ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • একটা নিখুঁত খুনের পরিকল্পনা


    অরুণ কর (September 24, 2021)
     

    সকালে তুঁতেপাড়ার মাঠে হাঁটতে গিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। শহরের উপকণ্ঠে এই বিশাল মাঠে এক সময়ে চারটে ফুটবল টিম একসঙ্গে খেলত। তখন এ পাড়ার ফুটবলের খুব নামডাক ছিল। তবে এখন আর খেলাধুলো হয় না। জলকাদা মেখে ফুটবল খেলাটা অনেক আধুনিক বাপ-মায়ের কাছেই এখন ছোটলোকি ব্যাপার। পড়াশুনোর চাপে ন্যুব্জ নেকুপুসুদের যাবতীয় খেলা তাই মোবাইল ফোনেই আটকে গেছে।

    ফলে সকাল-বিকেল ওই মাঠে ছেলে-ছোকরাদের চেয়ে মাঝবয়েসি থেকে বুড়ো-হাবড়াদের ভিড় বেশি। কেউ আসেন খোলা হাওয়ায় হাঁটাহাঁটি করতে, আবার কেউ স্রেফ আড্ডা দিতে। সন্ধের দিকে নিরালা-সন্ধানী জোড়া শালিকও আসে কিছু কিছু, তবে সে অন্য খেলা।

    যাই হোক, ওই ভদ্রলোককেও দেখতাম, হাঁটার চাইতে গল্প করার দিকে ঝোঁক বেশি। উনি যে দিন যাঁকে টার্গেট করতেন, সেদিন তাঁর হাঁটা কিংবা শরীরচর্চার বারোটা বাজিয়ে ছাড়তেন। অনেকেই ওঁকে তাই এড়িয়ে চলতেন। বলা বাহুল্য, আমিও তাঁদেরই দলে ছিলাম।

    লোকটার চেহারা এমন কিছু চোখে পড়ার মতো না, উচ্চতা মেরে-কেটে ফুট পাঁচেক, রোগাভোগা শরীর, ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল, মুখে বসন্তের দাগ ভর্তি। তবে পোশাক-আশাক ধোপদুরস্ত, সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, পায়ে নামী ব্র্যান্ডের জগিং শু, হাতে দামি ঘড়ি, প্রত্যেকটা আঙুলে আংটি, সব মিলিয়ে পরিপাটি ফুলবাবুটি। খুব খুঁটিয়ে না দেখলে চুল এবং গোঁফের কলপ ধরে কার বাপের সাধ্যি! হাতের বাহারি ছড়িটিও দেখবার মতো।

    সেদিন সকালে সবে তিন পাক জগিং শেষ করে দাঁড়িয়ে একটু হাত-পাগুলো খেলিয়ে নিচ্ছি, এমন সময় উনি আমার সামনে এসে হাজির হলেন। তারপর উদাসীন ভাবে আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে বললেন, ‘আর পারা যাচ্ছে না মশাই, যা গরম! অনেকদিন বৃষ্টির দেখা নেই, দু’একদিনের মধ্যে কি হবে মনে হয়?’

    বুঝলাম, আজ আমি ওঁর শিকার। তাই পাশ কাটাবার জন্যে বললাম, ‘কী করে বলি বলুন, আমি তো আর আবহাওয়া দপ্তরে কাজ করি না!’

    ভদ্রলোক আমার শ্লেষটুকু গায়ে তো মাখলেনই না, উল্টে কান এঁটো করা হেসে বললেন, ‘আহা, আপনি আবহাওয়া দপ্তরে চাকরি করতে যাবেন কোন দুঃখে? ওটা একটা দপ্তর হল? একটা ফোরকাস্টও মেলে না!’

    ভূমিকাটা ভালই। আমি মনে মনে ওঁকে কাটাবার তাল খুঁজছিলাম। এমন সময় খোসামুদে হাসিতে মুখ উজ্জ্বল করে উনি বললেন, ‘আমাকে মনে হয় আপনি চেনেন না। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। এই যে, ধরুন নরেন্দ্র মোদি কিংবা সত্যজিৎ রায়, এঁদের তো সারা বিশ্বের লোক চেনে, কিন্তু ওঁরা কি আর আমার মতো সাধারণ মানুষকে চেনেন?’

    জ্বালাতন আর কাকে বলে! ভদ্রলোকের ব্যাজস্তুতিতে হাসব না কাঁদব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে গলা নামিয়ে ভদ্রলোক ফের বললেন, ‘আপনি যে কোর্টে চাকরি করেন, এ কথাটাও জানি।’

    মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল দেখছি! ভাবলাম, এঁকে কাটাবার জন্যে মৌনব্রতই শ্রেয়। তাই অন্যদিকে ফিরে চুপচাপ হাত-পা খেলাতে লাগলাম।

    কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে লক্ষ করলাম, আমার মৌনব্রত কোনও কাজেই আসেনি। ভদ্রলোক এক তরফা কথার এক্সপ্রেস চালিয়ে যাচ্ছেন, থামার নামটি নেই।

    বাধ্য হয়ে হাত-পা খেলানো মুলতুবি রেখে পুনরায় জগিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, যদি ওই অছিলায় কেটে পড়া যায়। কিন্তু এক পা এগোতেই উনি পথ আগলে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দাঁড়ান না, জগিং তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না! আমার যাকে বলে একেবারে জীবনমরণ সমস্যা, বুঝলেন কিনা? আপনার সঙ্গে একটু পরামর্শ, মানে কোর্ট-কাছারির ব্যাপার তো, আপনি অভিজ্ঞ মানুষ…।’

    কথা শুনে পিত্তি জ্বলে গেল। নিজেকে যতটা সম্ভব সংযত রেখে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাকে কে বলল, আমি কোর্ট-কাছারির ব্যাপারে দিগ্‌গজ?  

    ভদ্রলোক আমার উষ্মার তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত নিরীহ মুখে বললেন, ‘সেদিন রাহাবাবু সেনদাকে বলছিলেন, আইনকানুন আপনি নাকি গুলে খেয়েছেন। শোনার পর থেকেই ভাবছি, আপনার সঙ্গে একবার…।’

    ‘পরামর্শ করবেন, এই তো?’

    আমার ধরতাইয়ে উনি একেবারে বিগলিত হয়ে গেলেন। একগাল হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই একটু আইনি মারপ্যাঁচ জেনে রাখা, আর কী!  হয়েছে কী, অশ্বিনীপল্লীতে আমার একটা বাড়ি আছে। একদম বড় রাস্তার পাশে। বেশি বড় না, এই আড়াই কাঠা জমির উপরে দেড়তলা, সব মিলিয়ে খান চারেক ঘর। আমারই বাড়ি, আমার টাকাতেই তৈরি, বুঝলেন কিনা! এখন কথা হল গিয়ে আমার বউ কি ইচ্ছে করলেই আমাকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে পারে?’

    খুব অবাক হলাম। বললাম, ‘বাড়ি আপনার, স্ত্রীও আপনার, উচ্ছেদের প্রশ্ন আসছে কেন?’

    ভদ্রলোক খুব রহস্যজনক ভাবে হাসলেন। তারপর নিজের ঝোলা ব্যাগ থেকে বোতল বের করে ঢকঢক করে খানিকটা জল খেয়ে খুব গোপন কথা বলার মতো ফিসফিস করে বললেন, ‘ওখানেই তো কবি কেঁদেছেন, মশাই!’ 

    ওঁর হেঁয়ালি ধরতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানে?’

    ভদ্রলোক আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, ‘মানে বাড়িটা আমার ঠিকই, তবে আমি সেটা বছর পাঁচেক আগে আমার বউয়ের নামে লিখে দিয়েছিলাম।’

    এর মধ্যে আইনি জটিলতা কী আছে ধরতে পারলাম না। হেসে বললাম, ‘তাহলে বাড়িটা আপনার বলছেন কেন? আইনত ওটা তো এখন আপনার স্ত্রীর। উনি ইচ্ছা করলে…।’

    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ভয়ঙ্কর চটে গেলেন। রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘বুয়েচি, আপনাকে আর বলতে হবে না। সব শেয়ালের এক রা! জমি আমার, টাকা আমার, নাহয় ঝোঁকের বশে এট্টা সই করেই ফেলিচি, তাতেই বাড়িটা ওই বেবুশ্যে মাগির হয়ে গেল!’

    রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বকবক করতে করতে হাঁটা দিলেন ভদ্রলোক।

    নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে এমন অশালীন মন্তব্য শুনে আমার মনটাও বিরূপ হয়ে গেল। সন্দেহ হল, নির্ঘাত লোকটার মাথার ব্যামো।

    পাগলদের আমি বরাবরই ভয় পাই। তাই উনি যেদিকে গেলেন, তার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলাম। ঠিক করলাম, ভবিষ্যতে ওঁর ছায়া মাড়াব না।

    কিন্তু কপালের লিখন খণ্ডাবে কে? পরদিন মাঠে ঢোকার সময় দেখি কাঁচুমাচু মুখে মূর্তিমান দাঁড়িয়ে! 

    অন্যদিকে ফিরে পাশ কাটাতে যাচ্ছিলাম, উনি খপ করে আমার হাতখানা চেপে ধরে বললেন, ‘কাল বড় অন্যায় করে ফেলিচি দাদা! আসলে কী হয়েচে, ওই মাগির যন্তন্নায় যখন-তখন মাথা গরম হয়ে যায়। তখন কারে কী বলি, হুঁশ থাকে না। ওই মেয়েমানুষটা আমার জীবন একেবারে তামা-তামা করে দিল! বিয়ে করে কী যে গুখুরি করিচি!’ 

    আমার অপ্রসন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে ফের অনুশোচনার গলায় বলতে লাগলেন, ‘দাদা, কাল আপনার সঙ্গে যে ব্যবহারটা করে ফেলিচি, তার জন্যে আমার লজ্জার শেষ নেই। কাল সারারাত শুধু ওই কথাটা ভেবে ঘুমুতে পারিনি। বাড়ি চেনা থাকলে রাতেই গিয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসতাম। দোহাই দাদা, ছোটভাই মনে করে আপনি আমারে এবারকার মতো মাফ করে দ্যান।’ 

    আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, কথা বাড়াব না। তাই পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে অত্যন্ত নিরাসক্ত গলায় বললাম, ‘বাদ দিন কালকের কথা। আমি ওসব মনে রাখিনি।’ 

    ভদ্রলোক আমার পেছন পেছন দৌড়ে এসে ফের আমার হাত চেপে ধরে বললেন, ‘বাঁচালেন দাদা, জানতাম আপনি মনে রাখবেন না। আপনার মতো বড় মনের মানুষ কি ছোটভাইয়ের কথায় কখনও রাগ করতে পারে!’ 

    চুলে কলপ, বাঁধানো দাঁত, বয়সের গাছ পাথর আছে কি না সন্দেহ, সে নিজেকে বারবার আমার ছোটভাই বলে দাবি করায় হাসি পেয়ে গেল।

    আমাকে হাসতে দেখে উনি ধরে নিলেন, আপাতত গতকালের মামলা ডিসমিস। খুশি হয়ে ফের শুরু করলেন, ‘হ্যাঁ দাদা, কাল যেটা আপনারে বলছিলাম। একটু খোলসা করেই বলি। আসলে হয়েছে কী, সংসারের হাজারও দায়দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে সময়মতো বিয়েটা আমার করা হয়ে ওঠেনি। ভেবেছিলাম বেলা যখন বয়েই গেছে, আর বিয়েই করব না। কিন্তু বিধিলিপি খণ্ডাবে কে! এক বন্ধুর খপ্পরে পড়ে ফেঁসে গেলাম। আমার বউ আহামরি সুন্দরী না হলেও নাক-চোখ-মুখ খারাপ না, শরীর জুড়ে তেজি লাউডগার মতো ঢলঢলে লাবণ্য, দেখার পর নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। একটু বেশি বয়সেই, বুঝলেন কিনা? আর সেটাই আমার কাল হয়েছে মশাই।’

    ভাবলাম বুঝি মেল গাড়ি থামল। বললাম, ‘আজ বরং যাই, বাকিটা পরে কোনওদিন…।’

    উনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন, ‘শুনলেন তো এটা আমার জীবনমরণ সমস্যা, তাড়াহুড়ো কচ্চেন কেন, দাদা! আজ তো ছুটির দিন! হ্যাঁ, যে কথা হচ্ছিল, অল্পবয়সি বউ, বুঝতেই পারছেন, তার নিত্যনতুন বায়না। সেসব সামলাতে জেরবার হয়েও প্রথম দিকে আমি মুখে রা’টি কাড়িনি। আমারই ভুল, প্রথম রাতে বিড়াল না মারতে পারলে ভুগতে তো হবেই! কিছুদিন যাওয়ার পরে বায়না ধরল, ‘তোমার তো বয়স হয়েছে, কখন কী হয়ে যায়! ভাল-মন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে তোমার ভাইপো-ভাইঝিরা যে এসে গেঁড়ে বসবে না, তার কি কিছু গ্যারান্টি আছে? এমনিতেই ওরা আমাকে দু’চোখে দেখতে পারে না! তার চেয়ে এক কাজ করো, বাড়িখানা বরং আগেভাগে আমার নামে লিখে দ্যাও।’ আমি তখনও ওর মতলব বুঝিনি। ছলাকলায় ভুলে সরল বিশ্বাসে বাড়িখানা যেই না ওর নামে লিখে দিয়িচি, অমনি সে আসল মূর্তি ধরেছে। কী বলব মশাই, আমার চোখের সামনে দিয়ে নিত্যনতুন পুরুষ মানুষ ঘরে আসছে, যাচ্ছে! অথচ প্রতিবাদ করার জো’টি নেই। কিছু বললেই এক্কেবারে কুরুক্ষেত্র করে ছাড়ে! আবার কথায় কথায় হুমকি দেয়, নারী নির্যাতনের মামলা করে আমাকে জেল খাটাবে, আমাকে উচ্ছেদ করে ছাড়বে!’

    বেশ টান-টান রসাল কেচ্ছা। বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা হলে যা হয় আর কী!

    উনি হঠাৎ আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা দাদা, ও যদি আমার আগে মরে, তাহলে বাড়িটা কে পাবে?’

    জিজ্ঞেস করলাম, ‘ও মানে?’

    ভদ্রলোক আবার মেজাজ হারিয়ে খিঁচিয়ে উঠলেন, ‘আরে, ‘ও’ মানে বুঝলেন না? আমার বুকে বসে দাড়ি ওপড়ানো সেই নষ্টা মেয়েমানুষটা।’ 

    আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ‘আপনার স্ত্রী যদি তৃতীয় কাউকে বাড়িটা লিখে না দেন কিংবা আগাম বিক্রি না করে দেন, তাহলে…।’

    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি আঁতকে উঠে বললেন, ‘কী বলছেন মশাই? এদিকটা তো ভেবে দেখিনি! তাহলে হাতে তো একদম সময় নেই!’

    উনি আপন মনে বকবক করতে করতে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটা লাগালেন। 

    এর পর দিন কয়েক বেশ নিরুপদ্রবেই কাটল। উনি মাঠে আসছেন না দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। 

    সপ্তাখানেক পরে দেখি উনি ফের মাঠে হাজির। আমাকে দেখেই দৌড়ে এলেন। খুশিয়াল গলায় বলেন, ‘ওহ! এই না হলি আইনি প্যাঁচ! জব্বর বুদ্ধি দিয়েছিলেন, দাদা। ব্যবস্থা সব পাক্কা করে ফেলেছি।’

    অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীসের ব্যবস্থা?’

    উনি বললেন, ‘ওই যে, আপনাকে বলেছিলাম না, সেই মা… মানে আমার বউয়ের।’

    তারপর চোখ নাচিয়ে বললেন, ‘হু হু বাওয়া, আমার সঙ্গে মামদোবাজি? অপু বলেছে, আর বড়োজোর মাসখানেক, তার মধ্যেই একটা হেস্তনেস্ত করে দেবে। হয় এসপার, নয় ওসপার!’ 

    তখনও ওঁর কথার মাথামুণ্ডু কিছু ধরতে পারিনি। আমার ভ্যাবাচ্যাকা-খাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘অপুকে চেনেন না? ওই যে বারেন্দ্রপাড়ার হারান সাধুখাঁর ছেলে। আগে আমার ওপর একটু গরম ছিল, তাও ওই বিদ্যেধরীর প্ররোচনায়। এখন আমার খুব ন্যাওটা, কাকাবাবু বলতে অজ্ঞান, বুঝলেন কিনা!’

    ওঁর স্ত্রী কিংবা অপু, কাউকেই চিনি না। চুপচাপ শোনা ছাড়া উপায় কী!

    একটু গলা খাকারি দিয়ে উনি ফের কথার মেল স্টার্ট করলেন, ‘বুঝলেন দাদা, ঘরের কেচ্ছা বলতেও খারাপ লাগে। কিন্তু আপনি হলেন গিয়ে যাকে বলে নিজের লোক, আপনার কাছে লজ্জা কী! ইদানীং এক লম্বা-চওড়া জোয়ান ছোকরা ওর ঘরে যাতায়াত শুরু করেছে। পাড়ার লোককে বলে, সে নাকি ওর দুঃসম্পর্কের দাদা। দাদা না হাতি! আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সে কী ঢলাঢলি! আগে সে মক্কেল একটু লুকিয়ে-চুরিয়ে আসত, ইদানীং আমার সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে সটান ঘরে ঢুকে পড়ে! মরবে, মরবে। ধরিত্রী এত অনাচার কখনও সহ্য করবেন না। শিগগিরই মরবে মাগি। কী ঘেন্না, কী ঘেন্না!’

    ভদ্রলোক চোখমুখ কুঁচকে যেভাবে ঘৃণা প্রকাশ করলেন, তাতে হাসি চাপা কঠিন। কথা ঘোরাবার জন্যে বললাম, আপনি তো বলছিলেন, ‘আপনার স্ত্রীর বয়স বেশি না। তিনি হঠাৎ মরতে যাবেন কেন?’

    উনি খুব উদাস দার্শনিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘মরার কথা কি কেউ আগাম বলতে পারে দাদা? কলেরা, উদরাময়, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট, জলে-ডোবা, আগুনে-পোড়া, সাপে-কাটা, বারান্দার রেলিং ভেঙে শুকনো ডাঙায় আছাড় খাওয়া, প্রতিদিন কতভাবেই তো মানুষ অকালে মরে যাচ্ছে! মরার আবার বয়েস আছে নাকি?’

    কী বলব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভদ্রলোক খুশিয়াল গলায় বললেন, ‘বুইলেন দাদা, অপু আমার বউয়ের নাড়িনক্ষত্র জানে। জানবে না কেন, কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেও তো আমার বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করত। তবে ছেলে চৌকস, মাখনের মতো খুর চালায়, দু’হাতে পেটো ছুড়তে পারে, আস্ত ডেঞ্জার একটা মশাই, বুঝলেন কিনা! আমাকে কথা দিয়েছে, যা করবার… না থাক।

    উনি আর কথা না বাড়ালেন না। আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে সরে পড়লেন। 

    অপু কতটা ‘ডেঞ্জার’ জানি না, তবে উনি যে বেশ বড়সড় ডেঞ্জার, তাতে আর সন্দেহ রইল না। ভেবে দেখলাম, ওঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে তুঁতেপাড়ার মাঠ ছাড়তেই হবে। এবার থেকে বরং কাছারি-মাঠে হাঁটতে যাব।

    মাসখানেক কাছারি-মাঠে দিব্যি হাঁটছিলাম। হঠাৎ একদিন দেখি সাতসকালে উনি সেখানে গিয়ে হাজির! একগাল হেসে বললেন, ‘বেশ করেছেন দাদা। তুঁতেপাড়ার মাঠ একটা হাঁটবার জায়গা হল? সব ছোটলোক, বুইলেন কিনা! বিশ্বাস করে দু’একজনকে আমার দুঃখের কথা বলে ফেলেছিলাম। ওই যে রাহাবাবু আর বেঁটে মুখুজ্জে, শালারা তার পর থেকে আমার পেছনে ছিনে জোঁকের মতো লেগে আছে! আমার বাড়ি গিয়ে বউয়ের সঙ্গে আলাপ করবে! ধান্দাটা বুইলেন কিনা?’

    তারপর গলার স্বরটা খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে বললেন, ‘আচ্ছা দাদা, একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি। আমার বউয়ের নামে একটা ইন্সিওরেন্স পলিসি আছে, আমার টাকাতেই করা। ধরুন যদি অপঘাতে তার মৃত্যু হয়, ক্লেম পেতে কোনও অসুবিধে হবে না তো?’

    ‘আপনি যদি নমিনি হন, তাহলে অসুবিধে হবে কেন?’

    ‘আমিও সে কথাই বলছিলাম। আসলে আমার মাসতুতো ভাই এস.পি. সাহেবের পি.এ.। সে বলল, ‘যদি অপঘাতে আমার বউয়ের মৃত্যু হয়, তাহলে পুলিশ নাকি আমাকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করবে! সেক্ষেত্রে আমার পক্ষে ক্লেম পাওয়া… আচ্ছা আপনিই বলুন, আমি নিদ্দুষি মানুষ, কারো সাতেও নেই, পাঁচেও নেই, আমাকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করলেই হল? দেশে আইনকানুন নেই, নাকি? ও গুয়োটার নির্ঘাত বউদির সঙ্গে লটঘট শুরু হয়েছে! আমার বউ মাঝে মাঝে ওর কাছে যায় শুনিচি। আমিও দেখে নেব, কত বড় এস.পি.-র পি.এ. তুই!’

    জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার নামে কোনও ইন্সিওরেন্স পলিসি নেই?’

    ভদ্রলোক কেমন যেন চুপসে গেলেন। বললেন, ‘ওই হারামজাদীর পাল্লায় পড়ে করতে হয়েছিল একটা, মোটা টাকা প্রিমিয়াম…।’

    ‘নমিনি কে?’

    ‘কে আবার? ওই মা… মানে আমার বউ। ওই স্বৈরিণীর ছলাকলায় কি আর তখন মাথার ঠিক ছিল আমার! তা হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন দাদা?’

    ‘না, এমনি।’

    ‘অ, আমি ভাবলাম কী না কী!’ 

    উনি গুনগুন করে নিধুবাবুর টপ্পার সুর ভাঁজতে ভাঁজতে চলে গেলেন।

    আমার সন্দেহ হল, হয় লোকটা পাগল, নয়তো শয়তান। যদি দ্বিতীয়টা হয়, তাহলে বউকে মারার জন্যে সুপারি দেওয়াটা কিছু বিচিত্র নয়।

    কথাটা মনে হতে ভেতরে ভেতরে আমি একটু শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। 

    এক প্রকার নিরুপায় হয়ে পরদিন থেকে মাঠঘাট ছেড়ে যশোর রোড ধরে হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম। উনি যেন ক্রমশ আমার কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠছিলেন!

    মাসখানেক বাদে বাজারে চেনা দোকান থেকে আলু-পেঁয়াজ কিনছি, এমন সময় উনি কোত্থেকে এসে হাজির হলেন। একগাল হেসে বললেন, ‘দাদা যে! কী ভাগ্যি, আজ আপনার দেখা পেলাম। তা কেমন আছেন, দাদা? আজকাল আর দেখি না কেন? শরীর-টরীর খারাপ হয়নি তো? কাছারি মাঠে না পেয়ে আপনার খোঁজে দু’দিন তুতেঁপাড়ার মাঠে গিয়ে ঘুরে এলাম। রাহাবাবু বললেন, আজকাল আপনি নাকি যশোর রোডে হাঁটছেন? খুব সাবধান দাদা, যা হুসহাস করে গাড়ি যায়!’

    মনে মনে ভয়ঙ্কর চটে গেলাম। কিছুতেই কি লোকটার হাত থেকে মুক্তি নেই!

    বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘না, না। সব ঠিক আছে, আপনার চিন্তার কিছু নেই! আজ আমি একটু ব্যস্ত আছি, বরং পরে আপনার সঙ্গে কথা হবে, কেমন!’

    উনি আমার বিরক্তিটুকু গায়ে মাখলেন না, এমনকী ব্যস্ততাকেও আমল দিলেন না।  

    খুশিয়াল গলায় বললেন, ‘আজ রোববার, আপনার তো অফিস নেই! আপনার সঙ্গে দেখা যখন হয়েই গেল, চলুন না, দু’ভাই মিলে একটু চা খাই। আপনি ছাড়া তো আমার কথা কেউ বুঝতে চায় না, খালি নোংরা-নোংরা কথা শুদোয় আর পেছনে লাগে। আপনার সঙ্গে কথা বলার আরামই আলাদা, আগের জন্মে নির্ঘাত আপনি আমার সত্যিকারের…।’

    এক প্রকার হাত ধরে টানতে টানতে আমাকে চায়ের দোকানে নিয়ে গিয়ে বসালেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন, ‘আর বেশিদিন নেই দাদা, সুযোগ যাকে বলে এক্কেবারে হাতের মুঠোয়!’

    ‘কীসের দেরি নেই? কোন সুযোগের কথা বলছেন?’

    খুব বোকার মতো প্রশ্ন করি আমি। ভদ্রলোক একগাল হেসে গলা নামিয়ে বললেন, ‘এই আপনার এক দোষ দাদা, ভেঙে না বললে কোনও কথা বুইতে পারেন না! আরে সেই অপুর কথা বলেছিলাম না, সে এক প্রকার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে। মাগিকে একবার মরতে দ্যান, তারপর বাড়ি আর ইন্সিওরেন্সের টাকা… দরকার হলে আমি আবার বিয়ে করব!’

    উনি সত্যিই পাগলের মতো হাসতে লাগলেন। ততক্ষণে চা খাওয়া আমার মাথায় উঠেছে। যা অনুমান করেছিলাম, এখন দেখছি সেটাই ঘটতে চলেছে। 

    উনি আমার পাংশু মুখের দিকে চেয়ে বললেন, ‘আপনি কী ভাবছেন, আমি জানি, দাদা। আমার কি সাধ্য আছে একটা মানুষকে মারার? আমি তো নিমিত্তমাত্র। আপনি দেখে নেবেন, হারামজাদী নিজের পাপেই মরবে। আজকাল বাড়িতে কত রকম লোকের যে আনাগোনা শুরু হয়েছে! বললে বিশ্বাস করবেন না, সে বিদ্যেধরী বাড়িটাকে একেবারে বেশ্যেখানা করে তুলেছে! সে ভাবছে, অপু যখন সহায় আছে, তখন আর ভাবনা কী!’ 

    কথা বাড়াবার ইচ্ছে ছিল না। তবু কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি তো আগে বলেছিলেন, অপু আপনার খুব ন্যাওটা, আজ আবার উলটো কথা বলছেন যে!’

    অবুঝ শিশুর ছেলেমানুষি দেখে মানুষ যেভাবে হাসে, উনিও আমার কথা শুনে ঠিক সেই ভাবে হেসে উঠলেন। তারপর চোখ নাচিয়ে বললেন, ‘আপনিও দেখছি ওই মাগির  মতো বোকা। অপু যে আগাগোড়া ওর সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছে, সেটা ধরার মতো বুদ্ধি আছে ওর? আরে বাবা, অপু হল গভীর জলের মাছ। এ লাইনের পাকা খেলোয়াড়। আমার কাছে টাকাপয়সা যখন যা চায়, কখনও না বলি নে তো! হাজার হোক, আমাকে কাকাবাবু বলে ডাকে! কাল অপু কথা দিয়েছে, ও তক্কে তক্কে আছে, সুযোগও প্রায় রেডি, দু’একদিনের মধ্যেই ঘচাং ফু!’

    লোকটাকে একদম সহ্য হচ্ছিল না। চায়ের গেলাস নামিয়ে রেখে বললাম, ‘চলি তাহলে? আসলে আজ বাড়িতে একজনের আসার কথা আছে, তা ছাড়া বাজার নিয়ে গেলে রান্না হবে।’

    উনি আমাকে আর আটকাবার চেষ্টা করলেন না। চায়ের দোকান থেকে বেরোতে বেরোতে বললেন, ‘আজকাল আমার বউ পিপে পিপে মদ গিলে সারাক্ষণ বেহেড হয়ে থাকছে। আমিও অপুকে বলেছি, যত টাকা লাগে লাগুক, তুই খালি মদের জোগান দিয়ে যা। এখন বলেন, মদ খেয়ে গাড়ি চাপা পড়া কিংবা জলে ডুবে যাওয়া কোনও ব্যাপার হল? অপু অবশ্য জিজ্ঞেস করছিল, জলে ডোবা, নাকি গাড়ি চাপা, কোনটা চাই। গাড়ি চাপাতে অবশ্য খরচাটা একটু বেশি। আচ্ছা দাদা, আপনি তো আইনের লোক, একটা বুদ্ধি দ্যান না, আইনের চোখে কোনটা সালটানো সুবিধের?’

    ওঁর কথার উত্তর না দিয়ে হনহন করে হাঁটছি দেখে উনি আমার হাতটা টেনে ধরে অনুনয়ের ভঙ্গিতে বললেন, ‘প্লিজ দাদা, এই কথাটা অন্তত বলে যান। আমার মনে হয়, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হলে দু’একজন সাক্ষীসাবুদ থেকে যেতে পারে, রাস্তার সিসিটিভিতেও গাড়ির নম্বর উঠে যেতে পারে, তাই না? তার চেয়ে বরং জলে ডোবাই ভাল! তাহলে অপুকে বরং সে কথাই বলে দিই, কী বলেন দাদা? মদ খেয়ে জলে নামলে মানুষ তো ডুবে যেতেই পারে, নাকি? তাতে সাক্ষী থাকলে বরং আরও সুবিধে!’

    তাকিয়ে দেখলাম, ওঁর চোখের নীচে অ্যালকোহলিক ফ্যাট, মুখের কষে ফেনার আভাস, চোখের দৃষ্টিটা ক্রমশ কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আসছে। হাতটা এমন ঠকঠক করে কাঁপছে যে, আমার হাতেও দুলুনি লাগছে। 

    হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমি একটা চলন্ত রিক্সায় লাফিয়ে উঠে পড়লাম। পেছন থেকে উনি চেঁচাতে লাগলেন, ‘শেষ পর্যন্ত যদি কোর্ট-কাছারি হয়, এই ছোটভাইটাকে একটু দেখবেন দাদা!’ 

    বিষয়টা স্রেফ ওঁর পাগলামো, না কি কোনও গভীর ষড়যন্ত্র, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একবার ভাবলাম পুলিশকে জানাই। পরক্ষণেই মত বদলালাম। লোকটার নামধাম কিছুই জানি নে, সাক্ষীসাবুদ নেই, শেষে পুলিশ হয়তো আমারই পেছনে পড়ে যাবে। কথায় আছে, পুলিশে ছুঁলেই আঠারো ঘা।

    আমার অবস্থা অনেকটা ফাটা বাঁশে আটকে যাওয়ার মতো হয়ে উঠল। মনের মধ্যে সারাক্ষণ একটা চাপা ভয়, যদি সত্যি সত্যি খুনটা হয়ে যায় এবং লোকটা ধরা পড়ে ষড়যন্ত্রকারীর দোসর হিসেবে আমার নামটা বলে দেয়… আমি আর ভাবতে পারছিলাম না! বাধ্য হয়ে সকালে হাঁটতে যাওয়াই বন্ধ করে দিলাম।  

    দিন কয়েক পরে ব্যাঙ্কের সামনে রাহাবাবুর সঙ্গে দেখা। উনি পেনশনের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইশারায় কাছে ডাকলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘খবরটা শুনেছেন?’ 

    আমি বললাম, ‘কী খবর?’

    রাহাবাবু বললেন, ‘ওই সাদা জামা-প্যান্ট পরা অশ্বিনীপল্লীর যে লোকটা সারাক্ষণ ওর বউকে খুনের ফন্দি আঁটত, কাল রাতে সে মারা গেছে।’

    আমি আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীভাবে?’

    রাহাবাবু খুব নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘শুনছি তো জলে ডুবে। খবর পেয়ে মুখুজ্জে দেখতে গিয়েছিল। বলল, কলুপুকুরের পাড়ে নাকি ওর জুতো, ছড়ি, সব পড়ে ছিল। মদের খালি বোতল আর দুটো প্লাস্টিকের গেলাসও পাওয়া গেছে। কারও সঙ্গে বসে মদ-টদ খেয়ে হয়তো নেশার ঘোরে জলে নেমেছিল! তবে খবরে দেখলাম, তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বলেছেন, সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স যা পাওয়া গেছে, তাতে ব্যাপারটা দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা শক্ত। আপনি টিভিতে দেখেননি?’

    হঠাৎ আমার মাথাটা ঘুরে চোখ অন্ধকার হয়ে এল। রাহাবাবু সময়মতো ধরে না ফেললে হয়তো পড়েই যেতাম।

    একটা বেঞ্চে আমাকে বসিয়ে মুখে জল দিতে দিতে উনি বললেন, ‘কী হল, শরীর খারাপ লাগছে? শরীরের আর দোষ কী, কয়েকদিন ধরে যা গরম পড়ছে! তার ওপর সারাক্ষণ মুখে ঠুসি! আমারই মশাই যখন-তখন জলে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে!’

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook