ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘শুধু বিচ্ছিন্নতা নয়’


    পৃথ্বী বসু (September 17, 2022)
     

    ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হল গত মাসের ১৫ আগস্ট। ৭৫ বছর! যেন বিশ্বাসই হতে চায় না কারো। একদল প্রশ্ন তুলল, যে-স্বাধীন রাষ্ট্রে আমরা বর্তমানে বেঁচে রয়েছি, তা কি আদৌ স্বাধীন? আরেকদল পতাকা ওড়াল, হইহই করল। মোদ্দা কথা, উদ্‌যাপনের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল গোটা দেশ। আর তার কিছুটা দূরে, ম্লান ছায়ার মতো যেন পড়ে রইল দেশের স্বাধীনতারই একটা অন্ধকার দিক। দেশভাগ। স্বাধীন দেশের ট্রাম্পেটবাদ্যের আওয়াজের তলায় চাপা পড়ে গেল ছিন্নমূল মানুষের আর্তনাদ। 

    বছরখানেক আগের এক সন্ধ্যায় টালা পার্ক দিয়ে হেঁটে ফেরার সময় ফোন আসে বন্ধু তন্ময় ভট্টাচার্যের। দেশভাগের কবিতা আর গান নিয়ে একটা বই ও করতে চায়। এই ধরনের সংকলন তো নেই, তাই এই উদ্যোগ। এই পরিকল্পনার কথা শুনে কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিলাম। এই প্রজন্মেরও কেউ-কেউ তাহলে দেশভাগ নিয়ে এতটা ভাবে? যে-যন্ত্রণা চুঁইয়ে-চুঁইয়ে ওর মধ্যে এসে ঢুকেছে, ও তাহলে তার প্রতি দায়বদ্ধ? আমি নিজে ওর ওই প্রকল্পে থাকতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু যারা যুক্ত ছিল ওর সঙ্গে সবাইকেই সাধুবাদ জানাই, ‘দেশভাগ’ নিয়ে এই ধরনের একটা সংকলন করার জন্য! কিছুদিন আগেই সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা থেকে ‘দেশভাগ এবং…’ নাম দিয়ে সেই সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

    এই বই যেমন কবিতা আর গানের ভেতর দিয়ে দেশভাগ-কে দুই মলাটের মধ্যে ধরতে চেয়েছিল, তেমনই বছর খানেক আগেই আরও বড় করে, আরও বিস্তৃত পরিসরে দেশভাগচর্চাকে সবার সামনে তুলে আনার প্রয়াস শুরু হয়েছিল কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়ামের হাত ধরে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় : ভার্চুয়াল কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়াম বা সংক্ষেপে V-KPM. ২৪ আগস্ট কলকাতার আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়াম ও আর্কিটেকচার আরবানিজম রিসার্চ-এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই প্রকল্পটির কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধক ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শ্রীযোগেন চৌধুরী এবং চিত্র-পরিচালক শ্রীসুপ্রিয় সেন।

    যোগেন চৌধুরী তাঁর সূচনাকথায় বলেন, ‘ওপার বাংলা থেকে যেমন বহু মানুষ এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন, তেমনই এপার বাংলা থেকেও বহু মানুষ ওপার বাংলায় চলে যান। এখন যখন বাংলাদেশে যাই, তাঁদের সঙ্গে কথা বলি, মনে হয় না যে কোনও দেশভাগের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রয়েছি।’ তিনি আন্তর্জালিক পরিসরের বাইরে বেরিয়ে এই প্রকল্পকে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেন, ‘পাঞ্জাবের অমৃতসরে যেরকম দেশভাগকে কেন্দ্র করে সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে, আশা করি আমরাও এখানে সেইরকম কিছু একটা তৈরি করতে পারব।’ সেই উদ্যোগে তাঁর যুক্ত থাকার আগ্রহও তিনি ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে সুপ্রিয় সেন বলেন, ‘উদ্বাস্তুদের নিজের দেশ হারানোর যে-যন্ত্রণা, সেটা ছুঁয়ে দেখার নয়; তা একরকমের অধরা ঐতিহ্য। আজকে যখন দাঁড়িয়ে দেশভাগ নিয়ে আলোচনা করি, তখন নির্মমভাবে আমাদের গোটা ইতিহাসটাকে দেখা উচিত। আমার মনে হয়, এইরকম একটা উদ্যোগ সেই জায়গাটা তৈরি করবে। শুধু মিউজিয়াম নয়, আলাদা একটা চর্চার পরিসর তৈরি করতে হবে। তাহলেই একটা সংগ্রহশালা অনেক বেশি জীবন্ত এবং তাৎপূর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’

    শুধু ১৯৪৭ সালের দেশভাগ নয়, এই মিউজিয়ামে ধরা থাকবে তার আগের-পরের নানান ঐতিহাসিক ঘটনার ইতিহাস, যা দেশভাগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সম্পর্কিত। ধরা থাকবে দণ্ডকারণ্য, মরিচঝাঁপির কথাও। এছাড়া অসংখ্য মানুষের ব্যক্তিগত বয়ান, অজস্র ছবি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সেই ভয়াবহ দিনগুলোর ঘূর্ণাবর্তে।

    ওইদিন সন্ধ্যায় এই প্রকল্পের প্রধান দুটি দিক দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এর বিন্যাস-সজ্জা কেমন এবং কোন কোন বিষয় কীভাবে এই ভার্চুয়াল মিউজিয়ামের মধ্যে রাখা হয়েছে। যেমন, আমরা জানতে পারি, দেশভাগের নানান সময়-স্মারককে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এই প্রকল্পের রূপায়ণে; যাতে, সাধারণ মানুষ সেই সময়ের একটা ধারণা পান। আবার শুধু পূর্ব বাংলা কিংবা পশ্চিম বাংলা নয়, এই মিউজিয়ামের মধ্যে অসম, ত্রিপুরা, এমনকী অরুণাচল প্রদেশের কথাও দেশভাগের অনুষঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘যা সবার অগোচরে, তাই নিয়েও আমাদের কাজ।’ এই ভাবনা থেকেই শুধু ১৯৪৭ সালের দেশভাগ নয়, এই মিউজিয়ামে ধরা থাকবে তার আগের-পরের নানান ঐতিহাসিক ঘটনার ইতিহাস, যা দেশভাগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সম্পর্কিত। ধরা থাকবে দণ্ডকারণ্য, মরিচঝাঁপির কথাও। এছাড়া অসংখ্য মানুষের ব্যক্তিগত বয়ান, অজস্র ছবি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সেই ভয়াবহ দিনগুলোর ঘূর্ণাবর্তে।

    কীভাবে এল এই ভার্চুয়াল মিউজিয়াম তৈরির ভাবনা? কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক ঋতুপর্ণা রায় জানান, ‘এই ভাবনার কথা আর্কিটেকচার আরবানিজম রিসার্চ-এর অর্ঘ্য জ্যোতি-ই আমাদের প্রথম বলে। ও আমাদের কথা জানত; আমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে ওর অনেকটা ধারণা ছিল। ২০২০ সালের একটা অনলাইন অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম বক্তা আর ও ছিল শ্রোতা। তারপর থেকেই আমাদের যোগাযোগ হয়। এরপরে এই প্রকল্পের একটা প্রাথমিক কাঠামো তৈরি করে ও আমাদের দেখায়। সেটা দেখে এতই মুগ্ধ হই সবাই, মনে হয় এই কাজটা আমরা যৌথভাবে করতে পারি। তবে এই ভাবনাটা অর্ঘ্য-র মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও, দুর্দান্ত টিমওয়ার্ক ছাড়া কিছুতেই এটা সম্ভব হত না। কেননা এই কাজের প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছিল, যখন অতিমারী আমাদের সব কিছু তছনছ করে দিয়েছিল! এই প্রকল্পটা শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় আমাদের লাগবে। হয়তো ডিসেম্বরের মধ্যেই সাধারণ দর্শকেরা এই মিউজিয়াম অনলাইনে দেখতে পাবেন।’

    আপাত-বিচ্ছিন্নতার মধ্যে দিয়ে আসলে বিচ্ছিন্নতাকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না, তার শেকড় আরও অনেক গভীরে। তাই চোখের জলের কোনও কাঁটাতার নেই, সুরের কোনও দেশ হয় না। ৭৫ বছর আগের একটা বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস, এতদিন পরে একটা বিচ্ছিন্ন সময়ের মধ্যে দিয়ে উঠে আসতে পেরেছে, এই বা কম আনন্দের কী! এও কি এক অর্থে জুড়ে থাকা নয়?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook