শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ১৮

রক্তচয়নিকা


আজও কারা আস্থা রাখে রোদে
আজও কারা কিছুতেই বিশ্বাস করে না প্রতিশোধে

আজও কারা সকালপ্রত্যাশী
আজও কারা মনে করে যুদ্ধে নয়, মাঠে বাজছে বাঁশি

আজও কারা বন্ধ রাখে চোখ
আজও কারা ভেবে চলে, ভাল চায় অধিকাংশ লোক

আমি দূর থেকে দেখি তাদের। ভেতর থেকে হাসি।

সন্ধে নেমে এলে
আস্থার কবরে যাই। মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে আসি।


একদিন সমস্ত পাখি কাঠ হয়ে ফুটে থাকবে গাছে।

একদিন সমুদ্রগুলো ভারী হয়ে উঠবে মৃত মাছে।

একদিন লুটিয়ে পড়বে দলে দলে পশু আর
খসে যাবে ঘাস থেকে, পোকারা।

প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ যারা।

একদিন সমস্ত জল, সব জমি দখল করবে
ঝাঁকে ঝাঁকে জঙ্গি আর সেনা…

মানুষ ছাড়া তো অন্য কোনও প্রাণী বাংকারে বাঁচে না।


ঘেন্না ধরে গেছে বলে একদিন ক’জন পাড়ি দিও।

স্থানীয় আকাশ ছেড়ে অনিশ্চয়তার মহাকাশে
যেখানে নক্ষত্রপুঞ্জ ভাসে

পৃথিবী অনেক দূরে। হাড়, রক্ত, খাদ্য ও পানীয়
যুদ্ধ ছোট হয়ে আসছে… অ্যাকিলিস, কর্ণ, হোরেশিও…

অনন্ত ভাসমানতা, সময় যেখানে সীমাহীন
সমস্ত হিসেব থেকে সরে গেছে রাত আর দিন

শুধু ধারণার বাইরে বিশাল অস্তিত্ব, বায়বীয়…

মাধ্যাকর্ষণ নেই। হিংসা কিন্তু তখনও সক্রিয়।


সমস্যাই তবে সমাধান।

এবার শীতল যুদ্ধে হাওয়া সাক্ষী। কুয়াশা প্রমাণ।

তাপমাত্রা কমে এলে নাকি
দূরে চলে যায় বহু পাখি

এখন আকাশ ঢেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে
পরিযায়ী বোমারু বিমান –

আমরাও আজব গ্রহে থাকি

মেরে দিলে মরে যায়, মাংসের পিণ্ড একটা
তুমি যাকে ভেবেছিলে প্রাণ!


ভারী ভারী ট্রাক যায়, পৃথিবীর ছোট ছোট কোণে
চালভর্তি বস্তা ওরা দেখেনি অনেকদিন। অস্ত্রের কারণে।

কড়মড়ে আগুনে তাই অন্নের বদলে ধর্ম রাঁধে
খিদেকে, মুহূর্ত লাগে পাল্টে নিতে। আক্রোশে, জেহাদে।

খিদে থেকে শুরু হয়েছিল সব। খিদে দিয়ে শেষ।
ভারী ভারী ট্রাক যায়, গ্রাম থেকে দেশ, মহাদেশ…

হাওয়া দেয় পলাশের বনে

একজন উন্মাদ শুধু বসে বসে ভাবে আর গোনে—
শেষ কবে মানুষ মন দিয়েছিল, ধানের ফলনে।


আমি পাশ ফিরলে দেখা যাবে
আমার পিঠের নীচে কত লোক মরে গেছে
খাদ্যের অভাবে।

টের পাবে উঠে বসলেই
আমার ছায়ার মধ্যে কত দেহ ভাসমান
নামঠিকানা নেই।

এরপর দু’পা যদি হাঁটি
দেখতে পাবে হাত-মাথা-চোখ-কান-বুকের ভিড়ে
সংখ্যালঘু হয়ে গেছে মাটি।

তবুও মানুষ কিছু বেঁচে গেছে। অল্প। হাতে গোনা।

সমবেদনায়, এসো, অস্ত্র তুলে নাও আজ।
ওদের আর বাঁচিয়ে রেখো না।