শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ১৫

আপেল 

যুদ্ধ কত অঙ্গীকারের
যুদ্ধ কোনও মিথ্যে নয়
আগুন ফোটে সাগরপারে
কাদের বাড়ি আপেল হয় 

কোথায় ভারী জাহাজ ভেড়ে 
নামায় শত সেনার দল 
ক’জন গেল বাগান ছেড়ে 
গাছের চোখে জলের ফল 

যুদ্ধ কত সাংবিধানিক 
কাগজ পড়ে বাচ্চারাও 
দূরের কথা কমই জানি 
উনুন জ্বেলে বাতাস দাও

আমার বাড়ি নামুক রুটি 
আমার পাতে পড়ুক স্যুপ
আমার ছোট বাচ্চাদুটি 
সব বুঝেও থাকুক চুপ 

যুদ্ধ কত প্রয়োজনীয় 
না-ই বা ফেরে ক’জন লোক 
তাদের তুমি কবর দিও
আমার গাছে আপেল হোক 

ধোঁয়া

উনুন ছিল হাঁড়ির পাশে
খাটের পাশে জামার স্তূপ
ধোঁয়াই শুধু চিনতে আসে
বাকি সবাই এখন চুপ

জানলা ছিল পর্দা ছেঁড়া
দরজা ছিল অদরকার
শৌচ ছিল লজ্জাঘেরা
বাচ্চা ছিল দু’তিন’চার 

একলা ছিল আয়না ভাঙা 
মুখটি ছিল চতুর্ভাগ 
খেলনা ছিল ট্রেন আর টাঙ্গা 
ঘাড়ের কাছে মারের দাগ

এসব কারা গুঁড়িয়ে দিয়ে 
ফিরেও গেছে শহরপান 
বিরহ দেবে মেয়ের বিয়ে 
আকাশ জুড়ে বাজবে গান 

সোহাগ ছিল বরের পাশে 
টিপ সরিয়ে দেখত রূপ
ধোঁয়াই শুধু চিনতে আসে
বাকি সবাই এখন চুপ 

স্লোগান

দিচ্ছে হাওয়া বেতের বনে
গমের ক্ষেতও বাতাস পায় 
কাদের কথা সময় শোনে
বাচ্চাগুলো কোথায় যায়

দুই বিনুনি চরকি বুড়ি
হাতনোংরা পকেটচোর 
কাংলাপানা শামলা ছুঁড়ি 
ফোকলা হাসি অবান্তর 

এদের ছিল ঝুপড়ি বাড়ি
বাপ-মা দূরে কাজের খোঁজ 
সন্ধে হলে ফিরতে পারি
খাবার যদি না-পাই রোজ 

এদের মাঠে যুদ্ধবিমান
এদের ঘরে কাপাসজ্বর 
বয়স ছিল সময়সীমা 
বুঝল বুড়ো হবার পর

মিছিল চলে প্রাসাদপানে
মুঠোর দাবি জবাব চায় 
স্লোগান বাঁচে সপাট গানে
বাচ্চাগুলো কোথায় যায়

দ্বিধা

হ্রদের জলে মুখ দেখেছে
টুরিস্ট ছিল তোমার মন
অদূরে তার রইল বেঁচে 
দ্বিধার বাড়ি চিনারবন 

মেঘ এখানে বারুদ চেনে
হুকুম পেলে বৃষ্টি হয় 
রুটির নামে শমন কেনে
মানুষ বড় বাঁচার ভয় 

তোমার চোখে উপত্যকা
ঘাসের গায়ে রোদের নীল 
লাজুক স্বরে প্রেমিক বকা 
ঠোঁটের পাশে সাজুক তিল 

ভাড়ায় পাওয়া এক শিকারা 
বকেয়া শুধু জীবনটাই 
বাতাস কাঁপে সময়চারা 
টুরিস্ট ভাবে হাতেমতাই 

লোকের নীচে লোক পড়েছে 
চোখের নীচে নীলাঞ্জন
অদূরে তার রইল বেঁচে
দ্বিধার বাড়ি চিনারবন  

ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী