ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ডেটলাইন : পর্ব ১


    তপশ্রী গুপ্ত (July 13, 2024)
     

    জাফনা, প্রভাকরণ, সৌরভ গাঙ্গুলি

    সালটা ২০০৫। তখন শ্রীলঙ্কায় প্রভাকরণের দাপট তুঙ্গে। এলটিটিই-র নাশকতার খবর রোজ কাগজে। সবে নিজের বাড়িতে নিহত হয়েছেন সে-দেশের বিদেশমন্ত্রী কাদিরগামার। এহেন সময়ে চ্যানেল (যে-বেসরকারি বাংলা টিভি চ্যানেলে কাজ করতাম তখন) হেড বললেন, ‘শ্রীলঙ্কা যেতে হবে। মনে রেখো, শুধু কলম্বো ঘুরে চলে এলে হবে না, জাফনা অবশ্যই কভার করবে।’ শুনে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া যদি বলেন, আনন্দে মনটা নেচে উঠল। কিছুক্ষণ পর ভয় ধরল। না, বিপদের ভয় নয়, মনে হল, যদি জাফনার পথ বন্ধ রাখে শ্রীলঙ্কা সরকার, বিশেষ করে বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য যদি নিষিদ্ধ থাকে চলাচল, তাহলে ওই নিরামিষ কলম্বো দিয়ে কী স্টোরি হবে? এই ভয়টা সত্যি হয়েছিল বটে, তবে কীভাবে তা কাটিয়ে জাফনা পৌঁছলাম, সে-কথায় পরে আসছি।

    কলকাতা থেকে চেন্নাই, রাতটা কাটিয়ে পরদিন বেলায় কলম্বোর ফ্লাইট। দক্ষিণ ভারতের একটা ব্যাপার ক’জন জানেন জানি না, চেন্নাই বলুন কি হায়দরাবাদ, সিনেমা-টিভি আর তার সঙ্গে জড়িত মানুষদের প্রতি খুব ভালবাসা সর্বস্তরে। আমার সঙ্গী ক্যামেরাম্যানের (নাম বলছি না, এখন পয়লা সারির নিউজ চ্যানেলে কাজ করে) বিশাল ভিডিয়ো ক্যামেরা বেশ সম্ভ্রম আদায় করে নিল বিমানবন্দরে। কাস্টমস-এ ডিক্লারেশন দেওয়ার সময়ে প্রশ্ন করল, কোন কাজে যাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ চ্যানেল শুনে কী খাতির! সসম্মানে, নির্ঝঞ্চাটে তো বটেই, ভিআইপি খাতির টের পেলাম বোর্ডিং-এর সময়ে। বলা হল, আমাদের নাকি আপগ্রেড করা হয়েছে বিজনেস ক্লাসে। খুশির বদলে টেনশনে পড়ে গেলাম। কী রে বাবা, আবার পরে এক্সট্রা টাকা চাইবে না তো! আরাম করে বসার পর সুদর্শন যুবক ক্রু এসে ঠান্ডা-গরম নানা রকম ন্যাপকিন দিতে লাগলেন। সে তো গেল, কিন্তু ঠায় পাশে দাঁড়ানোটা ঠিক বরদাস্ত করা গেল না। যত বলি, আর কিছু এখন লাগবে না, সে হাসিমুখে একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়েই থাকে। ফ্লাইট ওড়ার পর শুরু হল অন্য তৎপরতা। ওয়াইন ও অন্যান্য ড্রিঙ্কস-এর সাধাসাধি। কিন্তু আমরা দুজন অন ডিউটি, ওসব ছোঁব না। যাই হোক, ঘণ্টা দেড়েকের ফ্লাইটে খাওয়া-দাওয়া হল ভাল রকম। না, শেষপর্যন্ত কেউ আমাদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চায়নি!

    কলম্বো নেমে বেশ একটা সাহেবি ব্যাপার টের পেলাম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার রেশ রয়ে গেছে স্থাপত্য থেকে ভাষা— অনেক ব্যাপারেই। কলকাতার বিবাদী বাগের পুরনো বাড়িগুলোর মতো কলম্বোতেও বেশ কিছু গথিক নির্মাণ আছে। ইংরেজি কাগজের এক স্যুটেড-বুটেড সাংবাদিক দেখা করতে এসেছিলেন হোটেলে, আমাকে অভিবাদন জানালেন কাঁধ ঝুঁকিয়ে, একটি রক্তগোলাপ হাতে দিয়ে। ট্যাক্সিওয়ালা থেকে দোকানদার, বেশ কাজ চালানো ইংরেজি বলতে পারেন। আমরা উঠেছিলাম সমুদ্রের কাছে গল রোডে রণমুধু বলে একটি হোটেলে। সস্তায় পুষ্টিকর বলা যায়। রাজধানীর অন্যতম প্রধান রাস্তার ওপর, ভারতীয় হাই কমিশন থেকে, এমনকী প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকেও হাঁটা পথ। দ্বিতীয়টার সঙ্গে আমাদের তেমন সম্পর্ক না থাকলেও প্রথমটা খুব জরুরি। নিজের দেশের দূতাবাসকে না জানিয়ে এই যুদ্ধকালীন আবহে ক্যামেরা বার করাই সম্ভব নয় কলম্বোর পথেঘাটে। আর জাফনা যাওয়ার ব্যাপারটা জানানো নিয়মের মধ্যেই পড়ে।

    এই নিয়ম মানতে গিয়ে যে এমন বিপত্তি হবে কে জানত! কলকাতার নিউজ চ্যানেল থেকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি কভার করতে এসেছি শুনে প্রথমে বেশ ইমপ্রেসড হলেন সেই সময়কার হাই কমিশনার। নাম বলছি না, তাঁর কথা অমান্য করার জন্য অনেক পরে কলকাতায় এক সেমিনারে দেখা হওয়ায় ক্ষমা চেয়েছিলাম। অমান্য করা ছাড়া উপায় ছিল কি? কলম্বোয় কী কী করতে চাই তার ফিরিস্তি শুনে ঘাড় নাড়লেন, কিন্তু যেই না বলা যে জাফনা যাব, তাঁর মুখ কালো হয়ে গেল। গত এক বছরে কত বিদেশি সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন জাফনায়, সেক্রেটারিকে বললেন সে-তালিকা বার করতে। তালিকাটা সম্ভবত রেডিই ছিল, কারণ তুরন্ত বার করে টেবিলে রাখলেন সেক্রেটারি। হাই কমিশনার আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন প্রিন্ট আউট। তালিকা দীর্ঘ, এক ঝলকেই দেখে নিলাম। এরপর ঘটল আরও সাংঘাতিক ঘটনা। সাদা কাগজে মুচলেকা লিখিয়ে নিলেন, আমরা দুজন জাফনা যাব না। কী সর্বনাশ! শ্রীলঙ্কা আসাই তো বৃথা হতে চলেছে। ক্যামেরাম্যান করুণ মুখে সই করতে-করতে ভাবছিল, সাংবাদিক-জীবনের সেরা অ্যাসাইনমেন্টটা বানচাল হয়ে গেল। আমিও তাই। এরপর চা-বিস্কুট গলা দিয়ে কোনওমতে নামিয়ে বেরিয়ে এলাম তেরঙা শোভিত বাড়িটি থেকে।

    ফুটপাথে পা রাখতে-না-রাখতে আর্তনাদ করে উঠল ক্যামেরাম্যান। ‘দিদি, আমরা যাব না জাফনা?’ আমি উদাস মুখ করে কলম্বোর সৈকতের দিকে পা বাড়ালাম। তখনও এই সাগরতীরের পুরোপুরি দখল নেয়নি সেনাবাহিনী। ছবি তোলা যেত ইচ্ছেমতো। বছর দুয়েক পরে আবার গিয়ে আর সেই সুযোগ পাইনি। সর্বত্র এ কে ফর্টি সেভেন উঁচিয়ে পাহারায় ছিল সেনারা। আহা! কী অসামান্য সূর্যাস্ত! বেজার মুখে সেদিকে ক্যামেরা তাক করল আমার সঙ্গী আর ধরা পড়ল এক অপার্থিব দৃশ্য। দিগন্তে যেখানে আকাশ মিশেছে সাগরে, সেখানে নীল জল ছুঁয়ে বিশাল ঐশ্বরিক কমলালেবু আর তার পেট চিরে সিল্যুয়েটে মন্দাক্রান্তা ছন্দে ভেসে চলেছে এক ইয়ট। প্রাণ ভরে ছবি তুলে হাসি ফুটল তার মুখে।

    বাসে উঠে সিটে বসতে গিয়ে দেখি একটা ট্যাবলয়েড কাগজ রাখা। তামিল ভাষা, তাই বোঝার প্রশ্ন নেই। কিন্তু চোখ আটকে গেল একটা ছবিতে। বাজে নিউজপ্রিন্টে ততোধিক বাজে ছাপা, কিন্তু এই ছবি তো ভুল হওয়ার নয়, অন্তত কোনও ভারতীয়ের চোখে। সৌরভ গাঙ্গুলির মুখ এলটিটিইর মুখপত্রে কেন? অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে জিগ্যেস করলাম আগের সিটে বসা একজনকে।

    সৈকত ছেড়ে রাজপথে পা রেখে এক অটোওয়ালাকে পাকড়ালাম। সোজা প্রশ্ন, সে-শহরের কোন বাসস্ট্যান্ড থেকে জাফনার বাস ছাড়ে। সে অবাক হল ভর সন্ধেবেলা বিদেশির মুখে এমন কথা শুনে। তবে আমাদের নিয়ে যেতে রাজি হল। আমি গলার স্বরে উত্তেজনা যথাসম্ভব চেপে রেখে ক্যামেরাম্যানকে বললাম, ‘আজ রাতেই অভিযান। চল, হোটেলে ঢুকেই ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিই। রাতের বাসেই ধাঁ।’ ওই অটোতেই হোটেল, সেখান থেকে বাসস্ট্যান্ড। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে আমার মাথা-মুখ ওড়নায় ঢাকা, ক্যামেরাম্যান অতটা বাড়াবাড়িতে রাজি না হওয়ায় অকারণে মাথায় রুমালের ফেট্টি। আসলে আমার ধারণা হয়েছিল, আমাদের পিছনে ফেউ লেগেছে এবং জাফনা যাওয়ার আগেই আমাদের চিনে ফেলে ঘাড় ধরে দেশে ফেরত পাঠাবে। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে রাত ন-টা বেজে গেল। গিয়ে শুনলাম, রাত এগারোটাতে জাফনার বাস ছাড়বে, পৌঁছবে পরদিন দুপুরের পর কোনও একটা সময়ে। টিকিট দিতে-দিতে কাউন্টারের লোকটি প্রায় সাধুসন্তের মতো নিস্পৃহ গলায় বলল, ‘কিছুই বলা যায় না রাস্তায় কোথায় কী ঘটে, তাই পৌঁছনোর সময়ে আগে থাকতে বলা সম্ভব নয়।’ ঘাড় নেড়ে কাছেই দাঁড়ানো বাসটা একবার দেখলাম, নন-এসি হলেও মোটামুটি চেহারা যেমন হয় দূরপাল্লার। ডিনারটা সেরে উঠতে হবে। কাছেই একটা ছোট রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। সেখানে তাওয়ার ওপর হাতা-খুন্তির আওয়াজে কান পাতা দায়। আসলে এভাবেই তৈরি হয় ‘কোটু’, টিপিক্যাল সিংহলি খাবার। ছেঁড়া পরোটার সঙ্গে সবজি, মাংস বা ডিম— যেমন চাইবেন, তা-ই মেশানো হবে। কিন্তু সেই মিশ্রণপদ্ধতি পুরো শব্দকল্পদ্রুম। ওপেন কিচেনে এত জোরে-জোরে বাড়ি দিয়ে মেশানো হয় যে, পাশে টেবিলে বসে কানে তালা ধরে যাবে। এভাবেই বধির হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে কোটুর স্বাদে মুগ্ধ হলাম আমরা। তার থেকেও বেশি অবশ্য আমরা অভিভূত নিজেদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের পরিচয় পেয়ে। এই যে কেমন ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে রওনা হলাম অজানার পথে!

    এলটিটিই নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের মানচিত্র

    রাতটা আধোঘুমে কেটে গেল। মাঝে কোথাও একটা থেমেছিল। কফি ও টয়লেট ব্রেক। ভোর হতে দেখলাম দু’পাশে চমৎকার সবুজ মাঠ, খেত, গ্রাম। বোঝা মুশকিল, শ্রীলঙ্কা না বাংলার নিসর্গ। জানালা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসছে। কিন্তু সকাল হয়ে গেল, কই বাসের তো থামার নাম নেই! মুখ-হাত ধুয়ে, চা-কফি খাব না? এখানে আবার ভাষার বিরাট সমস্যা। কলম্বোতে সবাই ইংরেজি বোঝে, এখানে সিংহলি বা তামিল ছাড়া কেউ কথাই বলছে না। কারণ এই বাসের যাত্রীরা তো সবাই এ-দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। আমাদের যে কী আলাদা দেখাচ্ছিল এই সকালের আলোয়! অস্বস্তি হচ্ছিল। শেষমেশ হিন্দি কাজে লাগল। জয় বলিউড! কী ভাগ্য, হিন্দি সিনেমার দৌলতে পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ এই ভারতীয় ভাষাটা অল্পবিস্তর বোঝেন। হাত-পা নেড়ে কন্ডাকটরকে কোনওমতে যখন বোঝালাম আমার প্রশ্ন যে বাস কেন দাঁড়াচ্ছে না কোথাও, সে প্রায় আঁতকে উঠল। জানালার পাশে সরে যাওয়া দিগন্তবিস্তৃত মাঠের দিকে আঙুল তুলে হাফ হিন্দিতে বলল, পুরো মাইন্‌ড ল্যান্ড। যেখানে-সেখানে মাইন পুঁতে রেখেছে এলটিটিই, পা দিলেই উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই কোথাও নামা যাবে না। এভাবে দীর্ঘক্ষণ বাস এক টানা চলার পর থামল কিলিনোচ্চিতে। এলটিটিই-র হেড কোয়ার্টার। ছিমছাম মফস্‌সল শহর যেমন হয়। বোঝাই যাবে না এখানে সরকারের সমান্তরাল একটা প্রশাসন চালায় লিবারেশন টাইগারস অফ তামিল ইলম নামের সন্ত্রাসী সংগঠন, যার নেতা প্রভাকরণের নামে কাঁপে দুনিয়া। যাদের স্লোগান, ‘দ্য টাইগার্স থার্স্ট ফর আ তামিল মাদারল্যান্ড।’ আলাদা তামিল রাষ্ট্রের দাবিতে প্রাণ দিতে, প্রাণ নিতে চোখের পাতা কাঁপে না যাদের।

    তামিল স্টাইলে স্টিলের কানা-উঁচু ছোট গ্লাসে ধোঁয়া-ওঠা কফির সুঘ্রাণে কে বলবে বিশ্বের সবচেয়ে উপদ্রুত অঞ্চল বলে চিহ্নিত জায়গাগুলোর তালিকায় কিলিনোচ্চির স্থান ওপরের দিকে! এদিক-ওদিক অবাক চোখে তাকাতে-তাকাতে কফি ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়। আশেপাশের লোকেদের মুখের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি, এ কি সত্যি সাধারণ নাগরিক না কি ছদ্মবেশী এলটিটিই জঙ্গি? সত্যি বলছি, কারোর মুখ দেখেই তেমন ভয়ানক কিছু মনে হল না। জটায়ু থাকলে হয়তো বিনীতভাবে জিগ্যেস করে ফেলতেন, ‘আপ কোই উগ্রবাদীকো চিনতা?’ চেয়ে-চেয়ে দেখলাম, দিব্যি সকালের মিঠে হাওয়ায় কেউ কফিতে চুমুক দিচ্ছে, কেউ-বা হনহন করে কাজে যাচ্ছে, আবার কেউ সঙ্গীর সঙ্গে গল্পগুজব করতে-করতে হাঁটছে। একদম স্বাভাবিক জীবনের ছবি। ক্যামেরাম্যান পর্যন্ত লেন্সের ঢাকনা খোলার উৎসাহ পাচ্ছে না। জিগ্যেস করে জানলাম, কিলিনোচ্চিতে বহু সাধারণ তামিল থাকেন। তাঁরা কিন্তু ‘প্রভাকরণ সরকার’-এর নিয়মকানুন মেনেই চলেন। এলটিটিই-র নিজস্ব ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন, তাদের মুদ্রা ব্যবহার করেন, তাদের স্কুলে বাচ্চাকে পড়ান, তাদের চালানো অফিসে চাকরি করেন। আজব ব্যবস্থা! দেশের মধ্যে দেশ!

    এলটিটিই-র মহিলা সেনাদল

    আজবগড় ছেড়ে ফের বাস চলল। এবারের গন্তব্য জাফনা ঢোকার আগে এলটিটিই-র নিজস্ব চেক পয়েন্ট। পরে বুঝলাম, পুরোদস্তুর ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা বলা উচিত একে। আন্তর্জাতিক উড়ান ধরার আগে যেভাবে বিমানবন্দরে অভিবাসন হয়, সেভাবেই দাঁড়াতে হল নির্দিষ্ট কাউন্টারে। তফাত অবশ্য আছে। এখানকার ইমিগ্রেশন অফিসারেরা সবাই এলটিটিই-র সামরিক পোশাকে সজ্জিত যুবক-যুবতী এবং চারপাশে একে ফর্টি সেভেন উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কম্যান্ডোরা। প্রথমে দেখেই বুক কেঁপে উঠল। আমরা তো দলছুট; একে বিদেশি, তায় সাংবাদিক। আমাদের কি ঢুকতে দেবে? এরা কিন্তু কাজ চালানোর মতো ইংরেজি বলতে পারেন। তাই প্রশ্নোত্তরে অসুবিধে হল না। ফর্ম ফিল-আপ করে দীর্ঘ জেরার পর ছবি তুলে রাখা হল আমাদের, দেওয়া হল পাস, যেটা ফেরার সময়ে দেখাতে হবে। অরণ্যদেবের কমিক্‌সের মতো এই অভিবাসন দপ্তরের খবর যে এক লহমায় জাফনা পৌঁছেছিল, সেই প্রমাণ ঢোকামাত্র পেয়েছিলাম। সেই প্রসঙ্গ পরে। আবার বাসে উঠে সিটে বসতে গিয়ে দেখি একটা ট্যাবলয়েড কাগজ রাখা। তামিল ভাষা, তাই বোঝার প্রশ্ন নেই। কিন্তু চোখ আটকে গেল একটা ছবিতে। বাজে নিউজপ্রিন্টে ততোধিক বাজে ছাপা, কিন্তু এই ছবি তো ভুল হওয়ার নয়, অন্তত কোনও ভারতীয়ের চোখে। সৌরভ গাঙ্গুলির মুখ এলটিটিইর মুখপত্রে কেন? অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে জিগ্যেস করলাম আগের সিটে বসা একজনকে। তিনি হেসে বললেন, প্রভাকরণের ফেভারিট ক্রিকেটার গাঙ্গুলিকে নিয়ে নাকি প্রায়ই লেখা বেরোয় এই কাগজে, তাঁর কোনও সাফল্যের খবরই বাদ যায় না। এটাও সেরকমই একটা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

    (চলবে)

    ছবি সৌজন্যে : লেখক

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook