শীতের নদীতে ভরদুপুরেও কুয়াশার একটা হালকা সর ভেসে থাকে। সেই কুয়াশায় বিচ্ছুরিত দৃশ্যাবলি স্বাভাবিক তীক্ষ্ণতা ঝেড়ে ফেলে বেশ একমাত্রিক ও নমনীয় হয়ে ওঠে। সেকালে তথ্যচিত্রের সর্বস্ব যেমন মুড়ে দেওয়া হত একরকম সরল এবং স্পষ্ট প্রজ্ঞাপনে, যা দেখলে মনে হতেই পারে তথ্যর একস্তরীয় দৃশ্যরূপের আড়ালে অন্য কোনও স্তর থাকতেই পারে না, কুয়াশার ছবিও ঠিক তাই। এই ছবিতে সময়ের টানাপোড়েন নেই, দৃশ্যবিচ্যুতির সংকেতটুকুও নেই, বোধ ও ব্যাখ্যার রকমফের নেই। এ শুধু দূরবর্তী সময়ের একটা ঝলক— স্থির এবং স্থবির। দানিয়েলি চাচা-ভাইপোর ক্যানভাস যেন। নান্দনিকতার ব্যাকরণে এই দৃশ্যরূপকে এখন বলা হচ্ছে, ডেড-প্যান। নতুন যমুনা ব্রিজ, স্বাভাবিকভাবেই যার এখন নাম ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সেতু, সেখান থেকে নিচে কুম্ভমেলার প্রগাঢ় বিস্তার দেখলে প্রথমেই একদলা কুয়াশার ছাঁকনি চোখে পড়ে। এরপর ক্রমশ ছেঁকে বের হয়ে আসে লোহার ফাঁপা ক্যাপসুল ভাসিয়ে তৈরি করা সার সার পনটুন ব্রিজ, বালির ওপর হাজার হাজার ছাউনির ছাদ, যজ্ঞের ধোঁয়ার আভাস, নদীর থমকানো স্রোত, সাময়িক দেবস্থানের পাঁচমিশালি চুড়ো, খেলনা মানুষের নগন্য চলন। অর্থাৎ, ভাব-খোয়াবি চোখে যা কিনা সটান দিগন্ত অবধি গড়ানো সাবেক ভারতবর্ষের জাদুরূপ বলে মনে হতেই পারে। অস্পষ্ট, নির্বাক ও দূরবর্তী এই কুয়াশা-প্রক্ষেপিত ছবি কি কখনও ভেজা, বাস্তব বালির শীত শরীরে চারিয়ে দিতে পারে? এর নান্দনিকতা মৃত নয়?
যদিও ২৪ বছর আগে এই কুয়াশার মোড়কের আড়াল নিয়েই আমি এলাহাবাদের— বা, স্বভাবতই, যা এখন প্রয়াগরাজের— কুম্ভের এক্কেবারে আত্মস্থ কিছু দৃশ্যের জঠরে ঢুকে পড়তে পারি। সেদিন স্নানযাত্রা। মাঝরাত থেকে অগণন আগুন ঘিরে আপামর মানুষ ভক্তিরস সেঁকছে। নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ায় আখড়ায় সেজে উঠছে মহন্তর ঘোড়া। ধুনির নতুন ছাই শরীরে চাপড়ে চেলারা প্রভুদের একরকম আবছা, অশরীরী আকার দিচ্ছেন। জটার খাঁজে খাঁজে সাবধানে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাটকা গাঁদাফুল। রাতজাগানো গাঁজার ধোঁয়ায় স্বপ্লালোকিত কুঠুরিগুলো প্রায় অন্ধকার। দিগ্বিজয়ে বেরনোর আগে স্নায়ু টানটান, তাই প্রভুরা মুখখারাপ করছেন হরবখত। চিমটা ও লাঠির ঘাও পড়ছে সপাসপ। কোথাও একটা নাকাড়া বিলম্বিত লয়ে রাত্রিকে সজাগ রাখছে।
আরও পড়ুন : একা একাই কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন নবনীতা দেবসেন…
বালির ওপর লোহার পাত ফেলে তৈরি হয় কুম্ভমেলার সড়ক। যে সড়ক ধরে সন্ন্যাসীরা স্নানে যাবেন, তার দু-পাশে বাঁশের পোক্ত ব্যারিকেড। পুণ্যাত্মাদের একটু কাছ থেকে দেখার আশায় সেই বাঁশে নাক ঠেকিয়ে মধ্যরাতের শীতে কাঁপছে পরিবারের পর পরিবার, গ্রামের পর গ্রাম। ধুলোমাখা আলোয়ান-কম্বল পিঠের বোঁচকা কাঁখের সন্ততি সোডিয়াম ভেপারের চড়া আলোয় একরঙা ও পিণ্ডাকার হয়ে যেন ঘুমন্ত অজগরের মতো সড়কের দুই পাশে বিছিয়ে রয়েছে। ভোরের শব্দব্রহ্মে এই অজগর জাগবে? বুকের নিচে বালি মন্থন করে পুরাণের ভারতবর্ষকে তুলে নিয়ে আসবে এই একবিংশ শতাব্দীতে?
বাঁশের ব্যারিকেড শেষ হয়েছে স্নানঘাটের দুশো মিটার আগে। এবার পুরো সড়ক বন্ধ করে পুলিশের শরীরী ব্যারিকেড। নিশ্ছিদ্র। প্রায় গোটা পৃথিবীর মিডিয়া কন্টিনজেন্ট আটকে পড়েছে এই ব্যারিকেডে। ঝাঁঝালো তর্কাতর্কি চলছে, কিন্তু পুলিশ-প্রাচীর অটল। নাগারা তাদের নিষ্কলুষ শোভাযাত্রায় জামা-প্যান্ট পরা ঐহিক উপস্থিতি একেবারেই সহ্য করতে পারে না, খুনজখমও করে ফেলতে পারে। তাই এই সতর্কতা। ঘণ্টাখানেক অসার বাগবিতণ্ডা হজম করে সরে পড়ব কি না, ভাবছি যখন, ঠিক তখনই চতুর্দিক তোলপাড় করে বাঁধ ভাঙার শব্দ উঠল। জেগেছে অজগর?
জুনা আখড়ার পদাতিক নাগাদের একটা বড় দল চোখের পলক ফেলার আগেই ছিটকে এল। মোক্ষম সময়বোধে পুলিশের ব্যারিকেড ডিজল্ভড হয়ে গেছে, নচেৎ প্রথম ধাক্কাতেই পুলিশেরও সংগমস্নান ছিল নিশ্চিত। দূরে তাকিয়ে দেখলাম, নদী থেকে উড়ে আসছে ঘন কুয়াশার চাদর, আর সেই কুয়াশাতেই যেন মিলিয়ে গেল নাগা-রা। শব্দময় আবছায়ায় কিছুক্ষণ ঝুলে থাকল জটা থেকে ছিঁড়ে শূন্যে উড়িয়ে দেওয়া গাঁদাফুল, বাতাসে আলগা হওয়া শরীরী ছাই। দ্বিতীয় দলটাও আবছা হয়ে এল এবং বিলীন হল। তৃতীয় দল আসার আগেই দেখলাম, কুয়াশার পেটে আমরা সবাই— দুই ফুট দূরত্বেও কেউ স্পষ্ট নই। একটুও সংকোচ না করে, বন্ধু সৈকতকে টেনে নিয়ে, দুই বাঁশের ফাঁক গলে টপকে এলাম ব্যারিকেড। ভেসে গেলাম তৃতীয় দলের ঢেউ-এ। দৌড় আর দৌড়। সামনে অশ্বারূঢ় কোনও মহন্তর কুয়াশামূর্তি। লোহার সড়কে ঘোড়ার খুরের শব্দটুকুই যেন সামগ্রিক দৃশ্যহীনতার মধ্যে একমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তব। থামলাম একেবারে নদীর পাড়ে এসে। আমাদের দু-দিক দিয়ে বন্যার জলের মতো উলঙ্গ মানবশরীর ঝাঁপিয়ে পড়ছে সংগমে। প্রথম আলোয় ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে অন্ধকার। নদীর মধ্যে অসংখ্য জটার উন্মত্ত দোলনে ষ্ফটিকের মতো ঝিকিয়ে উঠছে জলবিন্দু। ছাই ধুয়ে যাওয়া কাঁচা চামড়ায় ছোবল মারছে পৌষের শীত। আগুন জ্বলে উঠছে যেখানে-সেখানে। দু-জনের দু-পকেটে যত সিগারেট ছিল, বিলি হয়ে গেল মুহূর্তে। ধোঁয়া-আলো-কুয়াশা-আগুন-প্রাকৃত মানবশরীর মেশানো দৃশ্যের অলীক ভাঙন আত্মস্থ করলাম ঘণ্টাখানেক ধরে। ঘোর ভাঙল কাঁধে আলতো টোকা পড়ায়। স্বয়ং এসপি। “ইউ লাকি চ্যাপস। নাউ দিস স্পেল উইল ব্রেক। প্লিস রিট্রিট!”
ফেরার পথে সৈকতই প্রথম মুখ খুলল— ‘সিগারেট কেন, এ জিনিস দেখার জন্য হর্ষবর্ধনের মতো জামা-প্যান্ট বিলিয়ে দিয়ে ইয়ে হয়ে যেতেও আমার কোনও আপত্তি নেই। তোমার আছে?’
২
সপ্তম শতকের গোড়ায় প্রয়াগের যে মেলায় হর্ষবর্ধনের পরনের কাপড়টুকুও দান করে ‘ইয়ে’ হয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন হিউয়েন সাঙ, সেই মেলাকে তিনি বলেছেন মাঘ মেলা। কুম্ভমেলা নয়।
কামা ম্যাকলিন (Kama Maclean) তাঁর ‘Pilgrimage and Power: The Kumbhamela in Allahabad’ বইতে স্পষ্ট লিখছেন ভারতীয় এবং অ-ভারতীয় অজস্র নথিপত্র ঘেঁটেও তিনি ১৭৬৫ সালের আগে প্রয়াগের মেলাকে কোথাও কুম্ভমেলা হিসেবে উল্লিখিত হতে দেখেননি।
১৬৯৫ সালে ফার্সিতে লেখা ‘খুলাসাৎ-উৎ-তহরিখ’ (স্যর যদুনাথ সরকারের অনুবাদ ‘The India of Aurangzeb’) বা আরও পরের ‘চাহার-ই-গুলশন’— দুই-ই মুঘল শাসনব্যবস্থার প্রামাণ্য বই। এই দুই বই-এর কোথাও এলাহাবাদ, নাসিক ও উজ্জয়িনীর মেলাকে কুম্ভমেলা বলা হয়নি। এলাহাবাদের মেলাকে বলা হয়েছে মাঘ মেলা। নাসিক ও উজ্জয়িনীর মেলা স্রেফ সিমহস্ত মেলা। ‘কুম্ভ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে একমাত্র হরিদ্বারের মেলার অনুষঙ্গে। অন্যত্র নয়।
ইতিহাসের— মানে বুদ্ধিগ্রাহ্য ইতিহাসের, ভাববোধ্য পুরাণের নয়— ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যায়, এই ‘কুম্ভ’ শব্দটা মেলার একটি অভিজ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নয়। যে কোনও অভিজ্ঞান যেমন রাজনৈতিক কারণপ্রসূত, কুম্ভও তাই। কামা ম্যাকলিন তাঁর বইতে ‘পিলগ্রিমেজ’-এর সঙ্গে ‘পাওয়ার’ শব্দটা এমনি এমনি জোড়েননি। সংগত কারণ আছে।
বহতা নদী ও রমতা সাধুর কোনও কলঙ্ক নেই বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাস ভুঁইফোঁড় নয়। ভারতীয় সংস্কৃতির মূল ধর্মই হল সংশ্লেষ। নদীমাতৃক দেশে— যেখানে নদীপথে ভেসে আসা বণিকের সপ্তডিঙা আবহমানকাল ধরে বহন করেছে বহুবিধ ভিন্ন সংস্কৃতির উপাদান— সেখানে নদীকে যে নিষ্কলুষ ভাবা হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তেমনই রমতা সাধু হলেন সংস্কারহীন সেই মানুষ— যিনি সতত পরিযানে নিজের মধ্যেই সংশ্লেষ ঘটান নানা মত ও নানা পথের। এই বহতা নদী ও রমতা সাধুর পিরিওডিক কক্ষমিলন জনবিস্ফোরণের মাধ্যমে উদযাপিত হয় এই দেশের মেলায়। চিরকাল নানক-কবির-চৈতন্যর সমন্বয়বাদী যে ঔদার্য এই দেশের আত্মা বললে আত্মা, শরীর বললে শরীর— তাই বহতা নদী ও রমতা সাধুকে নিষ্কলুষ করেছে। এই মেকানিজমে দৈব কোনও ইশারা অন্তত আমার তো চোখে পড়ছে না। সবটাই বেশ অঙ্কের নিয়মে সিদ্ধ। এই নৃতাত্ত্বিক নিয়মে প্রত্যক্ষ রাজনীতি এসে পড়ল অষ্টম শতাব্দীতে। আদি শঙ্করাচার্য আসরে নামার পর।
বৌদ্ধদের সাংগঠনিক কাঠামোগত শক্তিকে পালটা জবাব দিতে শঙ্করাচার্য হিন্দুধর্মকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান। তার রিফর্ম-এর মূল ধারা ছিল রেজিমেন্টেশন। শঙ্করাচার্যই প্রথম একশ্রেণির ইন্দ্রিয়বোধহীন, সংকোচহীন আখড়াবাসী যোদ্ধার কথা ভাবেন, যারা আত্মভোলা আনুগত্যে নিয়োজিত হবেন হিন্দুধর্ম রক্ষার লড়াই-এ। এরাই পরবর্তী যে-কোনও কুম্ভমেলার তর্কাতীত প্রাণ— নাগা-সন্ন্যাসী। স্তরবিভক্ত হিন্দু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে, এবং নতুন নাগা-সৈন্য নিয়োগ করতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর কনফারেন্স বসতে থাকে হরিদ্বারে। পুণ্যের লোভে বহু সাধারণ মানুষ সেই সম্মেলনে হাজির হওয়া শুরু করতেই তা ক্রমশ মেলার আকার নেয়। হরিদ্বারের এই মেলাই আদি এবং অকৃত্রিম কুম্ভমেলা। যদিও সেই মেলার বয়সও ১২০০ বছরের বেশি নয়।
মুঘলদের শেষ অবস্থায় এ-দেশে রাজনীতির নির্ণায়ক মারাঠা শক্তি নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরের সিমহস্ত মেলাকে কুম্ভমেলার কৌলীন্য আরোপ করে। আরও পরে, ১৭৪০ নাগাদ, সিন্ধিয়া পরিবারের রণজি সিন্ধে যখন ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তখন তিনি ত্রিম্বকেশ্বরে একত্রিত হওয়া সন্ন্যাসীদের নিজের শহর উজ্জয়িনীতে আমন্ত্রণ জানান ও সেই জমায়েতকে অবলীলায় ‘কুম্ভমেলা’ বলে চালিয়ে দেন। এর আগে-পরে অন্য কোনও রাজনৈতিক সমীকরণে হিউয়েন সাঙ বর্ণিত প্রয়াগের মাঘ মেলাও ‘কুম্ভ’-র তকমা পায়। বিশ্বাসের খোলস ছাড়ালে হাতে যা থাকছে, তা কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক ডায়নামিকস-এর ফুটপ্রিন্টস ছাড়া আর কিছুই নয়। এ -দেশে মানুষের ধর্মবিশ্বাসের ভিতটাই নির্ভেজাল রাজনীতি।
মাত্র ২৪ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ— ‘Soldier Monks and Militant Sadhus’। লেখক উইলিয়াম আর পিনচ (William R. Pinch)। এই প্রবন্ধ বহুজনের বহুকালের ভাববাদী ঝোঁক এক থাপ্পড়ে ভুলিয়ে দিতে পারে। এখানেই জানতে পারি, ১৮৯১ সালে কলকাতায় আসেন স্কটিশ মিশনারি জন নিকোল ফারক্যুয়ার (John Nicol Farquhar)। ১৬ বছর কলকাতায় কাটান ফারক্যুয়ার। আর এই পুরো সময়টাই গভীরভাবে চর্চা করেন এদেশের হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়গুলোর ইতিহাস। এই সম্প্রদায়গুলোর প্রায় প্রত্যেকটির মধ্যেই উগ্র সামরিক ঝোঁক কেন, সেই কারণ সন্ধানে ফারক্যুয়ার পরবর্তী ১৩ বছর চষে ফেলেন গোটা দেশ। ১৯১৮ সালে এলাহাবাদের কুম্ভমেলায় দেড় মাস তিনি কাটিয়ে দেন, পর্যায়ক্রমে, শৈব দশনামী ও বৈষ্ণব রামানন্দী সম্প্রদায়ের সাধুদের মধ্যে। প্রায় তিরিশ বছরের অধ্যয়ন ও ক্ষেত্রগবেষণার নির্যাস হিসেবে ফারক্যুয়ার লেখেন ‘Modern Religious Movements in India’.
হিন্দুধর্মে মিলিটান্সির গোড়া খুঁজতে ফারক্যুয়ার তাঁর বইতে উত্তর ভারতে সম্প্রদায় নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত ৪৫০ বছর আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঝোঁক বিচার করলে এই ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলাই হয়তো সংগত। যাই হোক, সাধুদের ওই মৌখিক ইতিহাস ভিনসেন্ট স্মিথ রচিত বাদশা আকবরের জীবনীর লিখিত বয়ানের সাহয্য নিয়েও প্রতিষ্ঠা করেন ফারক্যুয়ার।
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি মুসলমান ফকিরদের ক্রমাগত আক্রমণে নিরস্ত্র ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীরা বিপুল সংখ্যায় প্রাণ হারাচ্ছিলেন। ১৫৬৫ সালে মধুসূদন সরস্বতী নামের দশনামী উপসম্প্রদায়ের এক শৈব সাধু এর বিহিত চাইতে আকবর বাদশার কাছে আসেন। বীরবলের উপস্থিতিতে দু-জনের সাক্ষাৎ হয়। বীরবলই প্রস্তাব করেন ফকিরদের হামলা ঠেকাতে দশনামীদেরও উচিৎ অব্রাহ্মণ— এবং যুদ্ধ করতে জানে এমন বর্ণের বহু মানুষকে সন্ন্যাস দিয়ে নিজেদের দলভুক্ত করা। এই প্রস্তাব বাদশা আকবর সমর্থন তো করেনই, উপরন্তু প্রতিশ্রুতি দেন যে, যুযুধান সন্ন্যাসীরা ফকিরদের মতোই মুঘল ক্রিমিনাল আইনের আওতার বাইরে থাকবেন। এই এক সাক্ষাতেই হিন্দু ধর্মে শুরু হয়ে যায় এক নতুন ধারা, যাকে ফারক্যুয়ার বলছেন Military Monasticism। দশনামী ও অন্যান্য শৈব উপসম্প্রদায়ের ব্যাপক সামরিকীকরণ ‘লক্ষ’ করে ১৬০০ সাল নাগাদ রামানন্দী বৈষ্ণবরাও অস্ত্রধারণ করা শুরু করেন। এরপর ক্রমে নিম্বার্কী, বল্লভচারি, সৎনামী, দাদুপন্থী, বিষ্ণুস্বামী ইত্যাদি আবহমানকালের অহিংস ও জ্ঞানতাপস উপসম্প্রদায়ও নিজেদের শক্তিশালী সামরিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৯৯ সালে গোবিন্দ সিংহ খালসা সৈন্য তৈরি করলে নানকপন্থীরাও মূলত একটি যোদ্ধা ধর্মগোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। হিন্দুধর্মে কার্যত শুরু হয় সন্ন্যাসী সেনাদের শাসন।
এদেশে তীর্থপথগুলোর নিয়ন্ত্রণ বা বৃহৎ মেলাগুলোর আয়োজন— সবই মাত্রাতিরিক্ত মাশুল আদায়ের পথ খুলে দেয়। এভাবে উপার্জিত সম্পদে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই সন্ন্যাসী সেনাদের আখড়াগুলো হয়ে উঠল ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। কোনও রাষ্ট্রের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর অতি আবশ্যিক শর্ত তার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পুঁজির চলন। ১৭৪০ নাগাদ এই পুঁজি স্থানান্তরিত হত সশস্ত্র আখড়াগুলোর পরিযানের ফলেই। ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য যে নতুন শ্রেণিকে চিহ্নিত করেছিলেন স্লিম্যান এবং মার্ক্স, ভারতের সন্ন্যাসী সেনারা সেই একই ‘ইমার্জিং বুর্জোয়া’ শ্রেণিভুক্ত বলে দাবি করেছেন স্যর ক্রিস্টোফার বেইলি। অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা বা তা বজায় রাখার তাগিদেই এই সময় থেকে শুরু হয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের— বা একই সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপসম্প্রদায়ের— মধ্যে অবিরত সংঘর্ষ। শুধু তাই নয়, এই সময় থেকেই বিভিন্ন আখড়ার দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ‘মার্সেনারি’ বা ভাড়াটে সৈন্য হয়ে ধারাবাহিক যুদ্ধে অংশ নেওয়া শুরু হয়। দশনামী নাগা রাজেন্দ্রগিরি ও তার দুই সুযোগ্য শিষ্য— অনুপগিরি ও ওমরাওগিরি— সব যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীর কাছেই ছিলান সমান কাম্য মিত্রশক্তি। তাদের প্রায় বারো হাজার ১২,০০০ নাগা সৈন্যর ক্র্যাক ফোর্স মাত্র দুই দশকের মধ্যে— পর্যায়ক্রমে, মুঘল বাদশা, লখনউ-এর নবাব, জাঠ, মারাঠা, এবং, এমনকী, ব্রিটিশদের হয়েও যুদ্ধে নামে। মধ্য ও পশ্চিম ভারত জুড়ে রাজনীতির নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায় দশনামী নাগাদের সামরিক শক্তি। ওদিকে আবার স্বামী বালানন্দর নেতৃত্বে রামানন্দী বৈরাগীরা জয়পুর রাজ্যের হয়ে যুদ্ধ লড়ে প্রায় গোটা পূর্ব রাজস্থানের দখল নিয়ে নেয়। দার্শনিক বিতর্ক পুরোটাই সামরিক বৈরিতায় রুপান্তরিত হওয়ায় দেশ জুড়েই এক সামগ্রিক ঝাড়পিটের সংস্কৃতি কায়েম হয়। প্রায় প্রতিটি কুম্ভমেলা কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিতে থাকে। ১৭৬০ সালের হরিদ্বার কুম্ভ বা ১৭৮৯ সালের ত্রিম্বকেশ্বর কুম্ভ শৈব গোঁসাই এবং বৈষ্ণব বৈরাগীদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রাবল্যের জন্যই এখনও চর্চিত হয়।
মারাঠাদের পতনের পর উজ্জয়িনীর কুম্ভ আয়োজন করার ভার চলে যায় সিন্ধিয়া রাজপরিবারের হাতে। অর্ধেক খরচ বহন করে এই প্রথম ধর্মপ্রতিষ্ঠানগুলোর বদলে একটি রাজশক্তি মেলার সার্বিক পরিচালনভার ছিনিয়ে নেয়। বলা যায়, ঠিক এখান থেকেই সন্ন্যাসী সেনাদের ধর্মে একটি নতুন মাত্রা এসে মেশে— রাজদ্রোহ। আনন্দমঠের বিপ্লবী সন্ন্যাসীদের জন্মলগ্ন সূচিত হয়। ১৯২০ সালে নাগপুর কংগ্রেস চলাকালীন নাগা সন্ন্যাসীদের যে দলটি গান্ধির কাছে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আর্জি নিয়ে হাজির হয়েছিল, তারাও ওই একই গোত্রভুক্ত।
১৮১৩ সালে রাজা ভক্ত সিংহ-র এলাহাবাদ যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন কামা ম্যাকলিন। কুম্ভস্নানে রাজার শোভাযাত্রায় ছিল ১৭৫ অশ্বারোহী সৈন্য, ১১০ পদাতিক সৈন্য, ৪০ জন স্নাইপার, ৮০০ সহায়ক, ৪০টি পালকি, ২০টি গোশকট, ৫টি হাতি এবং ২৫টি উট। পুণ্যস্নানের নামে এমন কার্যত সেনাসমাবেশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যথেষ্ট সতর্ক রাখত। দাঙ্গাহাঙ্গামা ঠেকানোর অছিলায় তারাও মেলায় সৈন্য মোতায়েন করত ইচ্ছেমাফিক। এই সেয়ানে সেয়ানে ঠোকাঠুকি হিন্দু ধর্মগোষ্ঠীগুলোর তো বটেই, পুণ্যার্থীদেরও বৈরিতার অভিমুখ ব্রিটিশদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার মেলার পরিচালনভার সরাসরি নিজের হাতে তুলে নিলে কুম্ভমেলায় গোষ্ঠীসংঘর্ষ মোটামুটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ‘মিলিটারি মনাসটিসিজম’-এর অবদমিত ঝোঁক বিস্ফোরিত হতে না পেরে নিজের কাঠামোতেই আঘাত হানে। সরল ও রোমাঞ্চক মিলিট্যান্সির আপিল জনমানসে স্বভাবতই বেশি হওয়ায় মস্তিষ্কের চর্চা করা দণ্ডী সন্ন্যাসীরা শৈব নাগাদের আখড়ায় অপাঙক্তেয় হয়ে গেলেন। অতি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি ঘটল রামানন্দীদের মধ্যে। এই সম্প্রদায়ের রামানুজবিরোধী প্রধান মহন্ত— স্বামী ভগবতাচার্য দাবি করলেন, বিষ্ণুর অবতার হিসেবে ভগবান রামচন্দ্রকে অস্বীকার করে রামানুজিরা বৈষ্ণব ধর্মের মূলেই আঘাত করেছেন, তাই তাঁরা পরিত্যাজ্য। ১৯২১ সালের উজ্জয়িনী কুম্ভে এক তর্কযুদ্ধে ভগবতাচার্যের কাছে রামানুজিরা হেরে যান, এবং পরবর্তী কুম্ভমেলাগুলোয় তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। শেষ প্রতিরোধ উপড়ে যাওয়ায় উত্তর ভারতের প্রায় সব বৈষ্ণব প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নেয় একটি রামায়ণ কাল্ট। ভক্ত মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রে লালিত হতে থাকেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। অযোধ্যা তীব্রভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
১৯৮৯ সালের ৩১ জানুয়ারি, এলাহাবাদ কুম্ভমেলায় তাদের সম্মেলনমঞ্চ থেকে প্রথম রাম-জন্মভূমি দখল করে নেওয়ার ডাক দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সংসর্গ ও সমন্বয়ের ধর্ম ছেড়ে হিন্দু সংস্কৃতি পাকাপাকিভাবে বিপথগামী হয়। যৌথ সভায় সংঘর্ষের স্বরূপ স্পষ্ট করে দেন এক বক্তা—ভারতবর্ষের ছ-লক্ষ গ্রামের প্রতিটি গ্রাম যদি একটি করে ইট গিফট করে এবং আশি কোটি হিন্দুর প্রত্যেকে যদি এক টাকা করে চাঁদা দেয়, তাহলেই রামমন্দির তৈরি হয়ে যাবে। সে-বছরই আদবানির রথযাত্রা এই সংঘর্ষ মঞ্চ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে। এর তিন বছর পরেই কুম্ভমেলা বসে উজ্জয়িনীতে। এই সময়ের অন্যতম সমাজতাত্বিক ত্রিস্তফ জেফরেলট (Christophe Jaffrelot) তাঁর ‘Religion, Caste and Politics in India’ বইয়ে সেই মেলার রাজনৈতিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। সিন্ধিয়া পরিবারের প্রতিভূ হওয়ায় সেই বছর কুম্ভ আয়োজক কমিটির সভাপতি হন রাজমাতা বিজয় রাজে সিন্ধিয়া। যিনি আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৎকালীন সভাপতিও বটে। মেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একত্রিত করে বজরং দল, দুর্গা বাহিনি, গোরক্ষনাথ মঠের স্বামী অবৈদ্যনাথ (যিনি যোগী আদিত্যনাথের গুরুজিও বটেন), অশোক সিংঘল, করণ সিংহ এবং আরও অনেককে। ৩০,০০০ সাধুর উপস্থিতিতে মহাকাল মন্দিরে এক সন্ত সম্মেলনে এবার সরাসরি রামমন্দির নির্মাণের শপথ নেওয়া হয়। বর্ষার সময়টায় যে ‘চতুর্মাস’ পরিযায়ী সন্ন্যাসীরা আখড়ায় থাকতে বাধ্য হন, সেই সময়টা তাদের অযোধ্যায় গিয়ে জড়ো হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরের এই সমাবেশের ঠিক পাঁচ মাস কুড়ি দিন পরে ভেঙে পড়ে বাবরি মসজিদ। হিন্দু ধর্মের রেজিমেন্টেশন বা রিফর্ম, যাই বলি না কেন, তা এক চূড়ান্ত অসভ্য সভ্যতার সূচনা করে। বহতা নদী ও রমতা সাধু তাবৎ গীতিময়তা হারিয়ে ফেলে এখন কেবলমাত্র এক সহিংস সংস্কার— হিন্দুত্ব।
৩
আমি নাস্তিক ব্যক্তি। ঈশ্বরের স্বরূপ জানার বা তার মহত্ত্ব অনুভব করার কোনওরকম দায় কখনও বোধ করেছি বলে মনে তো পড়ে না। কুম্ভমেলা আমার কাছে একটা প্যারাডক্স বই অন্য কিছু নয়। তবু মনে হয়, মাঝে মাঝে বিভ্রান্তির আঁচে নিজেকে সেঁকে নেওয়া ভাল। চরাচর জুড়ে রূপক দৃশ্যকল্প ধেয়ে আসতে দেখেও মাটির শিকড় আঁকড়ে ধরে তা এড়িয়ে যেতে শেখা— ভাল। সমস্ত দৈব দৃশ্যবিচ্যুতির ভেতর থেকেও এমনি মানুষের প্রজ্ঞা-স্থিতি-আশ্রয়-বিলাপ অনেক সত্যি বলে চিনে নেওয়ার শিক্ষা কুম্ভমেলা আমাকে দিয়েছে। এখানেই ত্রিপলের ঘরে খড়ের বিছানায় কম্বল পেতে শুয়ে শুনেছি সারা রাত পর্যায়ক্রমে বেজে চলেছে শিশুর হারিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং লতা মঙ্গেশকরের গলায় ‘আল্লা তেরো নাম’। এই এলাহাবাদের কুম্ভেই কিন্নরদের আখড়ায় দেখেছি কীভাবে তাদের আরাধ্যা বহুচারী মাতা-র প্রাকৃত চেহারাকে লাল রঙে ছুপিয়ে আর্যায়িত সৌন্দর্যবোধের বিপরীত খসড়া খাড়া করার স্পর্ধা দেখানো হচ্ছে। এখানেই দেখেছি, বৈষ্ণব আখড়ায় বিভোর হয়ে মাদল বাজাচ্ছে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ বালক। দেখেছি একক নাগা সন্ন্যাসীর ধুনির পাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক চিতল হরিণ। জ্যান্ত। তবু সমাহিত।
২০১২ সালে এলাহাবাদের কুম্ভে ধুনির ছাই কপালে পরিয়ে এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী আমাকে বলেছিলেন এই ছাই— বা বিভূতি— না কি প্রতীক। মৃত্যুর প্রতীক। মানবশরীর অন্তিমে এসে পুড়ে ছাই হয়। যেহেতু সন্ন্যাস মানে জাগতিক জীবনের মৃত্যু, তাই সেই মৃত্যুকে উদযাপন করতে সন্ন্যাসী শরীরে ছাই মাখেন। শালপ্রাংশু এবং চিতাকাঠের মতো প্রোজ্জ্বল সেই সন্ন্যাসীর মৃত্যুবিলাস এখনও আমায় ভাবিয়ে তোলে। এতই কি অপাঙক্তেয় জাগতিক ক্ষুধা-তৃষ্ণা-ঘাম-কাম-প্রেম?
প্রয়াগের চরে শিব, দুর্গা ইত্যাদি সেজে সারাদিন ভিক্ষে করে বেড়াত তিনটে ছোট ছেলেমেয়ে। সস্তার রং বেলা বাড়লেই চামড়ায় টান ধরাত। খসখস করে চুলকোনোয় সেই রং আবার জায়গায় জায়গায় খসে গিয়ে বিসর্জিত প্রতিমার কাঠামো মনে পড়াত। একদিন বিকেলে ওদের পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম মেলার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে ওদের আস্তানায়। নোংরা নিকাশি নালার পাশে কয়েকটা ময়লা তাঁবু— বিশুদ্ধ বেদেদের ডেরা। রঙিন ঘাগরা পরা দুটো মেয়ে সন্দিহান চোখে আমাকে দেখল। খাটিয়ায় নেশাঘুমে তলিয়ে আছে এক বুড়ো, গলায় শিকল বাঁধা একটা হাড়-জিরজিরে বাঁদর ঝিমচ্ছে পাশে বসে। কাঁধে বাঁশ, দড়ি, সাইকেলের চাকার রিং নিয়ে ফিরে এল একটা গোটা পরিবার। ওরা সারাদিন মেলায় দেখিয়ে বেড়ায় মাদারির খেলা। আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল পয়সা গোনায়। টিনের পাত্রে পয়সা পড়ার ঠক ঠক শব্দ কানে নিয়ে সরে এলাম।
নোংরা নালাটা পেরিয়ে এলেই নদী। বহতা নদী। এপারে ভ্রাম্যমান মানুষের ক্ষণস্থায়ী ঘর। বহতা মানুষের। যে মানুষ বেঁচে থাকে। জান্তবভাবে বাঁচতে চায়। যে মানুষের মৃত্যু-বিলাসিতা নেই।
ছবি সৌজন্য : লেখক