প্রায় দেড়শো বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র ‘সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং’ ভারতের বন্দনা করে লিখেছিলেন ‘বন্দে মাতরম’। অথচ আজকের ভারতে সেই নির্মল শীতল বাতাস কল্পনামাত্র। আজ বিশ্বের কুড়িটি দূষিত শহরের মধ্যে তেরোটি শহর রয়েছে ভারতেই আর ভারতের রাজধানী দিল্লি শহর তো বিষাক্ত বাতাসের চাদর ঢেকে মৃত্যুর প্রহর গুণছে৷ সদ্য প্রকাশিত World Health Organisation-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লিবাসী প্রতিটি মানুষের আয়ু আট বছর কমিয়ে দিচ্ছে এই দূষিত বাতাস। অর্থাৎ, শিয়রে মৃত্যু। অথচ মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে কি প্রশাসন? এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণটাই বা কী? এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে AQI বা বায়ূদূষণ নিয়ামক সম্পর্কে সামান্য আলোচনা দরকার।
AQI বা air quality index প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করাচ্ছে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যে বাতাস আমাদের ফুসফুসে ঢুকছে, তা কতটা বিশুদ্ধ অথবা বিষাক্ত। সাধারণত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, ওজোন, কার্বন মনো-অক্সাইড এই গ্যাসগুলি বায়ুদূষক হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু এগুলির সঙ্গে রয়েছে আরও একজন অদৃশ্য নীরব ঘাতক, PM 2.5 (Particulate Matter)। আয়তনে ২.৫ মাইক্রন, চুলের চেয়ে ৩০ লক্ষ গুণ ছোট এই PM2.5 হল ধুলো, ধাতব বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্যের মিশ্রণ, যা বাতাসে ভেসে থাকে। এরপর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে সেখান থেকে মিশে যায় রক্তে এবং ক্ষতি করে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের। শুধু তাই নয়, এই PM 2.5-এর সঙ্গে বাতাসে মিশে থাকে তার দোসর PM10, যা একইভাবে মানব-শরীরের ক্ষতি করে।
আরও পড়ুন: নাস্তিকতা সংক্রান্ত তর্কে কি হেরে গেলেন জাভেদ আখতার? লিখছেন সম্প্রীতি চক্রবর্তী…
দিল্লি শহরে এই দূষিত বায়ুর পরিমাপক AQI ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। WHO অনুযায়ী সূচক শূন্য থেকে পঞ্চাশের মধ্যে যতক্ষণ আছে ততক্ষণ সেই বাতাস বিশুদ্ধ। গত কয়েক মাসে, বিশেষ করে দীপাবলির পর থেকে, দিল্লি এনসিআর-এর (দিল্লি এবং পাশ্ববর্তী হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের কয়েকটি জেলা, একসঙ্গে দিল্লি এনসিআর) গড় AQI থেকেছে তিনশো থেকে চারশো-র মধ্যে, কখনও বা তারও বেশি। এখানে মজার ব্যাপার হল, ভারতে জাতীয় AQI (National Air Quality Index) স্কেল তৈরি করা হয়েছে শূন্য থেকে ৫০০ পর্যন্ত। তাই দূষণমাত্রা বাড়লে, AQI ৫০০ ছাড়িয়ে গেলে তখন নির্দিষ্ট সংখ্যার পরিবর্তে দেখায় ৫০০+। অর্থাৎ, আশপাশের বাতাস ঠিক কতটা দূষিত, মানুষ তার আন্দাজ করতে পারলেও সরকারের পক্ষ থেকে দূষণের যথার্থ পরিমাপ জানানো সম্ভব হয় না। তাই আন্তর্জাতিক পরিমাপক, যেমন IQAir, World Air Quality Index বা WHO-র তথ্য অনুযায়ী যখন রাজধানীর AQI ছ’শো-সাতশো, এমনকী, আটশোর কাছাকাছি, তখন সরকারি নথিতে AQI ৫০০+। বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বলছেন এই মুহূর্তে দিল্লির বাতাসে শ্বাস নেওয়া প্রাত্যহিক ১৩টি সিগারেট খাওয়ার সমান। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, AIIMS-এর সিনিয়র ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গোপীচাঁদ খিলনানি বয়স্ক, হৃদরোগ অথবা ফুসফুস রোগাক্রান্ত মানুষদের এই মুহূর্তে দিল্লি ছেড়ে অন্তত ছয় থেকে আট সপ্তাহ কোনও স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু প্রতি শীতে দিল্লির বাতাস এত দূষিত হয় কেন? এর উত্তর রয়েছে ছোটবেলার বিজ্ঞান বইতে৷ সূর্যের আলোতে মাটির কাছাকাছি বাতাস বেশি গরম হয়ে ওপরে চলে যায় এবং ওপরের ঠান্ডা বাতাস চলে আসে নীচে৷ শীতকালে এই বাতাসের প্রবাহ কিছুটা থমকে যায়। এর পাশাপাশি দিল্লির ভৌগোলিক অবস্থানের দিকে যদি আমরা নজর দিই তাহলে দেখা যাবে, উত্তর-পূর্বে হিমালয় ও দক্ষিণ পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বতমালার মাঝে থাকা দিল্লির গঠন আংশিক বাটির (shallow basin) মতো, ভূমিভাগ তুলনায় নীচুর দিকে, যার ফলে মাটির কাছাকাছি বায়ু চলাচল কম হয়। ফলে শীতকালে নীচের স্তরে থাকা ঠান্ডা বাতাস দূষিত কণাগুলিকে আঁকড়ে ধরে এবং ঘন কালো কুয়াশায় দিল্লি ঢেকে যায়। আর এই দূষিত কণাগুলি আসে কোথা থেকে? আসে দিল্লির রাস্তায় চলা অগণিত যানবাহন থেকে। প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি ‘রেজিস্টার্ড’ যানবাহন থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, PM2.5 বাতাসে মেশে। এর সঙ্গে রয়েছে কলকারখানার বর্জ্য। শহরে প্রায় প্রতিদিন রাস্তা কাটা, সিমেন্ট মিশ্রণ, ড্রিলিং এমন অজস্র কাজ হয়, যা থেকে এমন বর্জ্য বেরয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। ফলস্বরূপ বায়ুদূষণ এবং AQI-এর বৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, দিল্লির পাশ্ববর্তী রাজ্য, যেমন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের নানা গ্রামে কৃষিজমিতে পাড়ালি (খড়) পোড়ানো হয়। ফসল কাটার পর জমিতে ফসলের যে অবশিষ্টাংশ থাকে, তা জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন ফসল বোনার জন্য জমিকে প্রস্তুত করে মানুষ। এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমন হয় আর্থিক সাশ্রয়। এই পাড়ালিও দিল্লি এনসিআরের AQI বাড়ানোর জন্য আংশিকভাবে দায়ী।
আর দূষণ প্রসঙ্গে অবশ্যই আরবল্লী পর্বতমালার কথা বলা প্রয়োজন। ভারতের প্রাচীন পর্বতমালা, জীববৈচিত্র্যের ধারক আরবল্লী আছে বলে ভারতের উত্তর পশ্চিমের বিস্তীর্ণ ভূমিভাগ এখনও অবধি মরুভূমিতে পরিণত হয়নি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছ, আরবল্লী পর্বতমালার যে-সকল পাহাড় দৈর্ঘ্য বরাবর ১০০ মিটারের বেশি হবে এবং প্রস্থ বরাবর দুই অথবা তিনটি পাহাড় যখন ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করবে— তখন তারাই শুধু আরবল্লী পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হবে। এদিকে আরবল্লী পর্বতমালার ৯০% পাহাড়ের উচ্চতাই ১০০ মিটারের কম। তাই তাদের ক্ষেত্রে ‘বন সংরক্ষণ আইন’ প্রযোজ্য হচ্ছে না, অর্থাৎ যথেচ্ছ পাহাড় কাটার অধিকার পাচ্ছে পুঁজিপতিরা। এখন কেন্দ্রীয় সরকার একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে জানিয়েছেন, আরাবল্লী পর্বতমালায় ইচ্ছামতো পাহাড় খনন করা যাবে না, কিন্তু বেআইনিভাবে সে-কাজ প্রতিনিয়ত চলছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনই খননকাজের ফলে উড়ে আসে মাটির অংশ, ধুলো। এইসবই বাতাসে মিশে গিয়ে বাতাসে দূষণের মান বাড়াচ্ছে।
ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে কমবেশি সবাই পড়েছি, ‘বায়ুদূষণের কুফল এবং তার প্রতিকার ব্যবস্থা’। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আর এতটা সহজ নেই। বায়ুদূষণের যথার্থ কারণ অনুসন্ধান করে সেই অনুযায়ী প্রতিকার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে অনির্দিষ্টকাল। কিন্তু তার আগেই দিল্লি শহরের অধিকাংশ মানুষ সম্মুখীন হচ্ছেন নিরাময়ের অযোগ্য ফুসফুসের অসুখের। চিকিৎসকরা বলছেন, দু’টি মানুষের মধ্যে একজনকে যদি দিল্লি শহরে এবং অন্য জনকে ওসলো কিংবা কানাডা কিংবা নিউজিল্যান্ডের কোনও শহরে পাঁচ বছরের জন্য থাকতে বলা হয়, তাহলে পাঁচ বছর পরে দেখা যাবে, দিল্লিতে থাকা ব্যক্তির ফুসফুস অপর ব্যক্তি অপেক্ষা দুর্বল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং ফুসফুসের ওপর রয়েছে ধূসর আস্তরণ। ইতিমধ্যেই শহরের শীতের বাতাসে ছাইয়ের কটুগন্ধ, শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, চর্মরোগ-সহ নানা বিড়ম্বনার মধ্যে কাটছে দিল্লিবাসীর জীবন। সর্বোপরি শিশুরা যারা এই দেশের ভবিষ্যৎ, তারা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সকালবেলা রাজপথে যান চলাচল থাকে তুলনায় বেশি। অন্যদিকে সারারাতের বিশ্রামের পর কলকারখানার যন্ত্রপাতি তখনই সচল হয়। অর্থাৎ, সকালবেলা বাতাসে দূষক পদার্থের উপস্থিতি থাকে সবচেয়ে বেশি এবং তখনই ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। ফলে অতি অল্প বয়সেই তাদের শরীর হচ্ছে অপূরণীয় ক্ষতি।
এই মুহূর্তে দিল্লির যা পরিস্থিতি, ঠিক এমনটিই হয়েছিল কিছু বছর আগে চিনের বেজিং শহরে। ২০১৩ সালের পর থেকে বেজিংয়ের বাতাসে দূষণ বাড়তে বাড়তে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তা পৌঁছে গিয়েছিল ভয়াবহ অবস্থায়৷ বেজিং শহরের AQI ছ’শো, সাতশো, আটশো ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল ন’শোর কাছাকাছি। ফলস্বরূপ স্কুল-কলেজ বন্ধ, ধোঁয়াশার কারণে উড়ানে বাঁধা তৈরি হওয়ার ফলে একের পর এক বিমান বাতিল, হসপিটালে রুগীর উপচে পড়া ভিড় আপামর বেজিংবাসীকে করে তুলেছিল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু চিন সরকার অতি দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শহরের নানা প্রান্তে স্যাটেলাইট, র্যাডার বসিয়ে দূষণের মাত্রা কখন কোন অঞ্চলে বেশি, তার কারণ কী প্রভৃতি অনুসন্ধানের মাধ্যমে দূষণের মুখ্য কারণ খোঁজার চেষ্টা করে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিন সরকারের ১৬২ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ হয়েছিল, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটির কাছাকাছি।
বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার রয়েছে সকলের। এর জন্য উদ্যোগী হতে হবে সাধারণ মানুষকে। আন্দোলন, প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে তার কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে হতে হবে আরও বেশি সচেতন।
কিন্তু ভারতীয় প্রশাসন এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করছে? ২৮ অক্টোবর দিল্লি সরকার আইআইটি কানপুরের সাহায্যে ক্লাউড সিডিং-এর মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করে দূষণ প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল, যদিও তা বিফল হয়। বিমান ৬০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে সিলভার আয়োডাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি রাসায়নিক প্রয়োগ করা সত্ত্বেও ট্রায়ালের চার ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি হয়নি, কারণ ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিটির নির্দিষ্ট কিছু শর্ত থাকে। মেঘের আর্দ্রতা, পুরুত্ব, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ কোনওটাই সেদিন ক্লাউড সিডিংয়ের অনুকূলে ছিল না। ক্লাউড সিডিংয়ের মতোই সরকারের বায়ো কম্পোস্টার সংক্রান্ত পরিকল্পনাও বিফল হয়। তবে দূষণ-বিষয়ক আলোচনায় প্রশাসন সবচেয়ে বেশি যা করছে, তা হল, দোষারোপ। কখনও পূর্ববতী সরকারকে, কখনও প্রকৃতিকে, কখনও আবার ‘পাড়ালি’-কে। যদিও গবেষকরা জানাচ্ছেন, দিল্লি দূষণে পাড়ালির ভূমিকা মাত্র ১৫% থেকে ৩০%। অর্থাৎ, পার্শ্ববর্তী রাজ্যদের প্রতি অভিযোগ কোনও লাভ নেই। পাশাপাশি এয়ার পিউরিফায়ার যন্ত্র কিনে নিজেদের জন্য বিশুদ্ধ বাতাসের ব্যবস্থা করছে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা৷ একদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দাবি করেছেন, দীপাবলির পরে AQI-এর বৃদ্ধি প্রশাসন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, অন্যদিকে দিল্লি সরকারই সচিবালয়ের জন্য কিনেছেন পনেরোটি এয়ার পিউরিফায়ার। শুধু তাই নয়, সমাজের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি তো বায়ুদূষণ বিষয়টিকেই অস্বীকার করছেন। তাঁদের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাতাস সামান্য দূষিত হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার।
AQI বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জারি করা হয় Graded Response Action Plan, সংক্ষেপে গ্র্যাপ (Grap). AQI ২০১ থেকে ৩০০-র মধ্যে থাকলে জারি হয় Grap 1, যেখানে রেস্টুরেন্টে, হোটেলে কয়লা ও জ্বালানি কাঠের ব্যবহারের ওপর নিষেধ আরোপ করা হয়৷ পুরাতন পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ির চলাচল বন্ধ করা হয়৷ AQI ৩০১ থেকে ৪০০-র মধ্যে থাকলে Grap 2 জারি করে কিছু নির্দিষ্ট শিল্প নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা হয়, ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারের বদলে গণপরিবহণ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়, স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়। AQI ৪০১ থেকে ৪৫০-র মধ্যে থাকলে Grap 3 এবং তার ওপরে পৌঁছে গেলে Grap 4 জারি করার নির্দেশ দেন সরকার। দিল্লি এইসময় Grap 4 পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে কী হবে— তা অনুমান করেই আতঙ্কিত হতে হয়। আতঙ্কিত যুবসমাজ তাই প্রতিবাদ করেছে। কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় না, দিল্লির নানা জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ এসে ইন্ডিয়া গেটের সামনে একত্রিত হয়ে সরকারের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে— এমন সংকটকালে প্রশাসন কোনো যথার্থ পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন?
বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার রয়েছে সকলের। এর জন্য উদ্যোগী হতে হবে সাধারণ মানুষকে। আন্দোলন, প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে তার কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে হতে হবে আরও বেশি সচেতন। যথেচ্ছ বাজি পোড়ানো বন্ধ করে, ব্যক্তিগত যানবাহনের বদলে গণপরিবহণ ব্যবহার করে নিজের চারপাশের বাতাসকে দূষণ মুক্ত রাখতে হবে মানুষকেই। না-হলে আগামীতে দিল্লি এনসিআর পরিণত হবে গ্যাসচেম্বারে৷ নিরুপায় হয়ে মরবে শয়ে শয়ে মানুষ আর সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে যাবে প্রশাসন এবং পুঁজিপতিরা।


