ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • তৃতীয় প্রকৃতি


    জয়দীপ মিত্র (August 5, 2023)
     

    কিন্নর, কুভাগাম, কুরুক্ষেত্র

    আয়েষা ও তাঁর সমগোত্রীয়দের দেখেছি হরবখত, কিন্তু লক্ষ করার কথা একবারও ভাবিনি। ট্রেনের কামরায় বা ট্রাফিক সিগনালে অপরাপর আবশ্যিক আপদের মতো তাঁদের কোনও রকমে ময়লা দশটাকার নোট বাড়িয়ে ধরে ডিঙিয়ে এসেছি সাবধানে, কিন্তু সেই নিরানন্দ ন্যুইসেন্স জামার ভাঁজে জমে থাকতে দিইনি দু-মিনিটের বেশি। অন্য সকলের মতো আমার সারস্বত শব্দচেতনায় কর্কশ হাতের তালি বাজতে দিইনি কখনো। কখনো ভাবিইনি তালঢ্যাঙা, বেমানান মেয়েমানুষের মতো অবয়বের ও বাঁশচেরা কণ্ঠস্বরের এই খিস্তিবাজ দঙ্গলের ঈশ্বরযোগ্যতা বলে সত্যিই কিছু থাকতে পারে কি না!

    অথচ কুভাগামের ছোট্ট মন্দিরটার বাইরে দাঁড়িয়ে এই আয়েষাই যখন দাবি করল— ‘আমরা হিজড়ে নই, আমরা কিন্নর’, টের পেলাম আমার তাবৎ না-দেখা, না-শোনা, না-বোঝা জেদের ওপর কোথাও সংশয়ের মাতলা টান। মনে হল যেন আর খানিক ওঁর কথা শুনলেই বুদ্ধ বা গান্ধীর মতো আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করব একদিন সব খিস্তি থিতিয়ে গিয়ে জগৎজুড়ে দ্রিম দ্রিম বাজবে মাদল। অসূয়া জয় করা বা খামোকা নিরামিষাশী হওয়ার মতো মহত্বের নেশা যেমন মাঝেমাঝেই করে থাকে এমনি মানুষ, আমিও তেমনই ‘কিন্নর’ শব্দটাকে ‘হিজড়ে’ শব্দটার কাঁধে চাপিয়ে এক অসম্ভব সাম্য-সম্ভাবনার ঘোরে ডানা ঝাপটালাম বেকুবের মতো। তবু উড়তে পারলাম কই? আমার বাস্তব ট্রাফিক সিগনালে অকারণ যানজট, উন্মাদের হর্ন। ট্রেনের কামরায় গুমোট ভিড়ে হাঁটুর পেষণে জিতে নেওয়া আঙুলের স্পেস। এই বাস্তবের আয়েষা আর কুভাগামের আয়েষা তো এক হওয়ার কথা নয়। চতুর্দিক ভেজা, সবুজে মোড়া মন্দিরের চাতালে আয়েষা ও তাঁর বন্ধুরা তালি দিচ্ছিল যথারীতি। কিন্ত সেই তালি ছিল তাদের চক্রাকার ঘূর্ণনের শব্দরূপ। এবং সেই তালি পড়ছিল নিখুঁত, সুরেলা এক বিয়ের গানের তালে তালে। ‘আমরা কিন্নর। আমাদের বিয়ে স্বর্গনির্দিষ্ট নয়। আমরা বিয়ে করি যুদ্ধক্ষেত্রে।’— কুভাগামের আয়েষা বলেছিল।

    ছোট্ট মন্দিরের ঢালু ছাদের গায়ে দ্রাবিড় নিয়ম মেনে বত্রিশ রকম বিগ্রহের মধ্যিখানে গ্রামের দেবতা আরাভানের মুখ। দ্রাবিড় নিয়ম মেনেই সেই মুখ রুদ্র, রক্তচক্ষু, রাবণসদৃশ— ক্রূর ঠোঁটের ওপর দামামাকৃতি একজোড়া গোঁফ এরোপ্লেনের পাখার মতো দু-পাশে ছড়িয়ে আছে। এক নজরে তো বটেই, বিশনজরে দেখলেও মনে হয় এ-লোক সবাইকে চমকানোর জন্যই দৈব-দেওয়ালের গায়ে খোদিত হয়েছে। আশ্চর্য এই যে, এই প্রচণ্ড মুখের প্রেমে মুখরতা যাদের জীবনধারণের অস্ত্র, সেই আয়েষার মতো কিন্নররা হাজারে হাজারে কুভাগামে এসে হাজির হয় প্রতি বছর। ছাপোষা গৃহস্থকে নিংড়ে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত পাবলিকের সামনে নিজেদের বিবস্ত্র করবে বলে ভয় দেখায় যাঁরা, কুভাগ্রামের এই প্রচণ্ড পাথুরে লোকটাকে বিয়ে করবে বলে তাঁরাই আবার সালংকারা ও ব্রীড়াবনত হয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ায়। অস্তিত্ব যাঁদের সমাজে স্বাভাবিক-বলে-মেনে-নেওয়া নিয়মগুলোর বিপ্রতীপে, এই বৈপরীত্য তাঁদেরই মানায়।

    মহাভারতের তামিল ভাষ্যের সবচেয়ে ট্র্যাজিক চরিত্র আরাভান। নাগকন্যা উলুপির সাথে অর্জুনের গন্ধর্ব মতে— প্রবৃত্তি মতেই বলা ভালো হয়তো— বিবাহের ফসল এই একস্ট্রা-অফিসিয়াল রাজপুত্র আরাভান। মহাভারতের কালে যুদ্ধে জেতার জন্য শরীরে রাজরক্ত বইছে এমন কাউকে যুদ্ধক্ষেত্রে বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। কুরুক্ষেত্রের আগেও তেমন কারও খোঁজ পড়তে নজরে এল আরাভান। বলা ভালো আরাভানের শরীরে প্রাকৃত মাতৃরক্তের সাথে আর্যরক্তের যে বেয়াড়া সংমিশ্রণ, তার হননযোগ্যতা নজরে এল। বলি যেতে রাজি হল আরাভানও, তবে শর্তসাপেক্ষে। মৃত্যুর আগে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করল সে। এখন— যে পুরুষ বলি যাবে পরদিনই— তাকে বিয়ে করবে কে? আবারও এগিয়ে এলেন পাণ্ডবদের মুস্কিল-আসান— সেই কৃষ্ণ। একটিবারের জন্য কৃষ্ণ ধরলেন তাঁর নারীরূপ— মোহিনী। আরাভানের সাথে মোহিনীর বিয়ে হয়ে গেল। পরদিন ঢাক-ঢোল বাজিয়ে কুরুক্ষেত্রর মাঠে বলি দেওয়া হল আরাভানকে। বিধবা হল মোহিনী।

    রথে চাপিয়ে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়ার আগে আরাভানকে মাথায় নিয়ে ভক্তদের এলাকা পরিক্রমা

    মহাকাব্যের সুতো

    গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত, কিন্তু হল না। মহাকাব্যের সুতো এত দ্রুত গুটোয় না— অন্তত আমাদের দেশে। LGBTQIA+ (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুইয়ার, ইন্টারসেক্স, অ্যাসেক্সুয়াল + অজানা/অন্যান্য) গোষ্ঠীর সবথেকে বেশি দৃশ্যমান ও সংগঠিত উপগোষ্ঠী যাঁরা, সেই T বা ট্রান্সজেন্ডারের দল—  যাদের আমরা সচরাচর হিজড়ে বা ঠেকায় পড়লে কিন্নরও বলে থাকি— মোহিনীর মধ্যে খুঁজে নিল নিজেদের স্বরূপ। আর প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমার দিন, হাজারে হাজারে তামিলনাড়ুর এই ছোট্ট গ্রাম কুভাগামে হাজির হতে থাকল আরাভানকে বিয়ে করবে বলে। নববধূর সাজে চুলে টাটকা ফুলের মালা জড়িয়ে, কনুই পর্যন্ত কাচের চুড়ি রিনরিনিয়ে, থালায় কর্পূরের স্নিগ্ধ অগ্নিশিখা বহন করে তাঁরা আরাভানের মন্দিরের বাইরে লম্বা লাইনে দাঁড়াল। বিগ্রহের সঙ্গে বিয়ের চিহ্নস্বরূপ প্রত্যেকের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল হলুদ সুতোর মঙ্গলসূত্র। কুভাগামের যত্রতত্র জ্বলে উঠল আগুন। সেই আগুন ঘিরে শুরু হল বিয়ের গান, আর গানের তালে ঘুরে যেতে যেতে সম-এর মুখটায় থমকে গিয়ে মোক্ষম সমবেত তালি। ট্রেনের কামরায় যে-তালির শব্দ কানে এলেই সচকিত হয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়েছি, এই ছন্দোবদ্ধ তালি সেই তালি অবশ্যই নয়। হিজড়ে থেকে কিন্নরে রুপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে হলুদ সুতো, কর্পূরের ঘ্রাণ, দামামা গোঁফ।

    মহাভারতের ঘটনাক্রম মেনেই পূর্ণিমার পরদিন সাতসকালে আরাভানের মুখোশের মতো বিশাল মুখটাকে তোলা হয় রথে। আর সেই রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় বেশ অনেকটা দূরে এক বিস্তীর্ণ পোড়ো মাঠে— মানে প্রতীকী কুরুক্ষেত্রে। রথের পিছনে বিলাপ করতে করতে নববধূ বেশে আলুথালু করে ছুটতে থাকে হাজার হাজার মোহিনী। আরাভানের মুখ রথ থেকে মাটিতে ছিটকে পড়ামাত্র সম্পন্ন হয়ে যায় প্রতীকী বলিদান। আর চতুর্দিকে ছোট ছোট দঙ্গলের কেন্দ্রে আবার জ্বলে উঠতে থাকে আগুন। সেই আগুন ঘিরে বসে মোহিনীরা একটি-একটি করে খুলে নেয় তাঁদের অলঙ্কার। চুলে বাঁধা বাসি মালা ছিঁড়ে নিয়ে ছুড়ে দেয় আগুনে। কাটারির ফলায় ছিঁড়তে থাকে হলুদ মঙ্গলসূত্র। কাটারির ভোঁতা পিঠের এক একটা মাস্টারস্ট্রোকে তীব্র বাঁশির শব্দ করে খানখান হয়ে ছিটকে পড়ে কাচের চুড়ি। ভাঙা কাচ, বাসি ফুল, নোনা আগুনের স্তুপের ওপর দাড়িয়ে শুনতে থাকি সমবেত বিলাপ। কুরুক্ষেত্রর মাঠে দাঁড়িয়ে মোহিনীর বিলাপ শুনলেও এতটা স্তব্ধ হয়ে যেতাম না বলেই আমার বিশ্বাস।

    ‘হিজড়ে’ শব্দটা উর্দু, মুঘলরা ভারতে আসার আগে শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি। তৃতীয় শতাব্দী থেকেই সংস্কৃত সাহিত্যে অনিশ্চিত লিঙ্গের মানুষকে বলা হয়েছে তৃতীয় প্রকৃতি। শিবের অর্ধনারীশ্বর ফর্ম, কৃষ্ণের মোহিনীরূপ বা অর্জুনের বৃহন্নলা-ছদ্মবেশ এই তৃতীয় প্রকৃতিকে সামাজিক স্বীকৃতি তো বটেই, সম্মানও দিয়ে এসেছে।

    সমস্ত বাহুল্য সরিয়ে সাদা থানে নিজেদের মুড়ে মোহিনীরা এক-এক করে বেরিয়ে আসতে থাকে বধ্যভূমি থেকে। চরাচর জুড়ে বৈধব্যের বিষাদ। পরিত্যক্ত রথ বেয়ে নেমে এসে ইতিউতি পোড়া ঘাসের চিহ্নগুলো পেরিয়ে কাঁকুরে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়া আরাভানের মুখোশে পৌঁছে এই বিয়োগান্ত নাটক শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হল কই?

    মহাকাব্যের কাঙ্ক্ষিত ধর্ম হল যুগ থেকে যুগে তার ধারাবাহিক প্রাসঙ্গিকতা— পুনরাভিনয়। এ’বছর মে মাসের যে দিনগুলোয় কুভাগামে কিন্নরদের বিয়ের এই মহাভারতীয় পুনরাভিনয়ের ছবি তুলছিলাম, ঠিক সেই দিনগুলোতেই সুপ্রিম কোর্টে ভয়ানক সোরগোল ফেলে চলছিল কিন্নরদের সমলিঙ্গ-বিবাহের মামলা। মোহিনীরা (ট্রান্সউয়োম্যান)—মানে পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মালেও যাদের মানসিক বেড়ে ওঠা নারী হিসেবে। অর্থাৎ শরীর ও মনের সেই চিরন্তন নন-অ্যালাইনমেন্ট, এক্ষেত্রে যার সম্ভাব্য কারণ ক্রোমোজোম-ঘটিত। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেও জৈন ধর্মশাস্ত্র বস্তুলিঙ্গ (অ্যানাটমিকাল জেন্ডার) ও ভাবলিঙ্গ (সাইকোলজিকাল জেন্ডার) দুই পৃথক বস্তু হিসেবে মেনে নিলেও আজকের রাষ্ট্র ভারত তা মেনে নিতে রাজি নয়। অথচ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যাঁরা, তাঁরা ভাবলিঙ্গকেই তাঁদের লিঙ্গ-পরিচয় বলে মনে করেন। এবং স্বভাবতই সঙ্গী হিসেবে চান তাঁকেই, যিনি বস্তুলিঙ্গে এক হলেও ভাবলিঙ্গে তাঁর বিপরীত। সরকার ভাবলিঙ্গ ব্যাপারটাকে বুঝতে না চাওয়ায়— বর্তমান সরকারের কাছে চিন্তার এই সূক্ষ্মতা আশা করাও যায় না বোধহয়— তার কাছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বিয়ের ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দু’জন একই বস্তুলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ে, মানে সেম-সেক্স ম্যারেজ। ফলে সুপ্রিম কোর্টে সরকারি সওয়াল দাবি করছে এই বিয়ে বৈধ হতে পারে না, কারণ এমন রেওয়াজ ধম্মে নেই, ঐতিহ্যে নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ‘আরাভান পুরুষ। মোহিনী তো পুরুষ কৃষ্ণের বিশেষ প্রয়োজনে লোকঠকানো একরকম প্রোজেকশন বা ইলিউশন। অর্থাৎ, অ্যানাটমিকালি, সেও পুরুষ। সম বস্তুলিঙ্গের দুই মানুষের বিয়ে তাহলে তো মহাভারত অনুমোদিত, তাই না?’— মরা মাটির ওপর দিয়ে সফেদ বৈধব্যের ভার টেনে নিয়ে যেতে যেতে আয়েষা মোক্ষম প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিল।

    বৈধব্য বহন করে চষা জমির ওপর দিয়ে ফিরে যাওয়া

    ঈশ্বরের হিজড়ে 

    ইংরেজি মাধ্যমে কী হত জানি না, কিন্তু আমাদের সরকারি বাংলা বয়েজ স্কুলে প্রায় প্রতি ক্লাসেই এমন অন্তত একজন বয় থাকত যার চলন-বলন ঠাট-ঠমক দৃশ্যতই মেয়েলি। এবং ক্লাস নির্বিশেষে সর্বত্র এদের একটাই নিকনেম হত— ‘লেডিস’। নামে বহুবচন কেন সেই রহস্য আমার কাছে চিরকাল রহস্যই থেকে গেছে। গৌরবার্থে অনেক ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহৃত হয় বলে শুনেছি।

    ১৯৪৮ সালে আলফ্রেড কিনসে তার ‘সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ইন দ্য হিউম্যান মেল’ বইতে হেটেরো-হোমো নির্ণায়ক এক রেটিং স্কেল ব্যবহার করেন, যে-স্কেলের পরে নাম হয় ‘কিনসে স্কেল’। সমাজের এক বিরাট অংশের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে আলফ্রেড কিনসে দেখান যে মানুষ বিষমকামী ও সমকামী— শুধুমাত্র এই দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে না। স্কেলে শূন্য যদি পারফেক্ট হেটেরোসেক্সুয়াল হয় আর ছয় হয় নির্ভেজাল হোমোসেক্সুয়াল, তাহলে এই দুই মেরুর মাঝখানে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল বা স্পেকট্রাম জুড়ে বহু মানুষ থাকেন যাদের ভাবলিঙ্গ অনিশ্চিত। যে-কোনও সমাজে কাছাকাছি চার শতাংশ মানুষ এই অনিশ্চিত অবস্থানে ঘোরাফেরা করেন। আমাদের দেশের নিরিখে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন কোটি। এই পরিসংখ্যান জানার পর চিরকাল টিজ করে এসেছি যাদের সেই বালকবয়সের ‘লেডিস’-দের জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হতে থাকে। পঞ্চাশজনের ক্লাসে একজন ‘লেডিস’-এর উপস্থিতি সমীক্ষাসিদ্ধ এক নিশ্চিত সম্ভাবনা।

    ‘হিজড়ে’ শব্দটা উর্দু, মুঘলরা ভারতে আসার আগে শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি। তৃতীয় শতাব্দী থেকেই সংস্কৃত সাহিত্যে অনিশ্চিত লিঙ্গের মানুষকে বলা হয়েছে তৃতীয় প্রকৃতি। শিবের অর্ধনারীশ্বর ফর্ম, কৃষ্ণের মোহিনীরূপ বা অর্জুনের বৃহন্নলা-ছদ্মবেশ এই তৃতীয় প্রকৃতিকে সামাজিক স্বীকৃতি তো বটেই, সম্মানও দিয়ে এসেছে। ভোগ এবং তপস্যার যে সমানাধিকার ও সংঘর্ষ হিন্দু ধর্মের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, তা সমকামিতাকে কখনও অস্বীকার করার কথা ভাবেনি। ইসলাম মনে করেছে তৃতীয় প্রকৃতির মানুষের যৌনতার বোধ নেই, এবং সেই কারণেই তাঁরা সমাজের সমস্ত পঙ্কিল প্রবৃত্তির ঊর্দ্ধে। ভারতে সাতশো বছরের মুসলমান শাসনকালে এই হিজড়েরা সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে হামেশাই জায়গা করে নিয়েছে। LGBTQIA+ কমিউনিটির T বা ট্রান্সজেন্ডার বিভাগটা এই সময়েই তৈরি করে নিয়েছে সাতটি শাখায় বিভক্ত তাঁদের প্যান-ইন্ডিয়ান নেটওয়ার্ক, যার জোরে তাঁরা বহুকাল ধরেই হয়ে থেকেছে কমিউনিটির সবচেয়ে প্রকাশ্য ও সোচ্চার রাজনৈতিক মুখ। মুসলমান শাসনকালেই গড়ে উঠেছে হিজড়েদের ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম মেশানো স্বতন্ত্র ধর্মমত, ‘হিজড়া-ফার্সী’ নামে নিজস্ব এক ভাষা যাতে এক হাজারেরও বেশি চেনা উর্দু শব্দ সম্পূর্ণ পৃথক অর্থ বহন করছে। এই সময়েই তৈ্রি হয়েছে তাঁদের গুরুকেন্দ্রিক পরিবারতন্ত্র— তাদের কমিউন বা ‘খোল’। কান্দ্রা-বাধাই-যোগিন-শিবসতী ইত্যাদি নানাবিধ স্তর নিয়ে এই সময়েই রূপ পেয়েছে তাদের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস। তৃতীয় প্রকৃতির তৃতীয় রকম নিয়ে আপত্তি তোলার কথা তখনও পর্যন্ত কেউ ভাবেননি।

    গোলমাল বাধল সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার বিলেত থেকে তার ভিক্টোরিয়ান রুচিবোধ বয়ে এনে ভারতের মানুষের ওপর চাপানো শুরু করলে। যে কোনও ঔপনিবেশিক শক্তির মতো এই ব্রিটিশ শক্তিও ছিল প্রখর পৌরুষের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। ফলে তারা পুং ও স্ত্রী বাইনারির মাঝখানে থাকা সমস্ত লিঙ্গকে টিপে মারার উদ্যোগ নিল। ভারতীয় সমাজে সবথেকে প্রকাশ্য, হিজড়ে সম্প্রদায়কে, তারা মনে করল সমকামী অপহরণকারী— যারা পুরুষ শিশুদের ধরে ধরে লিঙ্গচ্ছেদ করে। ১৮৭১ সালে ‘ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট’ প্রচলন করার সময়ে তারা ‘জন্মগতভাবে অলস ও অপরাধপ্রবণ, ভিখিরি, ভবঘুরে, মাতাল ও যৌনকর্মী’ ইত্যাদি শ্রেণিতে হিজড়েদেরও জুড়ে নিয়ে তাঁদের বৃত্তি তো বটেই, অস্তিত্বকেও নিষিদ্ধ করল। পুরুষ শরীরে মেয়েদের পোশাক পরে নাচগান করতে দেখলেই জেল হত দশটি বছর। এমনকী মুসলমান পৃষ্ঠপোষকদের দান করা জমিও হিজড়ে সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হতে থাকল তাঁরা আইনসিদ্ধ কোনও বৃত্তির বিনিময়ে সেই জমির ভোগদখল করছে দেখাতে না পারায়।

    কিন্নর সমাজের এক্কেবারে প্রাথমিক ইউনিট হল ‘হিজড়ে খোল’, বা কমিউন। প্রত্যেক কমিউনের অভিভাবক মনোনীত হন একজন সিনিয়র কিন্নর যার পরিচয় ‘নায়ক’। তেমনই এক খোল-এর নায়ক ও অন্য সদস্যরা কুভাগামে সাময়িক সংসার পেতেছেন গাছের তলায়

    প্রখর পৌরুষের শ্রেষ্ঠত্বের কলোনিয়াল ধারণায় প্রথম আঘাত করলেন— যথারীতি— মহাত্মা গান্ধি। লিঙ্গসাম্যের ধারনা সমাজে চারিয়ে দিতে গান্ধি নিজেকে বললেন God’s Eunuch— ঈশ্বরের হিজড়ে। অর্থাৎ তিনি লিঙ্গহীন। বা এক শরীরে একাধারে সমস্ত লিঙ্গের প্রতিনিধি। এই একটি ঘোষণায় অন্তত গ্রামসমাজে— যেখানে মানুষ হিজড়েদের যৌনবোধহীনতায় বিশ্বাস রেখে তাদের চিরকাল তপস্বী ভেবে এসেছে— হিজড়ে সমাজ আবার কিছুটা প্রকাশ্য হতে পারল। ১৯৪৯ সালে স্বাধীন ভারত সরকার ‘ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট’ বাতিল করলে তাঁরা আবার তাঁদের সাবেক বৃত্তিতে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু সমকামী সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা ১৮৬১ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বেমালুম বহাল রইল ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

    আইন-আদালত-আদমসুমারি

    অর্থনীতি উদার হওয়ার পর যে শিক্ষিত ও ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি জন্ম নেয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ— যাঁরা অন্যরকম— তাঁদের ব্যতিক্রমী ভাবলিঙ্গের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার কথা ভাবেন। অশোক দত্ত রাও কবির ‘বম্বে দোস্ত’ পত্রিকা, এইডস ভেদভাব বিরোধী আন্দোলন(ABVA)বা ন্যাজ (NAZ) ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান বিকল্প যৌনতার সামাজিক ও আইনি বৈধতা দাবি করে জনমত গড়ে তোলা শুরু করে। ২০০১ সালেই ৩৭৭ ধারার বিলোপ চেয়ে মামলা হয় দিল্লি হাইকোর্টে। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেন, বিক্রম শেঠ ও আরও অনেকে ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে কথা বলেন। বহু টানা-পড়েনের পর সমকামী সম্পর্ক সুপ্রিম কোর্টে আইনি বৈধতা পেল এই সেদিন— ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ২০১১ সালের আদমসুমারিতে ভারতীয় নাগরিকদের পুং বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো লিঙ্গে অবস্থান লিপিবদ্ধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এবং কিনসের সমীক্ষা উড়িয়ে দিয়ে মাত্র ৪,৮৭,৮০৩ জন (১২১ কোটির মধ্যে) জানিয়েছেন তাঁরা তৃতীয় লিঙ্গের। যাঁরা তৃতীয় লিঙ্গ হয়েও তা জানালেন না তাঁদের দ্বিধার কারণ সহজেই অনুমেয়— এই আদমসুমারির আরও তিন তিনটে বছর পরে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গে অবস্থানকে আইনসিদ্ধ ঘোষণা করবেন। ২০২১ সালের জনগণনা কত বাঁও জলের নীচে তা আমি কেন কারোরই বোধহয় জানা নেই। তবে মনে হয় এবারের গণনায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা অন্তত একশোগুণ বাড়বে।

    তৃতীয় লিঙ্গে অবস্থান ও সমকাম বৈধ হওয়ার পর স্বাভাবিক ক্রোনোলজিতে যা এসে পড়ে, তা হল সমলিঙ্গের দু’জনের একত্রবাসের আইনি বৈধতা— মানে বিবাহ। কারণ বিবাহ একটি রাষ্ট্রস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রাষ্ট্রকে সেই প্রতিষ্ঠান সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিতেই হয়— বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে যা হয় না। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর দুই সমলিঙ্গের যুগল সুপ্রিম কোর্টে ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৪’-এর সংস্কার চেয়ে মামলা করেন। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী এখন, একজন যে-কোনও ধর্ম বা জাতের আর একজনকে বিয়ে করতে পারেন। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা চাইছেন এই আইনে বলা হোক একজন যে-কোনও ধর্ম, জাত ও ‘লিঙ্গ’-এর আরেকজনকে বিয়ে করতে পারবেন, যাতে সমলিঙ্গ-বিবাহ বৈধ হয়। ১৮ এপ্রিল ২০২৩ থেকে ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত চিফ জাস্টিস ডি.ওয়াই.চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারকের কনস্টিটিউশন বেঞ্চ এই দাবির পক্ষে এবং বিপক্ষে ঝাঁঝালো যুক্তিতর্ক শুনেছেন। রায়দান— যদিও— স্থগিত রাখা হয়েছে।

    প্রখর পুরুষ

    কুভাগামে চৈতি পূর্ণিমায় আরাভানের সাথে মোহিনীদের প্রতীকী গণবিবাহ অন্তত এ-বছর শুধুই মধুর খেলা ছিল না। বরং বলা যায় গত দেড়শো বছরে ভারতের তৃতীয় প্রকৃতির কাছে এমন নিবিড় রাজনৈতিক সম্ভাবনা উদ্‌যাপনের সুযোগ আর আসেনি। যে-রাষ্ট্র তাঁদের প্রান্তিক অবস্থান ও সংখ্যালঘুত্বের সুযোগ নিয়ে বিবাহের মতো প্রাথমিক অধিকারটুকুও দিতে নারাজ, সর্বোচ্চ আদালতে সেই রাষ্ট্রের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে— আয়েষা ও তাঁর বন্ধুরা— কুভাগামে এসে তাঁদের প্রতীকী মিলনে ও বৈধব্যে এবারে মিশিয়েছিল কয়েক পরত বেশি তীব্রতা। নিজের চোখেই দেখেছি মহাভারতের পুনরাভিনয়ে কী ভাবে খানখান হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে সমলিঙ্গ বিবাহের বিরুদ্ধে তোলা রাষ্ট্রের অসাড় যুক্তিগুলো।

    কর্ণাটকের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বাবা, মা ও আরও জনাদশেক আত্মীয়কে নিয়ে কুভাগামে এসেছে সিলভান। পেশায় অটোচালক। আরাভানের মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে সাজোয়ান, সুপুরুষ সিলভান যাঁর গলায় মঙ্গলসূত্র বাঁধলো, তিনি একজন ট্রান্সউওম্যান বা কিন্নর। অভিভাবকরা সমলিঙ্গের এই নবদম্পতিকে বরণ করলেন কপালে টিকা পরিয়ে। এই বিবাহ এখনও অবশ্যই আইনসিদ্ধ নয়, হয়তো আগামি বছর হবে। এমন গন্ধর্ব বিবাহ ঘটে চলেছিল কুভাগামে মিনিটে মিনিটে। মহাভারতের কালে এমন বিবাহের মান্যতা যদিও বা থেকে থাকে, আগ্রাসী-পৌরুষের শ্রেষ্ঠত্বের ঔপনিবেশিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী আজকের ভারত সরকারের কাছে তা নেই। তাই সুপ্রিম কোর্টে সরকারের কু-যুক্তি হল সমলিঙ্গ-বিবাহ ধারণাটাই ‘আরবান এবং এলিটিস্ট’। সিলভান শহুরে নয়, এলিটিস্ট তো নয়ই। তাঁর পরিবারের লোকজন সম্ভবত LGBTQIA+ বা সেকশন ৩৭৭ বস্তুগুলি কী বা কেন, তাই জানেন না। কুভাগামের সাক্ষ্য যদি মানতেই হয় তাহলে সমলিঙ্গ-বিবাহ এই দেশে মহাভারতের মতোই প্রাচীন, প্রচলিত ও ধারাবাহিক এক ধারা। সমকাম যেমন।

    কুভাগাম আসলে ক্রমশ নাবালক হতে থাকা, ক্রমশ গুটিয়ে ছোটো হতে থাকা এক রাষ্ট্রের সঙ্গে মহাকাব্যের চিরন্তন বহমানতার অনিবার্য সংঘাত। আশ্চর্য এই যে, রাষ্ট্রক্ষমতার আষ্ফালন অগ্রাহ্য করে তামিলনাড়ুর এই প্রত্যন্ত গ্রামে ছোট্ট মন্দিরের আশেপাশে জড়ো হন বহু— মূলত সাব-অলটার্ন মানুষ— যাঁদের সহজাত বৈজ্ঞানিক জীবনবোধ ক্রমশ আরও বিস্তৃত হতে থাকা এক সমাজের জন্ম দেয়। এখানে এখনও মানুষ প্রবলভাবে বিশ্বাস করে অনিশ্চিত লিঙ্গ এক দৈব দুর্বিপাক হলেও তা মেনে নিয়ে দিব্যি যাপন করা যায় জীবন। এবং সেই যাপনের জায়গাটুকু সমাজ না দিলে সেই সমাজকে কাঠগড়ায় তুলতেও হয়।

    অনিশ্চিত যৌন পরিচয় নিয়ে জন্মানো এক বালিকার সাথে আরাভানের বিবাহ

    কোনো মানুষেরই মন ও শরীর সরলরৈখিক লজিকে সংযুক্ত নয়। জন্মসূত্রে পাওয়া মন ও শরীর বিপরীতধর্মী যাঁদের, তাঁরাই তৃতীয়-প্রকৃতি। এই প্রকৃতির মধ্যেই আরও এক প্রকৃতি থাকে যাঁর মনের গড়ন অনুযায়ী শরীরটা গড়ে দিতে হয় মানুষকেই। আরাভান এদেরও পুরুষ।

    মন্দিরের পিছনে ধোঁয়া দেখে পায়ে পায়ে হাজির হয়েছিলাম আর এক অগ্নিকুণ্ডে। এখানে যাদের সাজিয়েগুছিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে তারা সবাই চার-পাঁচ বছর বয়সি বালক ও বালিকা। আগুনের সামনে কব্জিতে ফুলের মালা বেঁধে ও গলায় হলুদ সুতো ঝুলিয়ে এদেরও বিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরাভানের সঙ্গে। খটকা লাগল। মহাভারতে বাল্যবিবাহের রীতি ছিল না কি? এই বয়সে সুনিশ্চিতভাবে রূপান্তরকামী নারী বা পুরুষ হওয়ার কথাও তো এদের নয়।

    তারপর জানলাম এরা প্রত্যেকে জন্মেছে অনিশ্চিত যৌন অঙ্গ নিয়ে, ডাক্তারি ভাষায় যে ব্যাপারটাকে বলা হয় মিক্সড গোনাডাল ডিসজেনেসিস। এক্ষেত্রে প্রথম কয়েক বছর এদের বেড়ে ওঠা দেখে ঠাহর করে নিতে হয় সহজাত ঝোঁকটা কোন দিকে— নারী, না পুরুষ। তারপর মনের ঝোঁক অনু্যায়ী এদের ওপর হয় সেক্স অ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি। খরচসাপেক্ষ। কপালে টিকলি ঝোলানো ঝকঝকে চোখের মেয়েটিকে দেখিয়ে কোয়েম্বাটুরের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ফিসফিস করে আমাকে বললেন— মেল। মেয়েকে মেয়ের শরীর ফিরিয়ে দিতে পাঁচ বছরে এই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি প্রায় অনাহারে থেকে আড়াই লক্ষ টাকা জমিয়েছেন।

    সার্জারির আগে এই ছেলেমেয়েদের কুভাগামে এনে আরাভানের হাতে সঁপে দেওয়া দস্তুর। প্রখর পুরুষের প্রকৃত ধর্ম হল তিনি কাউকে ফেলেন না, লিঙ্গভেদ করেন না। সেজন্যই তিনি মহাকাব্যিক।

    তবে এই মহাকাব্যিক, প্রতীকী, প্রখর পুরুষ কখনও নিজেকে ‘ঈশ্বরের হিজড়ে’ বলে থাকেন কি না তা আমার জানা নেই।

    চিত্রগ্রাহক: জয়দীপ মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook