ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • কলকাতা চিত্ররূপময় : পর্ব ৩


    শুভময় মিত্র (January 2, 2025)
     

    ৫ তারিখ পর্যন্ত কলকাতায় শীত থাকবে, আশা করা যায়। এটা জরুরি, কারণ আর্টের রসের জন্য যেতে হবে অনেক দূরে, যেখানেই থাকুন না কেন! আর্ট একর খোলে সকাল এগারোটায়। নিউ টাউন পেরিয়ে আরও অনেকখানি রাস্তা। এত কথা বলার কারণ, এখানকার ‘বেঙ্গল বিয়েনালে’ দেখতে সময় লাগবে। একতলা ও দোতলায় চারটি মেগা উপস্থাপনা। বহু কষ্টের, যত্নের, ভাবনার কাজ। তাই সময় দেওয়াটা জরুরি।

    শুভাপ্রসন্ন সম্পর্কে সাম্প্রতিক অতীতে আলোচিত অন-আর্ট বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করে তাঁর আসল কর্মকাণ্ডের পরিচয় পাওয়ার সুবর্ণসুযোগ ‘বিটুইন রিয়্যালিটি অ্যান্ড ইলিউশন’-এ। বর্ষীয়ান এই শিল্পীর বিষয়, প্রক্রিয়া, মাধ্যমের বৈচিত্র ঈর্ষণীয়। উনি গল্প বলতে ভালবাসেন রেখা, রং ও অবয়বের মাধ্যমে। রিঅ্যাকশনারি বললে ভুল হবে না। নিজের রাজনৈতিক চেতনা ও পক্ষপাত লুকনোর বালাই নেই। ভারী ব্রাশের আঘাতে ভরিয়ে দিয়েছেন বিশাল সব ক্যানভাস। ছুঁয়ে দেখেছেন দেব-দেবীদের, তবে বহুচর্চিত পৌরাণিক দৃশ্যের রোম্যান্টিক প্যাকেজে নয়। এই সময়ের বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণে উনি বেশি উৎসাহী। কলকাতা নস্টালজিয়া, তৎসহ ট্রেডমার্ক কাক, সঙ্গে পেঁচা, ছাগল, বেড়াল— সবেতেই ওঁর আগ্রহ। বাস্তবের জমিতে রঙের কুঠার চালানোই তাঁর নেশা। মজা হল, ভিতটি আরবান বাস্তবের। অথচ, ভাবটি প্রসারিত যথেচ্ছ পরাবাস্তবের ইঙ্গিতপূর্ণ কল্পনায়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মৃণাল সেনের পোর্ট্রেট। গান্ধী, যামিনী রায়, দেবীপ্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ। এবং গুন্টার গ্রাস। একঘর বললে মাপটা বোঝানো যাবে না, বলা উচিত— এক-হল জবরদস্ত শুভাপ্রসন্ন।

    শুভাপ্রসন্নর প্রদর্শনী ‘বিটুইন রিয়্যালিটি অ্যান্ড ইলিউশন’

    একতলার আর-একটি ঘর, সেখানে জয়শ্রী চক্রবর্তীর একটিই সৃষ্টি। পঞ্চান্ন ফিটের ‘আঁকাবাঁকা জমি।’ ভাস্কর্য বললে যে ভার বা ঘনত্বের প্রসঙ্গ ওঠে, এটি তার বিপরীত চিন্তায় উড়ে এসেছে। এসে, ভেসে আছে। এক অপার্থিব জমি, হরাইজন্টালের পরিবর্তে ভার্টিক্যালি ঝুলে আছে চোখের সামনে। আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু  একটা জমি, চরম ঔদাসীন্যে নিজেকে আনরোল করেছে, নগ্ন করেছে জনসমক্ষে। ছুঁয়ে দেখার ধৃষ্টতা হল না। কাগজের ত্বক। তার ওপর বহু খুচরো এলিমেন্ট-প্রোথিত খেয়ালি টেক্সচার। পেরেকও চোখে পড়ল। কোথাও আবার সাজের ঝংকার টুকরো আয়নায়। সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হল, জমি-শরীরটা হঠাৎই খুলে গেছে এক জায়গায়। তার ভেতরে অস্থিমজ্জার পরিবর্তে খাঁ খাঁ শীতের শূন্যতা। হলুদাভ, খয়েরি কিছু রংহীন ভাবনার বুনটের মধ্যে প্রায় অদৃশ্য এক নীলাভ অস্বস্তি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এই স্মৃতি গ্রাস করে নেবে দর্শককে। মুক্তির চেষ্টা করলে সে ব্যর্থ হবে, নিশ্চিতভাবে। পড়ছিলাম, প্রয়োজনীয় মেটেরিয়ালের অভাবে শিল্পী একসময় অবান্তর কাগজ, হাতে বানানো আঠা— যা পেয়েছেন তাই দিয়ে শিল্পের ইমারত গড়তে শুরু করেছিলেন। সেই নিজ-সৃষ্ট ট্র্যাডিশন পালনের খেলাটি আজও চলছে। বৃহত্তর, গভীরতর কলেবরে। 

    জয়শ্রী চক্রবর্তীর একটিই সৃষ্টি। পঞ্চান্ন ফিটের ‘আঁকাবাঁকা জমি’

    আরও পড়ুন : ধর্ম নয়, আর্টের উন্মাদনায় কালীকে চিনিয়েছে এই গ্যালারি…

    দোতলায় প্রদীপ দাসের ‘হৃদয়পুর’ থমকে আছে অন্ধকারে। মনে পড়ল, দিনেমার চিত্র পরিচালক লার্স ভন ট্রায়ারের ‘ডগভিল’ ছবির কথা। শুরু নেই, শেষ নেই, আকাশ নেই, নিঃসীম এক অন্ধকার জনপদের প্রায় অনালোকিত মঞ্চে ঘটছে বিভিন্ন ঘটনা। এখানেও তাই। নিজের দেশ ছেড়ে চলে আসা, নতুন জমিকে আপন করে নিতে বাধ্য হওয়া, তার ব্যক্তিগত অজস্র মেমোরিয়াল, স্মৃতিচিত্র, কল্পবস্তুর নস্টালজিক গল্প, ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে অগোছালো বাঁধুনিতে। ঘর কী? পাড়া কাকে বলে? কারা ছিল চেনা লোক? আত্মীয়? সবকিছুর দলিল থাকে, বা ছিল। হয়তো হারিয়ে গেছে এখন। ফোটোগ্রাফ, জীবনস্মৃতির হলুদ কাগজ, সাধারণ টুকিটাকি, যেমন হৃদয়-মোচড়ানো সেলাই কল, সস্তা পালঙ্ক, কখনও দূর থেকে, কখনও আতসকাচের নিচে ধরেছেন শিল্পী। মনে থাকা, ভুলে যাওয়া, দেখতে পাওয়া, বেশিটাই না-পাওয়ার আলগা খণ্ডচিত্রে ম ম করছে হৃদয়পুর। স্থান, কাল, পাত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে আমাদের পৌঁছে দিচ্ছে এক স্মৃতিমেদুর অতীতে। ঠিক যখন আমরা ভাবছি, এ তো আমাদেরই হৃদয়ের আবাস, তখনই ফিরতে হচ্ছে আলোর অভাবে প্রায় দম আটকে আসা অস্বস্তিকর বর্তমানে। এই কাজকে ইনস্টলেশন না বলাই শ্রেয়। টাইম ট্র্যাভেলের এক আজব রাইড, বললে আরাম পাওয়া যাবে বেশি।

    প্রদীপ দাসের ‘হৃদয়পুর’

    কলকাতার পূর্বতম প্রান্তে ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-র সুবিস্তৃত রাজসিক শিল্পকক্ষে চলছে ‘তারার নাম অরুন্ধতী।’ তপতী গুহঠাকুরতা ও মৃণালিনী বাসুদেবনের কিউরেশন। পাঁচ-ছয়ের দশকের বাঙালি ফিল্মস্টার অরুন্ধতী দেবীর ব্যক্তিগত জীবন, চলচ্চিত্র ও নানা অজানা দিক তুলে ধরা হয়েছে অতি যত্নে, পরিশ্রমে, শ্রদ্ধায়। দুর্লভ সিনেমা স্টিল, পরিবার-চিত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র, লেখা, পোস্টার— কী নেই!

    মন দিয়ে দেখলে চন্দ্র ভট্টাচার্যর কাজ সহ্য করা কঠিন কাজ। ‘প্রিমেভাল’ নামকরণেই উনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমাদের ফিরে যেতে হবে বোধের প্রথম অধ্যায়ে। সভ্যতা শব্দটা তখনও লেখা হয়নি। জন্তু নয়, হয়তো মানবিকতাও বিরাজ করে, আদিম মানুষের জীবনে তখন ছিল জান্তব যাপনের আধিক্য। বুদ্ধি মানুষকে ভাবতে শিখিয়েছে। ভাল-মন্দ দুই-ই। সমস্ত প্রাণীদের পিছনে ফেলে আমাদের সর্বাঙ্গসুন্দর, সভ্য হয়ে ওঠার কথা ছিল। হতে পারিনি, নির্মমভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানে। রোমান্সের কালারফুল মিথ নিয়ে চন্দ্র ভট্টাচার্যর মাথাব্যথা নেই। বেরঙিনতার নির্মম টেক্সচারগুলো নিয়ে ওঁর কারবার। এমন ভাবার কোনও কারণই নেই যে, নির্মল সাদা বা ‘সকলই বিমল’ কৃষ্ণসুন্দর এক আবহে উনি স্বস্তি দেবেন। সাংঘাতিক টেনশন। ভেঙে পড়ার ঝুঁকিপূর্ণ খাদের ধারে ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা। বুঝিয়ে দেওয়া, সৃষ্টি ও বিনাশ একই মুদ্রার দু’টি পিঠ মাত্র। হিংসা পালকের মতোই হালকা এক অবয়ব। স্পর্শ করলেই টের পেতে হবে চারকোলের কর্কশ যন্ত্রণা। সব ছাপিয়ে কোথায় যেন মিহি সুরে বাজতেই থাকবে অসহ্য এক সিমফনি। 

    চন্দ্র ভট্টাচার্যর ‘প্রিমেভাল’

    আরও পড়ুন : আজকের সেলফি না শিল্পীদের আত্মপ্রতিকৃতি? চিনিয়েছে এই প্রদর্শনী…

    হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল জ্যোতির্ময় দাসের ‘কীটসচ ফ্রম কীর্ণাহার’-এ। ফোনের সবজান্তা অনুবাদক জানাল, ‘কীটসচ’ মানে নিম্নরুচির সাজানোর দ্রব্যাদি। কীর্ণাহার বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গঞ্জ। ধরে নিলাম, ওই অঞ্চলের সুতোর কাজের কথা বলা হচ্ছে। প্রদর্শনীতে রঙের বন্যায় ভেসে যাওয়া একের পর এক নকশাদার সুতিকর্মে বীরভূমে চেনা ‘ব’ নেই। আমাদের বোঝা উচিত ছিল যে, ‘হস্তশিল্পের’ বাজারি নকশাটিকে ভেঙেচুরে একশা করার অভিপ্রায়েই এই প্রদর্শনী। কিছুক্ষণ  আগে, অন্ধকার শিল্পকক্ষ থেকে বেরিয়ে এমন ঝলমলে সুতো-দৃশ্যের মুখোমুখি হয়ে ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লেগে গেল। কাঁথা স্টিচের পরিচিত চরিত্রাবলি, খুচরো কিছু চেনা সুখ, এসব নেই। যা রয়েছে, তা হল— প্রকৃতির দেদার সম্পদ। গাছ, লতা, পাতা, ফুল, পাখি দিয়ে গরুর গল্প বলতে রাজি নন স্রষ্টা। সূক্ষ্ম সুতোর তুলির মিথ্যে বাঁধুনি অগ্রাহ্য করে মিশে গেছে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চড়া নাগরিকতা। গাড়ি, এরোপ্লেনের পাশে দৌড়চ্ছে বাঘ। মোনালিসার শরীরে শ্বাপদের প্যাটার্ন। কাল্ট রমণীকে সাক্ষী রেখে চলছে জান্তব রমণপ্রক্রিয়া। সব কাণ্ডই চলছে কাপড়ের পটভূমিকায়। কাঁথা স্টিচের আপাত নিরীহ, হালকা খুশির নিচে স্পষ্ট, ডেঞ্জারাস, কিছু মতামত। বোনা হয়েছে প্রাণিজগতের অসম্ভব অথচ বাস্তব সহাবস্থান। একসময় অতি দ্রবীভূত রংরাজির দাপট মাথাকে শূন্য করে দেয়। আদতে ভীষণ রাগী একটা মন দর্শকদের সূচের চাবুকে বিদ্ধ করে চলে কল্পনাতীত শিল্পচেতনার সীমানা-ছাড়ানো সৌন্দর্যের ছদ্মবেশে। 

    এবারে শানু লাহিড়ী। ভিস্যুয়াল আর্ট বাজারের নিরাপদ কৌলীন্যকে ধুলোয় ফেলে আজীবন কাজ করে গেছেন এই শিল্পী। ‘বিয়ন্ড দ্য ফ্রেম’-কে ওঁর রেট্রোস্পেক্টিভ বলা যেতে পারে। নাও যেতে পারে। বেপরোয়া হয়ে ওঠার সীমানা নিজেই নির্ধারণ করেছেন উনি। একটা প্যানেলে বিশাল এক কাগজের রোল খুলেছেন, শেষ আর হচ্ছে না, থামতে রাজিই নন এই বিদ্রোহী আর্টিস্ট। মাঝারি, ছোট, বড় ছবি। জল, তেল, কালিকে ব্যবহার করেছেন ক্রীতদাসের মতো। মহিলারা আছেন বহু ফ্রেমে। সৌন্দর্যের পুজো নেই। ফেমিনাইন সংজ্ঞাগুলো ভয়ংকরভাবে চ্যালেঞ্জড। তবে আক্রোশজনিত কারণে নয়। বরং, স্বাধীনতার ফুর্তিতে কেয়ারলেস শিল্পসাধনার নেশাতেই বুঁদ হয়ে থেকেছেন শানু। খুব পছন্দের চরিত্র রাবণ। আছে এলোকেশীরা। ধরা পড়েছেন পিকাসো। কিছু ছবিতে ইতিহাসের ছোঁয়া। যার গল্পগুলো ওঁরই লেখা। একটি প্যানেলে রয়েছে পাবলিক আর্ট। দেওয়াল, গলি— যেখানে পেরেছেন রাঙিয়ে দিয়েছেন ছবি এঁকে, খেয়ালখুশির জারক রসে চুবিয়ে। একা নয়। জুটিয়ে নিয়েছেন আরও অনেককে। পাবলিক আর্ট, অতএব পাবলিকও রং চাপাক। মহিলা শিল্পীদের নিয়ে তৈরি ‘দ্য গ্রপ’-এর সহস্রষ্টা উনি। তাঁদের  প্রদর্শনীর স্মৃতি ছবি দেখলে একবার পা রাখা যায় শানু লাহিড়ীর কলকাতায়। সে-চেহারা, সম্ভবত, আজ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

    শানু লাহিড়ীর ‘বিয়ন্ড দ্য ফ্রেম’

    কিছুটা মিল আছে, ‘চারুবাসনা’, যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস-এর প্রেজেন্টেশনে। ১৯৯৭ সালে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের উদযাপনে আয়োজিত হয়েছিল এক অভিনব প্রদর্শনী, ক্যালকাটা মেট্রোপলিটান ফেস্টিভ্যাল অফ আর্ট। দেশের বহু শিল্পী যোগ দিয়েছিলেন। তার ইন্টারেস্টিং রেকর্ড, তোলা ছবিতে। সঙ্গে আরও অনেক কিছু। আজকের শিল্পীরা, নবীন ও প্রবীণ, ঝালিয়ে নিতে পারেন একটি কথা ভেবে। কী ছিলাম আমরা! কী হয়েছি!

    সেন্ট জেমস বা জোড়া গির্জায় চলছিল ‘সেক্রেড ডায়ালগস’, মাধবী পারেখের যিশু-শিল্প। স্বচ্ছ অ্যাক্রিলিক শিটের উল্টোদিকে আঁকা। শিল্পীর মননে যিশু ও তার সময়। একটি লাইভ গির্জার মধ্যে আধুনিক ভাবনায় এমন ছবির সম্ভার দেখার বিরল সৌভাগ্য হয়েছে অনেকের। দুঃখের কথা, বিনা নোটিসে, নির্ধারিত সময়ের আগেই এটি বন্ধ হয়ে গেছে অজ্ঞাত কারণে।

    মাধবী পারেখের ‘সেক্রেড ডায়ালগস’

    কলকাতার পূর্বতম প্রান্তে ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-র সুবিস্তৃত রাজসিক শিল্পকক্ষে চলছে ‘তারার নাম অরুন্ধতী।’ তপতী গুহঠাকুরতা ও মৃণালিনী বাসুদেবনের কিউরেশন। পাঁচ-ছয়ের দশকের বাঙালি ফিল্মস্টার অরুন্ধতী দেবীর ব্যক্তিগত জীবন, চলচ্চিত্র ও নানা অজানা দিক তুলে ধরা হয়েছে অতি যত্নে, পরিশ্রমে, শ্রদ্ধায়। দুর্লভ সিনেমা স্টিল, পরিবার-চিত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র, লেখা, পোস্টার— কী নেই! একদিকে শান্তিনিকেতনে শৈলজারঞ্জনের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী। অন্যদিকে চিত্র পরিচালক। সে-সময়ের ডাকসাইটে সেলিব্রিটি। সর্বোপরি বুদ্ধিদীপ্ত, মার্জিত, সংবেদনশীল অভিনেতা হিসেবে উনি আজও সমাদৃত। সবথেকে জরুরি ব্যাপার হল, উনি নিজে কোনওদিনই ‘স্টারসুলভ’ আচরণে বিশ্বাসী ছিলেন না। ফিল্মি দুনিয়ার লঘু সমাজ ওঁকে স্রেফ ‘অ্যাকট্রেস’ হিসেবে দেখার সাহস পায়নি কোনওদিন। ব্যক্তিত্বপূর্ণ, সম্ভ্রান্ত একজন মানুষ হিসেবেই ওঁর পরিচয়। উদাহরণ হিসেবে ওয়াহিদা রহমান বা ইনগ্রিড বার্গম্যানের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। 

    ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-র সুবিস্তৃত রাজসিক শিল্পকক্ষে চলছে ‘তারার নাম অরুন্ধতী’

    বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়ে বেঁচে থাকার সংস্কৃতি এই শহরের। শুনেছি, আর্ট কালচার সৃষ্টির সূত্র কষ্ট থেকে। তা রচিত হয় বেদনার তমসুকে। স্মৃতির ভার, দেশভাগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অ্যাঙ্গস্ট, বিরহ, কিছু প্রেম, উদাসীনতার সিন এঁকেছেন একালের চিন্তাশীল মানুষরা। প্রাচীনরা আঁকড়ে রেখেছেন এর বিপরীত পরিস্থিতিগুলোকে। বাস্তব শেষ পর্যন্ত দিশা খুঁজে পেয়েছে কল্পনায়। ভাবনার স্বাধীনতায়। শিল্পের প্রথম ও শেষ শর্ত এটি।

    কলকাতার ‘বেঙ্গল বিয়েনালে’-তে এই সত্যিটা উপলব্ধি করছেন, উপভোগ করছেন নানা বয়েসের, ভিন্ন অভিজ্ঞতার, রুচির মানুষ। সব আক্ষেপ, অনিবার্য যন্ত্রণার পাশাপাশি শিল্পই একমাত্র মাধ্যম যা আমাদের কিছুটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়। মুশকিলময় সাম্প্রতিক অতীতকে কেউ ভুলেছেন বছরের শেষ ক’টা দিনে। কেউ হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন নতুন বছরে, চিত্রময় হয়ে ওঠা কলকাতায়, ‘বেঙ্গল বিয়েনালে’-র কল্যাণে। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook