কয়েকটি কবিতা

পৃথিবীর একমুখী স্বাদের দাক্ষিণ্য

পৃথিবীর একমুখী স্বাদের দাক্ষিণ্য পাইনি বলে 

এখনও হলঘরে ওঠার সিঁড়িতে বসে তারা গুনছি

নামতার মতো সার সার দাঁড়িয়ে অগণন মুণ্ডহীন 

ইচ্ছার মতো একটু একটু করে বাড়ছিল তাদের 

সিলিং ধরার প্রবৃত্তি 

একটা গল্প আমি যেখান থেকে খুশি শুরু করতে পারি 

মনের এই বহুমুখী অবস্থান জেনে যাওয়ার আশঙ্কায় 

সাদা পাতায় লাল গোল সূর্যই আঁকলাম, তারপর 

এক লাফে যেই বিষণ্ণ বিকেলের পাশে গিয়ে বসেছি

হলঘরের যাত্রা চারমাত্রা থেকে বারোমাত্রায় সরে গেল

চাঁদিনী রাতে 

ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ার মতো ভেসে আসছে 

ট্রেন আসার খবর আর এই মরু অঞ্চলে 

হাজার বছর আগে হওয়া প্রথম অবিরাম বৃষ্টিপাতের 

ইচ্ছার শব্দধ্বনি

যারা ভেবেছিল নামতা পড়ার মতো করে দোলাবে

আর মুহূর্তের ধাক্কায় ভুলিয়ে দেবে যাবতীয় অলিগলি 

তাদের নৌকার সমস্ত পাল ছড়ানো আছে 

মেঘলা আওতাধীন সমুদ্রদিনের কলঘরের 

কান্নার ভেতর

স্মৃতিপথ রুদ্ধ করে দেওয়ার মতো 

মর্গের ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ এটাও জানিয়ে দিচ্ছে

এক আকাশ হলঘরের অবাস্তব কল্পনা 

আরও এক মর্গের প্রস্তুতিমঞ্চ।



আজ যখন বৃষ্টি হয়

দশকের পর দশক পরিত্যক্ত রাস্তা থেকে উঠে আসা

এক বিষণ্ণ দিনের বৃষ্টির বুকে লেখা ছিল 

এক পাহাড়ি পায়ের ইতিবৃত্ত 


একসঙ্গে সকলের ভুলে যাওয়া অসম্ভব মনে করে

মধ্যাহ্নে দরজায় কড়া নেড়েছিল একাধিক হাত

তবুও বিকেল পর্যন্ত ধুলোগান বুকে নিয়ে 

অপেক্ষায় ছিল নুড়ি পাথরের যাবতীয় সন্তানসন্ততি

ফিরে গিয়েছিল ডানা

শহর সরে গেল অনেক দূর দিয়ে 

এখন শুধু সন্ধেয় রক্তাক্ত পায়ের খোঁজ পড়ে 

পরিশ্রমী পায়ের মানচিত্র সম্পর্কে অবগত না থাকায়

আলোর শহরে পরিত্যক্ত রাস্তার খোঁজে চোখ ঘোরে 


আজ যখন বৃষ্টি হয় 

জলস্রোতের পথ জানা না থাকায় 

জনবসতি এলাকায় গলা সমান জলে 

নিভে যায় সভ্যতায় সাজানো সমস্ত আলো।



কেউ কোথাও ভাসানোর পথে যায়নি

আমাদের সাড়ার দিকে নামমাত্র কান না দিয়েও

মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রেনটি আকাশের দিকে তাকিয়েছিল

আর আমরা ভীষণ তৃষ্ণার মতো শুকিয়ে যাচ্ছিলাম

একটি মজা নদীর পাড়ে বসে বসে 

আমাদের গানের মধ্যে কোথাও কোনো বৃষ্টি ছিল না 

অথচ আমরা সকলকে আউড়ে যাচ্ছিলাম—

অন্য পৃথিবীর গান— এতসবের পরেও 

ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল নির্বাক শ্রোতার মতো 

একটি মাত্র আঙুলও তুলে ধরা যায়নি

বৃষ্টির দারুণ ইচ্ছা বুকে নিয়েও 

শুধুমাত্র আঙুল টাঙায়নি বলে কেউ কোথাও 

ভাসানোর পথে যায়নি

আমাদের ছিল একটিমাত্র আসন এবং তার 

যাবতীয় দিকের অবস্থান জেনেও 

কিছুক্ষণের জন্যেও চোখ বুজে বসিনি,  আর তাই 

আমাদের গানের মধ্যে এত এত রুক্ষতা ছিল যে

বৃষ্টির সমস্ত সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে 

গানের মাঝপথেই সব পরিযায়ী পাখিরা 

একসঙ্গে উড়ে গিয়েছিল।