ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ‘ম্যানিফেস্টো’ এবং...

    অজয় গুপ্ত (February 21, 2025)
     

    গত শতকের পাঁচের দশকের একেবারে শেষে, প্রেসিডেন্সি কলেজের রেলিংয়ে আমি যখন কাঠের ব্লকে ছাপা ভুল বানানে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিকেস্টো’ বইটি দেখি, তখনও পর্যন্ত মূল বইটি চাক্ষুষ না করলেও তার বিশ্বজোড়া খ্যাতির কথা শুনেছি। কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন কলেজ পত্রিকার সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে এস.ইউ.সি. পরিচালিত ছাত্র-ইউনিয়নের এক্স-অফিসিও মেম্বার হওয়ায় ওই বামপন্থী দলটির সঙ্গে না-চাইলেও কিঞ্চিৎ চেনা-পরিচয় হয়েছিল— সম্ভবত ওদের কাছ থেকেই মার্কস-এঙ্গেলস প্রণীত চটি বইটির কথা শুনে থাকব।

    ছয়ের দশকের গোড়ায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র সাক্ষাৎ মন্ত্রশিষ্যদের দেখলাম। এরা অদ্ভুত এক প্রজাতি— সবাই এক সুরে কথা বলে, এক ভাষায় কারও নামে জয়ধ্বনি দেয়, এক ভাষায় মুন্ডুপাত করে।

    ওই সময়ে একটা অঘটন ঘটল। চিন-ভারত যুদ্ধ বেধে গেল। যুদ্ধ থামল। কয়েক বছরের মধ্যে (১৯৬৪) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি দু’টুকরো হল। এক দল সাবেক সি.পি.আই. নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুগামী হয়ে রইল। অন্য দল চিনের ভক্ত হয়ে মার্কসবাদকে ব্র্যাকেটে (M) রেখেই কমিউনিস্ট পার্টি করতে লাগল। এরাই দলে ভারী।

    আরও পড়ুন : বাংলাদেশে কি মুজিব-আমল থেকেই উত্তপ্ত? লিখছেন অর্ক ভাদুড়ী…

    ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি আমি কলকাতার সোভিয়েত দূতস্থানের বার্তা বিভাগে চাকরি পেলাম। এখানে দু’ধরনের কমিউনিস্টরাই আমার মতো অ-কমিউনিস্টদের সহকর্মী হল। ব্র্যাকেটে মার্কসবাদী বা চিনাপন্থীদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, এরা তাত্ত্বিকভাবে একবগ্গা। নতুন কোনও চিন্তাভাবনা সেখানে ঢোকার জায়গা নেই। রুশপন্থীদের মস্তিষ্ক ইটের। জলে ভিজিয়ে রাখলে একটু-আধটু অন্যরকমের কথা ঢুকলেও ঢুকতে পারে।

    ‘কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘শোধনবাদ নিপাত যাক’, ‘তোমার নাম আমার নাম, ভিয়েতনাম-ভিয়েতনাম’— উভয় দলের মুখের লব্জ। এরা উভয়েই পার্টি থেকে যে-মন্ত্রটি শিখেছে তা হল, পৃথিবীর যেখানে যত অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার হয়ে চলেছে, তার বিরুদ্ধে সমস্বরে গর্জে উঠতে হবে। কিন্তু পার্টির মধ্যে যদি কোনও অন্যায়-অবিচার দেখা যায় (যেহেতু প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটি মস্তিষ্ক আছে, কাজেই মাথা বাঁধা না দিলে কোনও বিষয়ে তার নিজস্ব ভাবনাচিন্তা জাগতেই পারে), তাহলে মুখ বুজে পার্টি-লাইন সমর্থন করে যেতে হবে। প্রস্তাব পেশ হলে হাত তুলে সমর্থন জানাতে হবে। unanimous— সর্বসম্মত!

    ‘কলকাতা ৭১’ ছবির দৃশ্য

    ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৪ সালে দু’ভাগ হল ‘মডেল’ বিতর্ককে কেন্দ্র করে। এক দল ‘সোভিয়েত’ মডেল আঁকড়ে রইলেন। অন্য দলের ধ্যানজ্ঞান ‘চিন’-এর মডেল। ‘ভারতীয়’ মডেলের কথা কেউ ভাবলেন না। অথচ ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’তে সব দেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনও মডেলের সুপারিশ করা হয়নি। গত শতকের শেষ দিকে এখানকার এক প্রকাশক আমাকে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ বাংলায় তরজমা করতে বলায়, দেখেছি ওখানে কতকগুলো কর্মপদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, যেগুলো দেশভেদে ভিন্ন-ভিন্ন হবে— অর্থাৎ, কোন কর্মপদ্ধতি কোন দেশের পক্ষে সমীচীন হবে, তা নির্ধারণ করবে সে-দেশের ভূগোল-ইতিহাস-বাসিন্দাদের জীবনযাপন, তাদের বিশ্বাস, আচার-বিচার—এক দর্জির তৈরি করা এক মাপের একটি পোশাক সকল দেশের মানুষের গায়ে পরিয়ে দিলে হবে না।

    বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টরা ম্যানিফেস্টো-বিরোধী ঠিক এই কাজটা করতে গিয়েই সারা বিশ্বে প্রায় অপাঙক্তেয় হতে বসেছে। তার কারণ, শিল্পবিপ্লবজাত মার্কসবাদকে আইটি-বিপ্লবজাত দুনিয়ার উপযোগী করে তোলার দায়িত্ব ছিল মার্কসবাদীদেরই। সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলন মার্কসবাদকে যুগোপযোগী করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাদের অনুগামীদের কেবল একটার পর একটা স্বপ্ন দেখায়, শেষ পর্যন্ত পরিণত বয়সে এসে এককালের আগুনখেকো বিপ্লবী কমরেড বাক্যহারা শয্যাশায়ী হন। এবং অপূর্ব স্বপ্ন নিয়ে বিদায় নেন।

    আমার শ্রদ্ধেয় বেশ কয়েকজন কমিউনিস্টকে বসে যেতে দেখেছি। অনেক অনুরোধ করেছি, ‘আগামী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য অন্তত কিছু লিখে রেখে যান!’ হতাশ গলায় কান্নার মতো হেসে বলেছেন: কে পড়বে? কে শুনবে? আর জানো তো, ‘আকাশে ফেলিলে থুতু পড়ে নিজ গায়ে!’

    ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৪ সালে দু’ভাগ হল ‘মডেল’ বিতর্ককে কেন্দ্র করে। এক দল ‘সোভিয়েত’ মডেল আঁকড়ে রইলেন। অন্য দলের ধ্যানজ্ঞান ‘চিন’-এর মডেল। ‘ভারতীয়’ মডেলের কথা কেউ ভাবলেন না। অথচ ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’তে সব দেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনও মডেলের সুপারিশ করা হয়নি।

    মার্কসবাদে সরাসরি ভাগ— বুর্জোয়াজি এবং প্রলেতারিয়েত। আমাদের সমাজে তাদের মধ্যেও নানা রকম ভাগ। পাঁচ-ছ’রকম ব্রাহ্মণ। নমঃশূদ্রদের মধ্যেও ভাগাভাগি। এক নমঃশূদ্র রাঁধুনির রান্না করা মিড-ডে মিল অন্য নমঃশূদ্র ছাত্র ছোঁয় না— খাওয়া তো দূরস্থান! একজন বড় মাপের প্রবীণ মার্কসবাদী নেতা সংশ্লিষ্ট গ্রামে গিয়ে সকলের সঙ্গে পঙক্তিভোজে বসে মিড-ডে মিল খেয়ে শেখালেন— জাতপাত ভুলে যাও! ছাত্ররাও ভুলে গেল। পার্টিরও কর্তব্য ওখানেই শেষ। জাতপাত ভ্যানিশ!

    আমরা যে-রাজ্যে বাস করি, সে-রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত কয়েকটি অন্তর্বর্তী বিধানসভা নির্বাচনে সি.পি.আই.(এম) ‘নোটা’র চাইতেও শতাংশের হিসেবে কম ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত জব্দ হয়েছে। সি.পি.আই. নির্বাচনে লড়েইনি।

    যদি কেউ মনে করেন, গরানহাটার অজ্ঞাত দারুশিল্পী ‘ফ’ বর্ণটি অনবধানে ‘ক’ বর্ণের মতো খোদাই করে মার্কস-এঙ্গেলসকে অবমাননা করেছে, তাহলে জেনে রাখবেন, বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদীরা সমবেতভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে তাদের অনেক বেশি অপমান করার অপরাধে অপরাধী!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook