প্রতারণা ছাড়া তোমাকে কিছুই দেবার নেই আমার,
প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছু নেবার নেই।
পানীয় জল বা গভীর অরণ্যের মতো
আমার সসীম ভালবাসাও আজ ফুরিয়ে এসেছে।
অথচ কিছুতেই তুমি পাল্টালে না,
অবশিষ্ট আধবালতি ভালবাসা তুমি খুব
অকারণে খরচ করছ।
যখন পায়ের কাদা ওই বালতির জলে ধুতে চাও
আমার নিশ্বাস আটকে যায় দেওয়ালে—
মাকড়সার ঝুলে লেগে ফ্যানের হাওয়ায়
আরও অনেকক্ষণ নড়ে।
অথচ ঝুল ঝাড়তে গিয়েও নিশ্বাসের রংগুলো তুমি চিনতে পারো না
পাশ ফিরে ঘুমোতে গিয়ে
কখন ঝরে গেছে আমার পালক,
নিকেল কয়েনের মতো হস্তান্তর হয়ে গেছে চোখের মণি
ওসব খুচরো পয়সা তুমি গুনেও দেখোনি।
বাজার করতে করতে আমি দেখতে পাই
জলতল বাড়ছে
মাছের আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে আমি দেখতে পেয়েছি
বরফ গলছে,
কমে আসছে খনিজ, প্রেম, জ্বালানি।
দেখতে পাচ্ছি পাঁচ আঙুলের উষ্ণায়ন ছাপ ফেলছে
তোমার গালে
অনুশোচনা হয়নি।
বরং নিরাপদ দূর থেকে আমি দেখতে চেয়েছি
উলকাঁটায় স্বার্থের সাথে স্বার্থ বুনে
ঘৃণার প্রযুক্তি স্তরে স্তরে সাজিয়ে তুমি
কীভাবে সংকট মোকাবিলা করো।
সম্পর্কে জিভ ঠেকালেই আমার পাঁউরুটির কথা মনে পড়ে।
ইস্টের মতো সিকিভাগ প্রেম এ দুর্দিনেও
তাদের ফুলিয়ে রেখেছে।
খাবার টেবিলে এক-একটা চৌকো টুকরো
সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে আছে ভাবলেশহীন,
কারও শরীরে পোড়া দাগ,
কারও স্যাঁকা গালে মাখনের প্রলেপ
সাদা, কোনও সম্পর্কের চোখেই মণি নেই।
তাও তুমি যখন ঘুমিয়ে থাকো—
মাস্কারা ও জ্যাম-জেলির প্রলেপে
দু’এক স্লাইস আমার রাতের খিদে মেটায়!
সব সম্পর্ক কিন্তু সকাল অবধি টেঁকে না,
ফাঙ্গাস ধরে কারো কারো শুভ্র শরীর হঠাৎ
কুৎসিত হয়ে ওঠে;
জানো, ফাঙ্গাসের ভয়ে আমি ঘুমাতে পারি না,
খিদে পাক আর না পাক
তোমার শরীর হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে চাই
বয়সের দাগ,
ছুঁয়ে-ছেনে দেখতে চাই, জানতে চাই
পরখ করতে চাই আমার খিদে;
তখন দাম্পত্যের ঘন আঁচে সেঁকে তুমি ক্রমশ
টানটান হয়ে ওঠো
আর খয়েরি ক্রাস্টের মতো উদ্বৃত্ত প্রতিরোধ
পড়ে থাকে ডাস্টবিনের নীচে
এদিকে যৌনাঙ্গে বাঁধা গ্যাসবেলুনের মত উড়তে চাইছে একটি ইচ্ছে।
হ্যাঁ একটিই, সিনগুলার।
একা বলে তার তেজ কিন্তু কম নয়,
যথেষ্ট উড়তে না পারায় ব্যাটা এখন ছটফটাচ্ছে,
জীবনের ওপর সরু সুতো কেটে বসছে তত বেশি,
এতটাই সরু যে আমার স্ত্রী, আমার সন্তান, বন্ধু প্রতিবেশী কারোকেই
আমি দেখাতে পারি না,
তারা একবার তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলে ধ্যাঃ, কোন সুতোফুতো নেই।
সুতো কেটে বসলে, ন্যাচারালি, ব্যথা হয়।
তখন আমি জীবনের দিকে তাকাই
এইতো, ক্লান্ত পুরুষাঙ্গের মত অসহায়ভাবে ঝুলে আছে আমার জীবন,
নেতিয়ে আছে,
উত্তেজনাহীন তবু জেগে আছে;
নিজের পুরুষত্বহীনতায় লজ্জা পেয়ে আমি
পাঁজর টেনে
বুকের ড্রয়ার থেকে বার করে আনি একটি কাঁচি।
অথচ আমি সুতো কাটার আগেই যৌনাঙ্গসমান ক্ষীণ জীবনকে
সুতোটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
লিঙ্গহীন পুরুষের মত আমি কুঁকড়ে বসে
বেলুনসমেত আমার জীবনটিকে উড়ে যেতে দেখি
দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশে