ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বৈচিত্র্যময় তাঁত, সরকারের হাত


    দোয়েলপাখি দাশগুপ্ত (August 9, 2023)
     

    বিশ্বায়ন-পরবর্তী ভারত সম্পূর্ণ এক ‘বাজার’-এ পরিণত হয়েছে। সম্ভবত পৃথিবীর বৃহত্তম বাজার, যেখানে হাত বাড়ালেই কোটি-কোটি ক্রেতা। বাজার ভারতে আগেও ছিল, হাজার-হাজার বছর আগে থেকেই, কিন্তু তখন তার বিক্রেতা পরিচয়টির প্রাবল্য ছিল বেশি। সেই সোনা-হিরে-জহরত-মশলা-তুলোর বিক্রেতা ভারতের সম্ভ্রম আর ঐশ্বর্যের দ্যুতি চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল মধ্য এশিয়া আর ইউরোপের, চিন আর মালয় সাগরের। একই সঙ্গে আরও পরিচয় ছিল : শিল্পের-বিজ্ঞানের-সংস্কৃতির। আজকের মতো শুধুই বাজারসর্বস্ব ছিল না সে-দেশ।

    এই বিরাট বাজারের সবচেয়ে বৃহৎ এবং আত্মক্ষয়ী ব্যবসাটি বস্ত্রশিল্পের। ৭ অগাস্ট। ১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয় এই দিনে। দেশের চরকায় কাটা মোটা কাপড়, স্বদেশি কাপড় মাথায় তুলে নেওয়ার জন্য যেদিন বঙ্গবাসী আহ্বান জানিয়েছিল সারা দেশকে। ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারের কলে বোনা মিহিন কাপড় দিয়ে বানানো ধুতি-সেমিজ-আলোয়ান আগুনে পুড়িয়ে যেদিন ইতিহাস রচনা হয়। এই ইতিহাসকে মাথায় রেখে এই দিনটি তাই জাতীয় তাঁত দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছে ভারত সরকারের উদ্যোগে।

    সরকার জানে, তাঁত আমাদের দেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, এবং আমাদের দেশের গ্রামীণ ও আধা-গ্রামীণ অংশে জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা সরাসরি নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে। কারণ তাঁত এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ৭০%-ই নারী। সরকার বলছে সরকার চায় শ্রমিকের আর্থিক ক্ষমতায়ন হোক। যদিও দেশের চাষি-তাঁতি-শ্রমিক যদি সচ্ছল হয়, তাহলে কি তারা আর খেতখামার করতে চাইবে? তাঁত চালাতে চাইবে? তারা পড়াশোনা করতে চাইবে। উচ্চশিক্ষায় যেতে চাইবে। ক্রমে শহরের জীবিকা ও জীবনের দিকে যেতে চাইবে। তাই সরকার সত্যিই তাঁত শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন চায় এমন শিশুসুলভ সারল্য সংশয় আনে।

    দেখা যাক, সরকার এ-নিয়ে এখনও অবধি কী কী পরিকল্পনার কথা বলছে :

    সরকার চাইছে সমস্ত সেক্টরের পকেটগুলোর কেন্দ্রীকরণ হোক। এক ছাতার নীচে আনতে চাওয়া ভাল পদক্ষেপ। এর জন্য কিছু প্রকল্প তারা চালু করেছে, যার মধ্যে নতুন বয়ন কৌশল শেখা, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাঁতিদের পরিচয় ও অভিযোজন করানো, নতুন ডিজাইন ও রঙের বিকাশ, নতুন ধরনের পরিবেশবান্ধব রঞ্জক (ডাই) ব্যবহার করা, বেসিক অ্যাকাউন্টিং এবং ম্যানেজমেন্টের কাজগুলো নিয়ে তাঁতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এই ধরনের এক-একটা ক্লাস্টারে সরকার ব্লক পর্যায়ে ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করেছে। চালু করেছে Hathkharga Samvardhan Sahayata (HSS) জাতীয় কিছু প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে, তাঁত ও আনুষঙ্গিক খরচের ৯০% ভারত সরকার বহন করবে কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার কাজ সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের কাঁধে।

    স্বতন্ত্র কাজের শেড নির্মাণে পুরো তাঁতি পরিবারের জন্য তাদের বাড়ির কাছাকাছি একটি কাজের জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা হয়েছে। এই এক-একটি শেড প্রতি ইউনিটের খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, যা দেবে সরকার এবং এই ক্ষেত্রে প্রান্তিক পরিবার ও মহিলা তাঁতিরা ১০০% আর্থিক সহায়তার জন্য যোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। জানতে ইচ্ছে করে, এর কতটুকু বাস্তবে হচ্ছে? কোন কোন রাজ্যে হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে? গুজরাটে? কর্ণাটকে? মণিপুরে? কাশ্মীরে? কেরালায়?

    নতুন-নতুন নকশা উদ্ভাবন করার কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ডিজাইনারদের সঙ্গে তাঁতিদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াও এইসব প্রকল্পের মধ্যে পড়ে। তাতে ডিজাইনারদের পারিশ্রমিক তো বটেই, এমনকী এই যোগাযোগের জন্য অতিরিক্ত খরচও সরকারের দেওয়ার কথা। সিল্ক, উল, লিনেন-সহ সমস্ত প্রাকৃতিক তন্তুর সুতোর ১৫% ভর্তুকিও সরকারের দেওয়ার কথা। এর পিছনে উদ্দেশ্য একটাই, পাওয়ার লুম-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাতে তাঁতিরা টিকে যেতে পারে। সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে ব্যাংকে ক্রেডিট গ্যারান্টি ফি দিয়ে তাঁতিদের জন্য ঋণের ব্যবস্থাও।

    তবে বাজারে আসল ক্ষমতা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় একটা সঠিক ব্র্যান্ডিং। ইন্ডিয়ান হ্যান্ডলুম ব্র্যান্ড বা IHB-র প্রস্তাব পাশ হলেও সেই লোগো বা ব্র্যান্ড এখনও বহু তাঁতিই ব্যবহার করছেন না বা হয়তো সুযোগ পাচ্ছেন না, যা থাকলে ক্রেতার পক্ষে খুব সহজেই সঠিক গুণমানের ভাল দেশজ তাঁতসামগ্রী ও পণ্য চিনে নিতে সুবিধে হতে পারে। যদিও লোগোই গুণমানের শেষ কথা নয়; এ-পোড়াদেশে প্রতি পদে-পদে টাকা হাতিয়ে, খেয়ে ও খাইয়ে যে-কোনও ব্র্যান্ডিং-এর বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটি কোন তলানিতে গিয়ে পৌঁছয় তা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের কল্যাণে দেশবাসী ইতোমধ্যে হাড়ে-হাড়ে জানে।

    যে-দেশে খাবার ও ওষুধে ভেজাল নিয়ন্ত্রণের মান এইখানে, সেখানে পরনের কাপড় নিয়ে কে কতটা মাথা ঘামাবে এ-নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। খাদ্যনালি এবং অন্ত্রের ক্যান্সার যে-কারণে এত বেড়েছে। অথচ স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে বসলে পরিধেয় কাপড়ও কিন্তু কোনও অংশে কম বিপজ্জনক নয়। এত-এত কৃত্রিম সুতোর তৈরি জামাকাপড়ে, ভেজাল রং ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে মারাত্মক সমস্ত অসুখ ওঁত পেতে থাকে— বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য থেকে শুরু করে চর্মরোগ এমনকী ক্যান্সারও। এর পাশে পরিবেশের জন্য এর প্রভাব এতটাই ভীতিপ্রদ যে, পাওয়ারলুমের কাপড়ের মাইক্রোফিলামেন্ট এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক (যে-কোনও পলিয়েস্টার সুতোর শেষ পরিণতি যা) এখন বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত স্তরে ঢুকে গেছে, যা সমুদ্রে বর্জ্য হিসেবে জমছে এবং সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের শরীরে এবং এমনকী মায়ের দুধের মধ্যে দিয়ে সদ্যোজাত শিশুর রক্তেও প্রবেশ করছে। কাজেই সার্টিফায়েড আসল প্রাকৃতিক সুতো ও ভেষজ রং নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই বড়ো জরুরি।

    ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থ রক্ষাকারী আর একটি ভাল উদ্যোগ হল বিভিন্ন সরকারি মেলার আয়োজন। সারা দেশে এমন বহু কারুশিল্পের মেলায় কর ছাড় দিয়ে সরকার কম দামে ভাল জিনিস কেনার সুযোগ দেয় জনতাকে আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে তাঁতিরাও সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে বিক্রেতার সামনে। এইসব নানান কাজে ২৩টি ই-কমার্স কোম্পানি তাঁতজাত পণ্যের মার্কেটিং বা বাজারিকরণের কাজে নিযুক্ত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও ক্রেতা হিসেবে কিছু অসুবিধের কথা মনে হয়। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ জাতীয় সামাজিক মাধ্যমগুলি ব্যবহার করে বহু ভুঁইফোঁড় সংস্থা ও বুটিকের উত্থান হয়েছে গত এক দশক যাবৎ। যারা তাঁতজাত পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার লাভ কুড়োতে বিভিন্ন অসাধু পন্থা নিচ্ছে। ইক্কত বা সম্বল্পুরী বুনন চলে আসছে নকল জাল প্রিন্টে। আসল শাড়ির ছবি দেখিয়ে ক্রেতাকে ঠকিয়ে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের পলিয়েস্টার মেশানো জাল শাড়ি। আসল চিকনের ছবি দেখিয়ে বিক্রি হচ্ছে জাল চিকনকারি কাজের পোশাক। ক্রেতাকে সচেতন করার জন্যও কিছু উদ্যোগের বিশেষ প্রয়োজন। যদিও এখন প্রতারণার ক্ষেত্রে কনজিউমার ফোরামে সহজে অভিযোগ দায়ের করা ও ক্রেতা সুরক্ষা মামলা করার দিকটি আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ হয়েছে এ-কথা মানতেই হবে। তবুও মূল শহর থেকে একটু দূরে মফস্‌সলের অর্ধশিক্ষিত জনতা কিন্তু এই সুবিধে পাচ্ছেন না। তাঁদের টাকা চোট যাচ্ছে। কোম্পানিগুলি রমরম করে এইসব সামাজিক মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়েই যাচ্ছে। আহমেদাবাদ, ভুবনেশ্বর, দিল্লি, গুয়াহাটি, জয়পুর, কাঞ্চিপুরম, মুম্বাই এবং বারাণসী এই আটটি শহরে যে-সরকারি উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলি হয়েছে এইসব বিষয়ে তাদেরকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া মনে হয় প্রয়োজন, জনতাকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই।

    দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার মতো উপনিবেশ হিসেবে গড়ে ওঠা দেশগুলো তো বটেই, এমনকী জাপান বা চিনের মতো স্বতন্ত্র সংস্কৃতির দেশও ইউরোপকেন্দ্রিক, বহুজাতিক-অর্থায়নে পরিচালিত ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড দ্বারা নির্ধারিত পোশাক গ্রহণ করে ফেলেছে। ভারতে এই মিরাকল ঘটতে পারার একমাত্র কারণ তাঁত ও সুতোর প্রতুলতা। তাই সরকার শুধু না নাগরিক হিসেবেও এই বিরাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব থেকে যায়।

    তাঁত-পর্যটন এখনও সেভাবে চালু হয়নি। পর্যটন মন্ত্রকও এই বিষয়ে নতুন নতুন উদ্যোগ নিলে এক সামগ্রিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা হতে পারে। কানিহামা (জম্মু ও কাশ্মীর), মোহপাড়া (আসাম), শরণ (হিমাচল প্রদেশ), কোভালাম (কেরল) এবং রামপুর (বিহার), মইরাং (মণিপুর) এবং প্রাণপুর, চান্দেরিতে (এমপি) ক্রাফ্‌ট হ্যান্ডলুম গ্রাম স্থাপন করা হচ্ছে। এইসবই আশ্বাসের খবর।

    আমাদের এই দেশ হাজার বছরের ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলছে আজও। সেই মজেঞ্জোদড়োর সময়ের আজরখ থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার বছরের আগের টেক্সট-এও পাওয়া যায় কতশত নাম : যেমন সোনার সুতোর তৈরি ‘হিরণ্য’-র উল্লেখ মেলে বেদ-এ। ভারতের মতো এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে প্রতিদিনের যাপনে দেশীয় ফ্যাশন এইরকম ভাবে জিতে গেছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার মতো উপনিবেশ হিসেবে গড়ে ওঠা দেশগুলো তো বটেই, এমনকী জাপান বা চিনের মতো স্বতন্ত্র সংস্কৃতির দেশও ইউরোপকেন্দ্রিক, বহুজাতিক-অর্থায়নে পরিচালিত ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড দ্বারা নির্ধারিত পোশাক গ্রহণ করে ফেলেছে। ভারতে এই মিরাকল ঘটতে পারার একমাত্র কারণ তাঁত ও সুতোর প্রতুলতা। তাই সরকার শুধু না নাগরিক হিসেবেও এই বিরাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব থেকে যায়।

    আনন্দ হয় যখন দেখি, সরকার প্রতি বছর তাঁতিদের নানান সম্মানে ভূষিত করছে। যেমন বয়ন বা উইভিং-এর জন্য প্রদেয় ‘সন্ত কবীর পুরস্কার’, যার প্রাপক প্রতি বছর ১২ জন তাঁতি, যাঁদের মধ্যে দুজনকে অবশ্যই হতে হবে নারী। উইভিং, ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট এবং মার্কেটিং এই তিনটি আলাদা বিভাগের জন্য রয়েছে জাতীয় পুরস্কার। তার মধ্যে বয়নের জন্য ২০ জনকে সম্মানিত করা হয় যার ৪ জন নারী, ডিজাইনের জন্য ৩ জনকে এবং মার্কেটিং-এর জন্য ৫ জনকে। এছাড়াও রয়েছে ন্যাশনাল মেরিট সার্টিফিকেট। ২০ জন তাঁতি, ৬ জন ডিজাইনার, এবং ১০ জন মার্কেটিং কর্মীকে এই মেধা শংসাপত্র দেওয়া হয়।

    সরকারের পাশাপাশি বহু বেসরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো সক্রিয় হয়েছে, যদিও এদের অধিকাংশের উৎপাদিত পণ্যগুলির দাম আকাশছোঁয়া। বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ডলারে বা পাউন্ডে যে হিসেব চলে, তা কি অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যে একইরকম ভাবে ন্যায্য হতে পারে? এই বেসরকারি বিক্রেতাদের জন্যেও কোনও একটা নিয়ন্ত্রণ বা লাভের মার্জিনের কথা সরকারকেই ভাবতে হবে। না হলে বিপুল মুনাফার কতটুকু সত্যিই তাঁতির ঘরে পৌঁছবে এ-সম্বন্ধে নতুন করে আর কল্পনার প্রয়োজন পড়ে না। পাওয়ার লুমের সঙ্গে যুদ্ধে জিততে হলে দেশজ তাঁতের দামকে এভাবে আকাশছোঁয়া করলে নতুন-নতুন মুনাফার পকেট শুরু হবে ফের, কারণ প্যান্ডেমিক দেখিয়ে দিয়েছে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা এখন কত দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এখানেও ঘুরেফিরে তাই সেই ক্রেতার সচেতনতার কথাই এসে পড়ে। বহু উপেক্ষিত এই দিকটি নিয়ে সরকারের আশু উদ্যোগ বড়োই প্রয়োজন।

    পরিশিষ্ট ভারতের সব ক’টি রাজ্যের নিজস্ব তাঁত বয়নশৈলীর তালিকা রইল উৎসাহী পাঠকের জন্য :

    ১.গুজরাট— মাশরু, ধওলা শাল, খরদসিল্ক, তাঞ্চোই সিল্ক, টাঙ্গালিয়া, পাটোলা, মাতা নি পাছেড়ি, কচ্ছি শাল, কচ্ছ
    ২. রাজস্থান— দারি, পাট্‌টু, কোটা ডোরিয়া, জয়পুরী রাজাই বুনন
    ৩. জম্মু ও কাশ্মীর— কানি, কাশ্মীরি পশমিনা, পাট্টু
    ৪. উত্তরপ্রদেশ— কিংখাব, ভাদোহি কার্পেট, মির্জাপুর হাতে বোনা দারি, আগ্রা দারি,
    জামদানি, নকশা ব্রোকেড
    ৫. মণিপুর— ওয়াংখেই ফেই, শপি লনফি
    ৬. কর্ণাটক— ইল্কল, মোলকল্মুরু সিল্ক, পাট্টেডা আঞ্চু শাড়ি, নেভালগুন্ড দারি, মহীশূর সিল্ক, উদুপি
    ৭. লেহ লদাখ— চাল্লি-পশমী
    ৮. পাঞ্জাব— খেস
    ৯. অরুণাচল প্রদেশ— সিংফো, পাইলিবো, মিশমি, টুয়েনসুং শাল, আপাটানি, ৎসুং-ডাল, ৎসুগ-দাননিয
    ১০. হরিয়ানা— পাঞ্জা বুনন
    ১১. নাগাল্যান্ড— চাখেশান শাল, ৎসুংকোটেপসু
    ১২. গোয়া— কুনবি
    ১৩. আসাম— গাড়ু/মিরিজিম, বোরো, এড়ি সিল্ক, মুগা সিল্ক
    ১৪. মহারাষ্ট্র— হিম্রু, পৈঠানি, ঘোম্বাদি, চিন্ডি দারি, করভট কাটি শাড়ি
    ১৫. তামিলনাডু— কান্দাঙ্গি, কুরাইনাডু, কাঞ্চিপুরম ব্রোকেড, জামক্কলম, কোদালি কারুপ্পুর, কোর্ণাডু, অরণি সিল্ক, কোভাই কোরা, কোদাম্বকম, পূর্ণকুম্ভম সুতি
    ১৬. হিমাচল প্রদেশ— গালিচা, কুল্লু শাল, থোবি, নুমধা, গুডমা
    ১৭. উত্তরাখণ্ড— পঞ্চচুল্লি, চুটকা কম্বল, লোই কম্বল, বিচ্ছু বুটি
    ১৮. কেরালা —বলরামপুর শাড়ি, কাসারাগোড, চেন্নামঙ্গলম, কাসাভু শাড়ি
    ১৯. মেঘালয়— এরি, তাপমোহ
    ২০. মিজোরাম— পুয়াঞ্চেই, মৈরং ফি, ঙ্গোটেখেড়, পন্ডুম, তলোপুঅম
    ২১. ত্রিপুরা— লাইসিং ফি
    ২২. সিকিম— লেপচা
    ২৩. অন্ধ্রপ্রদেশ— ভেংকটগিরি, আন্নিবুটা শাড়ি, উপ্পাডা জামদানি, মালখা খাদি,
    বান্দারুলাংকা, ধর্মাভরম
    ২৪. তেলেঙ্গানা— পোচমপল্লি ইক্কত, গাদওয়াল, তেলিয়া রুমাল, সিদ্দিপেট গোল্লামবা
    ২৫. ওড়িশা— বমকাই, সম্বল্পুরি, ধলাপাথার পর্দা, হাবাসপুরি, খান্ডুয়া, পাসাপল্লি
    ২৬. বিহার— ভাগলপুরি, সিক্কা
    ২৭. ছত্তিসগড়— কোশা সিল্ক, পাতা, চম্পা সিল্ক
    ২৮. মধ্যপ্রদেশ— চান্দেরি, মাহেশ্বরী
    ২৯. পশ্চিমবঙ্গ— জামদানি, ধনিয়াখালি, মাদুরকাঠি, বেগমপুরি, শান্তিপুরী, বালুচরী
    ৩০. ঝাড়খণ্ড— কুচাই সিল্ক

    তথ্যসূত্র :
    ১. ভারত সরকারের ক্যাম্পেন ওয়েবসাইট
    ২. দ্য হিন্দু

     



     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook