ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • আক্রান্ত: পর্ব ৭


    অপরাজিতা দাশগুপ্ত (July 16, 2021)
     

    পর্ব ৬

    আজকের দিনটা ছুটি নিয়েছেন সুচেতনা। গুচ্ছের পরীক্ষার খাতা জমে আছে। ওগুলো শেষ করা দরকার। চিকু আজ সকাল থেকে বিয়েবাড়িতে। অভিমন্যুর বিয়েতে সুচেতনাদের বাড়িসুদ্ধ সকলের নেমন্তন্ন। বারবার করে বলে গেছেন অভিমন্যুর দাদু-দিদিমা। খুব ভাল কথাবার্তা ওঁদের। এমনকী বরযাত্রী অবধি যেতে বলেছিলেন। সুচেতনারা অবশ্য বরযাত্রী যাবেন না। শুধু চিকু যাবে। সকালে গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে কোনও কিছুই বাদ দিচ্ছে না ও। অভিমন্যুদেরও এখন চিকুকে ছাড়া চলছে না। সুচেতনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সত্যি বলতে কী, এখন তিনি অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন। অভিমন্যু ছেলেটার সঙ্গে প্রায় কাকতালীয় ভাবে যোগাযোগ হওয়াটা চিকুর পক্ষে খুব ভাল হয়েছে। মাঝে কীরকম যেন ছন্নছাড়া খ্যাপাটে মতো হয়ে যাচ্ছিল চিকুটা। এখন অভিমন্যুর কথা ওর কাছে বেদবাক্যের মতো। ছেলেটা সত্যিই বড় ভাল। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চিকুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারার সব কৃতিত্বই ওর। জার্মান ক্লাসে অবধি চিকু এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো যাচ্ছে। অভিমন্যুর বিয়েতে দেওয়ার জন্য দামি সিল্কের শাড়ি কিনেছেন সুচেতনা। রিসেপশনের দিন নিয়ে যাবেন। তিলককেও নিয়ে যাবার কথা বারবার করে বলে দিয়েছেন অভিমন্যুর দিদিমা। শুধু মিঠি যাবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। অভিমন্যুর প্রতি মিঠি কেমন যেন গোড়া থেকেই চটা। মিঠি অবশ্য না যাবার পক্ষে পরীক্ষার অজুহাত দিয়েছে। সেমেস্টারের পরীক্ষা চলছে ওদের। কিন্তু সুচেতনা আঁচ করতে পারেন, অভিমন্যুর বিয়েতে না যাবার পক্ষে আরও গূঢ় কোনও কারণ আছে। ইদানীং মিঠিকে তেমন ভাল বুঝতে পারেন না সুচেতনা। মিঠি যেন তাঁকে একটু এড়িয়ে চলে। চিকুকে নিয়ে চিন্তা একটু কমল তো মিঠির ব্যাপারে খচখচানি শুরু হল। কোনওদিন আর তেমন নিরুদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে পারলেন না সুচেতনা। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ অবশ্য প্রভাত। প্রভাতের শরীরটা ইদানীং একেবারেই ভাল যাচ্ছে না। সেদিন স্পেশালিস্টও একটু সতর্ক হতে বলেছেন। প্রভাত আজকাল অল্পেতেই ক্লান্ত বোধ করেন। মানতে না চাইলেও ভিতরে ভিতরে প্রভাতের শরীর যে ভেঙে যাচ্ছে, সুচেতনা সেটা বুঝতে পারেন। হয়তো এটাই ভবিতব্য। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের এই ক্ষয় অনিবার্য। একে রোখার সাধ্য কী সুচেতনার? তবু হঠাৎ হঠাৎ বড় অসহায় লাগে। ভিতরে ভিতরে যেন একটা আশ্রয় খোঁজেন তিনি।

    সকাল থেকেই একটানা খাতা দেখেছেন সুচেতনা। প্রভাতের আজ কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার আছে। মিঠিরও পরীক্ষা, সকালেই বেরিয়ে গেছে। চিকুও সকাল থেকেই অভিমন্যুদের বাড়ি। তিলক নিজের ঘরে সুটকেস প্যাক করছে। আর তিনদিন বাদেই ওর ফ্লাইট। সারাদিন নিরিবিলিতে খাতাগুলো দেখার কাজ ভালই এগিয়েছে। মিঠির আজ পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে কোথায় বেড়াতে যাবার প্রোগ্রাম আছে। আজ না হয় পরীক্ষা শেষ। দল বেঁধে বেড়াতে যাবে। এমনিতেও আজকাল বাড়িতে ফিরতে বেশ দেরি করে মিঠি। সন্ধে পার করে ফেরে। জিজ্ঞেস করলে কঠিন চোখে তাকায়। সেদিন বলেছে, ‘মামণি, আমার জন্য অত চিন্তার দরকার নেই। আমারও প্রায় কুড়ি হল। এই বয়সে সবাই নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তুমিও নিয়েছিলে। আমার লাইফ নিয়ে আমি কী করব, সে-ডিসিশনটাও কিন্তু আমার।’ সুচেতনার বুকে ধক করে লেগেছিল। তিনি নিঃশব্দে সরে গিয়েছিলেন। মিঠি প্রয়োজনমতো তাঁকে অতীত মনে করিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। তবু কোথাও যেন লেগেছিল। ওরা মনে করুক আর না করুক, সুচেতনা তো নিজেকে মিঠি-চিকুর মা বলেই ভাবেন। ভাবতে চান অন্তত। একটানা খাতা দেখে মাথাটা ঝাঁ ঝাঁ করছে সুচেতনার। বেলা পড়ে আসছে। এ-বছর গরমটাও জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল থেকে দু’বার স্নান হয়ে গেছে সুচেতনার, তবু গরম লাগছে। এই ফ্ল্যাটের উপরে ছাদ, বিকেলের দিকে তেতে ওঠে ভীষণভাবে। এখন আফশোস হয়, একেবারে উপরের ফ্লোরে ফ্ল্যাট নেওয়াটা ঠিক হয়নি। হাউসকোট পরে আছেন সুচেতনা। গরমে হাঁসফাঁস লাগছে। ফ্ল্যাটের একমাত্র এসি-টা গেস্ট রুমে। ঘরে পর্দা টেনে এসি চালিয়ে এসেছেন সুচেতনা দুপুরে খাওয়ার পরেই। ঘর থেকে কোনও সাড়াশব্দ আসছে না। তিলক কি ঘুমিয়ে পড়ল? সাধারণত দুপুরে ঘুমোনোর অভ্যাস নেই ওর। সুচেতনার হঠাৎ প্রবল ইচ্ছে হল ও-ঘরে একটু এসিতে বসতে। মেশিন চলার জন্য দরজাটা ভেজানো আছে ৷ সুচেতনা সন্তর্পণে দরজাটা খুলে ঘরে ঢুকলেন। এ-ঘরটায় ফার্নিচারের বেশি বাহুল্য নেই। সিঙ্গল বেডের তুলনায় বড়, কিন্তু ডবল বেডের চেয়ে ছোটমাপের ডিভান, শো-কেস, বেডসাইড টেবিল। একটা ছোট ওয়ার্ডরোবও আছে অতিথিদের কথা মনে করে। জানলার একপাশে ছোট রাইটিং ডেস্ক আর চেয়ার। ডেস্কের উপর তিলক ওর ল্যাপটপটা রেখেছে। বালিশে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে রয়েছে তিলক। চোখদুটো বোজা ৷ ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, সরু কালো ফ্রেমের চশমা আর লম্বা লম্বা চুলে ওর মধ্যে একটা সাতের দশকের বাউন্ডুলে ভাব এসেছে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় চেহারা নিয়ে কোনও সচেতনতা ছিল না তিলকের। এখন ও বোধহয় অনেক বদলেছে। এই যে গোঁফ-দাড়ি, কাঁধ অবধি চুল, এসব মিলিয়ে এখন একটু কি সযত্নচর্চিত চেহারা তিলকের? ভাবতে চেষ্টা করলেন সুচেতনা। ওর মাথাটা ঘুমের ঘোরে একদিকে হেলে গেছে। ঠিক করে না শুলে পরে ঘাড় ব্যথা হবে। সুচেতনা তিলকের মাথাটা সযত্নে বালিশে তুলে দিলেন। তিলক চোখ খুলে তাকিয়েছে। ওর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। ‘এসো’— ও হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে সুচেতনার হাত। যেন এই আসা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ঠিক এমন নিশ্চিন্ত ভঙ্গি ওর। 

    ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ।’ একটু অপ্রস্তুতভাবে বললেন সুচেতনা।

    ‘অত হেজিটেট করছ কেন? আমি জেগে থাকলে আমার কাছে আসতে নেই?’ তিলক মৃদুস্বরে বলছে।

    ‘না, তা নয়।’ মৃদু প্রতিবাদের চেষ্টা সুচেতনার। 

    ‘জুঁই, একটা কথা বলব? কিছু মনে করবে না তো?’

    ‘কী কথা?’

    তিলকের আঙুল আবার খেলা শুরু করেছে সুচেতনার আঙুল নিয়ে। ‘এইভাবে খেটে খেটে নিজের শরীরটা খারাপ কোরো না। আই মিন ইট। এই ক’দিন সমানে দেখছি নিজের উপর কতখানি চাপ নাও তুমি। সবাইকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছ তুমি, তোমার কথা ভাবার কেউ আছে? মিঠি, চিকু সব নিজের নিজের পথে চলে যাবে। তোমার দিকে কেউ তাকাবেও না। প্রভাতদা বিদ্বান লোক, পড়াশুনো নিয়েই ডুবে থাকেন। নিজের দিকে একটু তাকিও প্লিজ।’ তিলকের গলায় অনুনয়।

    এই যে গোঁফ-দাড়ি, কাঁধ অবধি চুল, এসব মিলিয়ে এখন একটু কি সযত্নচর্চিত চেহারা তিলকের? ভাবতে চেষ্টা করলেন সুচেতনা। ওর মাথাটা ঘুমের ঘোরে একদিকে হেলে গেছে। ঠিক করে না শুলে পরে ঘাড় ব্যথা হবে। সুচেতনা তিলকের মাথাটা সযত্নে বালিশে তুলে দিলেন। তিলক চোখ খুলে তাকিয়েছে। ওর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।

    অদ্ভুত আর্দ্র লাগছে সুচেতনার। তিলক সব খেয়াল করেছে। ভেবেছে এসব নিয়ে। এবার আসার পর তিলকের সঙ্গে বসা হয়নি সেভাবে, গল্প করার সময় পাওয়া যায়নি আলাদা করে। প্রায় সময় হলে এল ওর চলে যাবার। ভিতরে ভিতরে একটা কষ্ট হচ্ছে সুচেতনার। তিলককে আবার কতদিন দেখতে পাবেন না। আবার হয়তো পাঁচ-ছ’বছর পরে সময় হবে ওর এদেশে আসার। আরেকটু ঘন ঘন আসতে পারে না ও? অজান্তে মুখ থেকে ঠিক সেই প্রশ্নটাই বেরিয়ে এল— ‘তিলক, আর একটু বেশিবার দেশে আসতে পারো না? এখানে আমরা সবাই কেমন আছি, কীভাবে আছি— দেখতে ইচ্ছে করে না তোমার? তোমার প্রভাতদা তোমার পথ চেয়ে থাকেন, জানো?’

    তিলক একটু অস্থির, উত্তেজিত ওর চোখমুখ। ‘প্রভাতদার কথা ছাড়ো, তুমি। তুমি দেখতে চাও না আমাকে? কী জানো তুমি? কতটুকু জানো? যত বছর অন্তরই হোক, আমি যখন এখানে ফিরি— তখন কার জন্য ফিরি তুমি জানো? ওখানে বসেও সবসময় আমি কার কথা ভাবি, তুমি ভেবে দেখেছ কখনও?’ তিলকের আঙুল এবার বিপজ্জনক ভাবে ঘোরাফেরা করছে সুচেতনার শরীরের বিভিন্ন গোপন খাঁজে, হাতড়াচ্ছে প্রতিটি অন্দরে-কন্দরে। উঠে বসে ও সজোরে আকর্ষণ করছে সুচেতনার শরীর। সুচেতনা বাধা দিতে পারছেন না। তাঁর যাবতীয় যুক্তি পরম্পরা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটি রোমকূপ রোমাঞ্চিত হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলে বহুদিনের তৃষিত শরীর নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করছে শরীরের কাছে। মধ্যবয়সি নারীর খোলস ছাড়িয়ে সুচেতনা কুড়ি বছর আগেকার তরুণী জুঁই হয়ে যাচ্ছে সহসা। শরীরে এত তৃষ্ণা তবে অবশিষ্ট ছিল? তিলকের মুখ জুঁইয়ের স্তনসন্ধিতে। অস্থির হাত পিছলে যাচ্ছে সর্বত্র। মিলনোন্মুখ দুটি শরীর পরস্পরকে পাঠ করার খেলায় মেতেছে বহুযুগ পর।

    ‘জুঁই, তুমি এত সুন্দর। কতবার তোমার শরীর কল্পনা করেছি আমি, তবু তুমি এত সুন্দর সত্যি না দেখলে বুঝতাম না।’

    তিলকের বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে জুঁই।

    ‘জুঁই, আমি তোমাকে ছেড়ে যাব কী করে?’ 

    ‘তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না তিলক।’ আদুরে বালিকার মতো বলছে জুঁই।

    কতক্ষণ, কত মিনিট-ঘণ্টা কেটেছে হিসেব নেই। বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে নামছে। বসার ঘরে কতবার টেলিফোনটা বেজে বেজে থেমে গেছে। বাজুক, থেমে যাক। এখন আর সুচেতনাকে কেউ পাবে না। সুচেতনার খোলস ছেড়ে জুঁই বেরিয়ে এসেছে। আবার বাজছে টেলিফোনটা। বাইরে দরজা খোলার শব্দ হল কি? টেলিফোনটা হঠাৎ কি থেমে গেল? বাইরের ঘর থেকে কার উত্তেজিত গলা ভেসে আসছে। মিঠির গলা না? প্রায় ছুটে এসে মিঠি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে এল। তিলক ও সুচেতনার অবিন্যস্ত চেহারার দিকে তাকাল একবার বজ্রাহতের মতো। তারপর আস্তে আস্তে বলল, ‘ধ্রুবকাকুর ফোন। বাবার হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমাদের এক্ষুনি চলে আসতে বলল। অনেকবার ফোন করে পাচ্ছিল না।’

    ***

    যমে-মানুষে টানাটানির পর অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রভাত। সেদিন সেমিনার চলাকালীন বুকে হঠাৎ তীব্র ব্যথা অনুভব করেছিলেন। হাপরের মতো হাঁপাচ্ছিলেন। মনে হয়েছিল নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে অন্ধকার দেখে জ্ঞান হারিয়ে যাবার মুহূর্তে পাশের চেয়ারে বসা ধ্রুবই বুঝতে পারে ব্যাপারটা। খুব তাড়াতাড়ি নার্সিংহোমে রিমুভ করা হয়েছিল বলে এ-যাত্রা ফিরে এসেছেন প্রভাত। প্রথম কয়েকদিন বইপত্র, এমনকী কাগজ পড়াও নিষিদ্ধ ছিল। কোনও ভাবেই বিন্দুমাত্র উত্তেজনা কাম্য নয়। উত্তেজনার অবশ্য কারণও ঘটেনি কোনও। প্রভাত এমনিতে বেশ শান্ত স্বভাবের মানুষ। অন্তত তাঁর সেরকমই ধারণা। সহসা বিচলিত হননা। আজ অবশ্য প্রভাতের মনটা বেশ একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। তিলক আজ চলে যাবে। এমনিতেই প্রভাতের অসুস্থতার দরুন ওর যাওয়াটা বেশ ক’দিন পিছিয়ে গেল। প্রভাতকে কেবিনে দেওয়ার পর প্রভাত নিজেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তিলক, তুমি কবে ফিরছ?’

    ‘আপনি একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত থাকি প্রভাতদা?’ অনুমোদন চাইবার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেছিল তিলক। 

    প্রভাত হেসেছিলেন। ‘না তিলক, ইতিমধ্যেই তোমার কাজের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তার উপর শিউলি আর রোদ্দুর অনেকদিন তোমাকে ছেড়ে আছে। এরপর আমার জন্য যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে যাও, তবে আমি শিউলির বিরাগভাজন হব। তোমার সাহচর্য পাবার লোভে আমি একমাত্র শ্যালিকাটির অনুরাগ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।’ তিলক আর বেশি জোর করেনি। মাথা নিচু করে শুনেছিল। পরে জুঁইয়ের মুখে শুনেছিলেন ওর পরিবর্তিত টিকিটের তারিখের কথা। এই ক’দিন জুঁইয়ের বেশ পরিশ্রম যাচ্ছে। বেচারার চোখমুখ বসে গেছে। চোখের কোণে কালি। তবুও জুঁইয়ের চেহারায় এমন এক অনন্যতা আছে, যা ওকে সকলের চোখে আলাদা করে দেয়। ও এলে এখানকার নার্স, এমনকী জুনিয়র ডাক্তাররা অবধি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে। সপ্রশংস সেই দৃষ্টি প্রভাতের চোখ এড়ায়ন। বিশেষ করে অনেকেই অবাক হয়েছে জুঁই প্রভাতের স্ত্রী বলে। একজন আয়া তো সেদিন বলেই ফেলেছে, ‘ওমা, আমি তো ভেবেছিলাম আপনার বড় মেয়ে।’ খুব গর্ববোধ করেছিলেন প্রভাত। পরে জুঁইকে ঠাট্টা করে বলেওছিলেন, ‘‘বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা’ কথাটা যে কতখানি সত্যি, তা হার্ট অ্যাটাক হয়ে নার্সিংহোমে না এলে বুঝতে পারতাম না।’ জুঁই কিন্তু একটুও খুশি হয়নি এসব কমপ্লিমেন্ট শুনে। ওর মুখখানা পাংশু হয়ে গেছিল। কোনওরকমে চোখের জল সামলেছিল ও। মৃদুস্বরে প্রভাতকে বলেছিল, ‘আর কখনও এমন কথা বলবে না।’ এমন ধরনের কথা আগেও হয়েছে, এখন নতুন করে জুঁই এই ব্যাপারটায় এত সেন্সিটিভ হয়ে যাচ্ছে কেন, প্রভাতের বোধগম্য হয়নি। এরকম অনেক কিছুই প্রভাত বুঝতে পারেন না। অভিমন্যু ছেলেটিকেও যেমন ঠিক বুঝতে পারেন না। নতুন বিয়ের পর বউকে নিয়ে সময় করে ঠিক দেখতে এসেছে প্রভাতকে। ওর দাদু-দিদিমাও এসেছিলেন। অন্যদিন একাই এসেছিল ছেলেটি। ওর বউ নাকি ক’টা দিন সল্টলেকে বাপের বাড়ি থাকছে। দিন কয়েক পরে বিদেশে চলে যাবে, সেইজন্য। ছেলেটির অবশ্য বউয়ের জন্য খুব আদিখ্যেতা আছে তা নয়। প্রভাতের একটু অবাকই লেগেছিল। বিয়ের পর বউ কোথাও গেলে তিনি নিজে চোখে অন্ধকার দেখতেন। মিঠি-চিকুর মা, তাঁর প্রথম স্ত্রীর মুখটাও অবশ্য এখন আর ভাল করে মনে পড়ে না। জুঁইয়ের সঙ্গে বিয়ের পরও প্রথম প্রথম জুঁইকে একেবারে চোখের আড়াল করতেন না। জুঁই খুব রাগ দেখাত, তবে মনে মনে পছন্দও করত। ঠাট্টা করে প্রভাতকে মেয়েদের আড়ালে বলত— বউ-এর আঁচল ধরা। জুঁইয়ের সঙ্গে দাম্পত্যের প্রথমদিকে জুঁইকে সবসময়ই আদর করতে ইচ্ছে করত। তখন মেয়েরা বড় হচ্ছে, বিশেষত মিঠি। ইচ্ছে থাকলেও আবেগে রাশ টানতে হত অনেক সময়। গভীর রাতে শুধু ইচ্ছেমতো কাছে পেতেন জুঁইকে। মাত্র বছর বারো আগে। কেমন পাল্টে গেল সবকিছু। জুঁইয়ের সেই সময়ের কথা মনে আছে কি? বহুকাল তাঁদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা হয়নি। কতদিন দাম্পত্য বিষয়টা নিয়ে সেভাবে ভাবেননি প্রভাত। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দাম্পত্যও এখন এক কেজো অভ্যাসেরই মতো। যা আলাদা করে চোখে পড়ে না, নজর এড়িয়ে যায়। অবশ্য পুঁথিগত বিদ্যাচর্চার বাইরে আজ বহুবছর কী নিয়েই বা ভেবেছেন প্রভাত? মেয়ে দুটো চোখের সামনে কেমন তিল তিল করে বড় হয়ে গেল! ওরা যে ঠিক কেমনভাবে বেঁচে আছে, কী ভাবছে, কোনওদিন খেয়ালই হয়নি প্রভাতের। পিতা হিসেবে তিনি ঠিক কীরকম, অসুস্থতার পর হঠাৎ করে ভাবতে শুরু করেছেন তিনি। এই ক’দিনে তিনি হঠাৎই বুঝতে পেরেছেন, অধ্যাপক হিসেবে তিনি যতই সাকসেসফুল হোন না কেন, সংসারের নিরিখে তিনি একজন আদ্যন্ত ব্যর্থ মানুষ। এই ক’দিনে শুধু পরিবারের লোকগুলো ছাড়াও আরও কত যে লোক তাঁকে দেখতে এসেছে! বন্ধুবান্ধব, ছাত্রছাত্রী, শুভানুধ্যায়ী, অল্প চেনা অনেকে যাদের সঙ্গে কখনওই প্রভাত নিবিড় সাযুজ্য অনুভব করেননি। এত লোক তাঁকে দেখতে আসছে! ভিতরে ভিতরে একটা বিস্ময়বোধ হয়েছে। এও একরকম রেভেলেশন। আত্ম-আবিষ্কারও বটে। বারবার আপ্লুত লেগেছে প্রভাতের। আজ সকালে এই ক’দিনের সব অনুভূতিগুলো মনের মধ্যে একবার নাড়াচাড়া করছিলেন প্রভাত, এমন সময় মিঠি ঘরে এল।

    সুচেতনা বাধা দিতে পারছেন না। তাঁর যাবতীয় যুক্তি পরম্পরা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটি রোমকূপ রোমাঞ্চিত হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলে বহুদিনের তৃষিত শরীর নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করছে শরীরের কাছে। মধ্যবয়সি নারীর খোলস ছাড়িয়ে সুচেতনা কুড়ি বছর আগেকার তরুণী জুঁই হয়ে যাচ্ছে সহসা। শরীরে এত তৃষ্ণা তবে অবশিষ্ট ছিল?

    ‘আজকে কেমন আছ?’ মিঠির হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। সেদিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন প্রভাত। ‘ভাল। খুব ভাল।’ মিঠি কেবিনের ও-প্রান্তে টেবিলটায় একটা ফুলদানিতে সাজাচ্ছে ফুলগুলো। ‘ভিজিটিং আওয়ারে এত রাশ থাকে, নিচে লিফটের জন্যই দাঁড়িয়ে রইলাম কতক্ষণ।’ ও বলল।

    ‘ফুলগুলো কোথা থেকে কিনলি?’

    ‘যাদবপুর বাজার। আমি কিনিনি ঠিক। মেসো রিকোয়েস্ট করেছিলেন আজ যেন তোমার কাছে আসার সময় ফুল নিয়ে আসি। ওঁর তরফ থেকে ছোটা সা তোফা’— মিঠি হাসতে হাসতে বলছে। ওর বাক্যগঠনে কি কোনও শ্লেষ মিশে রয়েছে? প্রভাত ঠিক ধরতে পারছেন না। কিন্তু ‘মেসো’ সম্বোধনটা নজর এড়াল না। ‘তিলকদা’ বলায় প্রভাত অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন একবার, তাই বোধহয় বাবার অসুস্থতার জন্য অনুশোচনায় নিজেকে শুধরে নিয়েছে মিঠি। তিলক এখন আকাশপথে। সকাল ন’টা চল্লিশে ফ্লাইট ছিল ওর। 

    ‘তুই এয়ারপোর্টে গেলি না?’

    ‘না! মামণি-চিকু গেছে। সবাই যদি এয়ারপোর্টে যায়, তবে তোমার কাছে আসবে কে?’ মিঠি প্রভাতের খাটের পাশে চেয়ারটা একটু টেনে নিয়ে বসেছে।

    প্রভাত একটু চুপ করে রইলেন। কী বলবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না। মেয়েদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক তৈরি হয়নি কোনওদিন। কেন যে হয়নি! বহু দেরি হয়ে গেছে। তবু যে সেতু তৈরি হয়নি, তারই বিলম্বিত নির্মাণ প্রচেষ্টায় প্রভাত একটু ভেবে বললেন, ‘তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস মিঠি। হ্যাঁ রে, ইউনিভার্সিটিতে তোর অনেক বন্ধুবান্ধব হয়েছে?’

    ‘হ্যাঁ, ওরা সবাই বোধহয় তোমাকে চেনে। আমাদের বাড়িতেও তো আসে কত! তুমি অবশ্য তখন ডিপার্টমেন্টেই থাকো। মামণি চেনে সবাইকে।’ মিঠি বেশ উৎসাহ নিয়ে বলছে, ‘তুমি ক্যাম্পাসে আমার সঙ্গে দেখেছ অনেককে। আলাদা করে চেনো না।’

    ‘তা হবে।’ প্রভাত আবার একটু ভাবছেন, ‘পরীক্ষা তো ভালই হয়েছে বলছিস! ভাগ্যিস আমি তোর পরীক্ষার মধ্যে অসুস্থ হইনি, তাহলে হয়তো পরীক্ষাই দেওয়া হত না!’ কাকতালীয় ভাবে মিঠির এই সেমেস্টারে শেষ পেপারটা দিয়ে আমার পরই প্রভাতের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেই কথাই বলছেন প্রভাত। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসার কথাই ছিল না মিঠির। আইনক্স-এ দলবল নিয়ে সিনেমা দেখার কথা। মিঠি হঠাৎই ভেবেছিল, বইপত্রগুলো রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে মিনিট কুড়ি পরে বেঙ্গল ল্যাম্পের গেটে বন্ধুদের মিট করবে। কেন যে ভেবেছিল! সেইজন্য তো ওই অসম্ভব দৃশ্যটা দেখতে হল। গেস্টরুমে দরজাটা আধখোলা, পর্দা উড়ছে আর পর্দার ফাঁকে এই অসম্ভব নিষ্ঠুর দৃশ্যটা যদি স্মৃতি থেকে বেমালুম হাপিস করে দিতে পারত মিঠি! অথচ দৃশ্যটা ওর মনের মধ্যে দেগে বসে আছে। আর কখনও মুছবে বলে মনে হয় না। পা টিপে টিপে বেরিয়েই আসত মিঠি, যদি না ফোনটা ঠিক তখনই বেজে উঠত। ভাগ্যিস বেজেছিল! ভাগ্যিস বাড়িতে ফিরেছিল মিঠি! তাই তো ঠিক সময়ে বাবার অসুস্থতার খবরটা জানতে পারল। মামণি বা তিলক কেউ তো ফোন তোলার অবস্থায় ছিল না। মুহূর্তের মধ্যে সেদিন বিকেলের সব ঘটনাগুলো ছবির মতো মনের মধ্যে ভেসে গেল। একটু অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া টের পেয়েছেন প্রভাত। সস্নেহে বললেন, ‘কী রে? কিছু ভাবছিস? সেদিন তোদের খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম, না রে?’

    মিঠি ক্লিষ্ট হাসল। ঘাড় নাড়ল। ‘হ্যাঁ খুব ভয় পেয়েছিলাম সেদিন। পরীক্ষা হয়ে গেছে, ঠিক আছে, তবে না দিতে পারলেও কিছু এসে যেত না। পরীক্ষা তো জীবনের সবটা নয়!’ কী সহজ ভাবে বলছে ও। অবাক হয়ে ভাবলেন প্রভাত। ‘তুই সত্যিই বড় হয়ে গেছিস, মিঠি। শুধু একটা কথা মনে রাখিস। জীবনে অনেক দুঃখ আসবে, ভেঙে পড়বি না। টেক লাইফ ইন ইট্‌স স্ট্রাইড। সত্যদ্রষ্টা কবি সেই যে লিখেছিলেন না, ‘মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে।’

    জীবনে যদি এইটা অক্ষরে অক্ষরে ফলো করতে পারিস তাহলে দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাবে। কী ঠিক হয়ে যাবার কথা বলছে বাবা, ভাবার চেষ্টা করল মিঠি। বাবা কি জানে মামণি আর তিলকের মধ্যে সম্পর্ক! মিঠি বুঝতে পারল না। কে জানে হয়তো এমনও হতে পারে ওদের মধ্যে শুরু থেকেই প্রেম ছিল। তিলক যখনই এসেছে, হয়তো শারীরিক সংযোগ হয়েছে দুজনের মধ্যে। মামণি বাবাকে ঠকাল কেন? তিলককেই যদি ভালবাসে তবে বাবাকে বিয়ে করে সংসার সংসার খেলা করল কেন? সেদিন প্রভাতের খবর পাওয়ার পর ট্যাক্সি ধরে তিলকই ওদের নিয়ে এসেছিল নার্সিংহোমে। ট্যাক্সিতেও ওরা তিনজন কেউ কারও সঙ্গে একটাও কথা বলেনি। বলার অবস্থাও ছিল না। মিঠি নিজেকে দিয়ে বুঝেছিল ওরা সকলেই একটা ঘোরের মধ্যে আছে। টের পেয়েছিল পাশে সুচেতনা চেষ্টা করছেন চোখের জল সামলাতে। মিঠি কঠিন মুখে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। বস্তুত তারপর থেকে মিঠি সুচেতনার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটা কোথায় যেন গভীরভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে মিঠিকে। ও কিছুতেই ভুলতে পারছে না কিছুদিন আগেই ও তিলককে প্রেম নিবেদন করেছিল। তিলক কি তার প্রেমিকাকে বলেনি সে-কথা? মুখে শুধু বড় বড় কথা— আমি বিবাহিত, আমার সন্তান আছে হ্যানত্যান। আসল কথাটা স্বীকার করতে পৌরুষ লাগে। স্বামী, বাবা হয়েও একটা অবৈধ সম্পর্ক রাখতে তো বাধো বাধো ঠেকেনি লোকটার। সম্পর্ক আবার নিজের সমবয়সি বড় শালীর সঙ্গে। সে আবার গুরুপত্নীও বটে। চমৎকার! লোকটা আসলে পুরুষত্বহীন, চোর। ক’দিন আগে লোকটার জন্য ফিদা হয়ে যাচ্ছিল সে, ভেবে এখন নিজেরই আশ্চর্য লাগছে। মন এমন পালটে যায়? এখন আর নির্ভেজাল ঘৃণা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই মিঠির তিলকের জন্য। কিন্তু এসব বাবাকে কিছুই জানানো চলবে না। তাহলে শরীর খারাপ বাড়বে। আসলে কেউ নেই বাবার। এত প্রিয় যে তিলক, সে পিছন থেকে বাবারই বুকে ছুরি মেরেছে। মামণি মিথ্যে অভিনয় করেছে বাবার সঙ্গে। বাবার জন্য সত্যি ভাবে একমাত্র মিঠি। এবার থেকে খুব সাবধানে রাখতে হবে বাবাকে। সেদিন উড়ে যাওয়া পর্দ যে রূঢ় সত্য উন্মেচিত করেছে, তাকে সন্তর্পণে ঢেকে রাখতে হবে বাবার কাছ থেকে। শুধু বাবা কেন, পৃথিবীতে কারও কাছে কখনও সে প্রকাশ করবে না এ-কথা। সারাজীবন যকের ধনের মতো আগলে রাখবে সবার চোখের আড়ালে— সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাবা জানে না, মিঠি সত্যিই কতটা বড় হয়ে গেছে! অপ্রিয় সত্যকে গোপন করার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের উপর তুলে নিয়ে, বাবা কথায় কথায় চমৎকার উদ্ধৃতি দেয়। অধ্যাপনা বোধহয় বাবার মজ্জাগত। কী সুন্দর করে মনে করিয়ে দিল— ‘সত্যেরে লও সহজে।’ সত্যকে সহজে গ্রহণ করা সে বড় কঠিন কাজ। গোপন সত্যকে রক্ষা করা কি কঠিনতর? মিঠি তার চিন্তাপ্রবাহ কিছুই বুঝতে না দিয়ে খুব সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রভাতকে বলল— ‘বাবা, আমার জন্য রবীন্দ্রনাথের ফিলজফি তো বললে। তোমার নিজের জন্য কোনও লাইন মনে পড়ছে?’

    ‘আমার জন্য?’ প্রভাত একটু ভেবে বললেন— ‘গত কয়েকদিন ধরে সমানেই ভাবছি এত লোক দেখতে আসছে আমাকে, আমার জন্য কনসার্ন থেকেই তো? অথচ দ্যাখ, আমি চিরকাল নিজের চারপাশে একটা আত্মকেন্দ্রিকতার বৃত্ত তৈরি করে এই চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বড় জগৎটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করছিলাম। এরই নাম কূপমণ্ডূকতা। এখন সমানেই ভাবছি— ওই গানটা— ‘আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি এ আপনারই আবরণ, খুলে দেখ দ্বার, অন্তরে তার আনন্দনিকেতন।’ এটা বোধহয় রবীন্দ্রনাথ আমার জন্যই লিখেছিলেন। আমার অসুস্থতা আমাকে সেই প্রশস্ত আনন্দনিকেতনের সন্ধান দিয়েছে।’

    মিঠি কিছু বলল না। শুধু আলতো করে বাবার কাঁচাপাকা চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook