শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ৭

পাখি

তোমার মধ্যে একটি পাখি অভিবাসনকামী। 
যথেচ্ছ উড়ানের মধ্যে মেঘ দেখা তার পেশা। 
ঠোঁটের উপপাদ্য যেমন অযত্নে বাদামি— 
সে ঠিক তেমন ডানার নীচে উপত্যকা মেশায়। 

যেখানে কেউ থাকে না আর, যুদ্ধ নিল দখল
কিশোর কিশোরীদের ছবি বিকোল পশ্চিমে, 
তেমন কোনও জলবালিমন লেখে না পুস্তকও… 
সে জন্য তার উড়ান এখন অনুক্ত আর ঢিমে। 

তোমার মধ্যে একটি পাখি ছাড়পত্রপ্রিয়। 
যে-কোনও পংক্তিতে তাকে দণ্ডায়মান দেখে 
আমার স্থবির মন হয়েছে আরেকটু স্থানীয়,
এই বয়সে স্থৈর্য মানায়, বলেছে প্রত্যেকে। 

কিন্তু যখন শিরা অবশ, পিথাগোরাস খুলে 
কোন রেখা কোন রাস্তায় যায়, মিলিয়ে নিতে পারি। 
ঠোঁট কি তোমার ফারাক বোঝে, ডানায় ও মাস্তুলে? 
তোমার মধ্যে একটি পাখি অপহরণকারী।

দিন

এত সহজ দিলাম যে দিন তরল হয়ে গেল। 
সূর্য নিলাম প্লেটে এবং স্বাদমতো নুন মরিচ… 
এসব দিনে পুরনো ঘুম ভাঙালে পাস্ক্যালও
দেখতে পেতেন কীভাবে তার নিয়ম নতুন করি। 

পাহাড় গেল পশ্চিমে মন বাজার বসুক তাতে
সমুদ্রে জল চিরুক কোনও পর্যটকের ব্লেড 
অভিমানের পরেও যেন না হয় পস্তাতে 
এমনভাবে জানলা ঘেঁষে কেউ রেখে যাক জেদ।

এসব যখন ভাবি, গড়ায় দিন ধুলোপথ দিয়ে
করুণ বালক তার পিছনে আঁকশি নিয়ে ছোটে…
এমন অকালমেঘ, যেন কার দূরের দিদির বিয়ে 
দু’এক চামচ কুয়াশা কেউ সাজাচ্ছে পর্বতে।

এত বিষাদ দিলাম যে দিন কঠিন হয়ে গেল। 
কাটতে লাগবে ছুরি এবং গাঁথার জন্যে কাঁটা। 
এসব দিনে পুরনো ভুল ভাঙালে পাস্ক্যালও 
দেখতে পেতেন কোনও নিয়ম মানছে না তাঁর খাতা…

হোটেল

পুরনো হোটেলের মতো তোমার কাছে আসি। 
তিনটে আলো নিভন্ত, ছোপ দেয়ালে সান্ত্বনার 
রিসেপশনে অতীত ও তার অপটু দোভাষী… 
হাতে কারও সামর্থ্য নেই নতুন মুদ্রা গোনার।

এলিভেটর ক্লান্ত, ভারী দরজা গহিন খোলে 
আয়নায় মরিচের চিহ্ন, ঝাল ছিল খুব সময় 
রুমের সামনে স্টাফ নোটেশন, নম্বরের বদলে… 
ভেতরে অন্ধকার পর্দা, অপ্রীতিগন্ধময়। 

পাশেই রেস্তোরাঁ ছিল না? রুটি ও মাংসেরা 
বিক্রি হত সস্তায় আর দূরে কাপড়মিল 
পুরনো বাসিন্দা সেজে তোমার কাছে ফেরা 
আয়নায় টিপ, আসলে তা স্মৃতির গালে তিল। 

জানলা থেকে বন্দর আর জাহাজ দেখা যেত 
এখন কেবল উঁচু বাড়ির খেলনা অহংকারে 
ঢেকেছে রাস্তাঘাট, তুমি তবু অভিপ্রেত। 
আমি আছিই। তোমায় দেখি কে ফেরাতে পারে…

ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র