মেটালের ঈশ্বর

Ozzy Osbourne

কয়েক সপ্তাহ আগেই আমি আর আমার এক বন্ধু ‘ব্যাক টু দে বিগিনিং কনসার্ট’-টা পুরো দেখতে দেখতে আলোচনা করছিলাম অজি ওসবর্ন আর ব্ল্যাক সাব্বাথ না থাকলে আমরা হেভি মেটালের কতগুলো ‘সাব জঁর’ হয়তো পেতাম না। মেটাল শুধুমাত্র একটা সাংগীতিক জঁর নয়, এটা একটা জীবনবোধ, একটা বিশ্বাস, একটা মানসিকতা। সংগীত জগতে এই ‘মেটাল মানসিকতা’-কে প্রথম সবার সামনে নিয়ে আসেন অজি আর ওঁর ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক সাব্বাথ’।

গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের শেষের দিকে, যে সময় মূলধারার সংগীত একেবারেই অন্য ধরনের ছিল, সে-সময় এটা করার জন্য প্রয়োজন ছিল একেবারে ছকভাঙা ভাবনার আর অনেকটা সাহসের। প্রথম দিকের অ্যালবামগুলো সংগীত সমালোচকদের একেবারেই পছন্দ ছিল না, অথচ বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। কারণ ওঁরা কণ্ঠস্বর দিয়েছিলেন বহু মানুষকে, যারা ‘একটু অন্যরকম’ ছিল।

মেটাল মিউজিক মানুষের ‘প্রাইমাল ইনস্টিংক্ট’-গুলোকে আশকারা দেয়, গলা ফাটিয়ে, কান ঝালাপালা করা গিটার রিফ আর রক্ত গরম করা ড্রামসের মধ্য দিয়ে চিৎকার করে নিজের কথা বলার সাহস দেয়। মনের সেইসব অন্ধকার দিক, সেইসব ‘এক্সট্রিম’ ভাবনাগুলো, যেগুলো নিয়ে কথা বলতে সাধারণ সমাজ ভয় পায়, সেগুলোকে ভিত্তি করেই গান বাঁধে।

আরও পড়ুন: জর্জ হ্যারিসনের নিত্যসঙ্গী ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত!
লিখছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য…

অন্ধকারের গান বাঁধলেও মানুষ হিসেবে কিন্ত ভারী মিষ্টি ছিলেন অজি। পুরোটাই উনি করেছেন সুন্দর রসবোধের মাধ্যমে, মজার সঙ্গে। এটাই ভীষণ অনুপ্রেরণা দেয় আমাকে। ‘Changes’, ‘Dreamer’, ‘Mama I’m coming home’-এর মতো গান ওঁর ভীষণ সংবেদনশীল একটা দিককে সামনে আনে। আসলে মেটাল সংগীতের ধারা মানুষকে অনেক বেশি ‘সেন্সিটিভ’ করে দেয় আমার মনে হয়। যারা গভীর কোনও আঘাত পেয়েছে, মেটাল তাদের জড়িয়ে ধরে, আদর দেয়। এছাড়াও মেটাল মানুষকে অতিমানবে পরিণত করে কিছুক্ষণের জন্য। শারীরিক এবং মানসিকভাবে। তখন তার কণ্ঠস্বর, দৃষ্টি, হাঁটাচলার ভঙ্গি— সবই পাল্টে যায়।

এখন মেটাল মিউজিকের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই, মেইনস্ট্রিম রক মিউজিকের সাউন্ডও বদলে গিয়ে পপ মিউজিকের মতো হয়ে গেছে। আসলে এই সোশ্যাল মিডিয়া আর রিল-যুগে আমাদের জীবনটাও পপ মিউজিকের মতো হয়ে গেছে। ‘প্রোডিউসড’, ‘ম্যানুফ্যাকচার্ড’। কিন্তু এখনও অনেক দুর্ধর্ষ মেটাল ব্যান্ড আছে পৃথিবী জুড়ে! অজস্র ভাল মেটাল ফেস্টিভ্যালও হয়। আর রয়েছে মেটালের স্পিরিটটা। পারফর্মার হিসেবে আমরা সবাই কিছু মুহূর্তের জন্য মঞ্চে অতিমানব হয়ে উঠতে চাই, তখন সেই মেটাল সত্তাটা জেগে ওঠে! তবে এইসব কিছুই হত না, যদি না অজি থাকতেন। আমরা না পেতাম ‘মেটালিকা’, না পেতাম ‘গানস এন্ড রোজেস’, না পেতাম ‘রেজ এগেইনস্ট দ্য মেশিন’, না পেতাম ‘স্লিপনট’-এর মতো ব্যান্ড! আর আমারও লুকিয়ে লুকিয়ে কমার্শিয়াল কাজে মেটাল রিফ ঢোকানো হত না। কিছুদিন আগেই আমার কাজ করা পরবর্তী ওয়েব সিরিজের ট্রেলার বেরিয়েছে, যা শেষ হচ্ছে বিজিএম-এ একটা ‘মেটাল গ্রাউল’ দিয়ে। এমন আগেও করেছি। মেটালের প্রভাব আমার নিজের কাজে অনেক সময়ই প্রকাশিত হয়। এছাড়া আমার নিজেরও একটা মেটাল ব্যান্ড আছে, ‘দ্য প্রফেসর’। তার অনুষ্ঠান থাকলে, তার আগে অন্যরকম মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি লাগে।

এই আমাদের মতো মানুষগুলো, যারা চেনা ছকের থেকে একটু অন্যভাবে ভাবতে চাই, তাদের এতটা সাহস দেওয়ার জন্য অজি অসবোর্নকে অনেক, অনেক ধন্যবাদ। সাধে কি আর উনি ‘গডফাদার অফ হেভি মেটাল’!