রক্তচয়নিকা
১.
যে-পৃথিবী তুমি ভালবেসেছিলে, সে ছোটবেলার।
বড় হয়ে গেলে শীত। তাড়াতাড়ি নামে অন্ধকার।
যার-যার ঘরেই থাকে দরজা দিয়ে। খায়। কথা বলে।
বাইরে খুব ঠান্ডা হাওয়া চলে।
এই পৃথিবী তোমার। একার।
মানুষই করেছে তৈরি অদ্ভুত মজার খেলা—
ক্ষুরকে মেনেছে বুচ্ছি, বুদ্ধিকে বলেছে ক্ষুরধার।
২.
সমুদ্র থেকেই উঠে এসেছিল একদিন, কুয়াশা
গলায় হিসহিস শব্দ। অথচ কী পরিষ্কার ভাষা—
বলেছিল, ‘এখনও সময় আছে, ফিরে যাও।
শেষে পুড়বে নিজেরই আঙুল…’
সে-কথা শুনিনি আমরা কেউ।
একদিন ঝাঁপিয়ে পড়ল শব্দহীন অতিকায় ঢেউ।
ক’হাজার বছরের কত কিছু মুহূর্তে তামাশা।
কেবল ঝিনুক হয়ে বালিতে বিছিয়ে থাকল
আমাদের ছোট-বড় ভুল।
৩.
যারা কথা বলতে গেছে, সক্কলকে টাঙিয়েছ ক্রুশে।
যারা কথা গিলে নিল, তাদের রেখেছ বেঁধে, পুষে।
মাঝখানে নদীর মতো বয়ে গেল অস্থির সময়।
ধান-গম-ভুট্টা সব তুলে নিলে একে একে
ফাঁকা ক্ষেতে দুলে উঠল ভয়।
কথা নেই। চুপ। কথা নেই।
ইদানীং দৃশ্য বলতে এই—
নেকড়ের পাহারা কাটে নিজেরই জখম চেটে চুষে…
কিছু দূরে নীরবতা।
তারপর কৃতিত্ব নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া। শকুনে মানুষে।
৪.
বাঘ তো বোমা বানায়নি, হাতি তৈরি করেনি গ্রেনেড
দু’পায়ে দাঁড়িয়ে গেছি বলে আজ এত এত জেদ
তোমাকে দেখিয়ে দেব, নিজেকেই দেখব বারবার
তোমার যা আছে আজ, কাল থেকে আমার। আমার।
জল ক্ষেতে আসবে লাশ, রক্তে ভরে উঠবে এই হ্রদ—
হে সভ্যতা, মায়াবী বিপদ
কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, বলে দাও, কারা চতুষ্পদ।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র