পালাতে থাকা মানুষ
কমোডের ওপর বসে আছে বাচ্চাটা। সামনে মেয়েটি, প্রকাণ্ড সাইজের একটা ঢলঢলে টপের মধ্যে প্রায় ঢুকে যাওয়া শরীর। হাঁটুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে। এলোমেলো চুল ক্লাচ দিয়ে আটকানো। ডানদিকে বেসিন, নীচের পাইপে দু-তিন জায়গায় জং, কোথাও বেশি কোথাও কম। কালো মোজা পরা পা দুটোর শেষে টাইলস উঠে নীচে সিমেন্ট। বাচ্চাটার হাতে ছোট্ট একটা গাড়ি— সেটা চালাচ্ছে আর নিজের মনে কী বলছে, গুনগুন গান গাইছে, আবার কী যেন বলছে!
হঠাৎ জোরে মাকে ডেকে ওঠে বাচ্চাটা। তার হয়ে গেছে। মা চমকে মাথা তোলে। চোখের সামনে ছেলের মুখ নীল হুডে ঢাকা। ওই বড় বড় চোখ, বোতাম নাক, ফুলো ঠোঁটের মুখটা। তার বসে যাওয়া চোখের মণিতে নীল হুডি, তার নীচে ওই মুখ, বাদামি প্যান্ট, হলুদের ওপর সবুজ ডাইনো-ডাইনো মোজা। আর কিছু বিশেষ দেখতে পায় না সে। চারদিক ঝাপসা। কেমন আবছা পর্দা ঢাকা। ভোঁতা শব্দ। অচেনা ভাষা। শুধু ওই মুখ… ছোট্ট শরীর। ন্যাপকিন দিয়ে পরিষ্কার করে সে ছেলেকে। সাবান দিয়ে যত্ন করে ছেলের হাত ধোয়ায়। সাবানের ফেনা নিয়ে ছেলে খ্যালে। আস্তে, খুব আস্তে। এক একটা নরম আঙুল। সাবানের গন্ধ ভেতরে ভরে নেয়— ল্যাভেন্ডার। ছেলে মা’র মুখের দিকে তাকায় ঘাড় ঘুরিয়ে। হাসে। বাথরুমের বাইরে নীল হুড ঢাকা ছেলের মাথা দেখে দেখে সে পার হয়ে যায় করিডোর, সিঁড়ি, মাঝখানে একটা খোলামতো জায়গা, সেখানে টিভি— সেখানে আবছা আবছা আরও কে কে যেন বসে আছে।
ছেলে সেখানেই কার্পেটের ওপর বসে, ছাই-ছাই রঙের কার্পেট। সেও বসে ওর পাশে। এর আগে ছিল তারা, পরপর দুটো শেল্টারে। বেসমেন্টে ঠাসাঠাসি অনেক মহিলা, বাচ্চা। তাদের সঙ্গে একই ম্যাট্রেসে ঘুমোত একটা মেয়ে, কোলে ছোট বাচ্চা। হুডির থেকেও ন্যাতানো মতো। কাঁদতও না। দিনে একবার খাবার আসত ৷ আওয়াজ, সে কী আওয়াজ! মেশিনগান শেলের আওয়াজ চলত সারারাত। পরে বাচ্চাগুলো আর কাঁদত না, ঘুমোত। ওর মধ্যেই।
এখন আর আওয়াজ নেই, শান্ত চারপাশ। এই নতুন জায়গায়, নতুন বাড়িতে অনেক ঘর। নতুন মানুষজন। সামনেই রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে চিকেনের গন্ধ। রসুন, রোজমেরি। সেখানেও কেউ কেউ আছে। একজন রান্না করছে। সাদা টি-শার্টের পেছন। চুল উঁচু করে বাঁধা। পিঠের হাড় বার করা। ফ্রিজ খুললে ডানদিকের দরজায় পরপর চিজ, মিট। ফ্রিজটা খুব বড়, দরজাটা খুলতে ডানহাত টনটন করে। ব্যথা। সমস্ত শরীরে। কতরকমের। ছেলেকে দিনের পর দিন কোলে নিয়ে থাকার ব্যথা হাতে। পিঠে, কোমরে। পায়ে কাটা আর ফোলা। কত হাঁটা। কত কত পথ। পেটে অন্যমনস্ক হাত পৌঁছলো, পেট ফোলা, এখনও।
ডানদিকে একটা বাস্কেটে অনেক রকমের পাউরুটি। ভেতরে হ্যাম দেয়, চিজ দেয়, দুটো স্যান্ডউইচ বানায়। ছেলের আর তার জন্য। ছেলে টিভির সামনে থেকে আসতে চায় না। তাকে দেয়। ওর পাশে বসে কামড় দেয় স্যান্ডউইচে। গলা দিয়ে নামতে থাকে দলা-দলা অর্ধেক চিবোনো পাউরুটি, চিজ…নামছে না। গলায় ব্যথা, বুকে ব্যথা। ছেলের জুস কার্টনের গায়ে আপেলের ছবি… ঢকঢক করে জুস খেল। হুডি খাচ্ছে না, স্যান্ডউইচ গুঁড়ো-গুঁড়ো করে ছড়াচ্ছে। মুখে লেগে আছে গুঁড়ো। এরকমই দুষ্টুমি করে ও— ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের সামনে একটা ডাইনিং টেবিল, ব্রাউন সোফা, তাতে হলুদ ফুলের কুশন, ঘরে ম-ম করা ব্রেডের গন্ধ, ছেলেটার ডিনার, তারপর চান, ঘুম। সাবানের গন্ধ, শিশুত্বকের গন্ধ, আরও একজোড়া শক্ত পুরুষ-হাত, তোয়ালেতে মোড়া খলখল করে হাসতে থাকা ছেলেকে সারা ঘরে এরোপ্লেনের মতো ওড়াচ্ছে। শক্ত দুটো হাত, নরম বাদামি দাড়ি, এলোমেলো চুল… একরকম হাসি, ওই মানুষটার, আর হাতের মধ্যে ধরে থাকা বাচ্চাটার।
সে ঝট করে উঠে দাঁড়াল। উল্টোদিকের দরজা দিয়ে সাত পা গিয়ে বাঁদিক নিলে এখন সে যেখানে থাকে সেই ঘর; কোনওরকমে পৌঁছে তার সরু বেডের নীচ থেকে একটা বড় হুডেড জ্যাকেট বের করে। পরে মাথাটা ঢেকে ফেলল। তার থেকে অনেক বড় জ্যাকেট। পরে থাকলে মনে হয় গরম কী একটা ঘিরে আছে। লিভিং রুমে ছেলে মন দিয়ে টিভি দেখছে, কার্টুন। এই শেল্টারে টিভিতে খবর আর চলে না। আগে আগে চলত। এখন শুধুই কার্টুন। ওকে একটা জুস এনে দিতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে এক পাশে ব্রেড-বাস্কেটে অনেক পাউরুটির স্তূপ। হঠাৎ করেই চোখে পড়ল। একটা সম্পূর্ণ নীলচে সবুজ হয়ে যাওয়া পাউরুটি— চারপাশে সব সাদা, বাদামি। মাঝখানের একটা পচে যাওয়া— সবুজ নীল।
ভীষণ, ভীষণ অন্ধকার জায়গা, কোনও রকমে ঠেসাঠেসি করে বসা মানুষের পিণ্ড। একটা সাবওয়ে, ফেলে আসা দেশের, ফেলে আসা শহরের। তার কোলের মধ্যে হুডি। ঘুমোচ্ছে। মাঝে মাঝেই কাশি, ফোঁপানি, বাচ্চাদের তীব্র কান্না। মাথা নীচু করে বসে আছে। কত ঘণ্টা? দিন? সময় গোনা যায় না। মাথার ওপরে তার শহরে শুধু মৃত্যুর আওয়াজ। তারপর হাঁটা শুরু অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারে? না আলোয়? তার ব্যাগের সঙ্গে ঠোক্কর। পথের একপাশে সাদা টাইলসের দেওয়ালের গায়ে শুয়ে থাকা একটা শরীর। গায়ে মস্ত ফোলা জ্যাকেট, একটা মুখ, মাথায় ফাঁপানো চুল… মুখে মাস্ক। বাকি মুখটা ওই পচে যাওয়া পাউরুটির মতো। সবুজ খোলা চোখ, চোখ তার দিকে। লোকের চাপে এগিয়ে যাচ্ছে, সে আর একবার তাকাল। ওই নীল-সবুজ প্রাণহীন গাল…
প্রায় দৌড়ে এসে হুডির পিছনে বসে পড়ল সে, মুখ গুঁজে দিল দুই হাঁটুর ভেতর। কোথায় যাবে সে? চোখের সামনে ভেসে ওঠে আগের শেল্টারের টিভির খবরে দেখা পুড়ে যাওয়া সেই বাড়িগুলো, রাস্তা— রাস্তার মোড়ে একটা সাইন ছিল— ডানদিকে রাস্তা বেঁকে যেত, সেই রাইট অ্যারো সাইন। বাঁক নিয়ে দু’পা গেলে উল্টোদিকের একটা বিশাল দেওয়ালে গোলাপি-গোলাপি ফুলে ঢাকা ম্যুরাল। তার সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরত রোজ। স্ট্রলারে হুডি। তাদের দুজনের হাত-ধরা হুডি। তার সামনে লাফাতে লাফাতে চলা হুডি আর তার বন্ধু। সঙ্গে তাদের মায়েরা। ওই ফুল-দেওয়ালের সামনে সেলফিতে হাসিভরা তিনটে মুখ। তার স্ক্রিন-সেভারে। তার পরিবার, তারা তিনজন। ফুল-দেওয়ালের পর সারি সারি বাড়ি। তাদের বাড়ি। হুডির কিন্ডারগার্টেনের বন্ধুদের বাড়ি। ওইদিন টিভির স্ক্রিনে সেই ফুল-দেওয়াল কালো কুচকুচে, মাঝে মাঝে দু’একটা গোলাপি ফুল, দেওয়ালের পর পুরো রাস্তাটাই পোড়া-পোড়া। ছাইতে ঢাকা রাস্তার মাঝে মাঝে। কীসব ঢিপি হয়ে পড়ে আছে। কী? কী পড়ে ছিল স্তূপ হয়ে? শুধু ছাই উড়ছে হাওয়ায়… শুধু কালো ধোঁয়া। আরও মুখ গোঁজে সে হাঁটুতে। কালো হয়ে যাওয়া দেওয়ালে কয়েকটা গোলাপি ফুল, কালো ছিটছিট তার মাঝে। কতটা মুখ গুঁজলে গোলাপি ফুলগুলোকে আর দেখা যাবে না… হঠাৎ করেই শুরু হল যন্ত্রণা। সম্পূর্ণ তলপেটটাকে কে যেন লোহার কাঁটায় আঁকড়ে ধরেছে। সবকিছু নীচের দিকে টানছে। কী যন্ত্রণা! রক্ত। কে যেন একটা কল খুলে দিয়েছে। প্যান্ট ভাসিয়ে নেমে আসছে। ফোলা পেটে কী প্রচণ্ড নড়াচড়া। আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে হুডিকে তুলে বাথরুমের দিকে ছোটে সে… রক্তে ভেসে যাচ্ছে, সব ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে তলা দিয়ে। কোলের মধ্যে হুডি চিৎকার করছে। সে যাবে না। কোনও রকমে বাথরুমের মেঝেতে হুডিকে নামিয়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল সে, মেঝে থেকে ম্যাট সরিয়ে দিচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে বাথরুমের সাদা টাইলস।
হুডি বিরাট হাঁ করে চিৎকার করছে। কোথা থেকে ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে। তার চোখের সামনে ধোঁয়া-ধোঁয়া দরজাটা হাট করে খুলে গেল। দুটো মুখ… তার ওপরে ঝুঁকে আছে, অনেক দূর থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে।
‘তুমি ফাইন। হুডি ফাইন। দ্যাখো, কিচ্ছু হয়নি।’
নীচের দিকে ইশারা করে সে। তলপেটে কী বিষাক্ত যন্ত্রণা। চিরে বেরিয়ে আসছে। কী? কী বেরোবে? সে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখে।
রক্ত নেই তো, কিচ্ছু নেই, কিছু বেরোবে না তো। সে তো কবেই…
হাত বাড়ানো মানুষ
এই নিয়ে তিনবার। একমাসে। তুলে নিয়ে যায় এই দুজনকে। তাদের ট্যাক্সি সার্ভিসের বড় একটা অংশ এই কাজই করছে এখন। ট্রেন স্টেশন, বাস স্টপ বা অন্য কিছু জায়গা থেকে এদের তুলে এনে শেল্টারে পৌঁছে দেওয়া; হাসপাতালে, ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া, অপেক্ষা করা, নিয়ে আসা। কখনও দোকানে বাজারেও। তবে এদের সংখ্যা বাড়ছে। অজস্র মানুষ আসছে প্রতিদিন, সীমানা পেরিয়ে। এরপর কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে কে জানে। সরকার জানে। এখন সিঁড়ি দিয়ে ছেলেকে কোলে করে নেমে আসছে মেয়েটি। কাঁধে একটা বড় ব্যাগ। ছেলের সবুজ টুপিতে দুটো ঘুন্টি। বিশাল জ্যাকেটের মধ্যে শরীর আছে কি না বোঝা যায় না। ফোটা সূর্যমুখীর মতো শিশুমুখের পাশে একটা প্রায় মরা নীরক্ত পাতা। বসে যাওয়া চোখ দুটোতে দৃষ্টি নেই, ট্যাক্সিটাকে ফুটপাথের সামনে এসে দাঁড় করায়। নেমে দরজাটা খুলে দিতে উঠে আসে… একটা পুঁটলির মতো ছেলেকে কোলের ওপর রাখে। আয়নায় দেখা যায়— ছেলে চোখ বড় বড় করে দেখছে চারদিক। পিছনে হাড় বের করা মুখের একপাশ। কী ক্লান্তি চোখের তলায়। বাঁচার ইচ্ছেটাকে যেন কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ ওকে ধরে থাকতে পারবে। এরকম কতজনকে দেখেছে সে? শেষ ক’বছরে? কত মানুষকে? কোনওভাবে বাঁচার ইচ্ছেকে শির বের করা হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সব ফেলে এসে। সব হারিয়ে। আর কত দেখবে?
ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে হুডি কোলের মধ্যে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। কখনও চোখ তুলে তাকালে মানুষের মুখের পাশ। তাদের প্যান্ট, জ্যাকেট, স্কার্ফ। চেনা-অচেনা শব্দের টুকরোটাকরা— উদ্বিগ্ন মুখ, ভাবলেশহীন মুখ। চিন্তার গভীর রেখা, কালি। সে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভেতরে সবুজ ড্রেস পরা এক মাঝবয়সি নার্স। মুখে হাসি। হুডিকে স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেখে, ‘বাঃ, লাংস পরিষ্কার। একদম ভাল হয়ে গেছে।’
সে বোঝে। চেনা ভাষা। একটু ভাঙা। নার্স তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, ‘তোমাকে ঠিক দেখাচ্ছে না তো। তুমি ঠিক আছ?’
হাত বাড়িয়ে তার গালটা ছুঁল, তারপর চোখের পাতাগুলো দেখল টেনে টেনে। হাতের পাতা। কেমন কেঁপে উঠল সে। কারও ছোয়াঁ। কতকাল পর।
‘ছেলে তো সুস্থ হয়ে গেছে। মা বুঝি খাচ্ছে না ঠিক করে?’
সে বসে রইল। চুপচাপ। কেমন যেন হচ্ছে ভেতরে। ফিরল নার্স। একটা বাক্স হাতে।
‘এর মধ্যে পাউচ আছে। প্রত্যেকদিন একটা জলে বা দুধে মিশিয়ে খাবে। তোমার প্রোটিন দরকার। প্রত্যেকদিন।’
বলতে বলতে পাশের প্যাকেট থেকে একটা ছোট বোতল বার করল। লাল রঙের একটা ড্রিংক।
‘এটা খাও, তুমি ডিহাইড্রেটেড। মিনারেল ড্রিঙ্ক।’
হাতে নিল সে।
‘খাও?’
গলায় ঢালতে গিয়ে টের পেল গলায় একটা বড় দলা আটকে আছে।
ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে গেল। তার বাঁহাতটা ছেলেকে জড়িয়ে আছে… ডানহাতে তখনও খালি বোতলটা। ড্রাইভার দরজাটা খুলে দেয়। সামনের রাস্তাটা সম্পূর্ণ দেখতে পায় সে… অচেনা। অলীক। সাদা সাদা ফুলে ভরা। মাটিতে বিছিয়ে আছে। টাটকা, থেঁতলানো। দু’পাশের গাছে শুধু ফুল আর ফুল। অনেকদূর। একদম স্পষ্ট। কে যেন দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে তার। ড্রাইভার হাতের ইশারা করে ডানদিকে কী দেখাচ্ছে। সে তাকিয়ে থাকে। ড্রাইভার ছেলের দিকে দেখায়, তারপর হাত দিয়ে কী যেন বলে, একটু যেন ছুটে নেয়। তখনই চোখ পড়ে, একটু এগোলেই একটা পার্ক। বাচ্চাদের খেলার। ড্রাইভার প্রায় অচেনা ভাষায় অনেক কিছু বলে। তাকে ভেতরে যেতে। সে এখানে অপেক্ষা করবে। তাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। সে এই প্রথম ড্রাইভারের চোখের দিকে তাকিয়ে সব অচেনা ভাষা বুঝতে পারে। পায়ে পায়ে পার্কে পৌঁছতেই হুডি পিছলে বেরিয়ে গেল তার কোল থেকে, আর ছুটতে শুরু করল। সে একটু ছুটল পিছনে, ততক্ষণে সে দোলনার কাছে। আশেপাশে দু’চারজন। সে হুডিকে দোলনায় বসাতেই শুরু হল খিলখিল হাসি। মাথার ওপর উপুড় হয়ে আছে জলে ধোয়া নীল আকাশ। তাজা মাটির গন্ধ। ঝিমঝিমে ফুলের গন্ধ। হঠাৎ কোথা থেকে একটা বল উড়ে এল তার কাছে। ম্যাজিকের মতো। লাল, নিটোল বল। হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে অনেকক্ষণ— যেন দেখেনি কখনও আগে।
সেদিন অনেক রাত্রে হুডির ছোট্ট বুকে মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে সে। আসছে একটু একটু করে ঘুম। সে ঘুমোতে চাইছে। বহুদিন বাদে। তার মাথার কাছে যত্ন করে রাখা সকালের বোতলটা। বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে ওঠে ট্যাক্সির আয়নার মধ্যে দিয়ে দেখা একজোড়া চোখ, বড় মায়া, বড় করুণা তাতে। আর ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগে তার দিকে ছুটে আসে— লাল টুকটুকে একটা বল।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র