ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • অনটন ও গ্রামোফোন


    ইন্দ্রাণী দাশশর্মা (September 17, 2022)
     

    গান জিনিসটা ১৯৪০-এর দশকে শুধু বামপন্থী দলগুলোর গণ-আন্দোলনের অস্ত্র ছিল না, পপুলার বা জনপ্রিয়তাকামী গানেও সেই সময়ের নগ্ন বাস্তব ছবি ও তার সমালোচনা উঠে এসেছে। শিল্পী গিরিন চক্রবর্তীর গাওয়া ‘শিয়ালদহ গোয়ালন্দ আজও আছে ভাই/ আমি যাব আমার বাড়ি, সোজা রাস্তা নাই’ গানের প্রথম দুটো লাইনেই দেশভাগজনিত কারণে এপারে চলে আসা মানুষগুলোর আত্মপরিচয় হারানোর বেদনা ফুটে ওঠে। চিত্ত রায়ের সুরে বাঁধা এই গানের কয়েকটা লাইন এইরকম : 

    ‘বাড়ি ছিল নারানগঞ্জে
    ব্যবসা করতাম বাখরগঞ্জে 
    ছিল কিছু মানিকগঞ্জে
    ভাবি বসে তাই

    পদ্মা ম্যাঘনা ঢলেশ্বরী
    যখন মনে যায় গো পড়ি
    তখন আমি কী যে করি
    দিশা নাহি পাই। 
    আমি যাব আমার বাড়ি
    সোজা রাস্তা নাই…।’  

    অতি-চেনা পল্লিসুরে গায়ক যখন এই আবেগকে ভাষা দেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সর্বজনীন করে তোলেন। গিরিনবাবুরই লেখা এবং চিত্তবাবুরই সুরে আর একটা উল্লেখযোগ্য গান : 

    ‘মনে পড়ে, আজও মনে পড়ে
    ভোরের বেলায় সেই যে মধুর পাইখ-পাখালির গান 
    তারই সাথে প্রভাতী আর মসজিদের আজান (গো)
    রহিমচাচা মহিমকাকা কান্ধে লাঙল নিয়া
    ক্ষেতের পথে যাইত তারা চণ্ডীতলা দিয়া

    আগন মাসে নবান্ন আর পৌষে মাসে পিঠা 
    আজও মুখে লেগে আছে স্বাদ তারই মিঠা

    লুঙ্গি পরা গেঞ্জি গায়ে মাথায় রুমাল বাঁধা
    রহিমচাচা গাইত জারি, গলাখানি সাধা…’ 


    তবে এগুলো তো সিরিয়াস গান, ওই সময়ের মজার বা কমিক গানেও এই সমাজচেতনা দেখতে পাই। হাসির মোড়কে উঠে আসে সাম্প্রদায়িকতা, দেশভাগ, উদ্বাস্তুদের কষ্ট, রাষ্ট্রনীতি ও শোষণের নগ্ন ছবি। আপাত-নিরীহ এইসব ব্যঙ্গগীতি তখন ছিল জনচেতনা ও জন-জাগরণ তৈরি করার বিশেষ হাতিয়ার। চিন্তাহরণ মুখোপাধ্যায় ও সম্প্রদায়ের একটা কমিক গান : 

    ‘স্বাধীন স্বাধীন মোরা স্বাধীন স্বাধীন
    নাচি তা ধিন তা ধিন করে তা ধিন তা ধিন 
    বাজাও ঠনঠনাঠন ঠন ঠন করে 
    ঘটি বাটি ফুটো টিন 
    আজ আনন্দে মাখি গায়ে 
    কেরোসিন, তারপিন, টিঙ্কচার আয়োডিন

    (মোরা) হিন্দু-মুসলিম গায়ে দিয়ে মসলিন 
    ভায়ে-ভায়ে বাংলায় রব চিরদিন
    বিপদে চম্পট দেব ফেলে ড্রপসিন।…’  

    হিন্দু-মুসলিম সাধারণ মানুষ তো দাঙ্গা চায় না। তবুও দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়, তাতে সাধারণ মানুষেরই কপাল পোড়ে। ভারতে এত জাতি, এত সম্প্রদায়, তবু সাম্প্রদায়িকতার ভাগ দুটো— হিন্দু ও মুসলমান। রাজনৈতিক নেতাদের উদ্ভট হঠকারী ও নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে গানটায়। 

    শিল্পী রঞ্জিত রায়ের ‘রাম-রহিমের যুদ্ধ’ গানে দাঙ্গার একটা ছবি পাই:

    ‘(ওরে) রাম-রাবণের যুদ্ধ আমি পড়সি ইতিহাসে 
    (আর) রাম-রহিমের যুদ্ধ আমার আইজ চোখে ভাসে। 
    কেউ কয় জয়হিন্দ, কেউ আল্লাহো আকবর 
    শঙ্খ ঘণ্টার আওয়াজে বুক করে ধড়ফড়
    দাদা করে ধড়ফড়।

    মানষের সামনে মানষের চক্ষু কাকে ঠুইকরা খায় 
    পতির সামনে সতী নারীর ধর্ম খোয়া যায়
    (আমরা) ভায়ে ভায়ে ঝগড়া করি উস্কানি দেয় পরে 
    (আর) শান্ত করতে বিবাদ তারাই বন্দুক তুইল্যা ধরে 
    ঝড়-তুফান কাটাইয়া আমরা তীরে ডোবাই নাও 
    বিবাদ ছাইড়া ভাইরা একবার চক্ষু তুইল্যা চাও
    খুলতে গিয়া পায়ের বেড়ি ফাঁসে জড়াই গলা (হায় রে)
    মা গো বাড়া ভাত বান্দরে খায় আমরা চুষি কলা
    হায় হায় আমরা চুষি কলা।’

    নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ লিখেছিলেন, ‘রাম-রহিম না জুদা করো/ দিল কো সাচ্চা রাখো জি/ হাঁ জি হাঁ জি করতে রহো/ দুনিয়াদারি দেখো জি।’ ‘আবু হোসেন’ নাটকে এই গান প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৮৯৩ সালে, তার অর্ধ শতাব্দীর কিছু বছর পরে এই ভারত রাম-রহিমের রক্তের নেশায় মেতে উঠল। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৪৬ থেকে পরবর্তী ১৬ মাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যান। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত সমগ্র ব্রিটিশ কমনওয়েলথ-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে যত মানুষ মারা গেছেন, তার প্রায় সমান। কলকাতা-বরিশাল-নোয়াখালি : সর্বত্র একই ছবি। অবশ্য দাঙ্গায় হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই সমানভাবে অভিযুক্ত। দুই জাতির পরস্পরের প্রতি ঘৃণা কোনও নতুন বিষয় ছিল না। নতুন যা ঘটল, তা হল ‘রায়ট’। হারিয়ে গেল বাঙালি, তৈরি হল নতুন দুটো জাতি। তারপর স্বাধীনতা এল। চিন্তাহরণ মুখোপাধ্যায় ও সম্প্রদায় গান বাঁধলেন :

    ‘এবার স্বাধীনতা পেলে বাবা
    স্বাধীনতার গুঁতায় গরিবের প্রাণ যায়
    এখন বলো কোথা যাবা?
    কোথায় বলো হাওয়া খাবা? 
    হিন্দুস্তানে না পাকিস্তানে বলো
    বাসা এখন বান্ধিবা?

    স্বাধীন ভারতে সবাই কালিয়া পোলাও খাবা
    খাবা খাবা জন্মের মতো খাবা
    যে না খাবে সে আমার মাথা খাবা

    বাঘে-মোষে যুদ্ধ হল
    গরিবের প্রাণ গেল
    বড় বড় নেতাদের কী বা তাতে এল-গেল
    গরিবের রক্তে ভারত স্বাধীন হল
    মনে মনে ভেবে দেখ বাবা
    চিন্তাহরণ বলে এখনও না বুঝিলে
    খালে বিলে নালায়
    ডোবায় পড়ে খাবি খাবা।’

    শিল্পী বরদা গুহ তাঁর গদ্য-গানে মিনতি করেন মা দুর্গার কাছে : 

    ‘গান: 
    মাথা খাও মা গো দশভুজা তুমি
    মিনতি আমার রাখো
    এই দুর্দিনে আর বাংলায় মা গো
    হতভাগা এই বাংলায় মা গো
    পুজো পেতে এসো না কো।

    কথা: 
    দেশের হাল মা বড়ই খারাপ, দেশের নাভিশ্বাস উঠেছে মা, এই হয়ে এল বলে…

    গান: 
    দেশের হাল মা বড়ই খারাপ
    দেখে পাবে তুমি ভয়
    ছুরি মেরে ভাই ভায়ের বুকের
    করিছে রক্তক্ষয়
    তার উপর যদি আসার পথেতে
    কারফিউ থাকে জারি…
    পুলিশ জুলুমে জেনো মা তোমার
    পরান যাইবে ছাড়ি
    তাহা ছাড়া মা গো এইবার দ্যাখো 
    হয়েছে বঙ্গভঙ্গ
    অসময়ে এলে তোমারও হয়তো
    আস্ত রবে না অঙ্গ…

    কথা:
    চাল নেই, চিনি নেই, ধুতি নেই, শাড়ি নেই, কিছুই নেই, নৈবিদ্যি দেব কী দিয়ে বল?

    গান: 
    বাপের বাড়িতে আসিতে চাও তো
    খোশ মেজাজেতে ভারি
    খবর কি রাখো কালোবাজারেতে 
    কয় টাকা জোড়া শাড়ি?
    জানো না কি তুমি কার্ড ছাড়া হেথা—

    কথা:
    কার্ড চেনো মা, কার্ড? পোস্টোকার্ড নয় গো মা, রেশন কার্ড মা, রেশন কার্ড।

    গান:
    — মেলে না ছটাক চাল
    তুমি তো চাও মা আসিবারে লয়ে
    বিরাট পঙ্গপাল…’


    ওপার থেকে চলে আসা লক্ষ-লক্ষ মানুষ কী অসহায় ও অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছিলেন, তার ইঙ্গিত এই মা দুর্গার প্রতি মিনতির অছিলায় দেওয়া হয়েছে। বরদাবাবুর আরও দুটি গানে এই ছবি পাই : ‘আইছি রে পশ্চিমবঙ্গে’ এবং ‘পাইছি রে ভালবাসা’। দুটি গানই যেন গাইছেন দেশভাগের কারণে কলকাতায় চলে আসা এক উদ্বাস্তু মানুষ। প্রথম গানে শুনি একটুকরো মাথা-গোঁজার ঠাঁইয়ের সন্ধানে তাঁর আকুল চেষ্টার করুণ সুর। অসহায়তার পাশাপাশি মিশে থাকে জাত্যভিমান :

    ‘বাপের ভিটায় জাত নাই রে পাকিস্তানের দ্যাশে
    শুচি হইতেই গঙ্গাপাড়ে আসলাম অবশেষে
    ইজ্জতখান আনছি সাথে সেটুক ভুলি নাই
    পূর্ববঙ্গে আমার থিকা বড় কুলীন নাই।’

    (তারপর নিজেকে নিয়েই খানিক রসিকতা করছেন মানুষটি)

    ‘আমরা হইলাম ভৃগুমুনির মাইজা খুড়ার অংশ
    ম্যাজাজ হইব না? কত বড় বংশ!
    আমাগো সে পূর্বপুরুষ কংসরাজের সভায়
    খঞ্জনি বাজাইত, শুনছি গল্প কইছে বাবায়
    ম্যাজাজ লইয়া আইস্যা পড়লাম ঘরবাড়ি সব ছাইড়া
    জিনিসপত্র আনছি কিন্তু অনেকই আছে পইড়া
    ফ্যা-ফ্যা কইরা ঘুরি একটা বাসার সন্ধানে
    বাসা একখান দিবা নাকি কুলীনের এ সন্তানে?

    আমাগো সুরেনের ভাগ্নার কালীঘাটে বাসা
    তারই ভরসায় গুষ্টিগোত্রে কলকাতাতে আসা
    দ্যাড় কামরার বাসায় তাহার তিরিশ জনার স্থান
    দিন ফুরাইতে রেশন উজাড়, চাউলে পড়ে টান।
    — তখন যে যায় প্রাণ।’

    গানের শেষ চরণগুলিতে চূড়ান্ত আক্ষেপ ধ্বনিত হয় গৃহহীন মানুষটির :

    ‘চাল নাই, চিনি নাই, জল নাই, বাসা নাই
    বাসা নাই, আশা নাই, প্রাণে ভালবাসা নাই
    হায় রে হিন্দুস্তান।’

    একই রেকর্ডে অন্যপিঠে দ্বিতীয় গানটি। বাড়ি খোঁজা এবং আস্তানা পাওয়ার গল্প শোনান মানুষটি :

    ‘আমার হইছে রাজার কপাল, পাইয়া গেছি বাড়ি
    ইচ্ছা করি ডিগবাজি খাই, লম্ফঝম্প মারি।’

    গল্পটা এরকম : হঠাৎই পাওয়া গেছে বড়-বড় থামওয়ালা প্রকাণ্ড বাড়ি, ভাড়া লাগে না, গেটে দারোয়ান। অবশ্য শ্রোতা খানিক পরেই বুঝতে পারেন, বাস্তুহারা ওই ব্যক্তি আর তাঁর পরিবার ঠাঁই পেয়েছে ডালহৌসির কোনও অফিসবাড়ির বারান্দার একধারে। 

    দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই মজুতদার ও কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যে জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। নেহরুর ঘোষণা : কালোবাজারিদের নিকটতম ল্যাম্পপোস্টে ঝোলানো হবে— তখন নিতান্ত আস্ফালনে পরিণত হয়েছিল। শিল্পী ক্ষিতীশ বোস তাঁর গানের দল নিয়ে রেকর্ড করেছিলেন একটি কমিক স্কেচ : ‘ব্রজগোপালের রাশিয়া গমন’। ব্রজগোপাল এক মজুতদার। তার গুদামভরা চাল। পুলিশের ভয় তার নেই, তবে সে ভয় পায় খেতে-না-পাওয়া দেশীয় জনতার হামলাকে। গুদাম পাহার দেওয়ার জন্য ব্রজ নিজেই তার সহযোগী ক্যাবলাকে নিয়ে গুদামঘরেই রাত কাটায় এবং সারারাত দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠে। 

    একদিন সে স্বপ্ন দ্যাখে, গুদামে হামলা হওয়ার ভয়ে সে কয়েকটা আমেরিকান ট্যাঙ্ক জোগাড় করে, তাতে চাল ভরে, আফগানিস্তান-বেলুচিস্তানের দিকে চলেছে। পথে একদল যুদ্ধফেরত সুন্দরীকে ট্যাঙ্কে তুলে নেয়। আনন্দে আটখানা হয়ে সে বলে : ‘…আইজ অ্যাক্কেরে ২৪ গাড়ি চাউল বোঝাই আর পাঁচ গাড়ি সুন্দরী বোঝাই! আফগানিস্তান-বেলুচিস্তানে গিয়া সব ওলটপালট কইরা ফেলাইমু। চালাও চালাও…।’ ব্রজগোপালের কনভয় তারপরে ঢুকে পড়ে রাশিয়ায়।  

    ব্রজ : রাশিয়া? ওরে বাপু রে বাপু। সেখানে শুনেছি বড়লোক পাইলে অ্যাক্কেরে প্যাট ফুটা কইরা ফেলায়।

    রূপসি : কিন্তু গরিবর স্বর্গ। পাঁচ টাকা চাউলের মণ।

    ব্রজ : মোটে পাঁচ টাকা? ও মণি, কম্ম নাই। তার চাইতে চলো যাই চিন দেশে। সেখানে শুনছি ৮৫ টাকা চাউলের মণ। অ্যাক্কেরে ব্যবসা খুবই ভাল জমবে। 

    রূপসি : ব্রিটেন, আমেরিকা, চিন, ভারতবর্ষ— আপনার মতো লক্ষপতিদের স্বর্গস্থান। আমরা সব গরিব। আমরা সব মস্কো শহরে যাব। সেখানে বেকার নেই, গরিব নেই।

    একদিকে সুন্দরীদের মস্কোয় যাওয়ার জন্য বিদ্রোহ, অন্যদিকে আমেরিকান ট্যাংকবাহিনী দেখে রেড আর্মি আক্রমণ করে। গোলাগুলিতে ভয় পেয়ে ব্রজগোপাল সুন্দরীর আঁচল ধরে ট্যাংকের নীচে গিয়ে লুকোয়। ক্যাবলা ব্রজগোপালের ঘুম ভাঙিয়ে বলে, ঘুমের মধ্যে ব্রজগোপাল তার কাছা ধরে টানাটানি করছে। শেষ কথা অবশ্য বলে সেই ক্যাবলাই: কালোবাজারি করে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন ঠিক এরকম ভাবেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। 

    গ্রামোফোন রেকর্ডের আদি পর্যায়ে এমনই সব গানে, এবং মজার মোড়কে গান ও স্কেচে, ফুটে উঠেছে সেই সময়ের মূল সংকট এবং অভিযোগ। এখনকার মতোই, তখনও সাধারণ মানুষ তাঁদের দুর্দশার জন্য দায়ী করেছেন স্বার্থসর্বস্ব রাজনৈতিক নেতাদের। সেই কথাই কয়েকজন শিল্পী তাঁদের গানে ও রসিকতায় প্রকাশ করেছেন। গণসঙ্গীতের মতো সরাসরি চাবুক না হেনে, তাঁরা একটু ঘুরিয়ে, হেসে ও হাসিয়ে বক্তব্যকে আরও জনপ্রিয় করতে চেয়েছেন। শুধু বাণিজ্যিক কারণে নয়, অনেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সহজ ভাষা, সরল সুর, বাস্তব পরিস্থিতির স্পষ্ট উন্মোচন, সঙ্গে নিজেদের নিয়েই হাসাহাসি— এতে কথা ও গানগুলো বৃহৎ গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে গেছে। বহু মানুষের বেদনা এই গানে মর্মান্তিক ভাবে বিধৃত আছে। বহু মানুষকে তা সমাজের অনাচার দূর করতে, সংগ্রামে কোনওভাবে শামিল হতে, প্রণোদিত করেছে। আজ আমরা এগুলো প্রায় সবই ভুলে গেছি, কিন্তু মনে রাখলে বোধহয় আমাদেরই লাভ।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook