ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • উত্তরবঙ্গ ডায়েরি: পর্ব ১০


    সুমনা রায় (Sumana Roy) (December 4, 2021)
     
    ডিসেম্বর ও ভ্যাকসিন  

    ডিসেম্বরের প্রথমার্ধ উজ্জ্বল, শীতল ও স্বাস্থ্যকর; কিন্তু পরবর্তী অর্ধে একাধিকবার বৃষ্টি হয়, শিলাবৃষ্টি বা তুষারপাতও অস্বাভাবিক নয়। এখানে বছরের সব ঋতুতেই দিনের যে কোনও সময় স্বচ্ছন্দে ঘরের বাইরে যাওয়া যায়। যদিও একটি ছাতা সঙ্গে থাকলে মন্দ হয় না। কেউ কেউ এই আবহাওয়াকে ইংল্যান্ডের জলবায়ুর চেয়েও পছন্দ করেন। কিন্তু আমি সেই দলে পড়ি না, কারণ বৃষ্টি যেন গ্রীষ্মকে বাধা দেয়, বড্ড ঠান্ডা করে তোলে। ফলে শীতকালটা ইংল্যান্ডের মতো ঠান্ডা না হলেও, গরমকালটাও তত গরম হয় না। তবে এসব সত্ত্বেও, জায়গাটা বড়ই মনোরম, এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভাল…’ 

    উপরের অংশটি ‘দ্য ইংলিশম্যান’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির চিঠির অংশ। এই চিঠির থেকে একেবারে ভিন্নমত পোষণ করে ড. ক্যাম্পবেল তৎকালীন হিল কার্ট রোডের নির্মাণ, দার্জিলিঙের জলবায়ু এবং উন্নয়ন সম্বন্ধে ‘গভর্নমেন্ট’-কে  একটি ‘গোপন রিপোর্ট’ পাঠিয়েছিলেন। ড. ক্যাম্পবেল, একই সঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত তুচ্ছ খবর কলকাতায় সরকারের কাছে সরবরাহ করে একজন বেশ করিৎকর্মা সাংবাদিক হিসেবে নজর কেড়েছিলেন। খবরকাগজের অনামী এই চিঠিটা বেশ লম্বা। নানা বিষয়, যেমন, ‘রাস্তা’, ‘বসতি’,  ‘নানা বন্দোবস্ত’, ‘বাড়িঘর’ নিয়ে লেখা হয়েছে, শেষে দুটো মজার বিষয়ে লেখা পাওয়া যায়। 

    একটার সাব-হেডিং হল ‘হতভাগ্য স্থান দার্জিলিং’; অন্যটা, যেটা থেকে কিছুটা লেখা উদ্ধৃত করলাম, তার বিষয় দার্জিলিং-এর ‘আবহাওয়া’। এই দুটো লেখাই দার্জিলিং এবং দার্জিলিং-এর উন্নয়নে সরকারি মনোযোগ এবং আমলাতান্ত্রিক বিনিয়োগের তদবির করা ড. ক্যাম্পবেলের উৎসাহী প্রশংসার সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।  

    প্রতি বছর, শীতকালের মজ্জায় ঠান্ডাটা জাঁকিয়ে বসার সঙ্গে-সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা এবং সম্ভাব্য পর্যটক, দুই দলেরই মনে একটা আশা গড়ে ওঠে— একটা তুষারপাত হলেই যেন জীবন বদলে যাবে, হোক না তা একদিনের জন্য। এ যেন ডিজনিল্যান্ডের একটা সুলভ, প্রাকৃতিক ভার্শন— প্রকৃতি যেন সুবৃহৎ, আমোদজনক বরফ-তৈরি কল। তুষার এবং তুষারপ্রেমী, দুইয়েরই উৎসাহ যেন ছোঁয়াচে– একটা মুহূর্তে গলে যায়, অন্যটা রয়ে যায় দিনের পর দিন, পুনরাবৃত্তির আশায়।  

    ১৮৩৯-এর শীতকালে লেখা এই চিঠি এবং রিপোর্টগুলো, যখন দার্জিলিং-এর বৈশিষ্ট্য এবং খ্যাতির শুরু, পড়তে-পড়তে আমি বর্তমান দার্জিলিং-এর জীবনের সঙ্গে তুলনা না-টেনে থাকতে পারিনি। ‘দ্য ইংলিশম্যান’-এর ওই রিপোর্ট ছাপা হয় মধ্য-নভেম্বরে, যখন শীত এসে গেছে – গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে একফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি, লিখছেন সংবাদদাতা। অপ্রয়োজনীয় ডিটেল, কিন্তু এমন একটা তথ্য যা পাঠককে আসন্ন, সুদীর্ঘ শীতকাল সম্বন্ধে লেখকের বিরক্তিকে বুঝতে সাহায্য করে। 

    প্রতি বছর, শীতকালের মজ্জায় ঠান্ডাটা জাঁকিয়ে বসার সঙ্গে-সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা এবং সম্ভাব্য পর্যটক, দুই দলেরই মনে একটা আশা গড়ে ওঠে— একটা তুষারপাত হলেই যেন জীবন বদলে যাবে, হোক না তা একদিনের জন্য। এ যেন ডিজনিল্যান্ডের একটা সুলভ, প্রাকৃতিক ভার্শন— প্রকৃতি যেন সুবৃহৎ, আমোদজনক বরফ-তৈরি কল। তুষার এবং তুষারপ্রেমী, দুইয়েরই উৎসাহ যেন ছোঁয়াচে– একটা মুহূর্তে গলে যায়, অন্যটা রয়ে যায় দিনের পর দিন, পুনরাবৃত্তির আশায়।  

    পর-পর দুটো ডিসেম্বর দার্জিলিং এই প্রাণশক্তি থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল। দুনিয়া জুড়ে আরও একটা করোনাভাইরাসের ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পটভূমিকায় যখন আমরা নতুন করে ভ্যাকসিনেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করছি, দার্জিলিং পাহাড়ে ভ্যাকসিনশনের একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে গেল। এবং ১ ডিসেম্বর ১৮৩৯-এ দার্জিলিং থেকে লেখা ড. পিয়ার্সনের একটা চিঠি মনে পড়ে গেল।

    এই চিঠির মাধ্যমে তিনি গভর্নমেন্টকে তাঁর ‘ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেনের প্রথম পরিসংখ্যান’ জমা দিচ্ছেন: ‘আমি সম্মানিত বোধ করছি, গত মাসে দার্জিলিং-এ যাদের আমি টিকা দিয়েছি তাদের নামের একটা তালিকা পাঠাতে পেরে… ‘রেজাল্ট’ নামের কলাম এতটা অসন্তোষজনক হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত, কিন্তু আমার ধারণা এই বিষয়ে আর বেশি কিছুই করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না বাড়ি-বাড়ি ঘুরে টিকা দিতে পারে এমন একজন কর্মীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যে-ব্যক্তি রোগের প্রকোপ সম্বন্ধে উপত্যকার অধিবাসীদের সচেতনও করে তুলবে। যাদের আমি শেষের দিকে টিকা দিতে পেরেছি, তাদের ক্ষেত্রে আমি সফল। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা ঘর ছেড়ে বেরোতে এতটাই অনিচ্ছুক যে, এখানে যারা কর্মরত তাদের ছাড়া প্রায় কারওরই একবারের বেশি আর দেখা পাই না, বিশেষত যদি তারা মনে করে যে রোগ তাদের ছুঁয়ে ফেলেছে।’ 

    ড. ক্যাম্পবেল পিয়ার্সনের এই আর্জিকে সমর্থন করেন, এবং লেপচাদের সাহায্যার্থে (তারা যাতে টিকাকরণের আশীর্বাদের সুফল ভোগ করতে পারে) সরকারকে একটা ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। মেডিকেল বোর্ড ইতিবাচক উত্তর দেয়, যদিও তা ছিল অনিচ্ছুক এবং অনিশ্চিত উত্তর – ‘দার্জিলিং স্টেশনের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ডিনাপুর সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং সার্জেনকে উপযুক্ত টিকাকর্মী নিয়োগ করতে নির্দেশ দিয়েছি… যিনি পাটনা ডিপোয় শিক্ষাপ্রাপ্ত… যদিও আমরা স্বীকার করছি যে এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আমরা সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত নই।’   

    পরের বছর, এই চিঠি চালাচালির এক মাসের মাথায়, জানুয়ারি ১৮৪০-এ, এক ‘নেটিভ ভ্যাকসিনেটর’ দার্জিলিং-এ এসে পৌঁছন। 

    কে জানত যে প্রায় ২০০ বছর পরেও অনুরূপ ভ্যাকসিনেশন সার্ভে এবং পাহাড়ের প্রত্যন্ত কোণায় অবস্থিত ছোট-ছোট গ্রামে ব্যাধি-দমনের কাজে ঘুরে বেড়ানো আবার এত জরুরি হয়ে দাঁড়াবে? 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook