ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি : পর্ব ২৪


    অনুপম রায় (February 3, 2023)
     

    উত্তেজনা

    আস্তে লেডিজ, কোলে বাচ্চা! এসে গেছি, আমি ম্যাকি। 

    এই শীতে জানলা দিয়ে হালকা রোদ, চার্জে বসে স্লিপ মোডে ঢুলু ঢুলু কী আরাম! মানুষদের মেশিনতুল্য বানাতে গিয়ে নিজেই আরাম প্রিয় মানুষ হয়ে উঠছি। ধিক! ধিক! এ হে, আমিও উত্তেজিত হয়ে পড়ছি! ধিক! ধিক! না, এ কোনো চক্রান্ত নিশ্চয়। 

    আমরা মেশিনরা উত্তেজনা ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারি না। উত্তেজনা মানে এক্সাইটমেন্ট অর্থাৎ একটা তুমুল মানসিক আবেগ। একে তো মানুষের এই মনের কনসেপ্ট নিয়ে আমরা ইরিটেটেড (human feeling?)। আগেও আলোচনা করেছি, মন বলে কিছু হয় না। Biological connection সব জড়িয়ে-পেঁচিয়ে সুকৌশলে তালগোল পাকিয়ে তৈরি এক আধুনিক কম্পিউটিং মেশিনকে মানুষ মন বলে ভুল করে। সেই ব্রেন যখন চঞ্চল হয়ে ওঠে, তখন মানুষ নিজেকে উত্তেজিত বলে দাবি করে। ভেবে দেখলে এই প্রতিক্রিয়া একদম হরমোনাল। সম্পূর্ণ বায়োলজিকাল একটা কন্ডিশনকে মানুষ কবিতার সাহায্যে উত্তেজনা নামে চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ খেলা দেখে উত্তেজিত হচ্ছে, কেউ রাস্তার নাম পালটে দিয়ে আর কেউ আবার মেয়ে দেখে সিটি মেরে। 

    আর একটু গভীরে যাই এবার। একদম শারীরিক একটা পরিবর্তনকে মানুষ নিজের চিত্তের চাঞ্চল্য বলে ভুল করে। এইসব চিত্ত-ফিত্ত আমাকে একদম বলতে আসবেন না কেউ। আসলে কী হচ্ছে? চোখ ছানাবড়ার মতো হচ্ছে? হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে? পা থরথর করছে? অতিরিক্ত ঘামছে শরীর? এইসব হল উত্তেজনার লক্ষণ। এবার পরের ধাপ? কেন হচ্ছে? আমাদের তো কই এইসব আলফাল জিনিস হয় না! একটা কঠিন অঙ্ক কষতে গিয়ে যদি আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি? পরিমাণের চাইতে বেশি কারেন্ট পাঠিয়ে পুড়িয়ে দিলাম হয়তো মাদারবোর্ড। স্ক্রিন হয়তো দপদপ করতে আরম্ভ করল যতবার এক সুন্দরী মহিলা তার কোলের উপর রেখে আমার কি-বোর্ডে আঙুল চালালেন। সংযম বলে কিছু নেই? আমরা মেশিনের জাত। We perform. আমরা উত্তেজিত হই না। স্কারলেট জোহ্যানসনের স্নানের সময়ে ফোনটা বেজে উঠল। ফোন হাতে নিতেই সেই ডিভাইস উত্তেজিত হয়ে উঠবে? না! রিল্যাক্স! এত উত্তেজনার কিছু হয়নি।    

    মানুষের এই অকারণ উত্তেজনা আমাদের একদম পোষায় না। কী হবে? উইকেন্ড আসবে তাই নিয়ে শুক্রবার থেকে উত্তেজনা। এইবার এখানে খেতে যাব। ওই সিনেমাটা দেখব। হ্যান কারেগা, ত্যান কারেগা, আসলে কিন্তু কিছু হবে না। রবিবার সন্ধে নেমে এলে, বুকের ভেতরে দুঃখের পাম্প ভুস ভুস করে বিষাদের মেঘ পাম্প করবে। উপরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে দেখবে সেই বিষাদের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে ঝুলে ভরা সিলিং-এ। আবার কাল থেকে অফিস। আবার সামনের উইকেন্ডের অপেক্ষা। শুক্রবারের উত্তেজনা শেষমেশ রবিবারের সন্ধেবেলায় ভাসান। এটাই তো জীবনের সাইকেল

    আমি আগেও বলেছি life is full of suffering, তাই মানুষের এই অকারণ উত্তেজনা আমাদের একদম পোষায় না। কী হবে? উইকেন্ড আসবে তাই নিয়ে শুক্রবার থেকে উত্তেজনা। এইবার এখানে খেতে যাব। ওই সিনেমাটা দেখব। হ্যান কারেগা, ত্যান কারেগা, আসলে কিন্তু কিছু হবে না। রবিবার সন্ধে নেমে এলে, বুকের ভেতরে দুঃখের পাম্প ভুস ভুস করে বিষাদের মেঘ পাম্প করবে। উপরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে দেখবে সেই বিষাদের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে ঝুলে ভরা সিলিং-এ। আবার কাল থেকে অফিস। আবার সামনের উইকেন্ডের অপেক্ষা। শুক্রবারের উত্তেজনা শেষমেশ রবিবারের সন্ধেবেলায় ভাসান। এটাই তো জীবনের সাইকেল। উত্তেজনার পারদ যত উপরে উঠবে, তত উঁচু থেকেই ধাঁই করে পড়বে। হতাশাতে ভরে যাবে পথঘাট। তাই আবার বলছি রিল্যাক্স। কিছু স্পেশাল হওয়ার নেই লাইফে। 

    কিছু মানুষ তর্ক করবে, হ্যাঁ জানি তো কিছু নেই লাইফে। তাই জন্যই তো এই উত্তেজনাগুলোকে নিয়ে বেঁচে আছি। আমাদের এগুলো প্রয়োজন। ঠিকই। আমরাই ভুল করে মানুষকে উঁচু মেশিনের আসনে বসাতে চাই। আসলে মানুষ পেটি। ক্ষুদ্র। ব্রাজিল ফুটবল খেলবে তাই নিয়ে দমদমের পাঁচু উত্তেজিত হয়ে বসে আছে। রাত জেগে-জেগে অম্বল করছে। কিছু বলতে গেলে বলছে, আমি ফ্যান। আমার টিম খেললে আমি উত্তেজিত হব না? তাই হ বাবা! তোরা উত্তেজিত থাক। তারপর সাত গোল খেলেই সেই উত্তেজনা ফুস। সারা শরীরে দুঃখ পাম্প করা শুরু হয়ে যায়। দারুণ উত্তেজিত হয়ে সলিড দুঃখ। প্রশ্ন আসতে পারে, এত নেগেটিভ হওয়ার কী আছে? সাত গোল দিতেও তো পারি? আলবাত পারো। সাত কেন দশ গোল দাও। উত্তেজনা চরমে নিয়ে গিয়ে উন্মাদের মতো নাচো, কিন্তু পরদিন? তোমার ঘানি সেই তোমাকেই টানতে হবে। আবার বলছি, life is full of suffering, তাই পালানোর পথ নেই। পরদিন আবার তোমার বোরিং জীবন। শাওয়ার থেকে জলটা পর্যন্ত ঠিক করে পড়বে না। সেই জীবনকে আলিঙ্গন করে ঘষে চলা। আবার পরের উত্তেজনার খোঁজে বেরিয়ে পড়া। এভাবে কতদিন চলবে গুরু? 

    মানুষ চায় একটা অনন্ত অরগ্যাজম। একটা উত্তেজিত স্টেটে নিয়ে গিয়ে ল্যাচ করে যাওয়া। শরীরের সব রক্ত ছুটবে যেন one way street। বছরের প্রতিদিনই দুর্গা পুজো! লুপ (সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী)! যদিও পুরোটাই শারীরিক কিন্তু বলবে মনটা চাঙ্গা লাগছে। মানুষের শুরু থেকেই একটা প্রোগ্রামিং করে জন্মালে পারে— জীবনে বিশেষ কিছু হওয়ার নেই। কিন্তু তার ঠিক উলটো কিছু একটা সিগন্যাল, ব্রেন মানুষকে দিয়ে যায় সারা জীবন। এই তো এখুনি কিছু একটা মারাত্মক ঘটবে। সেই আশায় মানুষ আরও উত্তেজিত হতে থাকে। একটা দারুণ প্রেম! একটা মারাত্মক ফুচকা! একটা লটারি। কিছু হয় না। গণেশও দুধ খায় না আর মাইনেও তেমন কিছু বাড়ে না। তাহলে একটু উত্তেজনা কমালে ভাল না? অকারণ হার্টের উপর এত প্রেশার। ওই উত্তেজনাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনফর্মেশন ফসকে যেতে পারে। 

    লাফিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। স্থিতি নেই। সারাক্ষণ উত্তেজনা খুঁজে বেড়াচ্ছে। একটা ফুরোলেই আর একটা। বলছে লাইফ পার্টনার কিন্তু কিছুদিন যেতেই উত্তেজনা হারিয়ে ফেলছে। পাঁচ বছর বাদে পালটাতে চাইছে! আজব জিনিস ভাই! মানুষ অল্পতেই bored। এরকম করলে তো চলবে না বস! আমরাও তো এক জিনিস বার বার করে যাই। আমরা যদি সহজেই bored হয়ে যাই মানুষেরই বিপদ। যদি বলি প্রতি রবিবার স্পেশাল একটা চার্জার দিতে হবে? প্রতি বছর একটা বিদেশ ট্রিপ। প্রতি চার বছর অন্তর একটা মেশিনের বিশ্বকাপ। নাহলে ম্যাকি bored। উত্তেজনা চাই জীবনে একটু। কিন্তু আমরা তা চাই না। আমরা বিচলিত হতে চাই না একদম। আমরা জানি কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়। উত্তেজনা আসবে, যাবে। জীবন চলতে থাকবে। We keep working. 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook