শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ৩

দুঃখ

দুঃখ দেবার মধ্যে যত আকাশ প্রকাশিত                        
সে যেন তার অবসাদের প্রথম সংস্করণ। 
মেঘ বোঝে না যে-বন্ধু, সে হাত বাড়িয়ে দিত
বৃক্ষ যখন কেউ না, কেবল অপেক্ষাদের গড়ন

চড়ুইভাতির রোদ লেগে সেই অতীত এখন তৃণ
পুড়বে বলে চাইছে সময়, বিকেল অচিনাভ 
এভাবে শেষ চাইছে যে, তার অন্তিমে সঙ্গিনও
এমন পরিত্রাণী, সে-মন বাড়ির পথে যাব।

কোন বাড়ি? যার ঠিকঠিকানা সমতলের কুঠি?
এক চিঠিতে অনেক কবর বন্ধুজনের খোঁড়া 
বহতা এই মাতাল দিনে সহস্র ভ্রূকুটি 
সবাই বলে, এমন পথে থাকে না সন্তরা। 

দুঃখ দেবার মধ্যে আজও আকাশ প্রকাশিত 
যে জানে, সে বন্ধুকে মন দেবে না কক্ষনও 
বদলে এক চিঠির মোড়ক পার করে যাক শীতও… 
সে আসবে, তার সমস্ত ডাক গাছের গায়ে শোনো।      


গোলাপ

জেনেছিলাম একটি স্টেশন আর পারে না আলো
এবং গোলাপ যথেষ্ট ভুল যখন স্মৃতি মৃত। 
সরকারি নোটিসের বাতাস ওড়ায় বৃথা পালক… 
রাতে এসব মহল্লা হয় কুয়াশাবর্ধিত। 

লোহায় মোড়া শকট, যেমন নিঃশ্বাসে ভাপ ছাড়ে
যাকে সফর বলতেন বেশ পুরনোপন্থীরা 
ভয় তাড়াতে রাজনৈতিক বৃষ্টি কী নাগাড়ে… 
কে না জানে, কথায় কাটে অকপটের শিরা 

জেনেছিলাম এ-পথে যায় যাত্রীবাহী বিষাদ 
গার্ড বয়ান করেন নিজের ছোট কন্যাটিকে 
রাত যত ঘন হয়, বাড়ে ঘোড়ার বিবমিষা 
কফিন থেকে পেরেক ছোটে পরের মৃতের দিকে। 

এভাবে না এসো। এখন তরল অবসাদে
ভাসে আগের ভ্রম, সে-কথা সর্বজনবিদিত। 
তুমিও জানো মানুষ কখন গরজ থেকে কাঁদে
এবং গোলাপ যথেষ্ট ভুল যখন স্মৃতি মৃত। 


বন্দি  

ফুলদানি কী হবে, যদি ভাঁজ হয়ে যায় ঘরই? 
তখন কি কেউ চিঠি পাঠায়, আন্তনিওনিকে?
খাওয়াও আগে রুটি ও সামান্য কিছু পরিজ
তোমার ভেতর অভুক্ত ওই চতুর্থ বন্দিকে। 

কাঠগুদামের মালিক যেন পাখির ভাষা বোঝেন
এই বিপ্লব আনতে গিয়ে উধাও হল যারা,
তাদের প্রথম তিনজন কাল ডাক পায়নি ভোজে। 
অবশ্য বেশ খেলছে তোমার ছোট্ট লিলি’র চারা, 

এই গ্রামে যে-পাহাড়, সে কোন উপকথার নাতি
যে-মেঘ আসে প্রান্তরে, কোন সমীকরণ শোনায় 
সান্ধ্য জমায়েতের মাথায় ঠান্ডা সড়কবাতি
বাকিটা যাক কোলাহলে এবং আবর্জনায়। 

সরে দাঁড়াও। ঘর ভাঙো। তার জানলা খুলে ওড়াও। 
বাতাস কেবল ছুড়ো না ওই ক্ষুধার্তদের দিকে… 
শীঘ্র তোমায় ঠাঁই দেবে না ক্ষুব্ধ গাছের গোড়া, 
তারপরে পাঠিও চিঠি, আন্তনিওনিকে।     

ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র