দিল্লি ডায়েরি: পর্ব ৪

ভাইরাস-পাঁচালি

শুন শুন দিল্লিবাসী শুন দিয়া মন। 
করোনা ছুটি পাইলে তোমরা অখন।।

মাস্কগুলান ফেলিয়া দাও যেইখানে পারো। 
অসুখ গেছে বনবাসে চিন্তা নাহি কারও।।

মল সে তো খুলিয়াছে তোমাদেরই জন্য। 
ভিড় না করিলে কেমনে কিনবে দ্রব্যপণ্য।।

গায়ে গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি তবে না মজা। 
থার্ড ওয়েভ দিলে দিবে ভয়ানক সাজা।।

আটকে থেকে প্রাণ হইয়াছিল অতিষ্ঠ।  
নাহয় পরে জপিবে নাম দেবতার ইষ্ট।।

কিন্তু এ কী! কেনাকাটা বন্ধ রাখ কেনে।
দক্ষিণ দিল্লিবাসী দেখি একটু বেশি জানে।। 

খান মার্কেটে দেখি খরিদ্দার বাড়ন্ত।
বিজলি বাতি জ্বলছে দোকানদার ঘুমন্ত।।

এরম করলে কেমনে ফিরবে ইকনমির হাল।
খরচ করো আজকে দেখা যাবে কী হয় কাল।।

কনট প্লেসেও দেখি গাড়িঘোড়া বড় কম।
রাস্তায় হাঁটা যাচ্ছে দশা বড়ই বিষম।।

দোকানপাট সবই খোলা খাওয়ার জায়গাগুলাও। কিন্তু টেবিল ফাঁকা সবাই বলছে পালাও পালাও।।  

ঘুরছে-ফিরছে লোকে কিন্তু বগলে নাই থলি।
খরচ মোরা করব নাকো রোজগার গেছে চলি।।

তবে ভিড় আছে… 
তবে ভিড় আছে একটি স্থানে সেটি মেট্রোর গেটে।মানুষের লাইন উপচে পড়ে পিঠ ঠেকে পেটে।।

কারণটা কী?
বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব।
অর্ধেক আসন ভর্তি হবে, সিটও ফুরত্ব।।

লাইন উপচে পড়ছে রাস্তা অবধি একেবারে।  
ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি চলছে গেটের ধারে।।

কিছু দোকান কিন্তু তাও লোকে লোকারণ্য।
সুরা কেনার চাপ বড়, প্রয়োজন অনন্য।।

কিন্তু সেথাও বড় দোকান নেহাতই ফাঁকা।
পাঁইট বিক্রি হয় যেথা পড়ছে সেথায় টাকা।। 

দক্ষিণ দিল্লিবাসী তোমরা বড় নাক-উঁচু। 
কমলা নগর বাজারে যাও দেখে শেখো কিছু।। 

খরিদ্দারি চলছে সেথা রমরম করে। 
বালতি-চাদর-জামাকাপড় কিনছে ধরে ধরে।।

নিজের হাতে বাজার করলে তবেই আসল সুখ। 
মাস্ক থাকুক থুতনির নিচে, খোলা থাকুক মুখ।। 

‘এমন গ্রীষ্মের দিনে…’ গাইব গলা ছেড়ে। 
‘বাড়ি ফেরো সবজি কিনে’, বাজারের ভিড়ে।।

এরাও কিন্তু দিল্লিবাসী জেনো গুণিজন। 
এদের মনে ডর নাই আগেরই মতন।।

উত্তর দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি কিংবা পুবের দিকে।নিয়েছে কেউ নেয়নিই বেশি কোভিডের টিকে।। 

 
জিজ্ঞেস করলে লোকে বলছে সবই নিয়তি।
আমরা কি আর জানি ভাইরাসের মতিগতি।। 

ঘুরছে-ফিরছে, আড্ডা দিচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। 
সরকার এখন ‘বাড়ি থাকো’ বলবে কীসের জোরে।। 

দিনমজুরি করতে হলে বেরোতে তো হবে। 
ঘরে বসে খাবার-দাবার কে আর পায় কবে।। 

শহরের রাজপথে দোকানপাট নাই। 
হেথা সরকারের নতুন অফিস-বাড়ি চাই।।

টিনে-ঘেরা অঞ্চলে চলিতেছে কাজ।
মানুষের ভিড় হইবার সুযোগ নাই আজ।।

এখানে আসিত সবে পরিবার নিয়া।
সাঁঝের বেলা আইসক্রিম, স্বল্প খোলা হাওয়া।।  

করোনার ছুটি হেথা কাটানো যাইত।
যদি না আসিয়া সব বন্ধ পাইত।।

দালান ওরা ভাঙবে নূতন ভিস্টা গড়িতে। 
পড়াশোনা আর কি তারা পারিবে করিতে।। 

মুক্তির নানা স্রোত দিল্লি জুড়ে বইল…
জেলকন্যা দুইজন বেল-কন্যা হইল ।। 

অবশেষে জুন মাসে তালা খুলিল 
অমনি গাড়ি লইয়া সবাই পাহাড় চলিল ।।  

এত যাত্রী একই সাথে এ তো বড় সঙ্কট ।
পাহাড়ি রাস্তায় যানজট হইল যে উৎকট ।। 

পাহাড়বাসী বলে, ফেললে এ কী যন্ত্রণাতে । 
কোভিড কালে ধেয়ে আসো কাহার মন্ত্রণাতে ।।

ছুটি পাইয়া লাভ কী হইল জনসাধারণের । 
বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাইল দিল্লির গাধাগণের ।। 

তিন নম্বর ঢেউ শুধু আসার অপেক্ষায় ।
দিল্লিবাসী ভাবে ভাইরাস এবার কাকে খায় ।।

শুনহ দিল্লিবাসী কান খুলকর সুন্ লো ।
বাঁচো কিংবা মরো সংখ্যা কে আর গুনল।। 

নিজে প্রাণ নিজের হাতে নিজের মুখে মাস্ক । 
সুস্থ থাকো সবাই, ইজ দ্যাট টু মাচ টু আস্ক ।। 

ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র