ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শুভারম্ভ: পর্ব ১৪


    শুভা মুদ্গল (Shubha Mudgal) (April 23, 2022)
     

    রঙ্গে-ব্যঙ্গে মার্গসঙ্গীত

    কিছু বছর আগে, কলকাতায় একটা অনুষ্ঠানে গ্রিনরুম থেকে মঞ্চে গান গাইতে ওঠার পথে হঠাৎ আমাদের জানানো হল যে কনসার্টটা নাকি জাতীয় টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হবে। আমাদের কেন আগে জানানো হয়নি, তা নিয়ে কোনো আলোচনা করার, বা আপত্তি করার কোনো সময় ছিল না। তা ছাড়া, অবিসংবাদিত এক মহিলার স্মৃতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটার আয়োজক ছিল এক নামী প্রতিষ্ঠান এবং হচ্ছিল এক নামকরা জায়গায়, অগত্যা আমাদের রাজি হয়ে যেতেই হয়। চট করে বাড়িতে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে রাখি, পরিবারের কেউ যদি অনুষ্ঠানটা লাইভ দেখতে চান, তাঁরা দেখতে পারবেন।

    অবাক ব্যাপার, অনুষ্ঠানটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা কেউই কোনো একটাও মেসেজ বা কল পেলাম না যা থেকে বোঝা যারে টেলিকাস্টটা আদৌ কেউ দেখেছেন কি না, বা দেখলেও আদৌ উপভোগ করেছেন কি না?

    ফোন করার পর আসল কারণটা বোঝা গেল। আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে বাড়িতে শুধু হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল, কেননা গোটা কনসার্টটায় আমাদের টিভির পর্দায় দেখা গেলেও, এক মুহুর্তের জন্যেও শোনা যায়নি। একটা লম্বা, নির্বাক অ্যানিমেশন কমিক স্ট্রিপের মতো আমরা গেয়েছি, বাজিয়েছি, অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলেছি, হেসেছি, সম-কে চিহ্নিত করেছি, মঞ্চে একে অপরের প্রশংসা করেছি— এবং এ-সবই একটাও স্বর, মাত্রা বা শব্দ ছাড়া। স্টেজে আমরা কেউই অতিরিক্ত অঙ্গভঙ্গী বা আচরণ করি না, কিন্তু তাও এই নীরব টেলিকাস্টটা আমাদের অনুষ্ঠানটাকে খুব উঁচুদরের ব্যঙ্গচিত্রের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল।

    বিকৃতি আর অতিরঞ্জন ক্যারিকেচারের একটা অবিচ্ছেদ্য, প্রচলিত অংশ। জনপ্রিয় অভিনেতা বোমান ইরানি যে সর্ষের তেলের বিজ্ঞাপনে একজন তবলচির ভূমিকায় অভিনয় করেন, সেটা দেখে আমাদের দুর্ভাগা, নীরব টেলিকাস্টটার কথা মনে পড়ে গেল। বিজ্ঞাপনটায় প্রধানত একটা রাগপ্রধান মার্গসঙ্গীত অনুষ্ঠানকে ব্যঙ্গ করে দেখানো হয়, যেখানে তবলায় বোমান ছাড়াও একজন সেতারবাদক, একজন হারমোনিয়াম বাদক এবং অবশ্যই কিছু বোদ্ধা শ্রোতাও রয়েছেন। সুরের তীব্রতার সঙ্গে-সঙ্গে অভিনেতারাও প্রত্যেকেই তাঁদের অভিনয়ে রাগসঙ্গীত শিল্পীদের অতিরঞ্জিত অঙ্গভঙ্গী ফুটিয়ে তোলেন; শ্রোতারাও অনুরূপ হাস্যকর অঙ্গভঙ্গীতে মাথা নাড়িয়ে যান। সত্যি বলতে, অতিরঞ্জিত হলেও, বাস্তব জীবনে মার্গসঙ্গীতশিল্পীদের মঞ্চে আচরণের সঙ্গে এই অভিনয়ের যে মিল, তা কিন্তু নেহাত লক্ষ না করে থাকা যায় না।

    বিকৃতি আর অতিরঞ্জন ক্যারিকেচারের একটা অবিচ্ছেদ্য, প্রচলিত অংশ। জনপ্রিয় অভিনেতা বোমান ইরানি যে সর্ষের তেলের বিজ্ঞাপনে একজন তবলচির ভূমিকায় অভিনয় করেন, সেটা দেখে আমাদের দুর্ভাগা, নীরব টেলিকাস্টটার কথা মনে পড়ে গেল। বিজ্ঞাপনটায় প্রধানত একটা রাগপ্রধান মার্গসঙ্গীত অনুষ্ঠানকে ব্যঙ্গ করে দেখানো হয়, যেখানে তবলায় বোমান ছাড়াও একজন সেতারবাদক, একজন হারমোনিয়াম বাদক এবং অবশ্যই কিছু বোদ্ধা শ্রোতাও রয়েছেন। সুরের তীব্রতার সঙ্গে-সঙ্গে অভিনেতারাও প্রত্যেকেই তাঁদের অভিনয়ে রাগসঙ্গীত শিল্পীদের অতিরঞ্জিত অঙ্গভঙ্গী ফুটিয়ে তোলেন; শ্রোতারাও অনুরূপ হাস্যকর অঙ্গভঙ্গীতে মাথা নাড়িয়ে যান।

    ক্লাসিকাল সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে ঠাট্টা করে তৈরি করা বিজ্ঞাপনের মধ্যে এই তেলের বিজ্ঞাপনটাই একমাত্র নয়। ফলের ফ্লেভারের একটা লজেন্সের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় এক রাগসঙ্গীত গায়ক এবং এক তবলচির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দুজনেই তাঁদের সমর্থকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বসে একে অন্যের উপর আধিপত্যে জারি করার প্রাণপণ চেষ্টা করে যান, দুজনেই ভয়ানক বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী করতে থাকেন। বাজনার উদ্যমে ঘেমে-নেয়ে হাঁপিয়ে ওঠা তবলাবাদক যখন প্রায় জিতে যান আর কী, গায়ক মহাশয় তাঁর জিভ দিয়ে ‘টাং র‍্যাস্পবেরি’ নামে এমন এক ভেংচানির কেরামতি দেখান যে উল্টে তাঁর জয় হয় প্রায় ফোটো-ফিনিশে!

    সম্প্রতি, বিশেষত গত দু-বছরে, মিউজিক ফেস্টিভালগুলোর অধিকাংশই হয় সম্পূর্ণরূপে অনলাইন নয়তো হাইব্রিড ফর্মাটে অফলাইন এবং লাইভ স্ট্রিমিং গতে বদলে গেছে। বহু পারফরম্যান্স এবং গোটা অনুষ্ঠানটা এখন হয় স্ট্রিমিং ফর্ম্যাটে নয়তো পরে ইউটিউবে জমে যাওয়া ভিডিওতে দেখা সম্ভব হয়ে উঠেছে। ক্যারিকেচার করেন যারা, তাঁদের কাছে এইসব অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লাসিকাল সঙ্গীতের উপর আরো ব্যঙ্গাত্মক বিজ্ঞাপন বা হাস্যরসোদ্দীপক কাজকর্ম বানানোর পক্ষে প্রায় রত্নখনি।

    গত বছর, এক নামজাদা ফেস্টিভালে একটা ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে জনৈক শিল্পী সহশিল্পী হিসেবে শুধু এক পাখোয়াজ-বাদক নয়, রং-মেলানো জামাকাপড় পরা বাচ্চাদের একটা গোটা দলকেই মঞ্চে তুলে আনেন। গান শুরু হওয়ার কিছু পরেই এই শিল্পী আকস্মিক খিঁচুনিসুলভ অঙ্গভঙ্গী শুরু করে দেন এবং বেয়াড়াভাবে হাত নাড়ানো শুরু করেন। তীব্র গতিতে লয়কারি গাওয়ার সঙ্গে তাঁর নিজের মাথার উপর অদৃশ্য খোঁপা ধরে টান মারার সেই দৃশ্য ব্যঙ্গশিল্পীদের কাছে স্বর্ণখনির সমতুল্য; ক্যারিকেচার এই এলো বলে।

    আমাদের, এবং ব্যঙ্গশিল্পীদের সৌভাগ্য এটাই যে আমাদের সেন্স অফ হিউমার বেঁচেবর্তে আছে, তাই মার্গসঙ্গীতশিল্পীদের চটকদার সাজপোশাক, বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী এবং হাস্যাস্পদ আচার-ব্যবহার নিয়ে ব্যঙ্গ করা চলে, অন্তত এখনও অবধি। কিন্তু এ-যুগে কে কখন বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়বেন, তার কোনো হিসেব নেই, তাই কখন যে কার মনে হতে পারে এই সব ব্যাঙ্গকর্মে আমাদের শ্রদ্ধেয় রাগসঙ্গীতের ধারাকে অবমাননা করা হচ্ছে, তারও কোনো ঠিক নেই। যতদিন না কেউ রাগ করছেন, তাই, আসুন আমরা ক্লাসিকাল সঙ্গীত নিয়ে বানানো ‘মজা’গুলোকে নেহাতই নিরীহ এবং তুচ্ছ বলে উপেক্ষা করি, বা গুছিয়ে বসে নিজেদেরকে নিয়েই একটু হেসে নিই।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook