা জানা যায় বামাচরণ বন্দোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথায়। চলচ্চিত্রে ‘মুজরা’-র দৃশ্য পরিকল্পনায় সুরকাররা যেমন ঠুংরির ব্যবহার করে আসছেন, ঠিক সে ভাবেই শিল্প নির্দেশকদের কল্পনায় লখনউ-এর দরবারের প্রভাব আজও স্পষ্ট। তাওয়াইফের পোশাক-পরিকল্পনা থেকে সেট-পরিকল্পনা আর গানের দৃশ্যায়ন— সবেতেই নবাবের অদৃশ্য উপস্থিতি মনোযোগী দর্শকের চোখে অবশ্যই পড়বে।

    নবাবের আত্মজীবনী ‘ইশকনামা’-র একটি পাতায় আঁকা নবাবের তবলা বাজানোর ছবি

    নবাবি লখনউ-এর সাংস্কৃতিক পরিবেশে এই তাওয়াইফদের কেন্দ্র করে বেশ কিছু চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। সেখানে ওয়াজিদ আলি ও তাঁর সময়ের লখনউ-এর কথা নানা ভাবে স্মরণ করা হয়েছে। কমল আমরোহীর ‘পাকিজা’, মুজফফর আলির ‘উমরাও জান’ (পরবর্তী কালে জে.পি.দত্তের রিমেক)— প্রতিটি ছবিতেই ফিরে ফিরে আসে ওয়াজিদ আলির রেখে যাওয়া ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। এ ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কী খিলাড়ি’-র কথা আলাদা করে বলতেই হয়, যেখানে স্বয়ং ওয়াজিদ আলি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।

    গান, বাজনা আর নাচের কথা হল এতক্ষণ। এবার আসি থিয়েটারের কথায়। থিয়েটারের ক্ষেত্রে নবাব ‘রাধা-কৃষ্ণ’ কেন্দ্রিক বিষয়ের উপর মঞ্চায়নে উৎসাহ দিতেন। এই ধরনের নাটকের জন্য লখনউতে তিনি একটি মঞ্চ (rahaskhana) স্থাপনও করেছিলেন। তাঁর হারেমের (পরিখানা) মহিলাদের শিল্প-দক্ষতার জন্য অভিনেতার অভাব হত না। আর নবাব নিজেই অভিনয় করতেন কৃষ্ণের ভূমিকায়। তিনি ‘রাধা কানহাইয়া কে কিসসা’ নামে একটি নাটক লিখে তা হুজুরবাগে মঞ্চস্থ করেন ১৮৪৩ সালে। পরে অনেকগুলি ফার্সি রোমান্সের নাট্যরূপ তাঁর কাইসারবাগের প্রাসাদে অভিনয় করান। ওয়াজিদ আলি লখনউ-এর শাসক থাকার সময় আগা হাসান আমানত ‘ইন্দ্রসভা’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন ১৮৫৩ সালে। উর্দু ভাষার প্রথম নাটক হিসাবে ‘ইন্দ্রসভা’-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিছু জায়গায় বলা হয়েছে যে আমানত ছিলেন ওয়াজিদ আলির সভাসদ এবং নবাবের নাটকের শুধু পৃষ্ঠপোষকতাই করেননি, নিজে অভিনয়ও করেছিলেন ইন্দ্রের ভূমিকায়। তবে এই তথ্য যারা অস্বীকারও করেন, তারাও মেনে নিয়েছেন যে ‘ইন্দ্রসভা’ রচনার সময়ে নবাবের ব্যবহার করা নাট্যভাষা আমানতকে প্রভাবিত করেছিল।

    নাটকের উৎস নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, সকলেই মেনে নিয়েছেন যে ‘ইন্দ্রসভা’ উত্তর-ভারতে গণ মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজিত নাটকের ক্ষেত্রে একটি ল্যান্ডমার্ক। স্বর্গের সবুজ পরি ও পৃথিবীর গুলফান রাজকুমারের প্রেমকাহিনিকে কেন্দ্র করে নাটকটি রচিত হয়েছিল। এই আপাত সাধারণ প্লটকে জোড়া হয়েছিল আড়ম্বরপূর্ণ দৃশ্যায়ন, ফ্যান্টাসি ও রোম্যান্স দিয়ে। গল্প, কাব্য, নাচ, গান মিশিয়ে একটি চোখ ধাঁধানো প্রেজেন্টেশন ছিল ‘ইন্দ্রসভা’। বিশেষ করে বলতে হয় ইন্দ্রের সভায় নাচগানের দৃশ্যে মূল চরিত্রদের সঙ্গতকারী একদল নৃত্যপটীয়সীদের কথা, যাকে আজকের ভাষায় বলা যায় ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার’।

    ‘ইন্দ্রসভা’ ছবির একটি দৃশ্য

    শুধু দৃশ্য-ভাষা বা ভিস্যুয়াল ল্যাঙ্গোয়েজ-ই নয়, আজকের হিন্দি ছবির সংলাপেও ব্যবহৃত ‘জান-এ-মন’ অথবা ‘লক্ত-এ-জিগর’ গোত্রের উর্দু শব্দের উৎসও লখনউ আর সেখানকার থিয়েটার সংস্কৃতি। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওয়াজিদ আলির প্রত্যক্ষ ভূমিকা। এই বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত চর্চার প্রয়োজন আছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯২৩ সালে কলকাতার ম্যাডন থিয়েটারের প্রযোজনায় তৈরি হল ‘ইন্দ্রসভা’র চলচ্চিত্র সংস্করণ। ছবিতে একত্রিশটি গজল, ন’টি ঠুংরি, চারটি হোরি-সহ ছিল সত্তরটির উপর গান। একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আঙুরবালা। ছবির সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৩৬ সালে ছবিটির তামিল রিমেক করেন এ.নারায়ণ ও আর.এস.প্রকাশ। ভারতের উত্তর এবং দক্ষিণ, দুই প্রান্তেই ‘ইন্দ্রসভা’র জনপ্রিয়তা বোঝা যায়। আর সেই প্রভাব থেকেই তৈরি হয়েছিল নাচ-গান ভরপুর জনপ্রিয় বিনোদনের নতুন ভাষা, যা নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজও জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরে বাণিজ্যিক ছবির মূলধারা হিসাবে বিবেচিত হয়। 

    ‘ইন্দ্রসভা’ ছবির প্রচারপুস্তিকা

    তবে ভাবতে খারাপ লাগলেও, এটাই বাস্তব যে বলিউড বা আঞ্চলিক ছায়াছবিতে যখনই আমাদের সামনে পর্দায় এই ফ্যান্টাসির দৃশ্যায়ন ফুটে ওঠে, আমাদের কখনওই মনে হয় না ভাগ্যবিড়ম্বিত সেই রাজার কথা। হয়তো সে-প্রশ্নও আমাদের মনে উঁকি দেয় না যে, কার প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন অংশদানে নবাবি বিনোদনের আঙ্গিক আজ জন-মনোরঞ্জনের মূলভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। কেউ আজকের মেটিয়াবুরুজে ওয়াজিদ আলি বা সেই লখনউ সংস্কৃতির খোঁজে কয়েকটি অবশিষ্ট ধর্মীয় স্থানে ঢুঁ মারেন। কেউ আবার ঘুরে দেখেন এলাকার বিখ্যাত ওস্তাগর মহল্লা, ঘুড়িওয়ালা কিংবা পানওয়ালার দোকান। কিন্তু যিনি নয়ন মাঝে ঠাঁই নিয়েছেন, তাঁকে নয়ন সম্মুখের স্থাপত্যে সেভাবে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই জন্মের ঠিক দুশো বছর পরে, ভারতের জনপ্রিয় ফিল্মি বিনোদনের পরিভাষা তৈরিতে এই গ্রেট শো-ম্যানের ভূমিকা আজ যেন অনেকটাই বিস্মৃত।

    ছবি সৌজন্যে: লেখক

            

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook