বদল সরকার

আকাশের কোনও তারকাকে কেউ কোনওদিন ছুঁতে পারবে না তো কী হয়েছে! আমাদের এই বাংলায় যত তারকা আছেন, তাঁদের কাছে আমি ঠিক পৌঁছে গেছি ক্যামেরা নিয়ে। লক্ষ্যভ্রষ্ট কি হইনি? হয়েছি। দিগভ্রষ্টও হয়েছি। ২০০৩ সালের পর থেকে মাথার মধ্যে একরকম জেদ ও বায়না চেপে বসল। না, এটা কোনও চুক্তিভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট নয়; নিজের তাগিদে, কাজের আনন্দে। বাঁকুড়ায় ছুটে গেছি সনাতন দাস বাউলের ছবি তুলতে। ব্যাঙ্গালোর গেছি মান্না দে-র ছবি তুলব বলে। শান্তিনিকেতনে সোমনাথ হোর, ঠাকুরনগরে বিনয় মজুমদার। আর কলকাতায় তো বাস করেন অসংখ্য তারকা! মৃণাল সেন, তপন সিংহ, সুচিত্রা মিত্র, সন্ধ্যা মুখার্জি… দু-তিন বছরে ক্যামেরায় ধরে ফেলেছি দেড়শোর বেশি তারকা-শিল্পীকে।

আরও পড়ুন: যখন তাঁর নাটক আমাদের সিলেবাসে পড়ানো হয়, সেই সময়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী হয়েছিলেন বাদল সরকার! লিখছেন বাদল সরকার…

এবার বলি দিগভ্রষ্ট হওয়ার কথা। দু’বার হয়েছি। একজন ছিলেন বিখ্যাত গায়িকা, আর একজন নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রী বাদল সরকার। উনি ফোনেই ওঁর বাড়ির ঠিকানা বদল করে দিয়েছিলেন। সকালবেলায় ক্যামেরা নিয়ে সেই ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম (অর্থাৎ উনি যে-ঠিকানা আমাকে ফোনে বলেছিলেন)। দরজায় বেল টিপতেই জানা গেল, সেখানে বাদল সরকার নামে কেউ থাকেন না। তিনি কি তবে আমাকে ভুল ঠিকানা দিলেন? তখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার আসেনি। বেরিয়ে এসেই টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করলাম। উনি বললেন, ‘কী বলছেন? আমি আজ আপনাকে কোনও সময় দিইনি। তাহলে আমার ক্যালেন্ডারে লেখা থাকত। আপনি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে বসিয়েছেন।’ এর বেশ কিছু মাস পরে ওঁর বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে হঠাৎ একদিন সন্ধেবেলা ওঁর কাছে চলে যাই। ছবি তোলার আর্জি জানিয়ে আসি। রাজিও হয়ে যান। তবে কেন তিনি সেদিন আমাকে ভুল ঠিকানা বলেছিলেন, সেই ঠিকানায় যাঁরা থাকতেন তাঁরা কারা, আমার আর কোনওদিন জানা হয়নি…

বাদলের সঙ্গে ‘বদল’ শব্দটা যে জুড়ে আছে, তা পরেও একবার টের পেয়েছিলাম। ফেসবুকে ওঁর একটা ছবি পোস্ট করার পর, ইংরেজির BADAL বাংলায় হয়ে গেছিল বদল। বদল সরকার। কাকতালীয়, সন্দেহ নেই; কিন্তু বিস্মিত হয়ে ভাবি, পুরোটাই কাকতালীয় কি?

চিত্রগ্রাহক: সন্দীপ কুমার