ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মেয়ে পুলিশের ডায়রি

    কাকলি ঘোষ কুণ্ডু (March 8, 2025)
     

    দেখতে দেখতে পুলিশের চাকরিতে সাতাশ বছর। ১৪ এপ্রিল ১৯৯৮, হাওড়া জেলার শিবপুর পুলিশ লাইনে এসে রিপোর্ট করেছিলাম। সঙ্গে এসেছিলেন বাবা-মা। একটা বড় কালো ট্যাঙ্কে প্রথম ঘরছাড়া মেয়ের নানা টুকিটাকি। একটা বড় প্রিজন ভ্যানে তুলে দেওয়া হল পুলিশ লাইন থেকে, আমরা মাত্র দু’জন। গন্তব্য পুলিশ ট্রেনিং কলেজ, যেটি এখনকার স্বামী বিবেকানন্দ স্টেট পুলিশ অ্যাকাডেমি। মহিলা পুলিশ হিসেবে নয়, পরীক্ষা দিয়ে একজন সফল পরীক্ষার্থী হিসেবে চাকরি পেয়েছিলাম। পুরুষ-মহিলা ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ ছিল একইরকম। মাঠে দৌড়ে, পিটি প্যারেড করে, আইনের পাঠ শিখে, শপথ গ্রহণ করে ট্রেনিং পর্ব মিটল। এরপর নদিয়া জেলা, মুর্শিদাবাদ জেলা, অবিভক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা, ব্যারাকপুর কমিশনারেট, ট্রেনিং অ্যাকাডেমি, সিআইডি, বারুইপুর পুলিশ জেলা এবং বর্তমানে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট। দেখতে দেখতে চাকরি প্রায় শেষের পথে। কত দেখা, কত শেখা, কত পাওনা আর না-পাওয়া এই বছরগুলোতে। কত চড়াই-উতরাই, ঝুঁকি, চ্যালেঞ্জ। জীবন কতদিন, কে জানে! দৈর্ঘ্য দিয়ে মাপার জন্য তো জীবন নয়। উর্দি গায়ে নিজের কর্তব্য থেকে পিছু হটা নিষিদ্ধ। উর্দির সম্মানরক্ষায় জান কবুল।

    ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পোস্টিংয়ে যাতে আমাকে না যেতে হয়, তার জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম। সংসার ভাঙার পর নাবালক সন্তান আমার বাবা-মায়ের কাছে মানুষ হচ্ছিল, তাই পরিবারের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মা, পড়ুয়া ছেলে বাড়িতে, যাদের দেখভাল করার মানুষ একমাত্র আমি-ই। সেই আশাও অধরা রইল। ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা যেদিন শেষ, সেদিনই যোগ দিলাম নতুন জেলায়।

    আরও পড়ুন : সংবাদ জোগাড়ের পথে ফুলও যেমন আছে, কাঁকরও আছে! ‘বাধা পেরনোর গান’-এ লিখছেন তপশ্রী গুপ্ত…

    একদিন একদিন করে যেতে যেতে বারুইপুরে পাঁচ বছর থাকলাম। মহিলা থানা সম্পর্কে মানুষের ধারণা অস্পষ্ট ছিল, আমারও। ভাবনাচিন্তা শুরু করলাম, কী কী করা যায়, কত বেশি পরিষেবা দেওয়া যায়। যাদের জন্য মহিলা থানা, সেই শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের কতটা বুক দিয়ে আগলানো যায়। কখনও স্কুল-কলেজে স্বয়ংসিদ্ধা ও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ, তো কখনও সদ্য স্বামী-পরিত্যক্তা বধূকে স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ। কখনও কোভিড-আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা তো কখনও মেয়েদের সুগার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের সচেতনতা বৃদ্ধি। কখনও ত্রাণ নিয়ে ঝড়ে বিপর্যস্ত সুন্দরবনের মানুষের পাশে তো কখনও ঘর খোয়ানো, কাজ-হারানো হাজার হাজার মানুষের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে পথে। কখনও সুন্দরবনের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের দিয়ে ম্যানগ্রোভ রোপণ, প্লাস্টিক বর্জন, তো কখনও আগামীর নাগরিকদের জন্য স্কুলে স্কুলে মানব পাচার-বিরোধী প্রশিক্ষণ। হয়তো পেরে উঠিনি সবটা, ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু চেষ্টা করেছি আপ্রাণ। আমার থানায় এসে কেউ কোনওদিন পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যায়নি।

    বিশ্বাস অটুট, জীবনের মানোন্নয়ন ও সচেতনতা বাড়লে অপরাধ মানুষকে ছুঁতে ভয় পাবে। বারুইপুর ও কলকাতার প্রায় সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবসময় আমাকে উৎসাহিত করেছেন, সহকর্মীরা সব পাগলামির সঙ্গ দিয়েছে। শিশু অধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন, সমাজকল্যাণ দপ্তর, জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তর— সবার অকুণ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের চাকরিজীবন গতিশীল। সাধারণ মানুষের কাছে ভালবাসা আর বিশ্বাসটুকু অমলিন থাকলে ওটাই প্রাপ্তি, ওটাই ওষুধ, বিশল্যকরণী। কয়েক বছর পর যদি পুরনো জেলার পাড়ায় পাড়ায় খাকি পোশাকের মেয়ে পুলিশ তৈরি হয়েছে জানতে পারি, জানব আমার স্বপ্ন সার্থক হয়েছে।

    নদিয়া জেলার কয়েকটি জেনারেল থানায় ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার যেদিন থেকে মহিলা থানা তৈরি করেছেন, তখন থেকে আমার গন্তব্য মহিলা থানা আর সিআইডি। উদ্দেশ্য, শিশু মহিলা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সুরক্ষিত রাখা। কাজ করতে করতে কখন যেন মানব পাচার-বিরোধী তদন্ত ও কাজকর্মের সঙ্গে জুড়ে গেছি। ভাগ্যের পরিহাসে যে কিশোর-কিশোরী, মহিলা অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যায়, তাদের উদ্ধার করে এনে জীবনের মূল স্রোতে ফেরানোই যেন আমার জীবনের ব্রত হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ দরিদ্র পরিবারের শিশু, মহিলাদের বিশ্বাস অর্জন করে। এবং সুযোগ বুঝে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। এখনকার কিশোর-কিশোরীরা খুব কম বয়স থেকেই মোবাইল ব্যবহার করে পরিবারের বাইরে তার বন্ধুর বৃত্ত তৈরি করে ফেলে। তারা জানতেই পারে না, কখন অসাধু মানুষের দল তাদের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নজরদারি করে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। মিথ্যে কথা বলে, কাজের প্রলোভন দেখিয়ে, প্রচুর টাকা রোজগারের কথা বলে, লটারি জেতার নাম করে, ভালবাসার প্রস্তাব দিয়ে, বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, মডেলিং সিনেমার সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে তারা কিশোর-কিশোরী ও মহিলাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনে এবং তাকে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগায় ব্যক্তিগত উপার্জনের জন্য। হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের গন্তব্য হয় দিল্লি, মুম্বই, পুনে, মিরাট, রাজস্থান, কাশ্মীর— আরও নানা জায়গায় । এই মেয়েদের উদ্ধার করতে কতবার ছুটে গেছি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বাঘের গুহা থেকে শিকার ছিনিয়ে আনা সহজ কথা নয়। সঠিক পরিকল্পনা লাগে, বুদ্ধি লাগে, সাহস লাগে, আর লাগে ইচ্ছাশক্তি। ব্যাপারটা কখনওই গেলাম আর পাচার হওয়া মেয়ে তুলে নিয়ে চলে এলাম— এরকম নয়। শত্রুকে কখনও কমজোর ভাবতে নেই। আর মানব পাচারের কাজে যে সমস্ত মানুষ যুক্ত থাকে, তারা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ। সুযোগ পেলে শিকার বাঁচানোর জন্য তারা পুলিশ অফিসারের জীবন নিয়ে নিতেও পিছপা হবে না। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না, এমন সব অন্ধ গলি থেকে মেয়েদের উদ্ধার করে আলোর পথে নিয়ে এসেছি কতবার। অন্য রাজ্যে গিয়ে তদন্ত করতে সেই রাজ্যের পুলিশের সাহায্য লাগে, সমাজকর্মী বন্ধুদের সাহায্য লাগে। সেখানকার স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করা, হোটেলের ব্যবস্থা করা থেকে শেল্টার হোমের খোঁজ, কোর্টের তদারকি— সবটাই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রতি মুহূর্তে, পায়ে পায়ে, অনিশ্চয়তা ঝুঁকি। সংঘবদ্ধ অপরাধীর দল চারিদিকে ফাঁদ পেতে রাখে, একটু অসাবধান হলেই বিপদ। হয় তদন্তকারী অফিসার লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, আর তা না হলে সে বিপদে পড়বে। মেয়ে অফিসারের কাজ তখন কঠিন হয়ে যায়। উর্দি গায়ে থাকলে সে সহজেই চিহ্নিত হয়ে যাবে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি উড়ে যাবে। আর উর্দি গায়ে না থাকলে তাকেও নিশানা করা হবে।

    পুলিশের শনিবার নেই, রবিবার নেই, পরিবার নেই। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মোটা কাপড়ের শার্ট-প্যান্ট পরে, পায়ে বুট, মাথায় হেলমেট পড়ে যিনি চড়া রোদেও আপনার পথ চলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন— তিনি পুলিশ। রবিবার, ছুটির দিন, বাচ্চার জন্মদিন ভুলে যিনি আপনাকে যুবভারতীর মাঠ থেকে রাজনৈতিক মিছিলে, নিশ্চিত ঘুমের রাত থেকে ধর্মীয় শোভাযাত্রায় সুরক্ষিত রাখেন— তিনি পুলিশ। আপনারা তাকে অশিক্ষিত, অমার্জিত, অসৎ— নানারকম বিশেষণ উপহার দেন। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, ব্যর্থতা আছে, কিন্তু চেষ্টাও আছে। যাঁরা দশটা-পাঁচটার চাকরি করেন, তাঁরা এই কষ্ট বুঝতে পারবেন না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পরিবারের থেকে দূরে অন্য কোনও এলাকায় চাকরি করতে হয় আমাদের। ব্যারাকে থেকে, মেসে খেয়ে, চাকরিজীবনের সত্তর শতাংশ সময় চলে যায়।

    মেয়ে পুলিশের সমস্যা আরও বেশি। বাইরে ডিউটি করতে গিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত স্নানঘর না পেয়ে প্রাকৃতিক ডাক উপেক্ষা করতে করতে তারা রোগ বাধিয়ে বসে। টয়লেটে যাওয়ার সমস্যা থাকায় তারা জল কম পান করে। স্তনদানকারী পুলিশ মায়েদের কষ্ট আরও বেশি। আমি আবার সন্তানকে ছোটবেলায় কখনও কাছছাড়া করিনি। যেখানে পোস্টিং হয়েছে, সেখানে নিয়ে গেছি। বলা যায়, আমার ছেলের শৈশবের অনেকটা কেটেছে পুলিশ ব্যারাকে। বারবার স্কুল বদল হয়েছে। একান্নবর্তী পরিবার ভাঙতে ভাঙতে আজ আমরা সবাই অণু পরিবারের সদস্য। পুলিশ মা তার সন্তান আয়ার কাছে রেখেই কাজ করতে যায়। কাজের শেষে দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসে সন্তানের টানে। কিন্তু কাজের জায়গায় সে সন্তান নিয়ে এসে থাকবে, এমন পরিবেশ আজও তৈরি হয়নি। কোলের শিশুকে পিঠে বেঁধে কাজ করছে, এমন শ্রমজীবী মায়ের ছবি সমাজমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। পরিবারে চাকুরিজীবী মেয়েরা আজও সেই সম্মান পান না, যা একজন পুরুষ পায়।

    সংঘবদ্ধ অপরাধীর দল চারিদিকে ফাঁদ পেতে রাখে, একটু অসাবধান হলেই বিপদ। হয় তদন্তকারী অফিসার লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, আর তা না হলে সে বিপদে পড়বে। মেয়ে অফিসারের কাজ তখন কঠিন হয়ে যায়। উর্দি গায়ে থাকলে সে সহজেই চিহ্নিত হয়ে যাবে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি উড়ে যাবে। আর উর্দি গায়ে না থাকলে তাকেও নিশানা করা হবে।

    আমি-ই সেই পুলিশ, যাকে বিদ্বজনের সমাজ অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে। যাকে নিয়ে সিনেমা, নাটকে হাস্যরস পরিবেশন করা হয়, যাকে খাকি পোশাক পরার পর থেকেই শুনতে হয়, সে ঘুষখোর ও হৃদয়হীন। আমি সেই পুলিশ, যাকে আপনারা গালি দেন, শুনতে হয়, আমার নাকি শিক্ষা-সংস্কৃতি বলে কিছুই নেই। দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয় আর দরকারের সময় বাড়ি যেতে পারি না বলে আমাকে পরিবারের অনেক মানুষ পছন্দ করেন না। আমি আনন্দের সময়ে, উৎসবের দিনে, পরিবারের পাশে থাকতে পারিনি। সারারাত ডিউটি করেছি সন্তানকে ফেলে রেখে, ঠিকমতো বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি, কত আত্মীয়ের বিয়ের সময় ছুটি-ই পাইনি। বন্ধুরা পিকনিক করলেও কোনওদিন পৌঁছতে পারিনি সময়মতো। তাতেও আপনারা বলেছেন আমি নাকি ইচ্ছে করেই ঘটনাস্থলে দেরি করে যাই। আর যা কিছু খারাপ হয়, সব নাকি আমি ইচ্ছে করে করি। আপনারা মানতেই চান না যে, আমারও পেরে ওঠার একটা সীমা আছে। আমি কঠোর হলে আপনাদের শ্লাঘায় বাধে, আমি কোমল হলে আপনারা আমাকে অযোগ্য ভাবেন। আমি অশিক্ষিত, অসামাজিক হতে পারি আপনার চোখে, আপনার ছোড়া ঢিলে আহত হতে পারি, আপনার কথার তীক্ষ্ণ ফলায় ব্যথিত হতে পারি, কিন্তু আপনার বিপদে আপনাকে ফেলে চলে যাব না। যতক্ষণ না মৃত্যু নেমে আসছে, আমার প্রতি রক্তকণিকা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। আমি দায়বদ্ধ। আমি গর্বিত, আমি পুলিশ।

    খাকি ভরসার রং। বিপদগ্রস্থ মানুষের আস্থার রং। খাকি রঙের এক অদ্ভুত মাদকতা আছে। ছাপোষা গৃহস্থ মানুষও খাকি পোশাক পরে নিমেষে পরাক্রমশালী হয়ে ওঠে। এই পোশাক পরলে সবাই জওয়ান। কত অনায়াসে জীবন-মৃত্যুর বাজি ধরা যায়। খাকি পোশাকের বোতাম বন্ধ করলেই ব্যক্তিগত অনুযোগ, ক্ষোভ, অপ্রাপ্তি, প্রতিবাদ চাপা পড়ে যায় কর্তব্যবোধের আড়ালে। খাকি পোশাক মানেই তুমি ব্যক্তিমতের ঊর্ধ্বে সরকারের লোক। তুমি গালি খাবে, ঢিল খাবে, মার খাবে, সব সহ্য করবে, লড়ে যাবে, কিন্তু পালিয়ে যাবে না। খাকি পোশাক মানে তোমার সরকারি ছুটি নেই, নির্দিষ্ট সময়ে পেটে ভাত বা রুটি নেই, কাজের নির্দিষ্ট নির্ঘন্ট নেই, শনিবার নেই, রবিবার নেই , পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় নেই। খাকি রং মানে সংযম। খাকি পোশাক পরলে আবেগের স্ফূরণ নেই। এই পোশাক পরে হা হা হাসতে নেই, অঝোর কাঁদতে নেই, শুধু নিজের কাজকে ভালবাসতে হয়। খাকি রঙ মানে শৃঙ্খলা। এই পোশাক পরলে আদেশে-নির্দেশে ‘না’ বলতে নেই । রাজদ্বার ,আদালত, প্রেক্ষাগৃহ, সর্বত্র প্রবেশের চাবিকাঠি এই খাকি রং। খাকি পোশাক পরলে জীবিত অবস্থায় সমালোচনা, আর শহিদ হলে সহানুভূতি। খাকি রং, তোমাকে কুর্নিশ, তুমি আমার অন্নদাতা। তোমাতে মন চুবিয়ে আমাদের নিরন্তর বয়ে যাওয়া, নতুন নতুন পরিস্থিতিতে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করা। খাকি রং, তোমাতে আমার বসত, তোমাতে আমার বৈরাগ, তোমাতে আমার প্রেম, তোমাতেই সমর্পণ। তোমার কতটুকুতে আমি আছি জানি না, আমার সবটুকু জুড়ে তুমিই আছ।

    ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়েছি পুলিশ সমাজ-বন্ধু। কিন্তু ডিউটি করতে গিয়ে আমরা সমাজের থেকে বন্ধুসুলভ আচরণ খুব কমই পাই। সাত দফা ভোট করতে যে পুলিশকর্মী চোদ্দ থেকে আঠারো ঘণ্টা ডিউটি করছে, তিনি পানীয় জলটুকু পেলেন কি না খোঁজ নিলে, অথবা প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে একবার ধন্যবাদ জানালে, বৃষ্টি না হলেও, আবহাওয়া বদলাবে সমাজের।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook