ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • আজ বুধবার


    গৌতম সেনগুপ্ত (January 6, 2023)
     

    না আজ বুধ নয়, বেস্পতিবার। প্রোমোশনের রেজাল্ট বেরোবে বেস্পতিবার। সবাই জানে পোস্টটা তপনই পাবে। গত আট বছরে সাতটা মেরিট অ্যাওয়ার্ড। জোকায় ম্যানেজমেন্টের ক্র্যাশ কোর্সে গোল্ড মেডেল, মা’র ডেডবডি বাড়িতে রেখে অফিসে গিয়ে মিটিং সেরে দাহকাজ সম্পন্ন করা। কাজেই তাকে আটকানোর সাধ্য ভগবানের বাবারও নেই। ইন্টারভিউয়ারদের মধ্যে তাদের ম্যানেজার মহাপাত্র সাহেবও ছিলেন। বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘সিম্পলি সুপার্ব, এবার আর মোকাম্বো-টোকাম্বো নয়, উই উইল গো স্ট্রেট টু র‍্যাডিসন ফোর্ট।’

    তপনের খটকা যাবার নয়। কারণ তেলবাজি, কাঠিবাজি দুটোতেই তাদের অফিস মাহি-র, চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নস। তপন হেসে বলে, ‘এই ৮ বছরে সাপ-লুডোর খেলা তো কিছু কম দেখলাম না। অযথা নেগেটিভিটিকে প্রশয় দিও না, অলওয়েজ বি পজেটিভ, মনে রেখো ফাউল করে কোনওদিন মারাদোনাদের আটকানো যায়নি, যায় না।’

    বেরিয়েই দীপেনদাকে ফোন। কিছুটা বেজে যাওয়ার পর শোনা গেল, ‘বল, বাইক চালাচ্ছি।’ সবটা শুনে কলেজস্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হইহই করে ওঠে, ‘আজ তো গ্লেনলিভেট ১২-র নীচে নামাই যাবে না রে। ফুডের ব্যাপারটা সিস্টাররের সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।’ তপনের বউ মিলি দীপেনদার কাজিন। সকালে কলেজ সেরে পেট চালাতে বাড়ি-বাড়ি চা পাতা, কুকি, চানাচুর বিক্রি। এই সূত্রেই এরিয়ার দাপুটে নেতা দীপেনদার সঙ্গে আলাপ। মা’র শেষ সম্বল বালা বেচে কলকাতায় পড়তে আসা। কলেজ সকালে, দুপুরে বাড়ি-বাড়ি চা পাতা ইত্যাদি বিক্রির টাকায় ঘরভাড়া, বাকি খরচার পর যা থাকে সেটা মাসের শেষে মা-র হাতে দিয়ে আসে। মা প্রতিবার টাকাটা মাথায় ঠেকিয়ে চোখ বুজে ওপরের দিকে মুখ তুলে বলে, ‘ঠাকুর যা করে ভালর জন্যই করে।’

    দীপেনের কেন তপনকে ভাল লেগেছিল বলা মুশকিল। তবে প্রথম আলাপে শুধু অনেক টাকার জিনিস কেনা নয়, পুরনো সাইকেলটাও কতকটা জোর করেই দিয়ে দিয়েছিল দীপেন। এর মাসখানেকের মধ্যেই ৬ নং বস্তি ছেড়ে ওদের গ্যারেজের ওপরে থাকতে শুরু করে তপন। দীপেনের চারটে গাড়ি, কিন্তু চালায় বাইক; হার্লে ডেভিডসন। আদর করে  বলে, ‘শয়তানের চাকা’। রোজ রাতে পেছনে বসিয়ে পাগলা চক্কর। এরকমই এক রাতে বলেছিল, ‘তোর ইংলিসটা ভাল। এবার থেকে কাস্টমারদের ফ্ল্যাট দেখাতে তুই নি যাবি। যা পাবি তা ওই চা বিক্রির চেয়ে অনেক বেশি।’

    সে-মাসে একসঙ্গে অত টাকা পেয়ে মা তো কেঁদেকেটে একশা। বলে, ‘তোকে বলেছিলাম না, ঠাকুর যা করে মঙ্গলের জন্যই করে!’ এবার মা’কে নিয়ে আয়, উনি আর কতদিন ঠোঙা বানিয়ে যাবেন?’ দীপেন বলে। ‘দাঁড়াও, আগে একটা চাকরির ব্যবস্থা হোক।’ ‘চাকরি?’ দীপেন বলে, ‘যেদিন তোর রেজাল্ট বেরোবে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি মুরারকা টমসনে ঢোকাতে না পারি তো তোর জুতো মুখে নিয়ে মো মাথায় দাঁড়িয়ে থাকব। তবে হ্যাঁ, সেলসের কাজ, খাটতে হবে প্রচুর।’

    দীপেনের চারটে গাড়ি, কিন্তু চালায় বাইক; হার্লে ডেভিডসন। আদর করে  বলে, ‘শয়তানের চাকা’। রোজ রাতে পেছনে বসিয়ে পাগলা চক্কর। এরকমই এক রাতে বলেছিল, ‘তোর ইংলিসটা ভাল। এবার থেকে কাস্টমারদের ফ্ল্যাট দেখাতে তুই নি যাবি। যা পাবি তা ওই চা বিক্রির চেয়ে অনেক বেশি।’

    না, অত নাটকীয় কিছু হয়নি। চাকরির খুশিতে ব্লূ হেভেনের ১৭ তলার খালি ফ্ল্যাটে জোরদার পার্টির আয়োজন করে দীপেন। লোক বলতে তপন-দীপেন আর ওর দূর সম্পর্কের বোন মিলি। দীপেনদের বাড়িতে এত লোক থাকে যে, লোকে বলে হরি ঘোষের গোয়াল। মিলি ওই গোয়ালেরই গরু। দূর থেকে বহুবার দেখেছে, সামনে থেকে এই প্রথম। নীল হাঁটু ছেঁড়া জিন্‌স, হাতকাটা হলুদ কুর্তি। দু-হাত দিয়ে কপালে পড়া চুলগুলো সরাচ্ছে আর অচেনা সৌরভে ভরে যাচ্ছে চারপাশ। ফ্ল্যাট দেখানোর সময় এরকম মহিলা প্রচুর দেখেছে, কিন্তু এভাবে শুধু চোখ দিয়ে হাসতে কি কাউকে দেখেছে তপন? অনেক ভেবেও মনে করতে পারে না।

    এর ক’দিনের মধ্যেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। তারপর ইনবক্স, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া-নেওয়া। এর পর সি সি ডি, মোকাম্বো, মিলির বন্ধুর খালি বাড়িতে টুকটাক শোয়াও। মিলির সবই ভালো, শুধু আবেগ-উচ্ছ্বাসের ব্যাপারটা একটু বেশিরকম কম। সে সব সময়েই কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। ১৭ তলার থ্র্রি বি এইচ কে-র কাঠের মেঝের ওপর হাঁটতে-হাঁটতে দীপেন বলে, ‘বিয়ের পর তোরা এটাতেই শিফ্‌ট করে যাবি।’ ‘এটায়! এর দাম তো…।’ তপনকে শেষ করতে না দিয়ে দীপেন বলে, ‘তোর নিজের দাদা হলে বলতে পারতি? আপাতত মাসিমাকে নিয়ে আয়। তোরা একতলাতেই থাকবি। তোদের বিয়ে হতে-হতে ১৭ তলার কাজও কমপ্লিট হয়ে যাবে।’ ‘মা কি আসবে?’ ‘দরকার হলে জোর করবি। উনি কি লাইফ লং ঠোঙাই বানিয়ে যাবেন না কি?’ প্রথমে মিলির সঙ্গে আলাপ, তারপর ডেট ফাইনাল, ‘কী রে শুনছিস?’ জবাবে মিলি ভরা চোখে তাকায়, ‘ব্যালকনিতে দারুণ বাগান করা যাবে।’

    বাঁকুড়ার সোনামুখীতে তপনের জন্ম। তার যখন তিন, বাবা সাপের কামড়ে মারা যায়। কাজ মেটার পর কাকারা ঘাড় ধরে বার করে দেয়। পাদ্রিবাবা এগিয়ে না এলে হয়তো ভিক্ষে করতে হত। ওঁর দয়াতে গির্জের পেছনে এক চিলতে জায়গায় মা-র ঠোঙা বানানো, তপনের লেখাপড়া শুরু। মা কিছুতেই আসবে না। বলে, ‘এই ঠোঙা আমার লক্ষ্মী। একে ছাড়লে আমি বাঁচব না রে।’ হলও তাই। ১৭ তলার ফ্ল্যাটে মা’র থাকা হল না। এখানে আসার মাস দেড়েক পর মা বাথরুমের সামনে পড়ল, উঠল না।

    সেদিনই তপনের অ্যানুয়াল মিটিং। মেরিট অ্যাওয়ার্ড দিতে আসবেন চেয়ারম্যান। কারণ তপনের আগে পর পর তিনবার মেরিট অ্যাওয়ার্ড কেউ পায়নি। এই সুযোগ ছাড়া সম্ভবই নয়। দীপেনকে বরফ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে বলে তপন বেরিয়ে গেল। অফিস সেরে রাতে দাহ করেছে শুনে চারিদিকে নিন্দের ঝড় বয়ে গেল। ‘মা’র বডি ফেলে রেখে অফিস! দেশে কি ন্যায়ধর্ম বলে কিছু নেই না কি? মা-র আগে অফিস! যেদিন ওপরওলার থাপ্পড় খাবে, সেদিন বুঝবে।’ না, তেমন কিছু হলও না; শুধু মা’র কাজের পর একতলা ছেড়ে মিলির সঙ্গে তপন চলে এল ১৭ তলায়। সবাই বলেছিল, ‘ফোকটে দেড় কোটির ফ্ল্যাট! নির্ঘাত ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’ কী আছে বলা মুশকিল। তবে ব্যালকনির বাগানে দিন কেটে যায় মিলির। রাতে খাবার পর সিগারেট ধরায়। সেটা শেষ হতে-না-হতেই ধপাস করে বিছানায় পড়ে মিলি। ব্যাস, হালকা নাক ডাকা চালু। কখনও তপন বেশি চাপাচাপি করলে হাই চেপে বলে, ‘সাইড থেকে করবি, দেখিস ঘুম না ভাঙে।’

    ফেরার পথে এইসবই ভাবছিল তপন। দীপেনের বাইকটা দেখার পর মনটা ফূর্তিতে ভরে ওঠে। পুরনো কথাগুলো ঝড়ের মুখে পড়া মেঘের মতো মুহূর্তে উড়ে যায়। তাকে দেখে হাতের গ্লাসটা রেখে পাশের প্যাকেট থেকে ক্যারামেলের নস্যি রঙের কর্ডুরয়, বেনাটনের সাদার ওপর কালো ডোরাকাটা জামা তার হাতে দিয়ে দীপেন সুর খেলায়, ‘পরো পরো জামা পরো, সাজো নতুন এই কয়েদি পোশাকে।’

    শুতে-শুতে একটু রাতই হয়ে গেল। কাল ১২ নাগাদ অফিস গেলেই চলবে, তারপর হই-হুজ্জুত সেরে ফেরা। মিলির এসব নিয়ে কোনও কমপ্লেন নেই। সে জানিয়েছে, ‘কাঠের কাজ শেষ হলেই বিয়ে।’ কাঠের কাজের পেমেন্টটা দীপেনের কথামতো মাসে-মাসে করছিল তপন। সেটা শেষ হলে হন্ডা সিটি, মিলি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। তবে প্রোমোশনের পর লোনের সুবিধাও অনেকটাই বেড়ে যাবে।

    অফিসে ঢুকে ম্যানেজার মহাপাত্রর চেম্বারটা খালি দেখে খটকা লাগে তপনের। বসের পিএ নায়ার গলা নামায়, ‘মহাপাত্র ছুটিতে। আর প্রোমোশনটা তুই না, পেয়েছে কেলানের ধাড়ি প্রবীণ।’ ‘প্রবীণ!’ ‘মালটা মহাপাত্রর আপন শ্যালা। মধ্যে হেডঅফিস গিয়ে বাবুদের ভালো হাতে অয়েলিং করেছে, অন্য দিকে তোকে বার দিয়ে গেছে যাতে ইন্টারভিউটা গট-আপ না মনে হয়।’ সমুদ্রে নামার পর পায়ের তলা থেকে বালি সরে গেলে যেমন, ঠিক তেমনই গোটা শরীরটা শিরশির করে ওঠে। নায়ারের সঙ্গে কথা শেষ না করেই বেরিয়ে আসে তপন। নেমে দীপেনকে ফোন করে, সুইচ্‌ড অফ। এই অবস্থায় মিলির মুখোমুখি হওয়া মানেই দুনিয়ার ঝামেলা। কিন্তু উপায় কী! ট্যাক্সি থেকে নেমে কী বলবে ভাবতে-ভাবতে বাড়ির দিকে যায়। সামনেই দীপেনের বাইক। যাক নিশ্চিন্ত। অল্প শিস দিতে-দিতে লিফটের বোতাম টেপে তপন।

    দরজা অল্প ফাঁক করা মাত্র একটা তীব্র শীৎকারের শব্দ গরম সিসার মতো কানের ভেতর অব্দি জ্বালিয়ে দেয়। অল্প ফাঁক দরজা দিয়ে সোফার দু-দিকে ছড়ানো মিলির পায়ের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। নখ বিঁধে রয়ছে দীপেনের পিঠে। আলতো করে দরজা বন্ধ করে গেটের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে ওঠে। এবার? হঠাৎই মনে পড়ে গত মাসে কোথাও মদ না পেয়ে ড্রাইভারের পরামর্শে বানতলা ছাড়িয়ে একটা জনমানবশূন্য শুঁড়িখানায় গেছিল। পরে শুনেছে বার-টা আই ওয়াশ, আসল ব্যবসা চলে দোতলায়।

    আজ অবশ্য একেবারে ফাঁকা নয়, একটা লোক একমনে নিউজ দেখছে। তপন তার পাশের চেয়ারের বসে একটা সেরে দু-নম্বরটার অর্ডার দিল একটু জোরে। এইবার লোকটা তার দিকে তাকিয়ে অল্প হাসল। টিভিতে তখনও দেখা যাচ্ছে ভাঙা রেলব্র্রিজ। নীচে পড়ে থাকা একটা গাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে। সংবাদ-পাঠিকা জানাচ্ছেন, এই দুর্ঘটনায় বিখ্যাত ব্যবসায়ী গোকুল বসাক, ড্রাইভার করন থাপা, দেহরক্ষী পাপ্পু সিং তিনজনে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। ‘আপনার কি নিউজ দেখার নেশা?’ ‘আরে, না না দাদা, পাপী পেট কা সওয়াল।’ ‘মানে?’ ‘বললে বিশ্বাস করবেন কি না কে জানে, তবে এই অ্যাকসিডেন্টটা আমি করিয়েছি। টাকা পেলে আমি যে-কোনও লোককে সরিয়ে দিই, সে তো কত লোকই দেয়। তফাত হল, আমি সবসময়ে ব্যাপারটাকে দুর্ঘটনার চেহারা দিই, এক-একবার এক-একরকম। কারণ আমি কোনো মামুলি কিলার নই, আমি আর্টিস্ট। বিশ্বাস হচ্ছে না?’ লোকটা একটু হেসে মোবাইলটা বার করে, ‘অপছন্দের তিনজনের নাম, ছবি আর যদি পারেন তাদের ঠিকানা, হ্যাবিট্‌স ইত্যদি একটু লিখে দিন।’

    দরজা অল্প ফাঁক করা মাত্র একটা তীব্র শীৎকারের শব্দ গরম সিসার মতো কানের ভেতর অব্দি জ্বালিয়ে দেয়। অল্প ফাঁক দরজা দিয়ে সোফার দু-দিকে ছড়ানো মিলির পায়ের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। নখ বিঁধে রয়ছে দীপেনের পিঠে। আলতো করে দরজা বন্ধ করে গেটের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে ওঠে।

    নেশার ঝোঁকে নিজের মোবাইল থেকে পর পর মহাপাত্র, মিলি, দীপেনের ছবি পোস্ট করে তপন। আরও কিছুটা কথা চালিয়ে লোকটা উঠে পড়ে। তারপর থেকেই ভয়টা শুরু হয়। সত্যি যদি কিছু ঘটে? হাউজিং-এর সিসিটিভি-তে তো তাকে দেখা যাবে? যাক। বাড়িতে পা রেখে বোঝে, হি নিড্‌স ফ্রেশ এয়ার। ধুর, এসব কখনও হয় নাকি! এগুলি হল আমাজন আর নেটফ্লিক্সে অতিরিক্ত থ্রিলার দেখার ফল। কিন্তু আজ রাতে ফ্ল্যাটে ফেরার প্রশ্ন নেই, যাবে কোথায়? হোটেলে আধার-প্যান ছাড়া হোটেলে থাকা সম্ভব নয়। হাসপাতালের আউটডোর? না না, তার চেয়ে ভাল প্ল্যাটফর্ম-টিকিট কেটে হাওড়া স্টেশনে রাতটা কাটিয়ে দেওয়া।

    স্টেশনের পাঁচমেশালি ভিড়, চেঁচামিচিতে ওই লোকটার কথা ভুলেই গেছিল তপন। মদের চাপে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। ঘুম যখন ভাঙল তখন লোকাল ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট শুরু হয়ে গেছে। ভেতর অব্দি শুকিয়ে কাঠ। বেরিয়ে একটা ছোট জলের বোতল শেষ করে চা। নীচে বসে একমনে কাগজ ভাঁজ করছে ভেন্ডাররা। প্রথম পাতায় চোখ আটকে যায় তপনের। ভেতর অব্দি শিরশির করে ওঠে। মা ফ্লাইওভারে বাইকে আসার সময় চাইনিজ মাঞ্জায় কাউন্সিলার দীপেন ঘোষের মৃত্যু। ডান পাশের ছোট খবরগুলোর মধ্যে রয়েড স্ট্রিটে মুরারকা টমসনের গেস্ট হাউসে ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনা। ভেতরে ছিলেন মাধব মহাপাত্র, সুরেশ প্রসাদ ও অতুল খান্না। দমকলকর্মী্রা বহু কষ্টে দেহগুলি বার করেন। একেবারে তলায় ১৭ তলার বারান্দার থেকে পড়ে গৃহবধূ মিলি মণ্ডলের মৃত্যু।

    পাদ্রিবাবা বলতেন, পাপের বেতন মৃত্যু। এক্ষেত্রে কে পাপী? যারা মরল? যে মারল? না কি সে নিজে? তার কি উচিত নয় থানায় গিয়ে সবটা জানানো? তারপর থানা হয় তাকে পাগলাগারদে পাঠাবে, না হলে জেরা করে-করে পাগল করে দেবে। তার কথা তো সিম্পল। ন্যায্য প্রোমোশন না পেয়ে বাড়ি যেতে গিয়েও বেরিয়ে আসে। দমবন্ধ লাগছিল। তাই দূরে, অনেক দূরে, ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড। তারপর অত মাল খেয়ে গিন্নির ভয়ে হাওড়া। পকেটে প্ল্যাটফর্ম-টিকিট, অকাট্য অ্যালিবাই।

    যাই হোক, একজন প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে তার কি উচিত নয় পুলিশকে সবটা জানানো? চা-এর ভাঁড়টা ফেলে তপন বোঝে, সবচেয়ে আগে যেখানে যাওয়া দরকার সেটা বাথরুম। ওখানে বসে অনেকদিন বাদে মা’র কথা মনে হয় তপনের। মা বলত, ‘ঠাকুর যা করে ভালোর জন্যই করে।’ তাই-ই হবে। কারণ মা’রা কি ভুল বলে? বলতে পারে কোনওদিন?

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook